বুদ্ধদেব বসুর কবিতা
প্রথম পার্থ
*
মিলনসাগরে কবি  বুদ্ধদেব বসুর "প্রথম পার্থ" কাব্যনাট্যের তৃতীয় পাতার পর . . .

প্রথম বৃদ্ধ

সূর্য আরো পশ্চিমে |


দ্বিতীয় বৃদ্ধ

     


        

      


     

         


        

        


       

           


              

        

             
        

     


   

        


      

      


   

     


দ্বিতীয় বৃদ্ধ

.       পাঞ্চালী তা-ই বললেন ?

        
প্রথম বৃদ্ধ

আমরা উদ্ ভ্রান্ত  |


দ্বিতীয় বৃদ্ধ
                 
.      কে যেন আসছেন |


প্রথম বৃদ্ধ

কেউ আসছেন ?


দ্বিতীয় বৃদ্ধ

.        মনে হয়, কৃষ্ণ |


প্রথম বৃদ্ধ

কৃষ্ণ ?  এবার তবে সমাধান |


দ্বিতীয় বৃদ্ধ

.      কী-সমাধান  ?


প্রথম বৃদ্ধ

শুনেছি তিনি সন্ধি চান |


দ্বিতীয় বৃদ্ধ

.        সত্যি ?


প্রথম বৃদ্ধ

শুনেছি তিনি অর্জুনের সখা, দুর্যোধনের সহায় |
তাঁর নারায়ণী সেনা পাবেন দুর্যোধন,
আর নিরস্ত্র তিনি হবেন পার্থসারথি--
যদি যুদ্ধ হয়  |   কিন্তু তিনি সন্ধি চান |


দ্বিতীয় বৃদ্ধ

.           সত্যি  ?
মনে হয় তিনি দু-পক্ষেই আছেন---
হয়তো কোনো পক্ষেই নেই |
কেউ কি তাঁর মনের কথা জানে ?
মনে হয় তিনি ঋজু নন, বক্রস্বভাব |


প্রথম বৃদ্ধ

কিন্তু তাঁর মতো সক্ষম কেউ নেই, শুনেছি ,
তাঁর মতো মেধাবী কেউ নেই, শুনেছি |
তিনি পারবেন |


দ্বিতীয় বৃদ্ধ

.        কী পারবেন ?


প্রথম বৃদ্ধ

জানি না | হয়তো সবই স্থির হ’য়ে গেছে |
কিন্তু আমরা জানি না |


দ্বিতীয় বৃদ্ধ

.        কৃষ্ণ  জানেন  ?


প্রথম বৃদ্ধ

তাও জানি না  |  আমরা উদ্ ভ্রান্ত  |
     

দ্বিতীয় বৃদ্ধ

ঐ এলেন তিনি  |  দেখা যাক  |
( বৃদ্ধেরা অন্ধকারে প্রচ্ছন্ন | কর্ণ উদ্ ঘাটিত  | কৃষ্ণের প্রবেশ |  )


কর্ণ

কৃষ্ণ      
  


  

  
     
    
   
  
     

   

   

        

     
                  
            


কর্ণ
(  সহাস্যে , পরিহাসের সুরে )

.           বলো |
মৃদু, তীক্ষ্ম, অপ্রিয়, প্রিয়,
কোপান্বিত, ছিদ্রান্বিত, ছলনাময়,
অম্ল, কটু, তিক্ত, মধুর,
প্রণয়যুক্ত বা উদ্দেশ্যপ্রসূত,
ভাবীগর্ভ বা অন্তঃসারহীন--
তোমার যে-কোনো বাক্য শুনতে আমি উৎসুক |

কৃষ্ণ

আমার বক্তব্য আজ ঋজু  | হয়তো এতক্ষণে তোমার অজানাও নেই |
          

কর্ণ
( তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে )

তাহ’লে তাঁরা তোমারই দূতী --- কুন্তী, আর পাঞ্চালী  ?


কৃষ্ণ

তাহ’লে আমার পরামর্শ উপেক্ষা ক’রে
তাঁরা তোমার কাছে এসেছিলেন ?
আমি বলেছিলাম, ‘কর্ণকে
আমি যতদূর জানি, কেউ কখনো পারবে না
তাঁর স্বীয় সংকল্প তেকে একচুল টলাতে,
একতিল হেলাতে,
বা হার্দ্য বচনে ভোলাতে,
বা ন্যায় আর অন্যায়ের অতি সূক্ষ্ম তর্কের মধ্যে
তাঁর চিত্তকে অবশ ক’রে দিতে, অকস্মাৎ |’
তাঁদের যাত্রা নিষ্ফল হবে, বলেছিলাম |


কর্ণ

কিম্তু আমার পক্ষে নিষ্ফল হয়নি, কৃষ্ণ |
আমি দেখলাম তাঁদের--
একজন : আমার অ-দৃষ্টা, অপরিচিতা --আমার মা |
আর অন্যজন : আমার অস্পৃষ্টা, দূরচারিণী কান্তা |
দুই নারী  : আমি যাদের ভালোবাসতে পারতাম |


কৃষ্ণ

কী বললেন তাঁরা ?


কর্ণ

.        ‘কর্ণ, ফিরে এসো  |
ফিরে এসো তোমার মাতৃহৃদয়ের সিংহাসনে |’
‘কর্ণ, যুদ্ধ করো না |  আমি তোমার বন্ধু হ’তে চাই |’


কৃষ্ণ

আর তুমি ---উত্তরে ?


কর্ণ

.         সূর্য ডুবে যান সন্ধ্যায়
প্রত্যুষে তিনি আবার নতুন |  কিন্তু আমরা
লুপ্ত সময়ে ফিরে যেতে পারি---শুধু কল্পনায়,
কখনো কোনো অপ্রস্তুত মুহূর্তে |


কৃষ্ণ

.         আমার ধারণা ছিলো, কুন্তীর
আর দ্রৌপদীর বুদ্ধি আরো তীক্ষ্ম |
শিশু চায় মা-কে | কিন্তু দীর্ঘকায়, মহাবাহু-কর্ণের
কোন কাজে লাগবেন মাতা ?
তরুণেরা খোঁজে বান্ধবী | কিন্তু যৌবন জীবনের চেয়েও অনিত্য,
এমনকি কর্ণের পক্ষেও, পাঞ্চালীর পক্ষেও |


কর্ণ

.          কিন্তু আমি ---
আমি ফিরে পেয়েছিলাম তারুণ্য --- তাঁদের দেখে :
যেন বালক-- নবযুবক---মাতৃস্নেহলিপ্সু,
নারীর সঙ্গকামনায় চঞ্চল |
আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ-- তাঁরা এসেছিলেন |


কৃষ্ণ

তবু --
তোমার বিচারবুদ্ধি স্থির ছিলো নিশ্চয়ই ?


কর্ণ
( ক্ষীণ হেসে )

কৃষ্ণ, আমার গরলপাত্র মধুর হ’য়ে উঠল আজ |
আমি সতৃষ্ণ | বলো, যুদ্ধের
লগ্ন কি স্থির ?

কৃষ্ণ
( চাপা গলায় )

.        আগামীকাল, সূর্যোদয়ে
আরম্ভ |


কর্ণ
( মৃদু স্বরে, যেন আপন মনে )

.          আগামীকাল, সূর্যোদয়ে--
কিন্তু এখনো সূর্যাস্ত হয়নি  |  এখনো
একটি রাত্রি আছে আমার |  অন্ধকার, নক্ষত্রময়,
উজ্জ্বল, বিশাল এক রাত্রি |
যদি কিছু ভাবতে চাই তা ভাবার জন্য,
যদি দেখতে চাই কোনো অনুপস্থিত মুখশ্রী ,
শুনতে চাই মনে-মনে কোনো কন্ঠস্বর,
বলতে চাই কিছু কথা কোনো স্মৃতিকে --
তার জন্য এখনো একটি রাত্রি প’ড়ে আছে |


কৃষ্ণ

ক্ষত্রোচিত নয়
যুদ্ধের পূর্বক্ষণে এই স্মৃতিবিলাস |


কর্ণ

কৃষ্ণ, তুমি চেনো আমাকে |
শুধু তোমাকেই বলতে পারি, যা অন্য কাউকে বলা যায় না |
মাঝে-মাঝে এক ভ্রান্তি নামে আমার মনে,
এক সুস্বাদু সম্মোহন,
পতঙ্গের গুঞ্জনের সঙ্গে মিশে,
পল্লবের মর্মরের সঙ্গে মিশে :
তখন মনে হয় আমিও পারতাম---
হয়তো আমিও সুখী হ’তে পারতাম--
অন্য কোথাও -- যুদ্ধথেকে, রাজনীতি থেকে দূরে |

         
কৃষ্ণ
( সহাস্যে )

আমারও মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে
যুদ্ধ ছেড়ে, রাজনীতি ছেড়ে, রাখাল হ’য়ে বনে-বনে বাঁশি বাজাই |
শুনেছি, পরজন্মে তা-ই আমার ভাগ্যলিখন |


কর্ণ

ভা       
   
    
  
 
   


   

  
 
 
  


কর্ণ

ভাবতে ভালো লাগে
বৈরাগ্য, নির্জনতা ---দ্বন্দ্বহীন, ছন্দোবদ্ধ দিন,
অন্তরীণ দিনের পরে দিন |
কিন্তু আমি জানি, আমার পথ ভিন্ন,
আমি অপ্রিয় দুঃসাধ্যের সাধক |


কৃষ্ণ

আমিও বলি, বলরামের দৃষ্টান্ত
অন্যদের অনুকরণযোগ্য নয় |
তিনি নিস্ক্রিয় রইলেন ব’লে
কুরুক্ষেত্র কি প্লাবিত হবে না রক্তে ?
কখনো কোনো রাখালের বাঁশির সুরে
কোনো অস্ত্রের গতি কি রুদ্ধ হয়েছে ?
যার নিবারণ সম্ভব হ’লো না, তাতে অংশগ্রহণই কর্তব্য |
কর্ণ, আমি তোমাকে শ্রদ্ধা জানাই--
কেননা সব বুঝেও, সব সত্ত্বেও,
কুন্তীর আবেদন, পাঞ্চালীর প্ররোচনা সত্ত্বেও
তোমার চরিত্র থেকে স্খলিত হওনি তুমি,
আছো তোমার নিজত্ব নিয়ে অবিকল |
অর্থ কি তুমি ভেবে দেখেছো ?


কর্ণ

এই যুদ্ধ
আমার বহুকালের প্রতীক্ষিত, প্রত্যাশিত |
সে অর্থ দেবে আমাকে, আমার অস্তিত্বকে |
আর বিনিময়ে
নেবে আমার চরম চেষ্টা, অন্তিম উদ্যম,
আমার সব অব্যবহৃত আবেগ  |
আমি তাই স্বাগত জানাই
রক্তবর্ণ, ক্ষমাহীন, মুক্তিদাতা এই দেবতাকে |


কৃষ্ণ

তোমার উক্তিতে আমি শুনতে পেলাম
সদ্যজাত ক্ষত্রিয়ের কন্ঠস্বর |
কিন্তু আমার মনে অন্য এক চিন্তা |


কর্ণ

মনে           
   
  




  
    
      
  
  

 
  
  
   
        



কর্ণ

আমার অভিপ্রেত কিছু নেই | শুধু কর্তব্য আছে |


কৃষ্ণ
  
যুদ্ধ দুই পক্ষে. তার আর্তি সর্বজনীন  |
কিন্তু এক পক্ষ অত্যন্ত বেশি প্রবল হ’লে
তা দীর্ঘায়িত হ’তে পারে না |
সবচেয়ে ভীষণ সেই যুদ্ধ, যেখানে দু-পক্ষেরই শক্তি প্রায় সমান-
যেমন পান্ডবেরা, আর কর্ণসমেত কৌরব |


কর্ণ
(  চমকে উঠে, তীব্র স্বরে )

অর্থাৎ, আমাকে পান্ডবপক্ষে যোগ দিতে হবে ?
কুটিল, কপট, চতুর কৃষ্ণ,
তুমিও এই উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছো  ?


কৃষ্ণ
( তীব্র স্বরে )

আমার উদ্দেশ্য মানুষের কল্যাণ |
কর্ণ, তুমি কি দেখছো না
কুরুবংশের এই গৃবিবাদ
আজ বিস্তীর্ণ হ’লো পৃথিবীতে
চীন, যবন, বাহ্লিক রাজ্যের সীমান্ত পর্যন্ত ?
সব নদী যেমন সমুদ্রে মেশে
তেমনি          
       
          
         
       
        
       
       
       


      
         

     
      
     
    
      
          


কৃষ্ণ

.       আছে, কর্ণ |
অনেকের ভাগ্য জড়িত আজ তোমার সঙ্গে |
কেননা পান্ডবপক্ষে তুমি যুক্ত হ’লে
পলকপাতে মীমাংসা হবে যুদ্ধের, আর দুর্যোধন
জয় অসম্ভব বুঝে নিজেই চাইবে সন্ধি |
--- তা-ই করো, কর্ণ, তা-ই করো |  ক্ষণস্থায়ী করো যুদ্ধকে |
ত্বরান্বিত করো শান্তি |


কর্ণ

পারি না, কৃষ্ণ, জয়ী পক্ষে যোগ দিতে আমি পারি না |
তুমি তো জানো,
পরাজয় আমার চিরকালের সঙ্গী, আর পরাজয়ের স্বাদ তীব্র |
পান্ডবেরা বনবাসেও জয়ী : কুন্তী তাঁদের মাতা |
পান্ডবেরা নিঃস্ব হ’য়েও জয়ী :  পাঞ্চালী তাঁদের সাম্রাজ্য |
কিন্তু জয়ীরা তাঁদের প্রাক্তন জয় ভুলে যান, বা লজ্জিত হন
তার তুচ্ছতা ভেবে, কালক্রমে | পরাজয় কেউ ভোলে না |
তিক্ত সেই উন্মাদনা, বিস্মৃতিহীন চিত্তদাহ,
তৃপ্তি নেই, এখনো আমার তৃপ্তি নেই |

         
কৃষ্ণ

কর্ণ, আমি জানি তুমি নির্লোভ, তুমি ত্যাগী |
পৃথিবীর প্রভুত্ব তুমি ফিরিয়ে দিলে,
উপেক্ষা করলে বংশপরিচয় |
আর তাই বলি --
কুন্তী তোমার জননী ব’লে নয়,
কোনো জ্ঞাতিত্ববোধের অন্ধ নির্দেশে নয়,
কিন্তু মানুষের মঙ্গলের জন্য, নিখিলের দুঃখলাঘবের জন্য
তুমি কি আজ নম্য হ’তে পারো না,
পারো না তোমার স্বরক্ত-শাখায় ফিরে যেতে,
ভুলতে পারো না তোমার আত্মাভিমান ?


কর্ণ

আত্মাভিমান ছাড়া আর কী আছে আমার ?


কৃষ্ণ

অসংখ্যের  দুঃখ বা সুখ :  তাও বিবেচ্য  নয় ?

         
কর্ণ

আমি প্রর্থনা করি সুখ, আয়ু, শান্তি -- অসংখ্যের জন্য |

         
কৃষ্ণ

কিন্তু ইচ্ছুক নও তার সম্পাদনায় ?


কর্ণ

আমার যুদ্ধ আমার নিজস্ব-- আমার ব্যক্তিগত |


কৃষ্ণ

কার সঙ্গে ?  কিসের জন্য ?  কোন আকর্ষণে ?
      

কর্ণ

আমি চাই অর্জুনের সঙ্গে দ্বন্দ্বযুদ্ধ -- আর-কিছু নয় |

      
কৃষ্ণ

এখনো চাও  ?  অর্জুনকে ভাই ব’লে জেনেও |

     
কর্ণ

সব হত্যাই ভ্রাতৃহত্যা |

   
কৃষ্ণ

.         কিন্তু যেখানে হত ও হন্তা
একই গর্ভের সন্তান --- সেখানে রক্তে জাগে না বিদ্রোহ ?

    
কর্ণ
 
বি            
     
   
     
       
      
   
     

      
           

         
          

    
         

       
         
         
         
          
    
       
         
       
           
     
   
     
      

        
কৃষ্ণ
( শান্তভাবে )

.       অর্জুনের নয়---- কর্ণের |

      
কর্ণ

কে জানে | অর্জুন আর কর্ণ যখন প্রতিদ্বন্দ্বী ,
কে বলতে পারে ফলাফল ?

     
কৃষ্ণ

.         তুমি কি অর্জুনের
সারথিকে বিস্মৃত হ’লে  ?

     
কর্ণ
( শান্তভাবে )

.          তুমি কি বিস্মৃত হ’লে
তোমার প্রতিজ্ঞা --- কখনো অস্ত্র হাতে নেবে না ?


কৃষ্ণ

আমি যোদ্ধা নই, কর্ণ, আমি ঘটকমাত্র--
আমি কখনো মেলাই, কখনো ছাড়াই, কিন্তু নিজে থাকি
.  সর্বদা বাইরে |
দুই পার্থের দ্বন্দ্বযুদ্ধেও
আমার ভূমিকা হবে দর্শকের |
কিন্তু যেহেতু তোমরা দু-জনে বলে বীর্যে সমকক্ষ,
সমান দক্ষ অস্ত্রচালনায় ;
যেহেতু তোমাদের মধ্যে
সম্ভব নয় একের অন্যের পরাভব--
আমাকে তাই
বিনা স্পর্শে, অতি মৃদু হাতে
খসিয়ে দিতে হবে গ্রন্থি ,
এগিয়ে আনতে হবে সমাপন |
আমি করবো কী, জানো---
ম          
       
          
         
           
         
       
          
       
          
         
                    
           


কর্ণ
( হঠাৎ কেঁপে উঠে )

.    তুমি এ-ই করবে ?

কৃষ্ণ

আমার চোখে পলক পড়বে না |


কর্ণ

.      তুমি লজ্জা পাবে না
মিথ্যাচারে -- প্রতারণায় ?


কৃষ্ণ

আমি তোমাকে অগ্রিম সব জানিয়ে দিলাম---
এর নাম মিথ্যাচার ?


কর্ণ

.      অর্জুন লজ্জা পাবেন না
অন্যায় যুদ্ধে জয়ী হ’তে ?


কৃষ্ণ

.       সব যুদ্ধই অন্যায়  |
সব হত্যাই ভ্রাতৃহত্যা |  কিন্তু তুমি আর অর্জুন ---
সমতুল্য-অতুলনীয় দুই বীর--
অসম্ভব নয়
তোমাদের যুদ্ধে অন্য এক ভীষণতর সমাপ্তি--
অকথ্য -- প্রায় অকল্পনীয় --
দুই ভ্রাতার
দুই পার্থের
একই গর্ভের সঞ্জাত দুই পুরুষের
পরস্পরের হাতে সংহার, একই মাতৃশোণিতে নিমজ্জন--
যুগপৎ মৃত্যু, দ্বিগুণিত হত্যা !
সেই আতঙ্কময় পরিণাম খন্ডনের জন্য--
অনিচ্ছা কাটিয়ে, প্রতিজ্ঞা সত্ত্বেও--
আমাকে সংকটকালে হ’তেই হবে সক্রিয় |


কর্ণ
( তীব্র স্বরে )

সত্যভঙ্গ ক’রে সক্রিয়,
ধর্মের বিরুদ্ধে, কর্ণের বিরুদ্ধে--
শুধু এইজন্য,
আশ্রিত অর্জুন যাতে বিনষ্ট না হন !
আর এই কৃষ্ণকে
কেউ-কেউ বলে থাকেন মহাত্মা !


কৃষ্ণ
( শান্ত স্বরে )

ধৈর্যহীন বিচার কোরো না, বন্ধু,
আমার কথা শেষ পর্যন্ত শোনো  |
অর্জুন আমার আশ্রিত হ’তে পারেন, কিন্তু তুমি আজ নির্বাচিত |
আমি রচনা করেছি তোমার জন্য এক উপহার--
তোমারই মতো বীরের যা যোগ্য,
আর যার যোগ্য তুমি ছাড়া অন্য কেউ নেই--
শ্রেষ্ঠ কীর্তি, সর্বশেষ সাফল্য,
এক অন্তিম ও অন্তহীন অভিনন্দন,
এক মৃত্যু, যাতে আহত হবে সর্বযুগ,
এক অমরতা, দিনে-দিনে উজ্জ্বলতর |
-- কিন্তু তুমি যদি গ্রহণ করতে না চাও, তবে বলো !

( ক্ষণকাল পরে )

কর্ণ, তুমি কি ভেবে দেখবে আর-একবার ?


কর্ণ

আমি বহু দূর এগিয়ে এসেছি, কৃষ্ণ | আর ফিরতে পারি না |


কর্ণ

.         কেউ ফিরতে পারে না |
অর্জুন -- তুমি --অন্য সব যোদ্ধারা -- কেউ না |
সকলেই বাধ্য | আমিও তাই-ই |


[  
কয়েক মুহূর্ত নীরবতা | ]

কৃষ্ণ

সূ         


           

           

      

      
          
       
        
         
      
      
        
          
          
      
     
      
      
     
      
       
    
      
         
       


কৃষ্ণ

এ-যুদ্ধে সকলেই পরাজিত হবে, কর্ণ--
জয়ী, বিজিত, হত, উদ্বৃত্ত---সকলেই |


কর্ণ
(ঈষৎ হেসে )

মহাজ্ঞানী, আমার শেষ নমস্কার তোমারই জন্য |
এসো,  আলিঙ্গন দাও |

( আলিঙ্গন ক’রে )

আ       
          
         
        
       


     

              
            


          


             

            
           
                      


দ্বিতীয় বৃদ্ধ

কেউ-কেউ কামনা করেন মহত্ত্ব --- মৃত্যুর মূল্যেও |
মানি, তাঁরা শ্রদ্ধেয় | কিন্তু আমি তাঁদের ভয় করি |
আমি বলি, তারাই ধন্য, যারা সাধারণ,
যাদের চরম লক্ষ্য সহজ সুখ, সাংসারিক তৃপ্তি --
তাদেরই জন্য মানব-বংশ আবহমান |


যবনিকা

*************                
.                                                          
.                                                                
প্রখম পার্থর সূচিতে . . .   
.                                               
বুদ্ধদেব বসুর কবিতার মূল সূচিতে . . .   
.                                                          
এই পাতার উপরে ফেরত . . .    



মিলনসাগর
দেবেন যুদ্ধে |