কবি সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা
*
উটপাখি
চৈতালী চট্টোপাধ্যায়
( এই কবিতাটি 'নন্দীগ্রাম থেকে কলিঙ্গনগর' পত্রিকার মে ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত
হয়েছিল | )

এখানে সুন্দর রাত |
মশারির মধ্যে হাতপাখা |
পালঙ্ক গড়িয়ে নামছে পণ্যের জল,
লিঙ্গ অনুযায়ী |
এখানে মাল্টিপ্লেক্সে একরাশ সিরিয়াস সিনেমা চলছে |
এখানে পাঁঠার ঝোল রাঁধতে-রাঁধতে
আলোচনা চড়িয়েছি ভূমিহীন চাষিদের নিয়ে |

দূর থেকে জানাই দুঃখ,
তিন বা চার ফসলা জমিগুলিকে |
যেখানে,
ধর্ষণের পর নেতিয়ে রয়েছে বীর্য, আর,
মানুষ মারার পরেও গজিয়ে উঠছে শস্যগাছ |
দূর থেকে জানাই দুঃখ,
কাছে গেলে,
মাটি তার বাস্তবসুদ্ধ উপড়ে উঠে এসে
আমাকে লজ্জায় ফেলে দেবে |

.           **************     
.                                                                                      
সূচিতে . . .    
.                             
অন্যান্য কবিদের সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার সূচির পাতায় . . .    
.                                           
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় . . .   


মিলনসাগর
*
বিরহের কবিতা
চৈতালী চট্টোপাধ্যায়

ভেবেছি কাছে যাব ভেবেছি চেয়ে নেব
চুমু বা ভালবাসা                 যেটুকু দিতে পারো
অথচ রোদ্দুরে                    পিচের রাজপথে
যখন চশমাতে                    নয়ন দুটি ঢেকে
(আকাশ ভারী হয়                আগুন চমকায়)
তুমি কি হেঁটে যাও আন্ বাড়ির দিকে
হৃদয়ে রাগ ছিল                   অতল খাদ ছিল
তীব্র সেঁকো বিষে                 পুড়ছে দিনগুলো
কারা যে কেঁপে ওঠে              কারা যে ছায়া দেয়
পূর্বজীবনের                        গাছ ও গাছালিরা
আমি কি জল দোব শিকড় উপড়োব
নিটোল বর্ষণে                      ভাসাব কলকাতা

.                **************     
.                                                                                      
সূচিতে . . .    
.                             
অন্যান্য কবিদের সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার সূচির পাতায় . . .    
.                                           
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় . . .   


মিলনসাগর
*
বিজ্ঞাপনের মেয়ে
চৈতালী চট্টোপাধ্যায়

আঙুল উঁচিয়ে ডাকল সেই মেয়ে, ‘তীরে আছ?
আমি যে এখনও ভাসছি জলে।’ ওর হাতে পায়ে
চিকচিক করছে জলবিন্দু, বুক পর্যন্ত ভীষণ স্রোত।
এতক্ষণ ডাঙা ভেবে যেখানে আশ্রয় নিয়েছিলাম,
সেই মৃত চর আসলে এক ফেনা মাত্র, বুদ্বুদের মতো
জলে মিলিয়ে গেল। আমার চারপাশে প্লাবনের
শব্দ হৈ হৈ করে কেড়ে নিচ্ছে পায়ের তলার মাটি।
মানুষজন তবু স্থির দাঁড়িয়ে হাসছে, গল্প করছে, শঠতায়
ফুলে উঠছে চোয়াল। এত যে কলরব, ধ্বসে যাচ্ছে
পার, টের পায় না কেউ। গৃহস্থবাড়িতে একনও কেন
শাঁখ বেজে উঠল না ?

.        একা মেয়ে, তার গায়ে জ্বলছে রাশি
রাশি টুনি বাল্ব, বুক জল ঠেলে বয়ে নিয়ে বেড়ায়
অমঙ্গলের বার্তা। বেঁধে দেয় সংযোগের ছেঁড়া
সুতো। ওপারে যে সালঙ্কারা বধূটি মাথা হেঁট
করে বসেছিল, সে এবার একে একে ভাসিয়ে দিল
কনকচূড়, সিঁথি, সীতাহার। খড়কুটোর মতো ভেসে
যাচ্ছে গহনা।

.                **************     
.                                                                                      
সূচিতে . . .    
.                             
অন্যান্য কবিদের সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার সূচির পাতায় . . .    
.                                           
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় . . .   


মিলনসাগর
*
তস্কর
চৈতালী চট্টোপাধ্যায়

আমিও জেনে গেছি আপত্কালে ফের ধর্মপ্রবণতা জেগেছে
.                                                        তার
তাই শীতকালে হলুদ নামাবলী সঙ্গে নেই প্রিয় উইঞ্চিটার

এবার মুখগুলি অনেক উজ্জ্বল এখন চোখগুলি ভারি কোমল
এবং মুখোশের গল্প হল শুরু নদীতে বহে গেল প্রচুর জল

কেমন সেই নদী ? জীবনযাপনের যা কিছু ভয় তার প্রবাহে
.                                                        রয়
কীসের ভয় ? কেন, স্রোতের মুখোমুখি একটি দুটি ঢেউ,
.                                                অনিশ্চয় . . .

একদা আলো-জ্বলা জানালা দরজায় সে শুধু রেখে যেত
.                                                অন্ধকার
এখন প্রতিদিন যত্নে প্রয়োজনে ফোটায় নানা ফুল,
.                                                পাতাবাহার

আমিও জেনে গেছি এই যে ফুল ফোটা, অন্ধকার পথে কান
.                                                        পাতা
আপাতবিরোধিতা ছড়ানো সবখানে---উত্সমুখে আছে শূন্যতা

.                     **************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    
.                             
অন্যান্য কবিদের সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার সূচির পাতায় . . .    
.                                           
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় . . .   


মিলনসাগর
*
প্রেম
চৈতালী চট্টোপাধ্যায়

মনে আছে গান ? রটনা পেরিয়ে তাকে ছুঁয়েছিলে ?
তবে সেই শীত রাত্রির মতো নির্জন, একা বসে আছ কেন ?
আলো জ্বালাওনি পর্দার ছায়া দেখে কেঁপে উঠছ, চোখে জল---
. . . ঘুম পায় শুধু ?

বলো, আজ পুনর্বাসনের গল্প, মেয়েটির ঘরে ফেরবার গল্প বলো।

.                       **************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    
.                             
অন্যান্য কবিদের সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার সূচির পাতায় . . .    
.                                           
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় . . .   


মিলনসাগর
*
চিঠিপত্র ৪
চৈতালী চট্টোপাধ্যায়

কবিতা-পড়ার শেষে কেমন আঁধার হয়ে এসেছিল তোমার স্বর
যদিও ততক্ষণে ঘরে আলো এল আর
তুমি কাউকেই বোঝাতে পারলে না
দংশনগুলি কীভাবে শিল্প হয়ে ওঠে
শিল্পের শরীরে কীভাবে স্পষ্ট লেগে থাকে দংশনের দাগ


দেখি লেখা আছে, ‘একটি অন্ধকার
ভেসে চলেছে অন্ধকারের দিকে . . .’ ওগো, নিশ্চেতন অন্ধকার
ওগো, সুপ্তির ভিতরে ঢেউ হয়ে ফুলে-ওঠা অন্ধকার
আজ ভোরবেলাটিকে ভালবেসে তুমিও কি গ্রহণ করবে না আলো
বলো, করবে না ?

.                       **************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    
.                             
অন্যান্য কবিদের সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার সূচির পাতায় . . .    
.                                           
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় . . .   


মিলনসাগর
*
কবিতার জন্ম
চৈতালী চট্টোপাধ্যায়

ভরসন্ধের কবিতা-পাগল হাওয়া উতরোল কাঁপায় আমাকে
আমি কি কেঁপেছি ফুল্ল কুসুমে সাজালো জীবন জটীল তামাশা
জলে পুড়ে খা খা রক্তের ডেলা শিশু শব্দেরা দাপাদাপি করে
স্ফীত জরায়ুতে নাদব্রহ্মের অসহ্য ভার বইতে পারি না
আমি কি কখনো হাতির দাঁতের মিনারে পোঁছে লিখিনি কবিতা
অথচ এখন ধুলো ধুস্কুর দুব্বোঘাসেরা দুবেলা ডাকছে
ট্রামলাইনের পাত বরাবর জ্বলছে নিভছে সাদা ভালোবাসা
ধুয়ে মুছে চাঁদ জ্যোত্স্না-প্রপাত ভাসিয়ে দিয়েছে কে ছোট কে বড়
মাটির মেঝের গণ্ডী কেটো না আল্পনা আঁকো আমাকে শোয়াও
তিথি ও তারারা স্বাগত জানাক স্রোত বয়ে যাক অনাবিল স্রোত

.                         **************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    
.                             
অন্যান্য কবিদের সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার সূচির পাতায় . . .    
.                                           
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় . . .   


মিলনসাগর
*
প্রস্তাবনা
চৈতালী চট্টোপাধ্যায়

যৌনতার কথা ভেবে যারা নীল চকখড়ি দিয়ে মাছ এঁকেছিল, বাখরুম-
দেওয়ালে যারা যোগচিহ্নে এঁকেছিল রুমা ও শিবুর নাম, কবিতায় তাদের
প্রসঙ্গ আমি যদি, সংক্রান্ত দৃশ্যজাল বুনি যদি, ও পাখি, রহস্য কুড়োনোর
আগে যাও, বিজ্ঞজনের কাছে জেনে এসো, একো কবি, তায় মেয়েমানুষটি এই
আমি, প্রকৃত আবহ গড়ে নিতে গিয়ে সকল অক্ষর আজ গঙ্গাজলে চুবিয়ে
নিয়েছি, দোষ কাটবে তো ? সই পাখি, সুন্দরের আরো কাছে যেতে চাই।
চাই মহত্তর বোধ, বোধির শরণ। এমনকি আমাদের ছোট্ট খুকির কথাও
বলে যেতে চাই বার বার। মানুষের দিকে ফিরি। অবাধ গর্ভপাতের
পাতলা হ্যাণ্ডবিল ল্যাম্পপোস্টে সেঁটে দেয় লোক। আকাশের দিকে ফিরি।
অন্ধকার মুছে নেয় আলোকসম্ভব মুখগুলি

.                         **************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    
.                             
অন্যান্য কবিদের সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার সূচির পাতায় . . .    
.                                           
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় . . .   


মিলনসাগর
*
দেবীপুজো
চৈতালী চট্টোপাধ্যায়

উনকোটি উপচার।
ফ্রিজ ডিফ্রস্ট থেকে ময়লার বালতি অবধি।
ধূপের ধোঁয়ার মতো হাহাকার পর্দা ওড়ায়।
একে ওরা ভোরবেলাকার চণ্ডীপাঠ বলে মনে করে।
বেলা বাড়ে
আঁশ ও আগুন সহকারে।
এইবার দশ হাত লাগানো হবে।
নীলকণ্ঠ পাখিটাখি নেই।
মশারি সেলাই শেষে দাঁত দিয়ে সুতো কাটি যেই
অম্নি কপালে স্বামী চুম্বন দিল।
আজ চাঁদ ভরা ঝাড়বাতি।
এটাই বাড়তি।
ওরা একে চক্ষুদানপর্ব বলে থাকে

.            **************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    
.                             
অন্যান্য কবিদের সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার সূচির পাতায় . . .    
.                                           
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় . . .   


মিলনসাগর
*
সত
চৈতালী চট্টোপাধ্যায়

তাহলে ঝাড়বাতি তুমিই ভেঙে ফোলো তুমিই দাঁতে কাটো টুকরো কাঁচ
লজ্জাবস্ত্রটি আগুনে পুড়ে গেলে পারসি কার্পেটে সিঁদুর ছাপ

নদীর বুক চিরে কলার মান্দাসে যে মেয়ে বহে গেছে মৃত্যুতে
ঘুঙুর বেজেছিল নৃত্যে অপমানে মিথ্যা মহিমায় তাকে বেঁধে

অথবা সে যেদিন ইন্দ্রপ্রস্থের কামুক পুরুষের ভোজসভায়
আঁচল তুলল না বিনুনী বাঁধল না দু-চোখে অভিশাপ নীরবতার

তুমিও প্রবাহিত হয়েছ সেই স্রোতে যে স্রোতখানি ছিলো কালো আঁধার
ভাসিয়েছিল কারা হাত পা বেঁধে কারা চিতায় তুলেছিল অনেকবার

তাহলে ভাঙা কাচ তুমিই জড়ো করো আঙুলে মিজরাব না পরা থাক
তাহলে প্রেমিকার ছদ্মবেশ খোলো চৈত্র রাতগুলি বিফলে যাক

.                           **************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    
.                             
অন্যান্য কবিদের সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার সূচির পাতায় . . .    
.                                           
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় . . .   


মিলনসাগর