কবি ফকির ইলিয়াসের কবিতা যে কোন গানের উপর ক্লিক করলেই সেই গানটি আপনার সামনে চলে আসবে।
|
আছে যে আততায়ী হাতের ছাপ- তার কথা
ভাবলেও শিউরে উঠতে পারি আমরা দু’জনেই।
অতঃপর কান্নার কিনারায় খুঁজতে পারি
একে অপরের মুখছবি।
এভাবে আমরা প্রকৃতপক্ষেই এড়িয়ে যেতে পারি
অনেকগুলো ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ডের কথা ! তোমার
কামিজ আর আমার শার্টে লেগে থাকা রক্তদাগ ধোয়ে,
শুকিয়ে নিতে পারি। তারপর পুনরায় গায়ে দিয়ে দিব্যি
বলে বেড়াতে পারি - আমরা কোনোকালেই কোনো
নির্মম হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী ছিলাম না।
এবং ঘাসের পালকে বিছিয়ে দিতে পারি আমাদের
সঞ্চিত মুদ্রার নৃত্য। নাচতে পারি আমরাও তাদের
সাথে, যারা সূর্য ডুবার আগেই এই পৃথিবীতে নামায়
ঘোর অন্ধকার । আর বলে - ‘ভেসে যাও বিশ্ববাসী
জোসনার প্লাবনে’।
আসলে আমাদের একটা প্লাবনের প্রয়োজন ।
অদ্ভুত ,অন্যরকম প্লাবন।
যার স্পর্শ পেয়ে ভেসে উঠবে ডুবন্ত জাহাজ।
ঢেউয়ের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মুখ এসে দাঁড়াবে
ভূমি উপত্যকায়। সবগুলো উপসাগর মুছে যাবে
পাহাড়ী উপকথায়। আর সবগুলো মানুষ একান্তই
প্রেমের স্বরবীজে , খুঁজবে অনুগত ধ্বনিচিহ্ন।
ঠিক এরপরই
হাঁ, এরপরই আমরাও পালটে নেবো
আমাদের,
প্রতিবেশী নক্ষত্রবিষয়ক বাদবাকী কথাপ্রসঙ্গ।
. ******************
. উপরে
মিলনসাগর
কেউ লাগিয়েছে সবুজ ঘাসচারা। আর আমার স্বপ্নেরা
বেঁচেছে ঘাস হয়ে, পুষ্প হয়ে।
শুধু পদছাপ রেখে যাবার জন্য এসেছিলাম,
সেকথা আমি বলিনা। যে পাখি ডানা ঝাপটায়
সুখের দরদে ,আমি তার সহযাত্রী হয়ে ভেসেছি
দৃশ্য-দৃশ্যান্তরে। কাঁটার কর্তৃত্ব মেনে গোলাপ
প্রশাখায় রেখেছি হাত। যারা ফিরে গেছে কিংবা
এই দিবালোক থেকে সরিয়ে নিয়েছে তাদের
ছবি, আমি তাদের নিয়েও লিখেছি আখ্যান।
মাঝে মাঝে লিখে যেতে হয় নামাবলী-দীপাবলী।
ঠিক পদছাপ রেখে যাবার জন্য এসেছিলাম
সেকথা আমি বলি না। দরোজার কড়ায় ভর
দুপুর জুড়ে বসেছিলো যে প্রজাপতি-
আমি তার ছবি আঁকতে চেয়েছি।
রঙের রাংতা দিয়ে মোড়ে রেখেছি
কয়েকটি ভোর,
প্রাণের বান্ধব সময়
যাবার আগে তোমার দু’হাতে তুলে দেবো বলে ,
যে তুমি আমার ভেতরে
মাঘে-মেঘে ঘটাও প্রলয়।
. ******************
. উপরে
মিলনসাগর
সুবিশাল উত্তরবাহু। উদগত ভূমির কাছে
তারা ছিল বর্ষার অবনত কুসুম।
আমার গল্পগুলোকে আমি পুষ্পের মায়ায় বাঁচিয়ে
রাখতে চেয়েছিলাম। তুমি সে মায়াকে তোমার
তুলির আঁচড়ে ধরে রাখতে চেয়েছো। তবে এটা
কখনও চাও নি, তোমার ক্যানভাসে ফুটে
থাকুক গল্পপিতার পাঁজরের পটভূমি।
এ সমুদ্র আমার নয়। জেনেও তার গভীরে
সমর্পণ করেছি আমার পাঁজরের উষ্ণতা।
বার বার ভুলে যেতে চেয়েছি, অগণিত মানুষের মুখ।
তোমাকেও বলি -
চন্দ্র, প্রাক্তন প্রেমিকা আমার,
তুমি তার মুখছবি কখনও ই আঁকতে যেও না।
বরং আমাকেই মুছে দিতে দাও
এইসব ক্ষত আর করতালির ধ্বনি
এইসব বিন্যস্ত বিবাগ,গতিপথ
পাল্টে দিয়ে পুনরায় উদ্বাস্তু হয়ে যাই ভিন্ন নগরে।
আমি জানি, নিজ শিল্পকর্মগুলোকে পুড়িয়ে
ফেলতে চেয়েছিলেন মকবুল ফিদা হুসেন
পরিণত বয়সে তাকেও ফিরিয়ে দিয়েছিল
তাঁর জন্মগ্রাম,
আর গ্রহণ করেছিল দূরবাসী মেঘের তাঁবু।
বৃষ্টিরা তাদের তাঁবুর নীচেও আমাকে আশ্রয় দেয়নি।
ভ্রমণের সমাপ্তি শেষে আমিও করেছি না না রকম
যোগ বিয়োগ। হিসেব-নিকেশের সাইরেন আমাকে
বার বারই জানান দিয়েছে,
তবে কী সাম্রাজ্যবাদের পোষ্য হয়েই বেঁচে থাকা
আমার জন্য একান্তই উত্তম ছিল না !
. ******************
. উপরে
মিলনসাগর
থেকে গেল এক ফোঁটা রক্তের দাগ বহন করে
ছিল আমার হাতে। আমিও আততায়ী ছিলাম,
পাঁজর। যে জোনাক পোকা পুষেছিলাম বুকের
শোনে পুনরায় কাঁদলো বৃহস্পতির ভোর। আ
মানুষের প্রাণ ছিল হাজার শতাব্দী আগে। হয়
পাখিগুলো উড়ে গেল আমাদের ভাঙনের
এই সত্য বুকে নিয়ে খুঁজলাম পথ। দুদিকে
স্বপ্ন বলে কোনো ইতিহাস ছিল না। ছিল
. ******************
. উপরে
মিলনসাগর
কোনো ইতিহাস থাকে না। বুদ হয়ে যেমন পড়ে থাকে
নেশাগ্রস্থ চাঁদ, আমি তার সহোদর হয়েই কাটিয়েছি বিমূর্ত
নির্বাসন। আর প্রেমিকার হাতের তালুতে আরও কিছু
বৃষ্টি জমা করে, সেই আলোরেখায় দেখেছি মুখের অবয়ব,
বলেছি - আর কখনও দেখা না ও হতে পারে
হে প্রিয় মেঘরাঙা শরত-রমণী !
. ******************
. উপরে
মিলনসাগর
চিহ্ন মানুষের সহযাত্রী হয়। মুছে যাওয়া সরস্বতী রাত
সামনে রেখে ছবি আঁকতে বসেছিলেন যে মকবুল ফিদা হুসেন,
আমরা নিজেদের পরিচয় খুঁজতে তার হাতে রাখি
মুষ্টিবদ্ধ হাত। আঙুলের ঝলক আর চাঁদের জ্যোতি
একাকার হয়ে ঝলসে দেয় নদীদের স্রোত। ক্যানভাসে
জমা হয় বৃষ্টির সহস্র ভালোবাসা।
নদীও ভালোবাসা চায়। চায় মানুষও। আর বীজের
আলোকিত বিধান সাথে নিয়ে বদলে যেতে থাকে ক্রমশঃ
সৌরঋতু। বৃক্ষগুলো সাক্ষী থেকে যায়।
ফিরবে বলে অভিবাসী পাখিদের ঝাঁক, স্মৃতি মাখে জলের ছায়ায়।
. ******************
. উপরে
মিলনসাগর
তার ডান হাত। তাই নিজ ডানহাতটিকে ভয়ে লুকিয়ে রাখতেন
আমার মা। আর বলতেন, দেখিস- আমার হাতটা যেন কেউ না দেখে।
তার ভয় ছিল খুব। বাবার হারানো ডানহাতটিকে তিনি মনে করতেন
নিজের হাত। বাবার চোখগুলোকে মনে করতেন নিজের চোখ।
সেই প্রভাতে আমার মায়ের নিজস্ব কোনো দৃষ্টি ছিল না। বৃষ্টি আসবে বলে
সকল মুক্তিযোদ্ধার দৃষ্টি দিয়ে তিনি তাকিয়েছিলেন আকাশের দিকে।
আর বলেছিলেন, বৃষ্টি আসুক। তবু মুছে যাবে না এই বাংলা থেকে
থোকা থোকা রক্তগোলাপের দাগ।
. ******************
. উপরে
মিলনসাগর
নদীতে ভাসায় নৌকো। দেখার দূরত্বে দাঁড়িয়ে তাকায় অষ্টদশী প্রেমিকার
দিকে। আর তার কান্নার বিনুনীতে তোলে দেয় গাঁদা ফুল। একদিন বজ্রঘোরে
যে প্রেম মানুষের সহায়ক ছিল, তার ভূগোলে জমা রাখে পৃথিবীর বিদগ্ধ বীজ।
অংকুরিত জোনাকের রাত দেখে আমিও স্বপ্ন দেখেছিলাম। জেনেছিলাম, ঢেউ
এসে মানুষের মন স্পর্শ করে। তোমার ছায়াকল্প দেখে এটাও বুঝেছিলাম, বৃষ্টি
এলে শরীর ভিজে যায়। মন ভিজে না। মনান্তরে যে মানচিত্র থাকে, কেবল সেটিই
ছুঁতে পারে পাঁজরের পৃষ্টদেশ। আর মেঘ কাছে এলে আকাশ খুঁজে যৌথ প্রবেশ।
. ******************
. উপরে
মিলনসাগর
মেঘলা মাঘের মুখ
ফকির ইলিয়াস
শুধু পদছাপ রেখে যাবার জন্য এসেছিলাম,
গল্পের শিল্পকথা
ফকির ইলিয়াস
আমার গল্প নিয়ে তুমি যে শিল্পচিত্র আঁকতে চেয়েছিলে
তাতে চন্দ্রের কোনো ছবি থাকবে না
সেকথা আমি তোমাকে জানিয়েছিলাম।
বলেছিলাম, এ আকাশ আমার নয় – তাই তার
ভাঙন ও কৃতিত্বের গান
ফকির ইলিয়াস
পাখিগুলো উড়ে গেল অন্য আকাশ ছোঁয়ে। এই সিঁড়ি , এই ভুলের প্রান্তর
বর্ষার বার্তাকক্ষ
ফকির ইলিয়াস
কোনো খবর নেই তবু উল্টাই শাদা পত্রিকার পাতা,
. খুব সাহস করে আকাশ
ছিটিয়ে দেয় মাটির শিকড়ে
ৎসব হবে, আমার এই মন
. স্পর্শ করবে ভুলের পাতাল।
র বার্তাকক্ষে। পালকের নীল
তাকিয়ে দেখছি মিসিসিপি নদীর
গাঁথা অন্য কয়েকটি বর্ষাদানা দিয়ে
দক্ষিণ।
বলই তোমার চোখের গহীন।
সূর্যের পরিণত ঘর