কবি চম্পা রায়চৌধুরীর কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।  www.milansagar.com
*
হঠাৎ চলে যাওয়া
চম্পা রায়চৌধুরী

বিশ্বাস হয় না ----- তুমি আজ আমার পাশে নেই,
কিন্তু সকলে বলে--- এটাই নাকি একান্ত সত্যি,
আমার বুকের মাঝে যে আছে -- সে যে সেই সেই |
কেন মনে নাই তোমার গুরুদেব বলেছিলেন---
মৃন্ময়ী যায় জলের তলায়, চিন্ময়ী রয় হৃদে |
সেই বিশ্বাস, সেই শক্তি বাবাই ত’ দিলেন |
তাইত’ একা একাই ছয় বছর কাটিয়ে দিলাম,
এমনি ক’রে কত বছর, কত যুগ কেটে যাবে----
মনে মনে ভাবি ----- আমরা কত আনন্দে ছিলাম |
কাউকে বুঝতে দিইনা--- আমার মনের কষ্ট
সবাই ব’লে --- বেশ তো আছিস, ভালই আছিস,
ফিরতি জবাবে করতে চাইনা, তাদের ধারনা অস্পষ্ট |
চিৎকার ক’রে বলতে ইচ্ছা ক’রে --- ভাল আছি,
আমি ভাল নাই ব’লে সকলের সহানুভূতি চাই না----
বড় ছোট লাগে নিজেকে, সকলের সহানুভূতি নিয়ে বাঁচি |
তুমি ত’  জান --- কেমন আছি সেটাই বড় সান্ত্বনা |
যদি কোন দিন প্রয়োজন হয়, ডেকো আমাকে
সব ফেলে দিয়ে তোমার মত চলে যাব------
.                           আর চাই না আত্মলাঞ্ছনা |

.                    ***************  
.                                                                                    
উপরে    


মিলনসাগর
*
১লা আষাঢ়-- ১৪১৪
চম্পা রায়চৌধুরী

কবির কবিত্বে ------ আষাঢ়ষ্য প্রথম দিবস আজ,
আকাশেতে নব মেঘের ঘন ঘটার সাজ |
কিন্তু একফোঁটাও বর্ষার মুক্তর মতো জল ঝ’ড়ল না,
কালীদাসের মেঘদূতের মতো বারতা পাঠাতে পারলাম না |
মেঘেরা নিতে চাইল না আমার “কদম” পাতায় লেখা চিঠি,
ডেকেছিলেম তাদের, এড়িয়ে সবার দৃষ্টি |
কিন্তু না, আষাঢ়ষ্য প্রথম দিবস বৃথাই গেল,
একা একাই চোখ দুটি এক ফোঁটা মুক্তের মত জলে ভ’রে এলো |
নাঃ --- আমারই
ভুল, কালীদাসের কাল ত’ আর নাই
মেঘেরা বুঝবে কি ক’রে, এই মুহূর্তে আমি কি চাই ||

.                    ***************  
.                                                                                    
উপরে    


মিলনসাগর
*
ছোট্ট বেলা
চম্পা রায়চৌধুরী

ওঃ--- তোমাকে  বলিনি বুঝি------
.             আমার ছোট্ট বেলার কথা---
সেই দিন গুলো ভাবনায় এলে,
.             মনে জাগে বড়ই ব্যথা |
কত সুন্দর ছিল-সেদিন গুলো--
আজ হঠাৎ করে মনটা যেন ছুঁলো |
সেই যে সুন্দর গ্রামটি
.            যেখানে রাস্তা গুলো মাটির
সেই পথটি ধ’রে এগোতে গেলে --
.            মনে হয় “বড্ড” ব্যথা লাগেছে আমার “মা” টির |
স্বচ্ছ পুকুরের জলে কত ফুল,
.            জান না বুঝি !  ঐ ফুলকেই বলে “শাপলা” |
ওহো ! তুমি বুঝবে কি ক’রে
.            তুমি যে শহরকে করেছ আপনা |
ঐ গুলিকেই বলে  “শাপলা” ফুল |
গ্রামে ছিল না বিজলী আলো
জামরুল গাছের তলে মাদুর বিছিয়ে
সুন্দর পড়ার জায়গা হ’তো  তৈরি,
‘প্রকৃতিমা’ গাছের পাতা নাড়িয়ে
দিতেন মিষ্টি হাওয়া-------
.            সে যে কি মিষ্টি, কি ভালো |
ভাদ্দর মাস এলেই বেশ বোঝা যে’ত
.            বাতাসে ঠিক পূজো পূজো গন্ধ,
ভাবছ, আবোল তাবোল বকছি,
.            না --- একটুও ক’রো না সন্দ |
প্রতিমা গড়তে ঠিক সময়
.            চলে এলো ‘নিবারণদাদা’ আর ‘কাঙ্গাল ভাই’,
আরও কত জন, মা ব্যাস্ত তাদের খাবার ব্যবস্থায়,
.            বই থেকে আমাদের মনটা উধাও হতো তাই |
যেই না কুমোরেরা খাবার জন্যে যেত ভিতরে,
অমনি টুক ক’রে সুন্দর পলিমাটি
.           তুলে নিয়ে লুকিয়ে ফেলতাম কোঁচরে |
উঃ--- সে যে ছিল কি আনন্দের দিন
.           তোমরা পেলে না কোন স্বাদ তার,
যখন ভাবি আমাদের ছেলে বেলা,
.           আর কত তফাৎ তোমাদের ছেলেবেলা-----
মনটা হ’য়ে যায় ব্যাথাতুর----- ভার |
কাশের বনে হাওয়ার হিল্লোল,
শিউলি ফুলের মিষ্টি মিষ্টি গন্ধ,
মনে তোমায় করিয়ে দেবে-ই
.           মায়ের আগমনের আর নেইকো দেরী,
‘সোনাদি’ ‘মঞ্জুদি’  তাড়াতাড়ি বসো
.           আমাদের নতুন জামা করতে তৈরী |
আজ আর হলো না সারা
.                আমার ছোট বেলার গল্প |
আবার যদি মন চায়
.          বলবো তোমাদের সেই
আমার ছোট্ট বেলার মিষ্টি গল্প সল্প |

.                ***************  
.                                                                                    
উপরে    


মিলনসাগর
*
বাদল ঝরা সন্ধ্যা
চম্পা রায়চৌধুরী

সকাল থেকে ঝরছে বাদল ধারা
আকাশটা বুঝি হয়েছে ফুটো,
তাই তো শুনছি মিষ্টি সুর মাদলের সাড়া |
কিন্তু মনটা কেন নেচে উঠছে না----
ময়ূরের পেখম মেলার মত ?
মনটা কেন জানি না ভারি হয়ে আছে,
.        জল টৈ টুম্বুর মেঘের মত |
মনটাকে আনন্দের হিল্লো
লে
.        মাতিয়ে রাখতে চাই |
কিন্তু সেতারের তারটা কেটে গেছে
.        সুন্দর সুরটা আর নাই |
ময়ূর তোমার পেখম খোল,
.        মনটাকে ভরিয়ে রাখতে চাই আনন্দে,
তাইতো তোমায় ডাকছি আমি
.        পেখমের রঙে মনটাকে ভরিয়ে দাও সানন্দে |
জানি--- তুমি আমার অনুরোধ রাখবে,
মনটাকে ঠিক আবার আনন্দে
.                         দেবে ভরিয়ে------
বাঁচার পথটা ঠিকই তুমি দেবে
.         অলীক আশায় রাঙ্গিয়ে ||

.                ***************  
.                                                                                    
উপরে    


মিলনসাগর
*
মাতৃ আবাহণ
চম্পা রায়চৌধুরী

মাগো তুমি আসছ আবার
.              একটি বছর পরে,
কি দিয়ে মা পূজবো তোমায়
.              ব’ল সত্যি ক’রে |
ভেজাল তেলের প্রদীপ জ্বেলে
.              করতে তোমা বরণ,
সায় দিতে যে নারাজ আমার
.              শুভ্র সজীব মন |
প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে তোমা
.              ক’রবো আবাহণ,
নয়ন জলে ধুইয়ে দেবো
.               রাঙ্গা দুটি চরণ |
হৃদ পদ্মে হবে মায়ের
.               পূজা সমাপন-----
ছাড়ছি নাকো এবার তোমার
.               রাতুল শ্রীচরণ |
বিল্ব পত্র , গঙ্গা জল আর
.               রক্ত চন্দন.
ভক্তি রসে সিক্ত হবে
.               মাতৃ আরাধন ||

.                ***************  
.                                                                                    
উপরে    


মিলনসাগর