ভালো হোক --- ডাক দিয়ে পাখি উড়ে গেল দিনকিনারার দিকে | আজ আমার দান | লুকোও অশিঙা পশু, জাঠধারী লোক | খুঁটো পুঁতে পুঁতে রাখি আত্মযশ, ফিরে ফিরে দেখি ডোরা জ্বলে কি না গায়ে | যে হও, যা হও, মরুন্তে লোকের শাপ লাগবে না আজ |
ছেলেটা আমায় ডেকে শোনালো : দেখ তো, আমার একমুঠো ফুল ছিল ওরা সবাই যে যার ইচ্ছেমতো নিয়ে চলে গেছে -- আমি কাউকেউ দেব না বলি নি, তবু ওরা সমস্ত উজাড় করে নিয়ে গেল --- ওরই মধ্যে আমার একটিমাত্র বকুলফুল ছিল, ভোররাতে যখন তুলেছিলাম, মা আমায় তখনই : তোর হাতে এ ফুল কোথ্বেকে এল ! চমকে বলে উঠেছিল, আমি তো বকুলফুল চিনি, আমিও চমকে দেখেছিলাম আজান্তে তারই মাঝে আমার পরানভোমরা ---চুপি চুপি শোনো --- আমি ঠিক পাপড়ির মধ্যে আমার পরানভোমরা বসে আছে দেখতে পেয়েছিলাম, অথচ সব নিঃশেষে উজার করে ওরা আমার হাত থেকে নিয়ে গেল ---- আমি কাউকেউ দেব না বলি নি, কাউকেউ দেব না বলি নি---- শুধু সেই একটি মাত্র বকুলফুল, সেই আমার পরানভোমরা-----
সব শূন্য হয়ে যায় জনতার স্বেদাক্ত আশ্লেষে, সব পূর্ণ হয়ে ওঠে আতপতাপিত দীপ্তিভরে, সব শূন্য হয়ে যায় সব পূর্ণ হয়ে ওঠে শেষে--- সব পূর্ণ হয়ে ওঠে শেষে।
গত বর্ষে উদযাপিত অন্তিম শব্দটী ওষ্ঠাধরে এই মুহুর্তে যেন ভীষণ ব্রীড়ায় কেঁপে ওঠে। যেন সব দাবি সব যাচ্ঞা রোষ বঞ্চনা ও গ্লানি সূর্যাস্তবিভার মতো অনিবার্য হৃদয়াবলেপে বেজে উঠে শূন্য হয়ে যায়। শুধু পড়ে রয় এক খড় ওঠা মাঠের বিস্তার--- জোনাকি-জ্বালানো সন্ধ্যা---মনসার বিস্রুত ব্রয়ানি--- স্মৃতিচারণের অন্ধকার---
আর সারা রাত্রিভোর পথিকভোলানো আলেয়ার গুপ্ত আলপথগুলি জেগে ওঠে, সঙ্কেতপ্রদীপে তিনশ মোটরগাড়ি উচ্চকিত, সিক্ত সর্পিলতা বুকের বন্ধনী খুলে ডাক দেয় পৌরাণিক নীপে। যারে ডাকে তার সাথে সহস্র পার্ষদ ছুটে যায়--- যারে ডাকে তার সাথে ধায় যত উদ্বাহু ও লোভী--- আর এক দুর্ঘটনা পড়ে থাকে পথের উপরে, শুধু দুর্ঘটনা এক অবিমিশ্রিত শোণিতসুরভি কীর্ণ করে দিতে থাকে কপিশ জ্যোত্স্নায়, শুধু এক দুর্ঘটনা পুঞ্জীভূত কুসুমরাতায় নিশ্চিন্তে ঘুমায়ে রয় দূর নিশান্তের প্রতীক্ষায়--- শুধু এক সহায়হীনতা।