কবি ধূর্জটি চন্দর কবিতা
*
কবরশয্যায়
কবি ধূর্জটি চন্দ

মানুষের কথা বলি যে মানুষ এখনো রয়েছে
ঘুমঘোরে ফুলে-ফালে, তার বুঝি ছিল কোনো গান
অনুষ্টুপ, অনুপ্রাস, ‘নির্গন্ধা ইব কিংশুকা’ ;
বাদামী রংয়ের ঘোর কেটে গেলে যে মানুষ দেখে
তার রূপকথা নেই, তার নেই সহজ সকাল।
প্রেম-ট্রেম বাজে কথা, বিচ্ছিন্নতা প্রথম তো তার
প্রাপ্য ছিল পৃথিবীতে, তাই সে নিজেই মানুষের
শত্রু হয়ে বেঁচে আছে এইখানে, আজো এইখানে।

একেক দিন অন্ধকার, ঝিঁ-ঝি রাত ভূতের মতন
প্রেতস্বরে কথা বলে এইখানে কবরশয্যায়।

.                *****************             

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
সেখানে ছিলাম
কবি ধূর্জটি চন্দ

হলুদ-সবুজ দিন পাশাপাশি শুয়ে আছে
আর শুয়ে রয়েছে মহিম,
বহুদিন বাদে আহা কোথাকে এলাম ওহে!
তোমাদের নিকটে এলাম।
পুরনো বসত আর নেভা মোম চির-চেনা
ক্লাউনের হাঁ-করা চোয়াল
সারি সারি অন্ধকার, দেশলাই কাঠি-জ্বলা
দন্ত-ফাঁক সেখানে এলাম।
যেন কেউ কেউ নয়, যেন সেই, সেই ফাঁকা
ঘূর্ণমান বারুদের নল ;
তারি মধ্যে আঁধু পোক, লোমশ হাতের চাপে
নড়েচড়ে দুর্বিনিত লাশ।
যেন ছায়া হয় তারা, দেয়ালে হৃদয়ে ঘোরে,
সচকিত কিশোর সকাল
বহুদিন বাদে যেন সে আমায় প্রশ্ন করে
কোথাকে হে ? কোথাকে এলাম!

আমার চোখে তো আঁকা একটি কসাইখানা
রয়ে গেছে, বাংলা যে নাম,
হলুদ লাশের কানে সবুজ লাশটি বলে
মনে রেখো, সেখানে ছিলাম!

.              *****************             

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
রাত বাড়লেই
কবি ধূর্জটি চন্দ

রাত বাড়লেই শিশুর মত ককিয়ে উঠি
রাত বাড়লেই বুকের ভিতর উষ্ণতা,
শক্ত হয় অজানাভয়ে হাতের মুঠি,
রাত বাড়লেই দহন করে শূন্যতা।

অথচ নেই তেমন কোনো কার্যকারণ
আকাশে চাঁদ, তারাগুলিও বেশ ঠিকঠাক,
তবুও এত কষ্ট কেন যে, কেন মরণ
রাত বাড়লেই বসাও তোমার ওই বিষ দাঁত!

কাজ কি এমন নষ্ট চণ্ডী অস্তিত্বে আর ?
পাখির নরম মাংসে জিভের বিদ্রোহ তাই,
তথাপি গ্রাস করছে তাপ, স্বপ্ন-আধার ;
নির্জনতা, আমাকে দাও বিষণ্ণ হাই।

আমাকে দাও একলা চলার ছিন্ন কুসুম,
আমাকে দাও বিহ্বল রজনী সারস-পিপাসা ;
আমাকে দাও নগ্ন রাতের বৈশাখী ঘুম,
রাত বাড়লেই দহন শুরু, মোটে না আশা।

.              *****************             

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
এই তো আমি ‘দৃপ্ত’
কবি ধূর্জটি চন্দ

খোকন সোনা ঘুমিয়ে পড়ে চুষিকাঠি নিয়ে
আলো-ঝলমল পরী গেল দুষ্টু চুমু দিয়ে।
তারপর এক এবাক কাণ্ড পদ্মগন্ধে মাত
‘দৃপ্ত’ তখন নিশ্চিন্তে ঘুমোয় সারারাত।
মা ডেকে তার পান না সাড়া, খোকন পদ্মবনে
খেলছে যেন স্বপ্নে ‘দৃপ্ত’ গন্ধবালকসনে।
ডাকতে ডাকতে মা হয়ে যান ভীষণ রকম ক্ষীপ্ত
অমনি খোকন লাফিয়ে ওঠে, ‘এই তো আমি দৃপ্ত’!

.              *****************             

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
নীল দূরে
কবি ধূর্জটি চন্দ

এখন আর তোমন কাউকে আমার পড়ে না মনে,
ডাক-গাড়ি চলে গেছে সময়ের হাত ধরে কবে,
নীল দূরে ডেকে গেছে চেনা-জানা স্মৃতি এক মেয়ে
একটা চিঠির আশায়, হায় চিঠি জুনের বিকেলে
আমায় ভাবালে কেন ভালোবাসায়, ভালোবাসা এমন!

আমি তো নিজের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলি এখন,
মনেও পড়ে না কোনো চিঠিপত্র লেখা ছিল কিনা
বিস্মৃতি নামে এক নারীর বুকের গভীরে ;
আপেলের মতো যবে ভরেছিল দামাল যৌবন
জানি না, পড়ে না মনে, ডাক-মুন্সী হাওয়ার স্বদেশে!

তবুও তো বেঁচে আছি বেঁচে আজো এই পৃথিবীতে
ধূসর বিকেল কেবল ঘন্টা নাড়ে হৃদয়-দুয়ারে
‘নিরাময় বাড়ি আছো ? খবর শুনেছ নাকি তার---
ফুটপাথে পাওয়া গেছে গতরাতে মৃতদেহ কার’

জানি না, পড়ে না মনে, কে যে ডেকে গেছে নীল দূরে!

.              *****************             

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর