কবি ধীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় –  জন্মগ্রহণ  করেন খুলনা জেলার বাগেরহাট মহকূমার কাড়াপাড়া
গ্রামে। তাঁর শিক্ষা শুরু গ্রামের টোলে। সেখানে কাব্যতীর্থ উপাধি লাভ করেন এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাশ করার
আগেই। কলেজ জীবনে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি.এ. পাশ করেন।

এই সময়ে তিনি
কাজী নজরুল ইসলাম, সজনীকান্ত দাস, জলধর চট্টোপাধ্যায়ের সংস্পর্শে এসে গান রচনায়
উদ্বুদ্ধ হন। তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয় সেই সময়ের “প্রবাসী”, “বিচিত্রা”, “বঙ্গশ্রী”, “কালিকলম”,
“কল্লোল” প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায়।

বিংশ শতকের কুড়ির দশকে তিনি গ্রামোফোন কোম্পানি ও টুইনের জন্য গান লেখা শুরু করেন, আঙুরবালা
দেবী, ইন্দুবালা, কমলা ঝরিয়া, মাণিকমালা, জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, ধীরেন্দ্রনাথ দাস প্রমুখের জন্য। কবির স্ত্রী
বীণাপাণি মুখোপাধ্যায়ও তাঁর কথায় লেখা বেশ কয়েকটি গান রেকর্ড করেছিলেন। তাঁর, আঙুরবালার কণ্ঠে,
“চোখ মুছিলে জল মোছে না” গানটি খুবই জনপ্রিয় হয় কিন্তু দীর্ঘ কাল গানটি
নজরুলের বলে প্রচলিত ছিল।

তিনি রচনা করেছেন উপন্যাস, নাটক ও কবিতাও। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে কাব্যগ্রন্থ “রিক্তা”,
“কুটীরের গান” (১৯৩৪), ৮০টি গানের সংকলন “আশোয়ারী” (১৯৩১), উপন্যাস “বিদ্রোহী” (১৯২৫-২৫),
“ফুলশয্যা”, নাটক স্রোতের ফুল, জয়ন্তী (১৯৪১) যা মিনার্ভা থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয়েছিল, প্রভৃতি।
জয়ন্তী নাটকটি উত্সর্গ করেছিলেন তাঁর নাট্য-পান-পাগল বন্ধু
শ্রীযুক্ত বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, বি.এ. মহাশয়কে

সংস্কৃতি জগতের সঙ্গে যুক্ত থাকার পাশাপাশি তিনি স্নাতক হবার পরে কটন টেকনলজি নিয়ে পড়াশোনা
করেন এবং ম্যানচেস্টারের ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৩৩ সালে তিনি জাপান যান কটন টেকনলজি সংক্রান্ত
কাজে। সেখানে তাঁর যোগাযোগ হয় সিইটো কোম্পানির সঙ্গে যাঁরা তাঁকে তাঁদের সর্বভারতীয় এজেন্ট করে
পাঠান। তিনি জাপানী ভাষাও রপ্ত করেছিলেন এবং ১৯৩৯ সালে ইংরেজীতে
“The Rising Sun” নামে একটি
গ্রন্থ প্রকাশিত করেন। তার ভূমিকা লিখেছিলেন ডঃ কালিদাস নাগ।

চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি তিনি সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে কলকাতা
বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার ও এগজামিনার হিসেবেও কাজ করেছেন।

১৯৪৭ সালে ব্যবসায়ী সীতারাম জয়পুরিয়া ও মন্টুরাম জয়পুরিয়ার আহ্বানে তাঁদের ব্যবসায় জেনারেল
ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেন। কলকাতার জয়পুরিয়া কলেজ তাঁর তত্ত্বাবধানেই তেরী হয়েছিল।

তিনি দেশভাগ ভাল মনে মেনে নিতে পারেন নি। চল্লিশের দশকের শেষার্ধে তিনি স্ট্রোকে পঙ্গু হয়ে পড়েন
এবং ১৯৫১ সালে পরলোক গমন করেন।

আমরা এখানে তাঁর কিছু গানের সঙ্গে কুটীরের গান কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি তুলে দিয়েছি। সেই কাব্যগ্রন্থে
তার তিনটি অনুবাদ কবিতাও রয়েছে যা এখানে তোলা হয় নি।

আমরা
মিলনসাগরে  কবি ধীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের গান তুলে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে
এই প্রচেষ্টার সার্থকতা। মিলনসাগর কবি ও গীতিকারদের মধ্যে কোন পার্থক্য করে না।


উত্স – স্বপন সোম, সংকলক, গানের ভিতর দিয়ে ১, ১৯৯৮   



কবি ধীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন



আমাদের ই-মেল -
srimilansengupta@yahoo.co.in     


এই পাতা প্রথম প্রকাশ - ১৫.০৪.২০১৫


...