কবি দিলীপ কুমার বসু-র কাব্যোপন্যাস
কঙ্কনমালা
*
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

কংকণার ঋতু হ’ল, ফুল-ফল ভেসে           
শিরদাঁড়া বয়ে এক কোমল বংকিম         
ক্রমে ক্রমে হয়ে উঠছে ভেলাস্কেথ না         
একটি ছবির মত | সুলক্ষণা কংকণা              

বহুদূরে বাগানের জমির মালিক | জ         
সর্বদা আড়ালে থাকে বহুদূরে, মেঘে            
কংকণার রাজা কেউ নেই কেউ আছে         
ক্লাসে সে সবচে’ ভালো | মাদাম ক্যু                       
স্কুলপাঠ্য কবিতায় জানেনি কি অদ্ভুত           
পৃথিবীর অন্ধকার ঘোচাবে, এমন ক        
ভারতীয় মেয়ে হয়ে সে-ও তো আন            
কমিয়েছে জিদ ও চেষ্টায় ; বুদ্ধি, প্রা         
জননী পৃথিবী --তাকে সমর্পণ করে যা            

জমি তৈরী হয়ে ওঠে | অকস্মাৎ অ           
এনে দেয় কম্যুনিস্ট ম্যানিফেস্টো |           
পরিবেশে উষ্ণ বায়ু, রাত জেগে পড়ে            
সকৌতুকে পিতামাতা মাথা নাড়ে |          
মাথা নাড়ে | খেলাঘরে খেলনাগুলি বি           
কাকাতুয়া কেবল চেঁচায় | পিতৃবন্ধু        
খবরটা চালাচালি হয় |  কংকণা ব্যা        

এমন সময়ে তাকে অসমাপ্ত রেখে স্কু          
ইংলন্ডে কয়েক মাস | তারপর আমে             

.                                                                     
কঙ্কনমালার সূচিতে . . .    
.                                                                       
কবির মূল সূচিতে . . .    

                   *

আমেরিকা ইংলন্ড পেরিয়ে | কংকণার প্রাণে সুখ নেই এই নিত্যই বিদেশে থেকে |
যদিও দেশেতে তার বন্ধু বলতে কেউও ছিল না, তবু আধচেনা মুখগুলি,
স্কুলের মেয়েরা, আর কোনো শিক্ষয়িত্রী, আর মাটি, শহরের চেনা গাছ, ফুটপাথ,
ডাক দিয়ে ঘুরে ঘুরে চলে যায় | কতদিন বিদেশের স্বচ্ছ হাওয়া
কাঁচের মতন তাকে ঘিরে থাকবে, বেঁধে রাখবে, কংকণা ভাবতে পারে না |

তাছাড়া কোথায় যেন কাকে কথা দেয়া ছিল, কি যেন গড়িয়ে গেছে
তোলা হয়নি |

স্মৃতিতে বুদবুদ ওঠে |

তবে এই পথঘাট, সুড়ঙ্গ ও সেতু দিয়ে কতমাইল চলে যাওয়া চেসাপিক বে-ব্রিজ-টানেল-এ,
নীল রৌদ্র গাংচিলের ছুটে চলে ভেসে-যাওয়া ডানা ঝাপটিয়ে দিয়ে গাড়ির বনেটে,
ড্রাইভিং এতদিনে শিখে ফেলা, প্রথম কবিতা লেখা বাংলায়, মহাসাগরের সামনে
এই কবিতা মিলনসাগর ডট কম থেকে নেওয়া সুইমিং কস্ট্যুমে দাঁড়িয়ে
দূরে চেয়ে পূর্বপৃথিবীকে খোঁজা উন্মোচিত দেবীর শরীরে,
শরীরের কোষ দিয়ে টেনে নেয়া উষ্ণ. তপ্ত, মধুর রদ্দুর,--
এস্কেলেটরেতে চড়ে কেনাকাটি নানা স্টোরে সহজে সুলভ দামে নরম কাপড়
রাত্রে যা শরীর ছায়-- জ্যাজ শোনা, নাচ দেখা -- দু’একটি ছেলের সাথে স্কুলের আলাপ,
তাদের মজার চিন্তা বোকা-বোকা, ‘ডেট’ নিতে অস্বীকার, সম্ভবত এ সমস্ত, অথবা বয়স
কংকণাকে অহংকারী করে তুলছে | কলংকিনী না হয় যাহাতে
সে কারণে মার সঙ্গে খুব স্পষ্ট যৌন আলোচনা, ঘৃণা, ধীরে ধীরে রোমাঞ্চে প্রত্যয়
নিজের উপরে ফেরে, অসহায় অবস্থাটা কেটে যায়, শিখার মতন জ্বলে মানবাত্মা,
ধীরে ধীরে আরেকটি কবিতা লেখে, টি.ভি.বন্ধ করে ভেবে দ্যাখে মেয়ে হয়ে জন্ম নেয়া
অভিশাপ নয় | স্থুলতা এড়িয়ে যায় কংকণা ; শরীর ছাড়াও
শরীরের দাম আছে ; মানুষের চিন্তা-ভাব-কল্পনার অর্ধেক মেয়ের;
--- এ,কল কথাগুলি ধনুকের তীর হয়ে চেতনায় লেগে থাকে |
বিজ্ঞানেতে মন দেয় সেই থেকে | মাদাম ক্যুরীর
স্বপ্নটুকু মনে রাখে | প্রিয় এক মার্কিনী কিশোর
লরী ড্রাইভারের ছেলে, সাহিত্যের ভাল ছাত্র,
( গণিতে কংকণা শ্রেষ্ঠ ) তার সাথে বসে
অনেক নূতন কথা, অভিজ্ঞতা সব
জানে ও জানতে দেয় | দু’জনেরি সাধ
একদিন যাবে চীনে | ভারতে বিপ্লব
কেন হয় না, এ প্রশ্নের উত্তরে কংকণা
ব্যাকুল সরল শব্দে নিজের অ-জ্ঞান
বলে দিয়ে চুপ করে বুকের কাঁপন
গুণতে থাকে বহুক্ষণ | ছেলেটিও বলে
কংকণার প্রশ্ন শুনে, সে জানে না
আমেরিকা কতদিন পরে নেবে ধ্বংস হয়ে নবজন্ম |
এই কবিতা মিলনসাগর ডট কম থেকে নেওয়া     
.                                                                       
কঙ্কনমালার সূচিতে . . .    
.                                                                         
কবির মূল সূচিতে . . .    

দু’জনেই সহজে স্বীকার করে, প্রেম
হয়নি তাদের মধ্যে ;  তেমনি জানায়
পরস্পরকে ইচ্ছে করছে  | ভারতবর্ষ
কাকে বলে, নিজের দেহের কথা, সব
অজানা, অর্ধেক জানা : কংকণা ভাবছে |
বিত্ত, নীতি, সংযম ও স্বাধীনতা, কুমারীত্ব এ সমস্ত শব্দ ও ধারণা,
এই দেহ কাকে বলে, কোন সুগন্ধকে,
এইসব ভেবে নিয়ে কৌতূহলে, কিছুটা আনন্দে
খানিকটা যন্ত্রণায়, দু’জনের সম্মতিতে
ভাসতে ভাসতে, ডুবতে ডুবতে তারা তুলে নিল
জীবনে যা কিছু করবে, যে যা ভাবছে,
তার জন্য প্রস্তুতির এক আধটা সোনার মোহর |
এই কবিতা মিলনসাগর ডট কম থেকে নেওয়া    
কংকণা বন্ধুর হাত চাপা দিল পূর্বসম্মতিতে | কী কারণে
থেমে গেল, থেমে যেতে বলল কংকণা : চুলের ক্লিপের মত
প্রশ্নটিকে মাথায় রাখল গুঁজে | মাঝে মাঝে
আমেরিকা বাসকালে সন্ধ্যা বা রাত্রিতে
ক্লিপটিকে নাড়াচাড়া করে দেখত অন্যমনে | সংস্কার ? সংযম ?

ক্লিপটি হারিয়ে গেল সময়েতে | মনে রইল, ক্লিপটা যে ছিল |

.                     ***********************       


.                                                                       
কঙ্কনমালার সূচিতে . . .    
.                                                                         
কবির মূল সূচিতে . . .    


মিলনসাগর