রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য |
রূপরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূচি |
রাজার লস্করে সেন দিল দরশন | জোড়াশিঙ্গা সারে কালু ডোমের নন্দন || ধর ধর বলি ঘন জোড়া শিঙ্গা সারে | ডিগি ডিগি মাদল কাড়ায় কাটি পড়ে || দুই দিগে লস্কর পদাতি পরিসর | দড়বড়ি চলে ঘোড়া অন্ডির পাখর || নানা বর্ণে লস্করে অভয় বাদ্য বাজে | লাউসেন রাউত চলিল তার মাঝে || চন্দ্র যেন পঞ্চমীর দিবসে দেখা দিল | সেইরূপ লাউসেন রাউত সাজিল || স্থানে স্থানে হাথি ঘোড়া সর্দার সিফাই | লাউসেন রাউত আইল পড়িল তেঘাই || আনে বলে এ রাউত গন্ডার হানিব | কানড়া কুমারী বিভা ভূপতি করিব || আড়ে দীঘে ষোল কোশ রাজার লস্কর | দরবারে বসিয়া আছে রাজা গৌড়েশ্বর || বর্ধমানের কালিদাস বস্যা বামভাগে | ভালমন্দ বাক্যের সকল দায় লাগে || গজপতি মান্ধাতা বস্যাছে এক ঠাঞি | বিনোদ ঘোষাল বস্যা রাজার গোসাঞি || বারভূঞা বস্যাছে রাজার বিদ্যমান | রাজা গৌড়েশ্বর শুনে নৈষদ পুরাণ || নল আর দৈমন্তী যখন গেল বনে | শলি মচ্ছ কুড়াইয়া রাজা পাইল গনে || পোড়াইতে দিল রাজা দৈমন্তীর করে | স্নানহেতু শীঘ্রগতি গেল সরোবরে || পাখালিতে পোড়া মত্স্য গেল পালাইয়া | পরম আনন্দে সভে শুনে মন দিয়া || দলে বলে দড়বড় রাজার দরবার | দড়বড়ি দেখা দিল লাউসেন কুমার || শাখা সুখা গোড়াইয়া রহিল বাহির | লাউসেন সমাগত রাজার দরবারে || রাজার চরণে গিয়া নোঙাইল মাথা | আইস আইস বলি ডাকে ভূপাল মান্ধাতা || কেহ করে কোলাকুলি কেহ দেই হাত | অরাতির উপরে পড়িল বজ্রাঘাত || কতেক পাঠান মিঞা সৈয়দ জাঙ্গড়া | সাহেব সেলাম বলি পড়ে হাতেনাড়া || দলে বলে গৌড়েশ্বর আপনি উঠিল | লাউসেনের হাতে ধরি কাছে বসাইল || সেইখানে গন্ডার ধুমসী বলধর | রাজা বলে লাউসেন অবধান কর || তোমা বিনে দেখি বাপু দিন অন্ধকার | এতক্ষণে ভারি হৈল আমার দরবার || রাজা বলে তুমি মোর প্রিয় প্রাণধন | তোমারে দেখিলে বাপু জুড়ায় জীবন || মন করে সদাই তোমার মুখ চাই | কেমন আছেন তোর মাতা খোলাডাই || কর্ণসেনের কল্যাণ কহিবে যাদুমণি | তবে পাছু রাজ্যের বারতা যেন শুনি || সভামধ্যে কহে কথা রঞ্জার নন্দন | ভাগিনা দেখিয়া পাত্র ভাবে মনে মন || কপাল হইলে মন্দ সর্ব ঠঞি ডেড়ি | কবে আর রঞ্জাকে করিব আঁটকুড়ি || কবে আর পাঠাইব বিষম সঙ্কটে | পুত্র বলি বনি যেন কান্দে নাছে ঘাটে || ভাগিনা দেখিয়া পাত্র ভাবে মনে মন | রাজার চরণে কিছু করে নিবেদন || বাধ্যকতা কদাচ তোমার মনে নাঞি | বর্ণভেদ কত না বলিব তব ঠাঞি || হানিতে লোহার গন্ডার লাউসেনে কহ | ভবনে ভুলিয়া নৃপ নিরবধি রহ || আজ্ঞা কর আপনি লাউসেনে শীঘ্রগতি | হানিলে লোহার গন্ডার বিভা হয় রাতি || দিনে এক লক্ষ টাকা তোমার খরচ | তুমি কর্ণ সদৃশ সদাই দানে সচ || এত শুনি ভূপতি আপনি কন কথা | শুন বাপু লাউসেন বিশেষ বারতা || যদি লজ্জা দূর কর সিমুলের গড় | তবে বিভা করি আমি কুমারী কানড় || এক চোটে হানিবে লোঙার গন্ডার | এই দেখ হাতে সূতা ভবিষ্যত বর || সভাতে ধুমসী ছিল বলে ধীরে ধীরে | রূপরাম গীত গান বাঁকুড়ার বরে || ধুমসী বসিয়াছিল রাজার দরবার | লাউসেনের পাএ দাসী করিল জোহার || আমার বনুই তুমি কানড়ার স্বামী | পাঁচ বত্সর হৈতে এহা জানি আমি || এক চোটে হানিবে লোহার গন্ডার | বরণ পরাব তোরে দরবার ভিতর || লোহার গন্ডার দিল পার্বতী শঙ্কর | যেজন হানিব গন্ডা সেই তার বর || কিবা রাজা কিবা প্রজা কিবা অধিপতি | প্রতিজ্ঞা যে করে পূর্ণ সেই তার পতি || শিশুকাল হৈতে এই কানড়ার পণ | যেজন হানিব গন্ডার সে পাব বরণ || কানাড়াকে আপনি কহিল সর্বজয়া লাউসেন হানিব গন্ডার অনাদ্যের দয়া মুখপানে আছে চায়্যা কানড়া কুমারী মাল্য মণি দিয়াছে বসন যত্ন করি ধুমসী বলিল বাণী মনে নাই ভয় জ্বলন্ত আগুন পাত্র সভামধ্যে কয় দাসী হৈল পরাধীন জীবন মরণে তার বাণী কিংশুক সকল লোক জানে নিরন্তর সচঞ্চলা লজ্জামাত্র নাঞি বলে কয় যত কিছু সকল বড়াঞি দোচারিণী বিশেষ কথার বড় ভাতি সদাই নিবসে যথা কুলীনের পাঁতি দূর মাগী ধুমসী দরবার হৈতে দূর দম্ভ করি প্রীত বলে কেমন অসুর হেন ছার মাগীর দেখিতে নাঞি মুখ এত বলি কহে কথা রাজার সমুখ কার বাক্য কর্ণে শুন কাজে নাঞি মন দরবারে বস্যাছে সভে নাঞি সম্বোধন কুচ্ছিত বচন মাগী বলে বিপরীত দেবতার সমুখে রাখাল গায় গীত হাতে সূতা মাথে মৌড় মনে নাই লাজ কিবা কার্য বসিয়া ময়নার দুবরাজ || . ****************** . কানড়াবিভা পালার পরের পৃষ্ঠায় . . . . পাতার উপরে . . . মিলনসাগর |