বুদ্ধদেব বসুর কবিতা
প্রথম পার্থ
*
মিলনসাগরে কবি বুদ্ধদেব বসুর "প্রথম পার্থ" কাব্যনাট্যের দ্বিতীয় পাতার পর . . .

প্রথম বৃদ্ধ

ছায়া দীর্ঘতর,
রৌদ্রে লাগে অপরাহ্নের হলুদ,
এখনো মীমাংসা হ’লো না  |
কুন্তী আকে প্রতীজ্ঞাবদ্ধ ক’রে গেছেন,
নয়তো আমি --- এই বৃদ্ধ চরণে যতদূর সম্ভব সত্বর
ছুটে গিয়ে যুধিষ্ঠিরকে বলতাম, ‘কর্ণ আপনার সহোদর, আপনার
.   অগ্রজ |’
বার্তা
 
        
         
         
          


                

      
           
           
           
             
        
         
         
               

           
প্রথম বৃদ্ধ

আমি দেখতে পাচ্ছি সেই অলোকলক্ষণাকে---
কৃশা নন, স্থূলাঙ্গী নন, নন অতিকৃষা বা রক্তবর্ণা,
তেজস্বিনী সুভাষিণী রমণীরত্ন,
যাঁকে অর্জন করেছিলেন অর্জুন, আর ধর্মরাজ পণ রেখেছিলেন--
সেই আমাদের দুঃখের আরম্ভ |


দ্বিতীয় বৃদ্ধ

কিন্তু এর অর্থ কী ?  যাজ্ঞসেনী কেন এখানে ?


প্রথম বৃদ্ধ

অপেক্ষা করা যাক  | হয়তো তিনি আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন |

[
দ্রৌপদীর প্রবেশ  ]

দ্রৌপদী

বৃদ্ধেরা, আমি শুনেছি কর্ণ এখানে অধিগম্য |  তা কি সত্য ?


প্রথম বৃদ্ধ

মনস্বিনী পাঞ্চালী, আপনি যথাস্থানে এসেছেন |


দ্রৌপদী

আপনারা দেখেছেন তাঁকে ?  তিনি একা আছেন, না সঙ্গীপরিবৃত ?


দ্বিতীয় বৃদ্ধ

এ-মুহূর্তে একা | আপনি কি তাঁর সাক্ষাৎ চান ?


দ্রৌপদী

আপ
      
      
    
         
    
      
     
     
       
     
           
      
          
            


প্রথম বৃদ্ধ

দীনেরা তাঁর ভক্ত, আর্তের তিনি বন্ধু  |


দ্রৌপদী
( তীব্র স্বরে )

কিন্তু আপনারা কি শোনেননি যে দ্যুতসভায়
আমার সেই অকথ্য, অকল্পনীয় অপমানের মুহূর্তে
আমার ক্রন্দনময় বিলাপ শুনে কর্ণ
হেসে উঠে বলেছিলো, ‘যে-নারীকে পঞ্চস্বামীও রক্ষা করতে
.  পারে না,
সে দাসী ছাড়া আর কী ?’


দ্বিতীয় বৃদ্ধ

দ্রুপদকন্যা, যদি অপরাধ না নেন বলি,
অন্য এক কাহিনীও আমরা শুনেছি |
আপনার স্বয়ংবরসভায় কর্ণের
প্রত্যাখান |  যজ্ঞভূমি থেকে কুক্কুরের মতো
প্রত্যাখান | অযোগ্য ব’লে নয়, অন্ত্যজ ব’লে |
অন্যায় থেকে অন্যায়ের জন্ম--- আশাতীত নয় |


দ্রৌপদী
( তীব্র স্বরে )

আপনারা ব্রাহ্মণ হ’য়ে বলবেন য়ে রাজকন্যার
প্রার্থী হ’তে পারে কোনো সূতপুত্র !


প্রথম বৃদ্ধ

কত অদ্ভুত জন্ম হয়, পান্ডবজায়া  :
আপনার যেমন যজ্ঞাগ্নি থেকে,
যেমন শরবনে দেবসেনাপতির |
তেমনি হয়তো ----


[
দ্বিতীয় বৃদ্ধ ইঙ্গিত করলেন  | প্রথম বৃদ্ধ কথা শেষ করলেন না |  ]

             
দ্রৌপদী

মনে হয় আরো কিছু বক্তব্য ছিলো আপনার ?


প্রথম বৃদ্ধ

আমার বক্তব্য সরল |
বর্ণভেদ যদি ব্রহ্মার বিধান,
দ্রোণ তবু ক্ষত্রিয়, বিশ্বামত্র  ব্রাহ্মণ |
কর্ণের বংশপরিচয়  যা-ই হোক, ব্যবহারে তিনি বীর |


দ্রৌপদী

কর্ণের হীনজন্ম প্রমাণ হ’য়ে গেচে দ্যুতসভায়
দুর্বিনিত ধনুর্ধর ক্ষত্রিয়ের পদবাচ্য নয় |


দ্বিতীয় বৃদ্ধ

কিন্তু দ্যূতসভায় আপনাকে যারা নির্জিত করেন
তাঁরা ধার্তরাষ্ট্র, বিশুদ্ধ ক্ষত্রিয় | আর সেই দৃশ্য দেখে
আচার্য দ্রোণ ছিলেন নিঃশব্দ | ধৃতরাষ্ট্র নতমুখে নিঃশব্দ |
আর মহাত্মা ভীষ্ম বলেছিলেন, ‘ধর্মের গতি সূক্ষ্ম’ !
কারো মুখে প্রতিবাদ ফোটেনি | তা-ই শুনেছি আমরা |


দ্রৌপদী

তাঁরা নিঃশব্দ ছিলেন বেদনায় | কর্ণ নির্লজ্জের মতো হেসেছিলো |


প্রথম বৃদ্ধ

জনশ্রুতি এই :  ভীমসেন স্বয়ং
যুধিষ্ঠিরের বাহু দগ্ধ করতে চেয়েছিলেন |
এ যদি সত্য হয়, কর্ণ কেন দূষ্য ?
দেবী, মানুযের মনোভাব অনেক, প্রকাশভঙ্গি স্বল্প |
হয়তো আপনার সেই আর্তির মুহূর্তে
যখন পান্ডবেরা ছিলেন পুত্তলির মতো নিস্পন্দ,
আর প্রাচীনেরা বাক্ শক্তিরহিত,
তখন কর্ণই প্রথম
ধিক্কারে উন্মুখর হয়েছিলেন |


দ্রৌপদী

কাকে ধিক্কার ?  আমার প্রতারিত পঞ্চস্বামীকে ?


দ্বিতীয় বৃদ্ধ

কে         
         


          

           
             
         
          
         
      
     
        
         


        

     
      
         
          
         
               


দ্বিতীয় বৃদ্ধ

যারা সংকটকালে বিদ্রোহ করে, তারা কি ভালো ?
হয়তো রাবণভ্রাতা বিভীষণের উত্তরে
ইতিহাসে কর্ণ থাকবেন দৃষ্টান্ত |


দ্রৌপদী

আমারও তা-ই আশঙ্কা |


প্রথম বৃদ্ধ
( ক্ষণকাল পরে )

আপনার শঙ্কার কারণ-----
যুদ্ধ ?


দ্রৌপদী

.             আশঙ্কার একটিমাত্র কারণ হ’তে পারে :
পান্ডবের পরাজয় | তা কি সম্ভব ?
আমি জানি দুর্যোধনের মিত্রেরাও তাঁর অমিত্র |
ভীষ্ম দ্রোণ যুদ্ধ করবেন কৌরবপক্ষে,
কিন্তু শুধু বাহুবলে, অস্ত্রবলে--- মন, প্রাণ, হৃদয় দিয়ে নয় |
শুনেছি শল্য যোগ দেবেন কৌরবপক্ষে--
মনে হয় খেলাচ্ছলে, কেননা তিনি সতী মাদ্রীর
সহোদর, পান্ডবের বিনাশ তাঁর কাম্য হ’তে পারে না |
শুধু কর্ণ আছেন পান্ডবের প্রতিশ্রুত শত্রু,
এবং পরাক্রান্ত-- শুধু তিনি সর্বান্তঃকরণে
যুদ্ধ করবেন ; শুধু তিনি সম্ভবপর বাধা
আমাদের সিদ্ধির | তাঁকে আমার ভয় | আর তাই
আমি এসেছি তাঁকে একটি পরামর্শ দিতে
যাতে তাঁর কোনো ক্ষতি হবে না, কিন্তু হস্তিনাপুর
ফিরে পাবে স্বাস্থ্য, জয় হবে সত্যের |
আপনারা বিদ্বান, বিচার ক’রে বলুন--
আমি কি সাক্ষাৎ করবো কর্ণের সঙ্গে, না কি অনুচিত হবে ?


দ্বিতীয় বৃদ্ধ

যদি আপনার অভীষ্ট এই রাস্ট্রের কল্যাণ,
যদি দ্বন্দ্বের সমাধান আপনার উদ্দেশ্য,
তাহ’লে জানবেন লোকাচার তুচ্ছ, সংকোচ অনর্থক |


দ্রৌপদী

আপনাদের কথায় আমি উত্সাহ পেলাম আমার চেষ্টায় |
আমি তাহ’লে এগিয়ে যাই |  আপনারা অন্তরালে যান  |

[
বৃদ্ধেরা অন্তরালে প্রচ্ছন্ন হলেন | পূর্ণ আলোয় উপবিষ্ট কর্ণকে দেখা গেলো | দ্রৌপদী এগিয়ে
গেলেন তাঁর দিকে |
]
                       

দ্রৌ       
       

       


     
           

              


              

             
              

         

                


                  
          

           
        
           
      
      
         
         
           
          
          


দ্রৌপদী
( সহজ সুরে )

হঠাৎ ইচ্ছে হ’লো তোমাকে আবার দেখি |


কর্ণ

.      তোমার ইচ্ছে হ’লো ?


দ্রৌ     
       

     
        
          
        
           
           
          
         
      
     
         
       
        


কর্ণ

মধুময় তোমার বাক্য, দ্রৌপদী | কিন্তু দুঃখ এই--
শুধু বনভূমি দিয়ে রচিত নয় পৃথিবী ,
শুধু পতঙ্গের গুঞ্জন দিয়ে নয়,
পল্লবের মর্মর দিয়ে নয় |
আছে রাজধানী | প্রাসাদ | আছেন রাজন্যেরা |
আছে চক্রান্ত, সংঘর্ষ, অস্ত্রের ঝঞ্ঝনা |
মানুষ ভ’রে তোলে তার জগৎ
কর্মের গর্জন , ঘটনার কলরোল দিয়ে |
নিজেকে সময় দেয় না স্তব্ধতার জন্য ,
সময় দেয় না হৃদয়কে তার কথা বলতে |


দ্রৌপদী

সেইজন্যই,  কর্ণ, সেইজন্যই |
যেহেতু সময় এত অল্প,
যেহেতু সময় আর নেই |

( ক্ষণকাল পরে )

কর্ণ, মন্ত্রণাসভা বিফল হ’লো  | এবার যুদ্ধ আসন্ন --
অনিবার্য | --- কিছু বলছো না ?


কর্ণ

যদি অনিবার্য হয়, মন্তব্য অবান্তর |


দ্রৌপদী

তেরো বছর ধ’রে, তেরো বছর ধ’রে
আমি ছিলাম এই দিনের অপেক্ষায় |
অহর্নিশ লালন করেছি ইচ্ছা ;
দুর্যোধনের ঊরু চূর্ণ হবে, দুঃশাসনের বাহু ছিন্ন হবে--
আমার আনন্দ !
মনে-মনে বলেছি : হে যুদ্ধ, হে পাপনাশন, ভীষণ অগ্নিকান্ড
দেখা দাও ! উদিত হও, রক্তবর্ণ উদ্ধার !
কিন্তু আজ
যুদ্ধের পূর্বক্ষণে, এই ভঙ্গুর স্তব্ধতার মুহূর্তে
আমার মনে সংশয় |


কর্ণ

.            সংশয় কেন ?
পাছে পান্ডবের পরাজয় ঘটে ?


দ্রৌ        

        
       
         
         
        
         
        
         
      
          
           
           
                                  
          
            
           
               

        

     
           


কর্ণ

আমার মর্মকথা তুমি প্রকাশ করলে, পাঞ্চালী |
আমিও তা-ই ভাবি মনে-মনে : আমি কে ?
পান্ডব নই, কৌরব নই---
অনাত্মীয় এক আগন্তুক,  কালস্রোতে ভাসমান এক পাত্র,
নির্বন্ধে ভরা, নিরুদ্দেশ, জল আর বাতাসের বেগে চালিত |
এক অনাহূত অতিথি আমি হস্তিনাপুরে,
কুলগোত্রহীন, নিষ্প্রয়োজন,
দৈবক্রমে কুরুবংশের কাহিনীর মধ্যে প্রবিষ্ট --
বা হয়তো আমারই ভুলে, যেহেতু
আমি চেয়েছিলাম যোদ্ধার বৃত্তি--সূতপুত্র হ’য়েও |
.   চেয়েছিলাম
অর্জুনের প্রতিদ্বন্দ্বী হ’তে
কোনো-একদিন, কোনো-এক স্বয়ংবরসভায় |


দ্রৌপদী
( ঠোঁটের কোণে হেসে )

অর্জুনের প্রতিদ্বন্দ্বী ----অথচ মাঝে-মাঝে অদ্ভুতভাবে
তোমাকে অর্জুনেরই আত্মীয় ব’লে মনে হয় |


কর্ণ
( সতর্কভাবে )

একটা নতুন কথা শোনালে তুমি, পাঞ্চালী !


দ্রৌপদী

এ-         
         
         
         
        

        

         

     
   


         

         

         
          
           
           
           
           
         
         
         
         
     
           


কর্ণ

ভালো নয়, পাঞ্চালী,
ভালো নয় নতুন ক’রে বেদনা জাগানো,
নতুন ক’রে সেই জ্বালা,
সেই প্রতিকারহীন অবিচার !
দ্রুপদকন্যা, ফিরে যাও |
তোমার রূপের রশ্মি আমার পক্ষে দুঃসহ,
তোমার ললিত কন্ঠ আমার পক্ষে উত্পীড়ন |


দ্রৌপদী

এখনো জ্বালা ----- এতদিন পরেও ?
দ্যূতসভায় তোমার প্রতিশোধ কি পূর্ণ হয়নি ?

কর্ণ

( আগ্রহের সুরে )

তোমার মনে আছে ? তোমার মনে আছে  ?
দ্যূতসভায় আমি কী বলেছিলাম ? কী করেছিলাম ?


দ্রৌপদী
(  সতর্কভাবে  )

আমি ছিলাম আর্ত, উদ্ভ্রান্ত | তোমাকে লক্ষ করিনি |


কর্ণ

আ        
         
              
          
          
         
      
           
        
          
          
      
           
       
           
     
      
           
          


দ্রৌপদী
( কোমল স্বরে, কূটভাবে )

থাক, কর্ণ | অতীত আর আলোচ্য নয় এখন,
কেননা সব তর্কের মীমাংসা হবে
যুদ্ধে | তবু, তোমার কাছে একটি জিজ্ঞাসা আমার :
ঐ যাকে অবিচার বললে তুমি,
তার দৃষ্টান্ত
শুধু কি আমার স্বয়ংবরসভা ?
তুমি দুর্যোধনকে বলো তোমার সুহৃদ | কিন্তু তার কাছে
কী পেয়েছো তুমি ?  একমুঠো রাজত্ব ?
কিন্তু তোমার ঐ অঙ্গরাজ পদবি--
তা কি নয় অন্তঃসারহীন অভিধামাত্র ?
ক্ষমতা সব দুর্যোধনের, কতৃর্ত্ব সব দুর্যোধনের,
তুমি শুধু ব্যবহার্য তার-- যন্ত্র যেমন যন্ত্রীর |
বীর তুমি :  এই কি তোমার যথাযোগ্য সম্মান ?


কর্ণ
( ঈষৎ হেসে )

তোমার যুক্তি আমি মানতে  বাধ্য |
কেউ আমাকে রাজা কর্ণ পর্যন্ত বলে না |
            

দ্রৌপদী
( উত্সাহিত, তবু সতর্ক )

তুমি কি ভাবো--
সম্ভব নয়, বিশ্বাস্য নয়, তবু ধরা যাক দৈবাৎ
যদি কৌরবপক্ষ জয়ী হয় যুদ্ধে --- তুমি অংশ পাবে
.   রাজত্বের ?


কর্ণ
( ঈষৎ হেসে )

ভরতবংশে যার জন্ম নয়, সে পাবে রাজত্বের অংশ !


দ্রৌপদী
(তীক্ষ্ণ চোখে কর্ণের দিকে তাকিয়ে )

তুমি মানো এই যুদ্ধে কোনো অংশ নেই তোমার ?
যে-পক্ষেরই জয় হোক, তোমার কিছু এসে যায় না ?


কর্ণ

আবার আমার মর্মকথা তোমার মুখে শুনলাম


দ্রৌ      
           

          
         
         
        
          
           
          
           
             
              
           
            


              
                     

                
                        
        
           
দ্রৌপদী

অন্তত আমি নিশ্চিত জানি
কৌরবপক্ষের নেতৃগণের নিপাত |
আর তাই বলি
যে-যুদ্ধে তোমার কোনো অংশ নেই, স্বার্থ নেই,
তাতে যুক্ত হ’য়ে
তুমি কেন প্রাণ দেবে, কর্ণ ?
যুদ্ধে মৃত্যু হ’লে স্বর্গলাভ হয় ক্ষত্রিয়ের,
কিন্তু তুমি তো জন্মসূত্রে ক্ষত্রিয় নও |


কর্ণ

তোমার বাগ্মিতায় আমি মুগ্ধ, পাঞ্চালী  |


দ্রৌপদী

.              কিন্তু আমার প্রস্তাবে
অসন্মত ?  তবু, ভেবে দ্যাখো :
যদি তুমি রণস্থলে, অস্ত্র হাতে নিয়ে
পান্ডবের প্রতিপক্ষ হও---
তাহ’লে নিশ্চিত জেনো,
অর্জুন তোমাকে সংহার করবেন, কর্ণ |
ঐ তোমার দীপ্ত শির লুটিয়ে পড়বে রক্তময়
কর্দমে ; আর তোমার শক্তিপুঞ্জ শরীর
শয়ান হবে কবন্ধ, বীভৎসভাবে নিশ্চল |
কিন্তু কেন --তাতে কোন তৃপ্তি হবে তোমার আত্মার ?
কী সেই মহৎ উদ্দেশ্য, যা সাধন করবে তোমার মৃত্যু ?
         
( ক্ষণকাল পরে )

আমি সত্য বলবো | আমি চাই কৌরবের পতন |
কিন্তু সেইজন্য কর্ণের আত্মহুতি
আমার মনে হয় নিতান্তই অনর্থক |


কর্ণ

কিন্তু পান্ডবের জয় যদি নিশ্চিত,
তাহ’লে কর্ণবধের গৌরব থেকে অর্জুনকে
বঞ্চিত করা কি অন্যায় হবে না ?

             
দ্রৌপদী

তুমি কি তাহ’লে মৃত্যু-পণ করেছো  ?
এই সুন্দর পৃথিবীতে, এই রৌদ্রালোকে
তুমি কি বাঁচতে চাও না, কর্ণ ?
কেউ নেই, যাকে তুমি ভালোবাসো ?

কর্ণ

আমি ভালোবাসার কাঙাল নই, দ্রৌপদী,
আমি আয়ুর ভিক্ষুক নই |


দ্রৌপদী

.             কিন্তু আমি প্রার্থনা করি
তোমার দীর্ঘায়ু | আমি চাই, যুদ্ধের পরে,
যখন আর অন্তরাল হ’য়ে দুর্যোধন থাকবে না,
তোমার সঙ্গে পঞ্চপান্ডবের মৈত্রী |  ভাগ্যদোষে দুঃখ পেয়েছো
.  তুমি,
তাঁদেরও দুঃখ অগণ্য | অবশেষে হোক
সুখের সমাপ্তি | হোক স্নিগ্ধ তোমার জীবন
তুমি নিশ্চয়ই জানো,
আমার স্বামীদের যিনি সুহৃদ, আমিও তাঁকে বন্ধু বলে মানি |
--- কর্ণ, আমি তোমার বন্ধুতা চাই |


কর্ণ
(  অনেকটা আপন মনে )

আশ্চর্য !
অনেক ধ্বংস, অনেক মৃত্যু, বিপর্যস্ত রাষ্ট্র --
আর তারপর পঞ্চপান্ডবের সঙ্গে মৈত্রী, দ্রৌপদীর সঙ্গে
.   বন্ধুতা ---

( হঠাৎ থেমে , ক্ষণকাল পরে )

.             এই অধিরথপুত্র বৈকর্তনের |
পান্ডবেরা আমার কে ? --- কেউ নয় |
আমি কি দ্রৌপদীর বন্ধু হ’তে চেয়েছিলাম ? --- শুধু বন্ধু ?

( দ্রৌপদীর দিকে ফিরে )

--- না !
এই আমার উত্তর, পাঞ্চালী :  না !
তুমি জেনো আমি পান্ডবের বিপক্ষে আছি প্রতিশ্রুত
আমার সব অস্ত্র নিয়ে, আমার শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত--
দুর্যোধনের জন্য নয়, কিন্তু যেহেতু
তাতেই আমার সার্থকতা |


দ্রৌপদী

এত প্রবল তোমার রণলিপ্সা ?


কর্ণ

মহ       
       
          
          
          
       
       
          
     
        


দ্রৌপদী

দেখেছি তোমার কুখ্যাতি মিথ্যা নয়--
তুমি দাম্ভিক, তুমি স্বেচ্ছাচারী |


কর্ণ
( সহাস্যে )

ভাবতে পারিনি, দ্রুপদকন্যা,
আমিও তোমার সেবক হ’তে পারি কোনদিন--
আর তাও বিনা ত্যাগে, বিনা শ্রমে, শুধু নিশ্চেষ্ট থেকে,
শুধু দিনযাপন, শুধু প্রাণধারণ ক’রে !


দ্রৌপদী

যদি তোমার পক্ষে বর্জনীয় হয় নিজের ইষ্ট,
লোভনীয় হয় আত্মলোপ,
তাহ’লে আর বাক্যব্যয় অনর্থক | আমি যাই |


কর্ণ

প       
     
    
       
      
     
          
          
           
         
          
      
         


দ্রৌপদী

সুশ্রাব্য বচন--
যেন রূপমুগ্ধ যুবার,
যার দৃষ্টি নীলিমায় মগ্ন,
যার চিত্ত নির্মল অনুভূতি |
অথচ এর বক্তা         
হত্যাকান্ডে যোগ  দেবার জন্য উন্মাদ |


কর্ণ
( মৃদু হেসে )

তী            
          
         
           
          
          
          
            

            

           
          
          
           
        
         


দ্রৌপদী

অনিবার্য তোমার পতন | আমার দুঃখ হয় তোমার জন্য |


কর্ণ

পান্ডবপত্নী, বিজয়িনী হও !

[
দ্রৌপদীর প্রস্থান  | কর্ণ  অর্ধালোকে প্রচ্ছন্ন  |  দুই বৃদ্ধ পা টিপে-টিপে আলোয় বেরিয়ে
এলেন |
]

*************                
.                                                          
.                                                              
পরবর্তী অংশ পড়তে. . .   
.                                                                
প্রখম পার্থর সূচিতে . . .   
.                                               
বুদ্ধদেব বসুর কবিতার মূল সূচিতে . . .   
.                                                          
এই পাতার উপরে ফেরত . . .    



মিলনসাগর