কবি চন্দন ভট্টাচার্য্যর কবিতা ও ছড়া
বাঁধন ছেঁড়া
কবি চন্দন ভট্টাচার্য্য
              
আপন মনে লিখব কথা   আবোল তাবোল তুচ্ছ যা তা –
.       চলব যেথায় কলম চলে   বাড়িয়ে তাকত, বুকের পাটা।
.       ঘুরব যেথায় মন চলে যায়  হায়না হাসির হাসুনোহানায়
ঝোপের ফাঁকে বিপদ থাকে  বুক দুর্‌দুর্‌আঁধার ঘনায়।
নিশুত রাতে ইশারাতে    ভুতগুলো সব খেলায় ডাকে –
.       নাকী সুরে নিঝুম পুরে    গা ছম্‌ছম্‌শব্দ হাঁকে –
মৃত্যু পাখায় ঘুর্ণি ওড়ায়   কালো বাদুর হাওয়ায় ঘোরায়,
.       নিথর কালো কেড়ে নিল   বাঁচার আশার সকল ঊপায়।

.       এমন সময় আকাশ জুড়ে  পক্ষীরাজের ঘোড়ায় চড়ে
.       নামল যারা বাঁধনছাড়া   জীবন লাগাম মুঠোয় ধরে -
.       টগ্‌বগিয়ে তাদের সাথে    চলব আকাশ পাহারাতে,
.       সাগর ডুবে, পাহাড় চড়ে,  ধূ ধূ মরূর সাহারাতে।
.       রাজকণ্যা ঘুমিয়ে থাকে    আঁধার মনের গহীন বনে –
.       রাজপুত্র জাগায় তাকে,    সোনার কাঠি ছোঁয়ায় প্রাণে ;
জগৎ জনের মুক্তি ঘটায়   ভোরের আলোর নবীন গানে –
.       জড়েরা সব প্রাণ ফিরে পায়  চলার গতির সহজ টানে।

.                           ************
.                                                                                             
সূচী . . .    




মিলনসাগর
*.
কর্তব্য
কবি চন্দন ভট্টাচার্য্য

শত শহিদের রক্তে রাঙানো
পূণ্য এ দেশভুমি
ক্ষুদিরাম বোস, প্রফুল্ল চাকী
শত বরষেতে নমি।
প্রথম শহিদ বিপ্লবীদের
প্রথম দৃঢ় আওয়াজ,
‘বিদেশী শাসন মানবনা মোরা’
গর্জিল যেন বাজ।
সেই আওয়াজের অনুরণধ্বনি
বেজেছিল অন্তরে -
আপামর জাতি ঘৃণা বর্ষায়
বৃটিশ শাসন পরে।
যত লহু তাঁরা ঢেলেছিল তার
সকল বিন্দু থেকে
দেশ প্রেমিকেরা জন্ম লভিল
সীমারেখা দিল এঁকে।
সে সীমানা নিয়ে বাস করি মোরা
স্বাধীন ভারত মাঝে -
‘তাঁদেরই রক্ত কমবেশী করে
প্রতি ধমনিতে রাজে’।
আজ যদি এই দেশের মাটিতে
অধর্ম করে বাস,
তাঁদের স্মরণে বল আনো মনে
অন্যায় কর নাশ।

শ্রী ক্ষুদিরাম বোস ও প্রফুল্ল চাকীর মুক্তিবেদিতলে প্রাণের অর্ঘদানের শতবর্ষ স্মরণে -
শ্রী প্রফুল্ল চাকী (জন্ম – ১০ই ডিসেম্বর, ১৮৮৮ ; ধরা না দিয়ে নিজের গুলিতে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ – ১লা মে ১৯০৮)
শ্রী ক্ষুদিরাম বোস (জন্ম – ৩রা ডিসেম্বর, ১৮৮৯ ; ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুবরণ – ১১ই অগাষ্ট ১৯০৮)

.************
.                                                                                             
সূচী . . .    




মিলনসাগর
*.
একুশে ফেব্রুয়ারি
কবি চন্দন ভট্টাচার্য্য

বাংলাভাষা মোদের ভাষা যোগায় সুধা প্রাণে ,
মনের কোণে স্বস্তি আনে কথায় এবং গানে ।
পাক প্রধানের রাষ্ট যখন করল হুকুম কড়া –
উর্দু ভাষায় করতে হবে সকল লেখাপড়া ,
আগুন হয়ে উঠল জ্বলে সমস্ত দেশ রাগে ,
বঙ্গভুমি গর্জে ওঠে “আমার ভাষা আগে ।”
    
অনেক ছেলেই প্রাণ দিল তার আপন দেশের হয়ে,
পদ্মা দিয়ে গেল অনেক রক্তপানি বয়ে ।
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ বাহান্ন সাল তবে –
রক্ত দিয়ে নাম লিখাল বাংলাভাষায় সবে ;
সালাম, আবুল, জব্বরভাই, ছাত্র আরো কত,
পাকচক্রে শহীদ হল অভিমন্যুর মত ।
   
তাঁদের পদচিহ্ন ধরে ভাবিকালের রথে ,
জালিম হুকুম নাকাম করে গলিতে রাজপথে
বাংলাভাষা এগিয়ে চলে বিজয় নিশান ওড়ে –
মাতৃভাষা দিবস হয়ে
UNESCO পরে ।

শাসনপাশে যতই ত্রাসে বাঁধুক অত্যাচারী ,
মুক্তমনায় ততই শানায় একুশের তরবারি।


.************
.                                                                                             
সূচী . . .    

(বরোদায় আয়োজিত মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ব্যবহৃত ।)   


মিলনসাগর
*.
দেখা হবে দু’জনায়
কবি চন্দন ভট্টাচার্য্য

দেখা হবে দু’জনায় -
.      কোন সুখ প্লাবনেতে
ভেসে যাওয়া প্রেরণায় –
.      মঞ্জুল শিঞ্জিনী গুঞ্জন পরছায়
.              দেখা হবে দু’জনায়।

কল্পনা তরি ভেড়ে  
.       জাহ্নবী কিনারায় –
গৌড়ের রথ যেথা
.       কালের অসীমে ধায়
.              দেখা হবে দু’জনায়।

আহত সে শ্বেতপাখি
.       বোবা ব্যাথা হতাশায় –
রণছোড় গৃহ মাঝে
.       ঘণঘোর বেদনায়
.             দেখা হবে দু’জনায়।

সহ্যের সীমা ছেড়ে
.       উচ্ছেদ অন্যায় ,
মন্দের অন্ধের
.       স্পর্ধা যেখানে যায় -
.              দেখা হবে দু’জনায়।

স্বর্গের অর্ঘের
.       অনাদর বাসনায়
আদম বাঁধন ছেঁড়া
.       ইভ্‌ যেথা ভেসে যায় –
.              দেখা হবে দু’জনায়।

.            ************
.                                                                                   
সূচী . . .    





মিলনসাগর
*.
সন্ধান
কবি চন্দন ভট্টাচার্য্য

আকাশেতে ছন্দ নেই
.            গন্ধ-বর্ণ অভিলাষা ,
মনে ঘোরে কথা কত
.            বেড়া ভাঙে শত ভাষা।
সঙ্গিন উদ্যত
.            হৃদয়েতে আলোড়ন –
দুর্গম পথ বেয়ে
.            ধেয়ে চলে এ জীবন।

.            ************
.                                                                                   
সূচী . . .    





মিলনসাগর
*.
কালক্ষেপ
কবি চন্দন ভট্টাচার্য্য

সময় যে বৃথা গেল –
.           দিয়ে গেল অকারণ
.                      কুয়াশার ঝাঁক্‌,

ছিল যবে শুভক্ষণ
.           দ্বিধাভরা এই মন
.                 শোনেনিতো আহ্বান –
.                        জীবনের বাঁক্‌
তাইত সে না পেরল ;
.            বসন্তের ছোঁয়া নিল –
.                 চঞ্চল হৃদয়ে তবু
.                        হতাশার পাঁক।

নতুন বছরে রাখ্‌
.            আগামি কালের ডাক ,
.                 পুস্পহীন বসন্তের
.                         অভিমান থাক।

.            ************
.                                                                                   
সূচী . . .    





মিলনসাগর
*.
মোরা কল্পে রঙিন
কবি চন্দন ভট্টাচার্য্য

মোরা কল্পে রঙিন -
     তুলে জীবনের বীন
আজ বাজিয়ে আলোর গানে
        চমকাব দিন।

মোরা গল্পে যেদিন
     ডেকে ড্রাগনের চিন
হানি মুখের আগুনে পোড়া
         ছন্দ কঠিন –

তবে হাওয়ার মানুষ
     মোরা উড়াব ফানুস্‌,
ডেকে ঝঙ্কারী সঞ্চারী  
     মরু বেদুইন।

মোরা তুলব ফণা
     ভুলে ক্ষুধা যাতনা,
মোরা আসল ফসল বুনে
        ভাগ নেব না।

মোরা তরিৎ কূলে
     আসি সহজ ভুলে –
গা’ব জীবনের জয়গান
         বাঁধা মানি না।

.            ************
.                                                                                   
সূচী . . .    





মিলনসাগর
*.
নেতার ডায়েরি থেকে
কবি চন্দন ভট্টাচার্য্য

অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল
     পুরনো আমলের বাতিঘরটা সারিয়ে নেব,
নিজের হাতে জমা ঘরের আবর্জনা পুড়িয়ে,
     তেল চিট্‌চিটে চিমনির কাচকে ঝক্‌ঝকে করে মেজে
রঙিন বাহারি কাগজে মুড়িয়ে  উঁচু অলিন্দে টাঙিয়ে রাখব-
     পাকানো পলতের সাদামাটা আলো
        জম্‌কালো হয়ে বহু দুর থেকে
           জাহাজীদের চোখে পড়বে;
 তোমরা ভাববে কোন মহৎ কর্মী
     আঁধার রাতের ধাঁধা কাটিয়ে
     অদৃশ্য আততায়ী কোন ডুবোপাহাড়ের
চোখ রাঙানিকে তুচ্ছ করে ওদের পথ দেখাচ্ছে।

আর আমি শুধু জানব
   আমার চারিদিকে আছে নিশ্চিত নিরাপত্তার ঘের ,
যেখানে ডুবোপাহাড় আমার নাগাল পাবে না,
     উঁচু উঁচু ঢেউগুলো শুধু তোমাদের
     ভেসে থাকার আকাঙ্খাকে ধাক্কা মারবে;
আর আমার পিছনে থাকবে
    পালিয়ে যাবার বিশ্বস্ত ডাঙা ;
তাই আমি মাঝ-দরিয়ার লড়াকুদের নেতা হয়ে
    তোমাদের নিশ্চিন্ত ভরসা যোগাব।

      আমি ঢেউয়ে ঢেউয়ে ঝঞ্ঝা পাঠাব ,
   কালো পাহাড়ের আড়ালে ঢাকা থাকবে
                আমার গোপন ষড়যন্ত্রের ছায়া;
সামনে দেখা রঙিন আলোয় মুগ্ধ হয়ে
   তোমরা ডিঙোতে থাকবে ভয়ের খাড়ি -
   যদি বাঁচো      গাইবে আমার জয় ,
   যদি ডোবো - সকলে বুঝবে তোমাদেরই ভুল;
তাই তোমরা ভুলের মাসুল হিসাবে শহীদ হয়ে
  আমার বাতিঘরের আলো কে আরো উজ্জ্বল করবে।

.                         ************
.                                                                                   
সূচী . . .    





মিলনসাগর
*.
পরশ্রীকাতর সমীপেষু
কবি চন্দন ভট্টাচার্য্য

চারপাশের বড় হয়ে ওঠা
             গাছেদের কেটো না,
ওরা তোমার সহজ বেড়ে ওঠাকে
             আটকাবে না –
বরং তোমার মুক্ত নিঃশ্বাসকে শুদ্ধ করে
  দেহের বহমান রক্তধারাকে স্বস্তি দেবে।

 তোমার রক্তে লাল রঙ আন,
      ঈর্ষা তপ্ত বিষ নীল হাইড্রার কণা
       কাতারে কাতারে তন্ত্রীতে ভরোনা -
 ওরা তোমায় দংশনে
       বিদ্ধস্ত, আতঙ্কিত করবে,
      কলির কৌশলে নলের অস্বস্তি দেবে।

 তোমার চারপাশে বেড়ে ওঠা
               আগাছাদের তোল,
 নয়ত ওরা জীবনের রস শুষে
                তোমায় নিঃস্ব করবে –
 বেড়ে ওঠা গাছেরা তোমায়
              উপরে নিয়ে যাবে,
       জীবন যুদ্ধে আগস্ত্যের অস্থি দেবে।

.                         ************
.                                                                                   
সূচী . . .    





মিলনসাগর
*.
সব পেয়েছির দেশ
কবি চন্দন ভট্টাচার্য্য

আকাশে ওড়ার আগে
            ভেবেছিনু কল্পনায় –
রঙ্‌বেরঙের পাখি , চোখ ভরানো আলো
 আর সাত রঙের পথ ধরে সাতটি ঘোড়ার রথ
        টেনে নিয়ে যাবে সব পাওয়ার রাজ্যে –

দেখ ভাইসব, আজ সব সমস্যা খতম –
  হতাশা নেই , প্রতিক্ষা নেই –
    জীবন জোড়া আঙিনায় শুধু
       সব পেয়েছির খুশির ছোঁয়া –

যখন পবন হংসের ডানায় ভড় করে
     অনেক অনেক ওপরে উঠলাম –
 দেখলাম – সেখানে নিঃসীম শূণ্য –
 শুধু ডানাটাই আছে ;
  আর সব শুধু মেঘের ধোঁয়া –
     আর শূণ্যতা –
  এরই মানে কি সব পাওয়া ?

.                  ************
.                                                                                   
সূচী . . .    





মিলনসাগর
*.