রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য |
রূপরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূচি |
পড়িল প্রথম রণে লোহাটা বজ্জর | রণমত্ত লাউসেন বিজই পুরন্দর || তরাসে চঞ্চল প্রাণ মোর কলেবর | নাম শুনি আমার হৃদয়ে লাগে ডর || এত শুনি ভবানী বলেন হরষিত | দ্বিজ রূপরাম গান ধর্মের সঙ্গীত || ঈশ্বরী বলেন ইছা মনকথা নাঞি | অর্জুন সারথি ধর্ম কি ধরে বড়াঞি || বরুণ বিধাতা হরি ইন্দ্র পঞ্চানন | এই সব আমার সহিতে নারে রণ || ঢাল খড়্গ ধরিলে সমুখে কেবা থির | কোন ছার লাউসেন কত বড় বীর || আমি নহে রণে যাই তুমি থাক ঘরে | পরিপাটি পূজা এত লাউসেনের ডরে || জগতজীবন যন্ত্র আমি সর্বজয়া | কেবা নাঞি আশা করে চরণের ছায়া || যুগে যুগে জন্মিল যতেক অবতার | কেবা নাঞি পূজা দিল চরণে আমার || যত আছে দেবতা সভার তত্ত্ব জানি | কৃষ্ণ অবতারে নাম গোবিন্দ-ভগিনী || আজি রণে অবশ্য ধরিব খড়া ঢাল | কি করিতে পারে তোর অষ্ট দিগপাল || বচন বলিতে মুখে খসে তিন বাণ | অসুর দেবতা দেখি হৈল কম্পমান || তিন বাণ দিল দেবী ইছাইর করে | তিন বীর নিধন করিবে তিন শরে || বীর কালু লাউসেন অন্ডির পাখর | এই তিন বাণে তারা যাবে যমঘর || শুন বাপু ইছা ঘোষ বলি তোর তরে | সত্বরে সাজন কর অজয়া সমরে || হেঁটমুখে কান্দে ইছা এই বাক্য শুনি | লোচনে তরঙ্গ ধারা যেন মন্দাকিনী || মলিন বদনে বীর বলে বিবরণ | তবে কেন নষ্ট হৈল লঙ্কার রাবণ || দশ মুন্ড কাটিয়া তোমার পূজা দিল | রাম অবতারে সেহ সবংশে মরিল || এত শুনি ভবানী বলেন হেঁটমুখে | রাবণ রাজার শোক আছে মোর বুকে || দৈব যদি বিমুখ আপনি সর্বনাশ | রামচন্দ্র জানকী লক্ষ্মণ বনবাস || বান্ধা গেল সাগর রাবণ কেন মরে | সর্বনাশ হয় ইছা দৈব যারে ধরে || উচিত বলিতে ইছা মনে কিবা দুখ | বিষয় সম্পদ যেন জলের বিম্বুখ || সাজ কর সত্বর সমরে চল যাই | বিলম্বে নাঞিক কাজ শুনরে ইছাই || এত শুনি ইছা বীর সাজিল সত্বর | রাবণ সাজিল যেন লঙ্কার ভিতর || পাতালে বাসুকি কাঁপে স্বর্গে দেবগণ | অষ্ট দিগপাল দেখি ভয়াতুর মন || শিরে বান্ধে পাগুড়ি পটুকা পদ্মফুল | তার উপর বরণ অরুণ অনুকুল || সমুখে রাখিল তোড়া রাম রাধা ধনী | দপ দপ জ্বলে তথি অজগর মণি || অঙ্গে পরে ইছাই অপূর্ব অবরণ | নীলমণি শোভা করে কস্তুরী চন্দন || সর্ব গায় পরিল কবচ আর রাঙ্গি | কোমর কসিয়া বান্ধে যমধর টাঙ্গি || বান্ধিল যুগল অসি মুখে যার কাল | নৌতন জলদ রুচি নিদারুণ ঢাল || সমুখে রাখিল বীর হীরাধর ছুরি | মাণিক মিশাল জ্বলে কলধৌত ঝুরি || যুগল তরকচ বান্ধে বিশ হাজার তীর | মেঘনাদ সদৃশ কি জানি মহাবীর || ধরণী চঞ্চল করে ধরিতে ধনুক | অসুর পালায় ডরে অমর ভুবুক || তরণি দুপুর বেলা বিমানে মোহিত | সত্বর সরণিহারা হৈল আচম্বিত || ইছাই করিল যাত্রা ঈশ্বরী ধিয়ান | লাউসেন জিনিতে বীর শুভক্ষণে যান || মার মার লাউসেন ইছাই বীর ডাকে | বসুমতী থির নয় ফিরে যেন চাকে || ডাকে কাঁপে জগতজীবন সদাগতি | দক্ষিণ ঢেকুর গড়ে হৈল উপনীতি || বসুমতী আকাশ পাতাল চমত্কার | ইন্দ্র বলে ইছাই অপূর্ব অবতার || যেইখানে লাউসেন ময়নার নৃপবর | সেইখানে উত্তরিল ইছাই কুঙর || দুই বীর সাজিল অনন্ত অনুপাম | ইছা হৈল রাবণ লাউসেন হৈল রাম || লাউসেন বলে ধন্য ইছাই গোয়ালা | ধন্য শ্যামরূপা দেবী রঙ্কিণী বিমলা || লাউসেন বলে শুন কালুসিংহ ভাই | ঢেকুরের যোগ্য রাজা দেখিল ইছাই || অমরাবতীর রাজা যেন পুরন্দর | রাজা দুর্যোধন যেন হস্তিনানগর || দারুণ জন্ভের সুত যেন বলবান | নিবাতকবচ সুত না দেখি সমান || তরণি দ্বিগুণ বল সাক্ষাত পাবক | অবতীর্ণ গড়ে যেন অসুর তারক || লাউসেন দেখি ইছা মনে যুক্তি করে | এবার কদাচ জয় অজয়া ঢেকুরে || বলিতে নিশ্চয় নারি অবতীর্ণ কি | আমার সারথি দুর্গা হেমন্তের ঝি || তথাপি উহারে দেখি অঙ্গে টুটে বল | দ্বিজ রূপরাম গান ধর্মের মঙ্গল || . ****************** . ইছাইবধ পালার পরের পৃষ্ঠায় . . . . পাতার উপরে . . . মিলনসাগর |