কবি ধূর্জটি চন্দর কবিতা
*
সিংহাসনে রাজা
কবি ধূর্জটি চন্দ

ধূপের গন্ধে মন ভরে না মধুর গন্ধে নয়
কী বিচিত্র সময় হলো তোমার পরিচয়,
কীভাবে আজ তোমার সঙ্গে সহাবস্থান করি
বাঘ ঘুরছে ধানের ক্ষেতে যবের শীষে অরি।
যোজনখানেক পিছে জানি সবুজ স্মৃতি আছে
অন্ধকারে ভূতগুলো সব ল্যাম্পপোস্টে নাচে---
সেখানে সব দস্যিপনা স্থির হয়ে আজ পড়ে,
কী বিচিত্র সময় এলো, বাড়ন্ত সব ঘরে!
সেই আসাই আসবে যদি বছর কয়েক আগে
দক্ষিণ তো খোলাই ছিল, এলে না তো রাধে!
শ্যামলবীথি মুখ লুকিয়ে হাসতো আমায় দেখে,
অধিক কি বা বলবো রাধে। সব হয়েছে বাঁজা,
নগরে সব জিরাফ ঘোরে। সিংহাসনে রাজা।

.                *****************             

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
যাও চলে যাও দখিন হাওয়া
কবি ধূর্জটি চন্দ

ফিরলে কেন ? যাও চলে যাও। ছায়া তোমার সয় না
তোমা আছে প্রণয়-খিদে রোদ্দুরে ভয় হয় না।
তোমার আছে গাইতি-শাবল, রক্তপাতের সঙ্গী
বিপন্নতায় মলম ভাষ্য সলাজ ভুরু ভঙ্গি॥

তোমার অমন স্তাবকতায় আমার কিছু হয় না
চিনতে আমি ভুল করিনি দাঁড়ের পাখি ময়না।
তোমার আছে নদীর উজান, বকুল বাগান আস্ত
যাও চলে যাও দখিন হাওয়া এখন আমি ব্যস্ত।

এখন তোমার বৃষ্টি কিশোর প্রণয়ভূষণ মেঘসাজ
ভিজে চুপসে ঢোল হল যে, সঙ্গে তেহাই ঐ বাজ ;
এখন তুমি বিপন্নতায় সত্যি ভীষণ ক্লান্ত
রোদ্দুরে যে বয়স পোড়ে কেই বা এত জানত!

.                *****************             

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
মনে কর
কবি ধূর্জটি চন্দ

মনে কর একটা মাঠ আর তার মধ্যে চড়ুইভাতি
ভাতের গন্ধে মৌ মৌ সুখ, অদূরে ঐ কাঙাল দেখছে।
কিংবা ধরো, একটা ঘরের সমস্তটাই পরিপাটি
এক কোণেতে অবহেলে ভাঙ্গা শিশি ধুলোয় ধুঁকছে
এমন বিপরীতে কার ঈশ্বরে মন দেবার আছে!
মহাস্থবির জীবন আছে, উত্সাহ নেই উত্সাহ নেই।

মনে করো একটা নাটক, তার মধ্যে প্রেমের দৃশ্যে
যো তোমাকে ভালবাসেনি কণ্ঠলগ্না তাকে দেখলে,
কিংবা ধরো, একটা মানুষ জীবনে যার মায়া ছিল না
তাকে তুমি ঘর-সংসার কুসুম-কুসুম সুখ চেনালে,
এমন বিপরীতে কার ঈশ্বরে মন দেবার আছে ?
মহাস্থবির জীবন আছে, উত্সাহ নেই উত্সাহ নেই।

.                   *****************             

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
হে ঝরাফুল
কবি ধূর্জটি চন্দ

এই বাগানে আবার আসবো। হয়তো তোমায় আবার ভাববো
হয়তো তোমার ঠোঁটের ভিতর দুষ্টু জিভে সাঁতার কাটবো।
অনের কথা অনেক গল্প, রমজান মাস রোজার শিল্প
সাঙ্গ হলে যেমন কাম্য, ও চাঁদ, তোর পেটে ঢুকবো।

চুমুর মত ক্ষণস্থায়ী এই জীবনে নাব্যতা কি
কেবল জানে সমুদ্র ঐ, ভাঙছে শব্দ কার তাতে কি ?
ঢেউয়ের মত গড়িয়ে চলে পান্থ সময়, পারবো তা কি
রাখতে ধরে মায়ার ওষ্ঠে ? হে আগামী, আবার আসবো।

হয়তো তখন সন্ধেবেলা কুসুম তুমি তীর হবে না
হয়তো তখন ঢেউয়ের খেলায় ভিড় হবে না ভিড় হবে না ;
হয়তো তখন শ্মশানবিধুর ঐ মুখেতে হাত বোলাবো
প্রত্নপ্রেমের লঙ্ঘিত সুখ, হে ঝরাফুল, আবার আসবো।

.                   *****************             

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
অন্ধকার, আমি যাই
কবি ধূর্জটি চন্দ

আজ এই অবদি থাক, কাল ছুটি, কাল দ্যাখা হবে
লক্ষ্মীটি রাগ কোরো না, কতদূর যেতে হবে আমায়
ও দিকে ঈশানী মেঘ, অন্ধকার জমছে ক্রমশঃ
ভয় কি ? এই তো আমি, কাল ছুটি, কাল দ্যাখা হবে।

পক্ষীবিষয়ক কিছু ? আমি তাকে খেতে দিই কিনা
কী যে বলো এ বয়সে পাখি টাখি আর পোষায় না
তাই তো দিয়েছি ছেড়ে এক্কেবারে ফুরুৎ আকাশে
যেদিন তুমিও এলে, মানে, এই সমাধি ফলকে।

আজ আসি, কাল হবে বসে থাকা আর পিছু ফেরা
অনর্গল ভালোবাসা মধ্যাহ্নের গাছগুলি শ্রোতা
সে এক দারুণ মজা! টুপটাপ পাতাো ঝরবে
স্তব্ধতার বুক চিরে চলে যাবো দূরে, বহুদূরে।

লক্ষ্মীটি রাগ কোরো না, শৃঙ্খলিত দূরে যেতে দাও
মানুষের পদশব্দে এখন তো ভয় নেই তোমার---
এখন ওখানে থেকে বৃন্দগান শুনছ প্রত্যহ
অন্ধকার, আমি যাই, কাল ছুটি, কাল দ্যাখা হবে।

.                   *****************             

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর