রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য |
রূপরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূচি |
গল্যা পড়ে ঐমনি ঈষৎ পচা গন্ধ | প্রভুর পরশে হইল পদ্ম মকরন্দ || সেইখানে বান-জলে করাইল স্নান | গায়ের সহস্র শোভা ধরিল উজান || মনে হৈল রঞ্জাকে অবশ্য বর দিব | আপনার মহাপূজা আপনি সাধিব || কুশ জল জপি মুখে উচ্চারিল মনু | দেখিতে দেখিতে রঞ্জা পাইল পূর্ব্ব তনু || পঞ্চভূত আত্মা বৈসে যার যথা স্থান | অঙ্গের সহস্র শোভা ধরিল উজান || মব়্যাছিল রঞ্জাবতী পাইল পরাণ | শূণ্য-ভরে লুকাইল ঠাকুর নারায়ণ || প্রাণ পায়্যা রঞ্জাবতী চারি পানে চায় | দেবতা অসুর এক দেখিতে না পায় || কেবা দিল প্রাণদান চাম্পায়ের তীরে | প্রাণ দিল যদিস্যাৎ বর দেউ মোরে || প্রাণ দিয়া তবে যদি নাঞী দেয় বর | পুনরপি হত্যা এই তাহার উপর || হত্যা দিতে রঞ্জাবতী হাথে নিল ক্ষুর | হেন কালে হাথে ধরে দয়াল ঠাকুর || বর মাগ রঞ্জাবতী আমি দিব বর | নিশ্চয় বলিল আমি প্রভু মায়াধর || যে বর মাগিবে তুমি সেই বর দিব | মনের বাসনা তোর সফল করিব || কলিযুগে দেখা দিল আনন্দহৃদয় | কান্দিতে কান্দিতে রানী রঞ্জাবতী কয় || নিবেদন ঠাকুর তোমার দুই পায় | রূপরাম ফকির ধর্ম্মের গীত গায় || নিবেদন করি প্রভু তোমার চরণে | তুমি ধর্ম্ম ঠাকুর আমি জানিব কেমনে || বলিতে উচিত মনে না করিবে ক্রোধ | যদি দেখি চতুর্ভূজ মনের প্রবোধ || যেইরূপ হয়্যাছিলে দ্রৌপদীর কাছে | সেইরূপ দখিতে আমার সাধ আছে || নতুবা যেরূপ হৈলে পারিজাত-হরণে | সেইরূপ দেখিব ঠাকুর নিরজনে || করুণা করিয়া বলে রঞ্জাবতী রানী | আচম্বিতে চতুর্ভূজ দেব চক্রপাণি || আজানুলম্বিত-মাল্য দুর্ব্বাদল-শ্যাম | চরণে পড়িয়া কান্দে কোটী মুনিরাম || পূর্ণব্রহ্ম অবতার পৌর্ণমাসী তিথি | নাসিকাশিখরে শোভা করে গজমোতি || ঠাকুর বলেন সতী শুন মন দিয়া | চতুর্ভুজ রূপ দেখ নয়ান ভরিয়া || বিমুখ আছিল রানী সমুখ হইল | গরুড়-বাহনে দেখি কান্দিতে লাগিল || লোটায়্যা ক্রন্দন করে অঝোর-নয়ান | বর মাগ রঞ্জাবতী বলে ভগবান || যে বর মাগিবে তুমি সেই বর দিব | মনের বাসনা তোর সফল করিব || বিশেষ বলিলা যদি অনাথের নাথ | রঞ্জাবতী বলে জুড়িয়া দুই হাথ || কান্দিতে কান্দিতে রঞ্জা বলএ বচন | বিপাক তোমার মায়া জানে কোন জন || বালক বাছুর চুরি হৈল বৃন্দাবনে | একরূপ অনন্ত আপনি নারায়ণে || আপনি বালক হৈলে আপনি বাছুর | শিঙ্গা বেণু হাথে নড়ি চরণে নূপুর || বিধি -অগোচর মায়া আমি কোন ছার | দয়া কর ঠাকুর দিনের দিবাকর || তোমার সাক্ষাতে গোসাঞী মাগি পুত্রবর | বাঞ্ছী-বাজ দিল ভাই দরবার ভিতর || কান্দিতে কান্দিতে রানী বিশেষ বলিল | ঠাকুর বলেন আমি পুত্রবর দিল || লাউ নাঞী খায়্য রঞ্জা লাউ নাঞী রুয়্য | পুত্র হৈলে নাম তার লাউসেন থুয়্য || যেই মহা-ঋষি দিবে মকরে উদয় | সেই হবে রঞ্জাবতী তোমার তনয় || বাসর বঞ্চিয়া যাবে কালিনীর স্নান | নারিকেল ভাসিয়া আসিব বিদ্যমান || বড় নারিকেল ভাঙ্গ্যা সূর্য্য-অর্ঘ্য দিও | ছোট নারিকেল রামা আপনি খাইও || রঞ্জাবতী বলে মনে না হয় প্রত্যয় | মনের মরম বলি শুন মহাশয় || চাম্পাই ঈশানে ঐ নিন্বতরু মরা | সত্য যুগে তরু ছিল কলিযুগে ধরা || ফলে ফুলে যদিস্যাৎ ঐ গাছ দেখি | পুত্র কোলে বংশ পাই মনে হয় সাক্ষী || আচম্বতে মায়া করে ভকতবৎসল | মরা তরু প্রাণ পাইল করে ঝলমল || জীবন্ত হইল তরু নানা ফল ধরে | কাঁচা পাকা সম ফুল ভ্রমর গুঞ্জরে || গাছে ডাকে কোকিল দক্ষিণ দিকে বসি | সঘনে উগারে মধু চঞ্চলে রূপসী || . লাউসেন-জন্ম পালার পরের পৃষ্ঠায় . . . . এই পাতার উপরে . . . মিলনসাগর |