কবি দেবেশ ঠাকুরের কবিতা
মৈত্রেয়ী
কবি দেবেশ ঠাকুর

যাজ্ঞবল্ক আজ রাজ্যপাট ছেড়ে চলে যাবেন
পিছনে পড়ে থাকবে সোনার সিংহাসন ,স্ফটিকের স্নানাগার , রত্নখচিত চন্দ্রাতপ
স্ত্রীগণকে দিয়ে গেলেন
গোধন, উর্বরা ভূমি , রত্নালঙ্কার
রাজার পরনে এখন শুধু সন্ন্যাসীর বসন
হাতে বিল্বদণ্ড, কমণ্ডলু , সামনে সুদীর্ঘ বন্ধুর পথ,
হঠাৎ পদশব্দ শুনে যাজ্ঞবল্ক পিছন ফিরলেন
দেখতে পেলেন মৈত্রেয়ীকে ‘তুমি-
এই ধূলিধূসর দুর্গম পথে কেন?
তোমাকে যে সহস্রাধিক গোধন দিয়েছি তাতে তৃপ্ত নও তুমি’?
মৈত্রেয়ী বললেন, ‘না’।
‘-যে মহার্ঘ রত্নরাজি দিয়েছি তাতেও সন্তুষ্ট নও’?
‘না’।
‘যে বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড তোমায় দিয়েছি
ঋতুমতী জননীর চেয়েও উর্বরা এতেও খুশী নও’?
‘না’ মৈত্রেয়ী বললেন দৃঢ় কণ্ঠে।
তবে তুমিই বলো আর কোন সম্পদে
কোন সাম্রাজ্যে তুমি তৃপ্ত হবে?’
মৈত্রেয়ী হাসলেন।
ব্রীড়ায় একবার মাত্র নিচু করলেন চোখ।
তারপর দীর্ঘ ঘনপল্লব মেলে দেখলেন নিবিড় আকাশ
দেখলেন সবুজ অরণ্য
অনন্তসমুদ্র
তারপর বর্শাফলকের মত নির্মেদ কণ্ঠে বললেন
‘যাতে অমৃত মেলেনা, তা নিয়ে আমি কি করব’?
এই শব্দ যা তীরের মত তীক্ষ্ণ
যা পর্বতের মত বিপুল
যা আকাশের মত ব্যপ্ত হয়ে
শচীর পারিজাত বনে নাড়া দিয়ে যায়
এই অমৃতের জন্যই লক্ষ্মী ওঠেন কাঁখে কলস লাখোবার সমুদ্র মন্থন
যাজ্ঞবল্ক চমকিত হয়ে মৈত্রেয়ীকে দেখলেন
দেখলেন জীর্ণ পোষাকে নিরাভরণা স্ত্রীকে-
দেখলেন ষড়ৈশ্বর্য্যশালিনী এক নারীকে
একটি সম্পূর্ণ মানুষকে
মানুষের পায়ের নিচে সমুদ্র
দুহাতে আকাশ
নাভিতটে আদিগন্ত উর্বর ভূমি
মৈত্রেয়ী হেঁটে চলেছেন অমৃতের খোঁজে
পিছনে পড়ে আছে রাজবসন,সুবর্ণ, সাম্রাজ্য
জীবনবিমা,
কিছু নুড়ি পাথর-

.     ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ম্যান্ডেলা
কবি দেবেশ ঠাকুর

রবেন দ্বীপের কারাগারে প্রমিথিউস
তেইশ বছর অন্ধকারে – একাকীত্বে
আগুন চুরির অভিযোগে শ্বেতাম্বরে
ছায়াবৃতা জেগেছিল কার চিত্তে!

কনরাড সেই এঁকেছিলেন আঁধার- হৃদয়
সাদা আঁধার উত্তমাশায় ঢেউ তুলে যায়
ম্যান্ডেলা সেই ঢেউ এর উপর ঘোড়সওয়াড়ি
কালো মানুষ ‘মায়াবুয়ে’ সুর ভুলে যায়।

তারপরেতে আফ্রিকা ফের আলোক হল,
আলোকধারা ছড়িয়ে গেল দুই মেরুতে-
ম্যান্ডেলা ভোর জাগল দেশে-দেশান্তরে
মুক্তধারা প্যারিস,প্রাগে,পোল,পেরুতে।

ম্যান্ডেলা কি একটি মানুষ? অনেকগুলো?
সারথি আর যোদ্ধা যখন একত্রিত
সাদা কালোয় নিজস্ব দেশ অবিক্রীত
সকল মনের মণিকোঠায় সমন্বিত।

ম্যান্ডেলাতে একটি আগুন ঠিকরে পড়ে
ম্যান্ডেলাতে পরমপ্রীতির বৃষ্টি এল
ম্যান্ডেলাতে একের স্বদেশ ভূগোল স্বয়ং
ম্যান্ডেলাতে নোয়ার জাহাজ সৃষ্টি হল।

.             ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
মানচিত্র
কবি দেবেশ ঠাকুর

ছোটবেলায় স্বদেশবাবুর কাছে ভূগোল পড়তাম
প্রথম দিন একটা ধারালো লেড পেনসিল হাতে ধরিয়ে
তিনি আমায় ভারতবর্ষ আঁকতে বলেছিলেন
আঁকবো কি!
লেড পেনসিলের শিস হাতে ফুটে একেবারে রক্তারক্তি
সেই থেকে ভূগোলে আমার ভীষণ ভয়
আরও ভয় মানচিত্রে
মানচিত্র মানেই আমার কাছে ধারালো লেড পেনসিল

বাবার জ্যাঠাইমা ছিলেন পদ্মাপারের মেয়ে
তাঁর একটা নিজস্ব ভূগোল ছিল তেতাল্লিশ থেকে অপরিবর্তিত
‘ত’গো  মানচিত্র বুঝি না মণি,
রংপুর – কুষ্ঠিয়ারে ত রা কইস বিদেশ!
আমাগো বাপের বাড়ি বিদেশ হয় কমনে’?

ঠাকুমার কাছে চোখ বুজে
আব্বাসউদ্দিনের সেই পাখির গল্প শুনতাম,
বগাকে দেখে বগী কাঁদে বগীকে দেখে বগা
-আয় পাখি আমরা দুজনে
গলা ধরাধরি করি কাঁদি লো নীরবে
ঠাকুমা শুনিয়ে যেতেন
নির্মলেন্দুর সেই চাঁদ বদনী মেয়ের রুনুক-ঝুনুক নূপুরের গান
স্বপ্নে খুঁজে বেড়াতাম সেই পড়শিকে
বাড়ির পাশে আরশিনগরে যার বসত

স্বদেশবাবু ভূগোল শিক্ষক,
তিনি শিখিয়েছিলেন সূক্ষ্ম ধারালো লেড পেনসিল দিয়ে
একটা নিখুঁত ভারতবর্ষ আঁকতে
একটা রেখা চিরে গেল লালন – আব্বাসউদ্দিনের বুক,
অন্য রেখাটা টানলাম গোলাম আলি, নসরৎ ফতে আলির
হৃৎপিন্ডের পাশ দিয়ে

আফগানিস্তানের মেয়ে ছিলেন গান্ধারী,
তিনি তালিবান ছিলেন না , তবু ছিল চোখে পট্টি বাঁধা,
আমরাও এখন বালুচ – পাখতুনদের কাছে
পট্টি কিনে সযত্নে ঢেকে রেখেছি চোখ

স্বদেশ স্যার,
সবরমতির ঘরের দাওয়ায় কারা গায় রামধূন?
গুজরাত আজ শমীবৃক্ষ কি!লুকোনো কালের তূণ?
কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীর বিস্তীর্ণ এই মাটিতে
একটা দশ বাই দশের বস্তি কি খুব বেশি!

এখন আমরা স্বদেশ আঁকি তারকাঁটাতে
আঁকতে আঁকতে হাতে আমার রক্তক্ষত
স্বদেশ মানে কাঁটার বেড়া লেড পেনসিল
স্বদেশ মানে রক্তঝরা অবিরত!

.             ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কাঁটাতার
কবি দেবেশ ঠাকুর

বিলোনিয়া সীমানার ওপারে বাংলাদেশ, এ পারে ভারত
মাঝে একটা ভয়ানক তারকাঁটার বেড়া
বি এস এফ-বি ডি আর ঘুমন্ত স্বপ্ন, জাগ্রত এ কে ফর্টি সিক্স

ওপাশ থেকে সাজু একটা দলা পাকানো চিঠি
ছুঁড়ে দিল এপারে, রূপাইকে
চিঠিটা পড়ে গেল বেড়ার মাঝে
রূপাই হাত বাড়িয়েছে – আর একটু – একটুখানি
হাত ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে কাঁটায়- তারকাঁটায়
এই যে ছুঁয়েছি প্রায় – সামান্য একটু আর

চিঠিটা এখন সন্দেহের ইয়াগো রুমাল,
এপাশে বি এস এফ, ওপারে বি ডি আর
মাঝে দিগন্তপ্রসারী তারকাঁটার বেড়া

এখানে প্রেম নেই। প্রেম হয়ত ছিলনা কোথাও।

.             ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কাকাবাবু
কবি দেবেশ ঠাকুর

বিদায় নিলেন কাকাবাবু
     একলা কাঁদে সন্তু
কেমন করে জটিলতার
   ছাড়াবে জট তন্তু।

ক্র্যাচের উপর ভর করা পা
  এমনি কথায়, ‘অক্ষম’
শান দেওয়া তাঁর মগজাস্ত্রে
  বুদ্ধি ছোটে হরদম।

কাকাবাবু ঘরের মানুষ,
তীব্র মেধা , বুদ্ধি-
নিন্দা-প্রিয় বাঙালিদের
 দেহ-মনের শুদ্ধি।
কাকাবাবুর আকাশ জুড়ে
 নীল লোহিত আর সাদা
অনায়াসে জয় করেছেন
 বদমায়েশির বাধা।

সত্যিই কি কাকাবাবু
 ডাকলে আর আসবেনা?
একা সন্তু রুখতে পারে
   দুষ্টু লোকের হানা!

কাকাবাবু তোমায় আমরা
 ভীষণ ভালোবাসি
নবমীতে সাজিয়ে দিলাম
শিউলি ফুলের রাশি।

.      ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
জ্যোতির্ময়
কবি দেবেশ ঠাকুর

পুটুঠাকুমার পোশাকি নাম যে জ্যোতির্ময়ী
নির্বাচনের দিন ছাড়া কেউ জানত না
গ্রীষ্মের দুপুরের মত শূন্য সিঁথির বিপুল বৈধব্য নিয়ে
কত মায়াবী সকাল মুছে যায়
কেটে যায় কত নিস্তরঙ্গ ভোর

সাদা থান,সাদা সিঁথি, নগ্ন হাতে শ্বেত অন্ধকার
আদিগন্ত সাদা কুয়াশা ভেজা জীবন

তবু পুটু ঠাকুমা রঙ ভালবাসত
রঙের টানা ভরণ দেখে নিশ্চিন্তে বলে দিত,
‘বোধহয় বর্ষা এসে গেল’ –
পলাশের প্রথম কুঁড়ি ফোটার আগেই জানিয়ে দিত,
ফাগুন আসছে পিচকিরিতে রঙ ছুটিয়ে’।
এমনি মনোরম একজোড়া চোখ ঠাকুমার।

ওপাড়া থেকে নন্দু এসে বসতো ঠাকুমার দাওয়ায়
অন্ধ ছেলেটির চোখে শুধুই রাধার নীলাম্বর
কিংবা মৃত্যুর মত কালো এলচুল
নন্দু জানতে চাইতো , ‘অশোকের কুঁড়ি ধরেছে ঠাকুমা?’-
‘-গন্ধ পাচ্ছি যেন আকাশের রামধনু নেমেছে মহুয়া বনের দিগন্তে’-
‘-কৃষ্ণচূড়ার ডালে বসেছে সেই পথভোলা নীলকণ্ঠ পাখি’-
নন্দু গান শোনাত ঠাকুমাকে,
‘আছে সে নয়নতারায় আলোকধারায় তাই না হারায়’
ঠাকুমা ভাসত চোখের জলে,
‘আলোকধারা যে চোখেও দেখলি না বাপ,
দেখলি না কালো মেঘের কোলে সাদা বক ভেসে গেলে
তুলি খুঁজে পান না যামিনী রায়’-
নন্দু জেদ করতো, ‘এবার দোলে কিন্তু একটা পিচকিরি কিনে দিতে
হবে’।
‘-সে নাহয় দিলাম। রঙ দিবি কাকে?’
‘-তোমাকে। রঙে রঙে ভিজিয়ে দেব তোমাকে’।

দোলের পিচকিরি কিনতে গিয়ে ঠাকুমা
চোখদুটো দান করে এল।
যেন তাঁর মরণের পর এই চোখে রঙ দেখে নন্দু।
জায়েরা বলে, ‘করছ কি!পরজন্মে যে কানা হয়ে জন্মাবে’।
পুটু ঠাকুমার হাসিতে ঝিলিক মারে রঙবাক্সর পৃথিবী

তারপর
অনেকগুলো দিনের পর
নন্দু পুটু ঠাকুমার চোখে আকাশ জুড়ে রামধনুর খেলা দেখে
আর পড়ন্ত বিকেলের নিকেল করা মোমবাতি রঙ

বলতে ভুলে গেছি,
এখন ওকে নন্দু বলে ডাকলে খুব রাগ করে।
‘নন্দু কেন? জানো না আমার নাম?’
‘-কি?’
 -‘জ্যোতির্ময়’।

.    ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
দৃশ্যপটে আত্মলিপি
দশ
কবি দেবেশ ঠাকুর

আমি একটা সংখ্যা এবং আমি একটা মত
আমি একটা একক এবং ঐক্য যুগপৎ
একটা আমি নেরুদাদের, সমষ্টিতে চে
আমেরিকার হে মার্কেটে পথ খুঁজে যাচ্ছে

অন্য আমি কথামৃতে গলা অবধি ডুবে
সূত্র জুড়ে বিচার করি দ্বিবেদি নয়, দুবে।
গভীর রাতে তর্ক জোড়ে ধর্ম নাকি জিরাফ
গোলমরিচ আর আদা খুঁজি রাত্তিরে কফ সিরাপ

আর একখানা আমিও আছে জলের পাত্রে জল,
আপিস-গৃহে বরফ জমে স্ফটিক ও নিশ্চল
সেই আমি - জন বাজার করে , কাজের মেয়ে , বিমায়
সকাল থেকে করিৎকর্মা, সন্ধে থেকে ঝিমায়

কোন আমিটা আমায় চেনে, জানলাম না আজও
জানতে পারলে বলে দিতাম, রণ সজ্জায় সাজো
ভিতু আমি, তীব্র আমি, স্থবির আমি, সচল-
অচলায়তন- মহাপঞ্চক, পিছল আমি, অচল

আসলে এই আমি মানে একা এবং একা
প্রতিদিনই হৃদয়পুরে নিজের সঙ্গে দেখা
চারিদিকে নিজের খোঁজে নিজেরই কাল হরণ
সে জন একাই রোদ বিষ্টি – আয়না নিরাবরণ।

সেই আমিটার জন্যে আমার বাঁচা বাঁচা খেলা
আমির খোঁজে কেটে যাচ্ছে সকাল সন্ধে বেলা।

.                ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ঘরবাড়ির উত্তরকথা
কবি দেবেশ ঠাকুর

তুমি তখন বলেছিলে বাড়ি হবে গোয়ালপাড়ায়
কোণার্ক কিম্বা শ্যামলী খড় মাটির দেয়াল ছোট্ট দাওয়া
সামনে ছোট্ট টগর চারা – সারাবছর ফুল ফোটাবে
অনেক নিবিড় অনেক গভীর অঙ্গীভূত কাছে পাওয়া

তারপরে যেই কাছে পেলাম গায়ে গায়ে ছোট্ট খাটে
কেমন যেন হৃদয় মনে বৃহৎ- বৃহত্তর হলাম
গোয়ালপাড়ায় কুলোচ্ছেনা পার্থিব আর অপার্থিব
পায়ে ফুটছে মাটির দাওয়ায় অবাঞ্ছিত ত্রিকোণ খোলাম

এরপরেতেই বাড়ি কিনে চলে গেলাম অর্ধনগর
টু বি এইচ কে হলেও কিন্তু সম্পূর্ণ নিজ আবাস
বাগানটাকে উড়িয়ে দিয়ে একান্তে এক গ্যারেজ পেলাম
ব্যাপ্ত হলাম ওষ্ঠ-কথা কেড়ে নিলো দুই দূরভাষ।

এখানেও আর কুলোচ্ছে না ফ্ল্যাট কিনেছি দক্ষিণাপণ
দুটো ছায়াও তিন হাজারে কুলোচ্ছে না ঘুমে ঘামে
গঙ্গা পদ্মা একক এবং পৃথক ভূগোল বিস্তৃতিতে
বাইরে চেয়ে বসে আছি,দেখি যদি বৃষ্টি নামে!

.                ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
জীবনে প্রথম ‘শালা’ বলার প্রেক্ষাপট
কবি দেবেশ ঠাকুর

গোপালবাবুর মত সৎ এবং আদর্শবান এবং
প্রাজ্ঞ এবং সুশিক্ষিত এবং মার্জিতরুচি
মানুষটিও শেষ পর্যন্ত .........

বিপুল জ্ঞান দিতেন ছাত্রদের ,
দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতেন প্রতিবেশীদের,
আত্নীয় স্বজনদের,
আঠারো বছরের ছেলেরা শুনত ক্ষুদিরামের
সেই অনন্তজীবী আত্মত্যাগের কাহিনী,
তরুণ সুভাষ হবার স্বপ্ন দেখাতেন
পৌঢ়দের লোলুপ চোখে বিদ্যাসাগর ভাসাতেন

গোপালবাবুর একমাত্র ছেলের বয়স আঠারো বছর
যেদিন ও পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা পড়ল,
গোপালবাবু বললেন, তোর মত বয়সে ক্ষুদিরাম ...

যেদিন বন্ধুর পাল্লায় কালীপুজোর রাত্রে সিদ্ধি খেয়ে ভুল বকল
গোপালবাবু বললেন, ছি ছি তোর বয়সে ক্ষুদিরাম ...

ড্রাগের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে ছেলে খুন হল
সমাজবিরোধীদের হাতে- এলাকায় ড্রাগ বন্ধ হল,
গাঁয়ের মানুষ বলল, সাবাস,এই তো সাচ্চা ছেলে
ক্ষুদিরামের মত এই আত্মত্যাগ-

বুকের খাঁচার ভিতর নরম হৃদয়টাকে চেপে ধরে
গোপালবাবু বললেন
‘শালা’-

.                ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
রেলস্টেশনে হঠাৎ দীপাঞ্জন
কবি দেবেশ ঠাকুর

ব্যাপার কি দীপ,এতো বছর পর,
কোথায় ছিলি চিঠিপত্রও নেই।
সেই যে গেলি একান্তে দেওঘর,
তারপরেতেই হারিয়ে গেলো খেই।
কাকাবাবুর শরীর কেমন আছে?
চলে গেছেন? কবে? কেমন করে?
এ খবরটাও পাবো না তোর কাছে?
এক দাহে সব পলাশ যাবে ঝরে?

মো মো- র কথা মনে আছে তোর?
সবুজ গহিন ঝর্ণা শীতল খাদ?
পায়ের নীচে মেঘ ভাসা সেই ভোর
জল ফুরানো সাবান বিসংবাদ?
জানিস তো দীপ,হঠাৎ গতকাল
দেখা হল ভেঙ্কটেশের সাথে।
লম্বা দাড়ি ইয়া জটাজাল।
গাঁজায় মত্ত একলা শেয়ালদাতে।
পেটে একটু মেদ বেড়েছে, বল?
কী আর করি, বয়স এবং সুখে
স্বাধীনতার শরীরই সম্বল।
কি স্বাদ বলো পুরোনো তমসুকে।

আমার গাড়ির সময় হয়ে এল।
আসছি এখন, চিঠিপত্র দিস।
পুরোনো দিন ঝড়ের এলোমেলো।
আসলে কী – মানুষই নির্বিষ।

ভালো থাকিস, স্বপ্নে থাকিস, দীপ।
অন্তরে থাক সুখের অন্তরীপ ।

.         ****************                 
.                                                                            
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*