চারণকবি মুকুন্দদাস - জন্ম গ্রহণ করেন অধুনা বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের বানারি গ্রামে,
পিতা গুরুদয়াল দে ও মাতা শ্যামাসুন্দরী দেবীর গৃহে। তাঁর আসল নাম ছিল যজ্ঞেশ্বর দে।

পিতার কর্মস্থল বরিসাল এসে জেলা স্কুল ও পরে
অশ্বিনীকুমার দত্তের প্রতিষ্ঠিত বি এম স্কুলে (ব্রজমোহন
বিদ্যালয়) ভর্তি হন, কিন্তু পড়াশুনায় বসায় তিনি কোনো দিন স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারেন নি। তাঁর
কৈশোর ও যৌবন কালে কিছুটা উচ্ছৃঙ্খলার ভাব লক্ষ্য করা যায়। উচ্ছৃঙ্খল এবং গুণ্ডা প্রকৃতির যুবকদের
দলে ভিড়ে অচিরেই যজ্ঞা গুণ্ডা নামে কুখ্যাতি লাভ করেন। সৌভাগ্যবশতঃ তখনকার অতি হৃদয়বান জেলা
ম্যাজিস্ট্রেট বিটসন্ বেল সাহেবের সংস্পর্শে এসে এই গুণ্ডা দল ও যজ্ঞেশ্বরের  সুমতি হয় এবং তিনি তাঁর
পৈতৃক  মুদির দোকানদারী করতে থাকেন। বলা হয় যে তিনি
অশ্বিনীকুমার দত্তের মন্ত্র শিষ্য ছিলেন।

বৈষ্ণব কীর্তন দলে যোগ দিয়ে তাঁর গানের জীবন শুরু হয়। এই সময়েই তাঁর যজ্ঞেশ্বর থেকে কীর্তনিয়া
মুকুন্দদাসে উত্তোরন ঘটে। ১৯০০ সালের (১৩০৭ বঙ্গাব্দ) পূজার ছুটির এক দুপুরে তাঁর মুদি
দোকেন রামানন্দ অবধূত নামের এক সন্ন্যাসী আসেন এবং যজ্ঞেশ্বর প্রায় সপ্তাহকাল এই সন্ন্যাসীর সান্নিদ্ধে
থেকে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। দীক্ষান্তে গুরু রামানন্দ শিষ্যের নতুন নামকরণ করেন “মুকুন্দদাস”।

১৯০২ - ১৯০৩ ( ১৩০৯ - ১৩১০ বঙ্গাব্দের ) মধ্যে তাঁর রচিত শতাধিক গান “সাধন সংগীত” নামে প্রকাশিত
হয়। সেই কাব্যগ্রন্থের গানে তিনি “মুকুন্দ” ভণিতা দিয়েছিলেন।

ক্রমে ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের বাংলাকে ভাগ করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ  করতে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময়কালে
মুকুন্দদাস স্বদেশী যাত্রার মাধ্যমে ব্রিটিশ বিরোধী ভাবনাকে প্রচার করেন এবং চারণকবি মুকুন্দাস নামে
খ্যাত হন। সেই কারণে তিনি ব্রিটিশ সরকারের চক্ষ্মুশূল হয়ে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে কারাবরণ করেন।
১৩১৫ বঙ্গাব্দের ১লা অগ্রহায়ণ (সম্ভবত ১৫ নভেম্বর ১৯০৮) সাহাবাজপুর দাদপুর স্টেশনের নিকটবর্তী নদীতে
নৌকায় সদলবলে যাবার সময়ে পুলিশ গ্রেপ্তার করে বরিশালে নিয়ে আসে। সেবার পাঁচ হাজার টাকার
জামিনে বার হয়ে পুনরায় ৭ই পৌষ বরিশালের রাস্তায় ভ্রমণ করার সময় গ্রেপ্তার হন দেশদ্রোহিতার
অভিযোগে। এবার তাঁর তিনশো টাকা জরিমানা আর তিন বছরের কারাবাস হয়। ১৯১০ সালে (১৩১৭
বঙ্গাব্দে) তিনি দিল্লীর কারাগার থেকে মুক্তি পান। জেল থেকে বেরিয়ে দিল্লী কালিবাড়িতে গিয়ে জানতে
পারেন যে তাঁর স্ত্রী তাঁর এই কারাবাসকালেই পরলোক গমন করেছেন।

১৯২১ সালে (১৩২৮ বঙ্গাব্দে) মহাত্মা গান্ধীর স্বদেশী আন্দোলনে বিদেশী পণ্য বর্জনের মন্ত্রে বাঁধলেন একের
পর এক গান, যার মধ্যে কালজয়ী গান “ছেড়ে দেও কাঁচের চুড়ি বঙ্গনারী” চিরস্মরণীয়।  

চারণকবি যে কোন সভায় যে কোন বিষয়ের উপর তাত্ক্ষণিক কবিতা ও গান রচনা করে গাওয়ার এক
আশ্চর্য প্রতিভার অধিকারী ছিলেন।

আমরা
মিলনসাগরে তাঁর কবিতা তুলে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে নিজেদের সার্থক মনে
করবো। এই পাতা চারণকবি মুকুন্দদাসের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য।




উত্স -  ডঃ জয়গুরু গোস্বামী, চারণকবি মুকুন্দদাস (রচনা সম্ভার সহ), ১৯৭২, প্রকাশক-বিশ্ববাণী।


চারণকবি মুকুন্দদাসের মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ই-মেল -
srimilansengupta@yahoo.co.in     



এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ২০০৭
প্রথম পরিবর্ধিত সংস্করণ - ১৮.১২.২০১১
দ্বিতীয় পরিবর্ধিত সংস্করণ - ৭.৫.২০১৬

...