কুলকুণ্ডলিনী তুমি কে চারণকবি মুকুন্দদাস ডঃ জয়গুরু গোস্বামী সম্পাদিত “চারণকবি মুকুন্দদাস”, ১৯৭২ থেকে নেওয়া।
কুলকুণ্ডলিনী তুমি কে, . এখনো মা ঘুমে যে || তুমি ঘটে ঘটে আছো গো মা চৈতন্যরূপে, . তুমি মম ঘটে অচৈতন্য হলে কিরূপে ? তুমি নাকি জগতেরই মা ----- . আমি কি এ জগৎ ছাড়া ওগো কুসন্তানে যে মায়ের আদর . “মা” বলি তাকে || দেখাও দাস মুকুন্দে, যুগল রাধা-গোবিন্দে, . তোমার দয়াময়ী নামের ডঙ্কা বাজুক ত্রিলোকে ||
মায়ের নাম নিয়ে ভাসান তরী চারণকবি মুকুন্দদাস ডঃ জয়গুরু গোস্বামী সম্পাদিত “চারণকবি মুকুন্দদাস”, ১৯৭২ থেকে নেওয়া। ( মুকুন্দের বিদ্রোহী মনোভাবে ইংরেজ সরকার শঙ্কিত হয়ে পরেন। তাকে রাজদ্রোহের অপরাধে তিন বত্সরের জন্য সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। জেলে থাকাকালীন তার সাধ্বী স্ত্রী সুভাষিণী দেবী পরলোক গমন করেন। নিদারুণ শোকে মুকুন্দদাস মুহ্যমান হয়ে পরলেন। কিন্তু জেল থেকে বের হয়েই তিনি শিশুপুত্র কালীপদ দাস এবং কন্যা সুলভাকে সঙ্গে নিয়ে আবার অভিনয়ে মন দিলেন। ভাঙা দল জোড়া দিয়েই তিনি “মায়ের নাম নিয়ে” তরী ভাসালেন। )
মায়ের নাম নিয়ে ভাসান তরী— যেদিন ডুবে যাবে রে, যেদিন ডুবে যাবে রে | সেদিন রবি চন্দ্র ধ্রুবতারা, তারাও ডুবে যাবে রে, তারাও ডুবে যাবে রে || নবভাবের নবীন তরী মাকেই করেছি কাণ্ডারী | হউক না কেন তুফান ভারী, আর কি তরী ডুবে রে, আর কি তরী ডুবে রে || বহুদিন পরে আবার মরা গাঙে পেয়ে জোয়ার, জোয়ারে ধরেছি পাড়ি--- আর কি তরী ঠেকে রে, আর কি তরী ঠেকে রে || মুকুন্দ দাসে ভণে উজানেও ভয় করিনে, মায়ের নামের বাদাম টেনে, উজান ধরে যাব রে, উজান ধরে যাব রে ||
ভাই রে মানুষ নাই এ দেশে চারণকবি মুকুন্দদাস ডঃ জয়গুরু গোস্বামী সম্পাদিত “চারণকবি মুকুন্দদাস”, ১৯৭২ থেকে নেওয়া।
ভাই রে মানুষ নাই এ দেশে— এ দেশের সকল মেকি সকল ফাঁকি, যে যার মৌজে আপন রসে || দেখেছি কত মস্ত সবাই আপন নিয়ে ব্যস্ত, মুখখানা বড় মিষ্ট অন্তর ভরা বিষে | কথার বেলা বৃহস্পতি, কাজে কেউ না ঘেঁষে – বলতে গেলে এসব কথা, উঠে পাগল বলে সব হেসে || স্বার্থ ছাড়া কথা কয় না, অর্থ ছাড়া কাজ করে না, দেখতে শুনতে রকমটি বেশ, চিনবার যো নাই বেশে | ছেলের বাপ বসে আছে পাঁচ হাজারের আশে, মেয়ের বাপের ভাঙ্গা কপাল চোখের জলে ভাসে || যে দেশ সকল দেশের সেরা, সে দেশের এমনি ধারা, দেখে শুনে ইচ্ছা হয় চলে যাই বিদেশে | তবু কেবল বসে আছি ক্ষেপা মাগীর আশে, এ মুকুন্দের ভরসা আছে দিবে বেটী সমাজ পিষে ||
জাত গেছে সে জাতির চারণকবি মুকুন্দদাস ডঃ জয়গুরু গোস্বামী সম্পাদিত “চারণকবি মুকুন্দদাস”, ১৯৭২ থেকে নেওয়া।
জাত গেছে সে জাতির— যার প্রাণ দেখে না বিচার করে, দেখে কেবল বাহির || ধর্ম যাদের লুকিয়েছে ভাতের হাঁড়ির মাঝে, সাধুতা যার কপটতা, ভক্ত কেবল সাজে | অর্থে মাপে মনুষ্যত্ব, কর্ম কেবল নাম জাহির || মুখবাজিতে বেজায় বড়, ভক্তি চোখের জলে, কাজের বেলায় দে পগার পা’র, থলিতে হাত প’লে বন্ধু কেবল পাবার বেলায়, দেবার বেলা নাই খাতির ||