চারণকবি মুকুন্দদাসের কবিতা ও গান
যে কোন গানের উপর ক্লিক করলেই সেই গানটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
কুলকুণ্ডলিনী তুমি কে
চারণকবি মুকুন্দদাস
ডঃ জয়গুরু গোস্বামী সম্পাদিত “চারণকবি মুকুন্দদাস”, ১৯৭২ থেকে নেওয়া।


কুলকুণ্ডলিনী তুমি কে,
.        এখনো মা ঘুমে যে ||
তুমি ঘটে ঘটে আছো গো মা চৈতন্যরূপে,
.        তুমি মম ঘটে অচৈতন্য হলে কিরূপে ?
তুমি নাকি জগতেরই মা -----
.        আমি কি এ জগৎ ছাড়া
ওগো কুসন্তানে যে মায়ের আদর
.        “মা” বলি তাকে ||
দেখাও দাস মুকুন্দে, যুগল রাধা-গোবিন্দে,
.        তোমার দয়াময়ী নামের ডঙ্কা বাজুক ত্রিলোকে ||

.                    ****************                     
.                                                                                 
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ভয় কি মরণে রাখিতে সন্তানে
চারণকবি মুকুন্দদাস
ডঃ জয়গুরু গোস্বামী সম্পাদিত “চারণকবি মুকুন্দদাস”, ১৯৭২ থেকে নেওয়া। রচনাকাল
১৩১৩ বঙ্গাব্দ (১৯০৬)।


ভয় কি মরণে রাখিতে সন্তানে,
মাতঙ্গী মেতেছে আজ সমর রঙ্গে ||
তাথৈ তাথৈ থৈ দ্রিমী দ্রিমী দং দং,
ভূত পিশাচ নাচে যোগিনী সঙ্গে |
দানব দলনী হয়ে উন্মাদিনী,
আর কি দানব থাকিবে বঙ্গে ||
সাজ রে সন্তান হিন্দু মুসলমান,
থাকে থাকিবে প্রাণ না হয় যাইবে প্রাণ |
লইয়ে কৃপাণ হও রে আগুয়ান,
নিতে হয় মুকুন্দে-রে নিও রে সঙ্গে ||

.                ****************                     
.                                                                                 
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ভারতের ভগ্ন প্রাণগুলি লগ্ন করে দে মা
চারণকবি মুকুন্দদাস
ডঃ জয়গুরু গোস্বামী সম্পাদিত “চারণকবি মুকুন্দদাস”, ১৯৭২ থেকে নেওয়া।


ভারতের ভগ্ন প্রাণগুলি লগ্ন করে দে মা,
মগ্ন হউক তব চিন্ময়ী রূপ ধ্যানে |
গণ্ডী ভেঙ্গে ফেলে মুক্ত গগন তলে,
দাঁড়াক মিলনপ্রার্থী চূর্ণ করি অভিমানে ||
তোমারই সৃজিত বিশ্ব তোমারই তো সৃষ্ট ফুল,
তোমার বিরুদ্ধে আজ বিদ্রোহ ঘোষণা |
ভুল ভেঙ্গে দেও মাগো আনন্দে নৃত্য করি,
ছুটুক পরাণ গঙ্গা মুক্তি সাগর পানে ||
তরুণ ভারতে আজ হতেছে যে অভিনয়,
কে জানে কোথায় হবে এ নাটকের অঙ্ক শেষ |
যবনিকার অন্তরালে জানি না কোন চিত্র আঁকা,
ধ্বংসের ভৈরব গর্জন মুহূর্মুহূ শুনি কানে ||

.                ****************                     
.                                                                                 
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
কার কম্বু নিনাদে জানি অমৃত বরষিল
চারণকবি মুকুন্দদাস
ডঃ জয়গুরু গোস্বামী সম্পাদিত “চারণকবি মুকুন্দদাস”, ১৯৭২ থেকে নেওয়া।


কার কম্বু নিনাদে জানি অমৃত বরষিল,
কোটী কোটী নরনারী মৃতদেহে পেল প্রাণ |
তাই শত শতাব্দী পরে মায়ের করুণাহ্বানে,
জননীর মুখ চাহি, পাগল হিন্দু মুসলমান ||
ললাটে বিজয় টীকা দীপ্ত নয়নগুলি,
আগ্নেয়গিরি যেন উগারে অনল রাশি |
পদ ভরে থর হরি কাঁপিছে বসুন্ধরা,
চমকিত অরুকুল, দেখে নব অভিযান ||
ব্যর্থ হবে না হতে পারে না এ আয়োজন,
নারায়ণী সেনা পাবে যখনি যা প্রয়োজন |
নির্ভয়ে এগিয়ে চল পাবি রে বিজয় লক্ষ্মী,
ভারতের কর্ম রথের সারথী শ্রীভগবান্ ||

.                ****************                     
.                                                                                 
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
মায়ের নাম নিয়ে ভাসান তরী
চারণকবি মুকুন্দদাস
ডঃ জয়গুরু গোস্বামী সম্পাদিত “চারণকবি মুকুন্দদাস”, ১৯৭২ থেকে নেওয়া।
(
মুকুন্দের বিদ্রোহী মনোভাবে ইংরেজ সরকার শঙ্কিত হয়ে পরেন। তাকে রাজদ্রোহের
অপরাধে তিন বত্সরের জন্য সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। জেলে থাকাকালীন তার
সাধ্বী স্ত্রী সুভাষিণী দেবী পরলোক গমন করেন। নিদারুণ শোকে মুকুন্দদাস মুহ্যমান হয়ে
পরলেন। কিন্তু জেল থেকে বের হয়েই তিনি শিশুপুত্র কালীপদ দাস এবং কন্যা সুলভাকে
সঙ্গে নিয়ে আবার অভিনয়ে মন দিলেন। ভাঙা দল জোড়া দিয়েই তিনি “মায়ের নাম নিয়ে”
তরী ভাসালেন।
)


মায়ের নাম নিয়ে ভাসান তরী—
যেদিন ডুবে যাবে রে, যেদিন ডুবে যাবে রে |
সেদিন রবি চন্দ্র ধ্রুবতারা,
তারাও ডুবে যাবে রে, তারাও ডুবে যাবে রে ||
নবভাবের নবীন তরী মাকেই করেছি কাণ্ডারী |
হউক না কেন তুফান ভারী,
আর কি তরী ডুবে রে, আর কি তরী ডুবে রে ||
বহুদিন পরে আবার মরা গাঙে পেয়ে জোয়ার,
জোয়ারে ধরেছি পাড়ি---
আর কি তরী ঠেকে রে, আর কি তরী ঠেকে রে ||
মুকুন্দ দাসে ভণে উজানেও ভয় করিনে,
মায়ের নামের বাদাম টেনে,
উজান ধরে যাব রে, উজান ধরে যাব রে ||

.                ****************                     
.                                                                                 
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ভাই রে মানুষ নাই এ দেশে
চারণকবি মুকুন্দদাস
ডঃ জয়গুরু গোস্বামী সম্পাদিত “চারণকবি মুকুন্দদাস”, ১৯৭২ থেকে নেওয়া।


ভাই রে মানুষ নাই এ দেশে—
এ দেশের সকল মেকি সকল ফাঁকি,
যে যার মৌজে আপন রসে ||
দেখেছি কত মস্ত সবাই আপন নিয়ে ব্যস্ত,
মুখখানা বড় মিষ্ট অন্তর ভরা বিষে |
কথার বেলা বৃহস্পতি, কাজে কেউ না ঘেঁষে –
বলতে গেলে এসব কথা, উঠে পাগল বলে সব হেসে ||
স্বার্থ ছাড়া কথা কয় না, অর্থ ছাড়া কাজ করে না,
দেখতে শুনতে রকমটি বেশ, চিনবার যো নাই বেশে |
ছেলের বাপ বসে আছে পাঁচ হাজারের আশে,
মেয়ের বাপের ভাঙ্গা কপাল চোখের জলে ভাসে ||
যে দেশ সকল দেশের সেরা, সে দেশের এমনি ধারা,
দেখে শুনে ইচ্ছা হয় চলে যাই বিদেশে |
তবু কেবল বসে আছি ক্ষেপা মাগীর আশে,
এ মুকুন্দের ভরসা আছে দিবে বেটী সমাজ পিষে ||

.                ****************                     
.                                                                                 
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ভরসা মায়ের চরণ তরণী
চারণকবি মুকুন্দদাস
ডঃ জয়গুরু গোস্বামী সম্পাদিত “চারণকবি মুকুন্দদাস”, ১৯৭২ থেকে নেওয়া।


ভরসা মায়ের চরণ তরণী,
.             আমরা এবার হবই পার |
ভয় গেছে দূরে অভয় পেয়েছি,
.             মাভৈঃ বাণী শুনেছি মা’র |
বীর প্রসবিনী জননী মোদের,
.             বীরের জাতি আমরা বীর |
বিলাসে ব্যসনে ধরেছিল জরা,
.              নত হয়েছিল উন্নত শির ;
জানি না কাহার চরণ পরশে,
.              উজলি উঠিল পূরবাকাশ,
মোহ মদিরার নেশা গেল ছুটে,
.              তামসী নিশার হইল নাশ |
জাগিল স্মৃতিতে পূরব গরিমা--
.              কালিমা মুছাতে হবেই হবে,
দাঁড়া রে সকলে জয় মা বলিয়া—
.              তোদের বিজয় হবেই হবে |

.                ****************                     
.                                                                                 
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
আমি যাঁরে চাই তাঁরে কোথা পাই
চারণকবি মুকুন্দদাস
ডঃ জয়গুরু গোস্বামী সম্পাদিত “চারণকবি মুকুন্দদাস”, ১৯৭২ থেকে নেওয়া।


আমি যাঁরে চাই তাঁরে কোথা পাই,
খুঁজি ঠাঁই ঠাঁই, ঠিকানা না পাই
শুনি সর্ব ঘটে, ঘটে মঠে পটে,
রয় সে নিকটে দেখা নাহি পাই ||
থাকে কমল কাননে, রবি শশী কোণে,
মক্কা বৃন্দাবনে, যমুনা পুলিনে |
যেখানে যখন মজে তাঁর মন,
হয় সে মগন বাঁশরী বাজাই ||
মাঝে মাঝে থাকি আঁখি মুদে বসি ;
দেখি কালোশশী চুপে চুপে আসি—
হৃদি কুঞ্জবনে, মারে উঁকি ঝুঁকি,
মুকুন্দ ধরি বলি গেলে, যায় রে পলাই ||

.                ****************                     
.                                                                                 
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
জাত গেছে সে জাতির
চারণকবি মুকুন্দদাস
ডঃ জয়গুরু গোস্বামী সম্পাদিত “চারণকবি মুকুন্দদাস”, ১৯৭২ থেকে নেওয়া।


জাত গেছে সে জাতির—
যার প্রাণ দেখে না বিচার করে,
দেখে কেবল বাহির ||
ধর্ম যাদের লুকিয়েছে ভাতের হাঁড়ির মাঝে,
সাধুতা যার কপটতা, ভক্ত কেবল সাজে |
অর্থে মাপে মনুষ্যত্ব, কর্ম কেবল নাম জাহির ||
মুখবাজিতে বেজায় বড়, ভক্তি চোখের জলে,
কাজের বেলায় দে পগার পা’র, থলিতে হাত প’লে
বন্ধু কেবল পাবার বেলায়, দেবার বেলা নাই খাতির ||

.                ****************                     
.                                                                                 
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
স্বরাজ সেদিন মিলিবে যেদিন
চারণকবি মুকুন্দদাস
ডঃ জয়গুরু গোস্বামী সম্পাদিত “চারণকবি মুকুন্দদাস”, ১৯৭২ থেকে নেওয়া।


স্বরাজ সেদিন মিলিবে যেদিন,
.        চাষার লাগিয়া কাঁদিবে প্রাণ |
তাদের কন্ঠে কন্ঠ মিলায়ে,
.        সপ্তমে তোরা তুলিবি তান ||
দেবতার আশীস বর্ষিবে সেদিন,
.        অজস্র ধারায় মাথার উপর,
আসিবে নামিয়া নূতন শকতি,
.        নব বলে সবে হবি বলীয়ান ---
.        শক্তিতে হব শক্তিমান |
কোটী কোটী মিলিত কন্ঠে,
.        তখনি উঠিবে গান,
যে গানে আবার হইবে মিলিত,
.        হিন্দু মুসলমান |
মা মা বলিয়া উঠিবে ফুকারি,
.        ভারতের নরনারী—
হোমানল জ্বালি বসিবে যজ্ঞে,
.        পূর্ণাহুতি করিবে দান ;
সাধনার সিদ্ধি স্বরাজ তোদের,
.        তখনি হইবে মূর্তিমান ||

.                ****************                     
.                                                                                 
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর