কবি গৌতম মণ্ডলের কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
জীবন ধারা    

এ রাস্তার ওধারে উচু লম্পপোস্ট
টিমটিমে আলো পথ দেখাবে পথিকে
বাম দিকে গাছেদের শিকড় বের হওয়া রুগ্ন শরীর
ডানদিকে ধুসর বনভূমি দু-একটা ঘাসফুল ছাড়া
.            কেউ নিশ্চয়তা যোগায় না ।
ওরা আমাকে বলেছিল ভালোবাসতে
রাতের আঁধারে মৃত শরীরে মুখ লুকিয়ে
.            জীবনের আনন্দ খুঁজতে-
অথবা কোনও পোড়োবাড়িতে লুকিয়ে থেকে
মৃত্যুর সুর বাজাতে আর গুনতে
আকাশের অগণন শতকোটি তারা-
হায়! এ সবই নাকি ভবিতব্য
অনাগত প্রজন্মের প্রাত্যহিক জীবন ধারা ।


.       ****************                                                                   
উপরে


মিলনসাগর
*
১।
২।
৩।
৪।





১০

১১

১২

১৩

১৪

১৫


১৬।
১৭।
১৮।
১৯।
২০।
২১।
২২।
২৩।
২৪।
২৫।
২৬।
২৭।
২৮।
২৯।
৩০।
৩১।
৩২।
৩৩।
৩৪।
৩৫।
৩৬।






জীবন ধারা    
খিদে      
সৃষ্টি    
জীবন একটাই    
জীবন-১    
জীবন-২    
সংসার    
স্বপ্ন আমার    
প্রত্যাশা    
আপনি হয়তো জানেন না    
প্রস্তাবনা    
যেতে দে   
বেদনার  দাগ    
নিমফুলের গন্ধ    
গোধূলি বেলার গান       ( Alice Meynell এর "Song of the night at day break"
.                                         
এর অনুবাদ )    
অরূপ-রতন           
আশা    
প্রত্যাবর্তন    
আবাহন    
বেশ করেছি    
দিনান্তে    
বৃষ্টি    
মৃত্যু-তালিকা    
বঙ্গ নারী    
বিশ্বাস    
চাইছি কি    
রূপান্তর    
আর আসবো না    
ভালোবাসার রাজপথ    
নিরুদ্দেশ    
সাধারণ লোক    
জীবন-৩    
মুখোশ    
পরকীয়া প্রেম    
আত্ম-সমীক্ষা    
প্রলোভন    
খিদে    

এবার আমি খাব, সবকিছু খাবো
ইট-কাঠ-পাথর চেটে পুটে খাবো
রেকাবিতে একটি মাত্র ভাতের কণা
কৃষ্ণতো নই, তাই দিয়ে লক্ষ কোটি পেট ভরাবো ।

দুহাতের আঙুলে ছিঁড়বো রাত্রির নিস্তব্ধতা
শীতঘুমে মগ্ন পুরবাসী, বাতাসের স্পর্শে জেগে ওঠে ঘুমন্ত আকাশ
লক্ষ তারার চোখে খিদে আগ্রাসী ।
এবার খাবো ঝরা পাতা, শিউলি ফুল তোকে ও
আগুন খাবো, বাহারি ফাগুন ভবিষ্যতের স্বপ্ন খাবো
মত্‍স্য-কন্যার চোখের সে গুণ।
চারপাশে গন্ডি দিলাম বাইরে খিদের পাঁচিল
তিন ভাই চার বন মাথা ঝাঁকায়
পূর্ণিমার চাঁদ চিলতে হেসে বেড়ার ফাঁকে মুখ লুকায় ।
এবার খাবো, চাঁদ খাবো, গাছ মাটি বৃষ্টির জলও
দৃষ্টিতে ধরা পরে যতকিছু, সাতরাঙা রামধনু, দিকচক্রবাল সব খাবো।
এক নিমেষে ঢুকেছি পক্ষীশাবকের হা করা ঠোঁটে
দেখি সেখানে মা নেই, বাপ নেই, ভাই-বোন, কেউ নেই-কিছু নেই
কেবল খিদে জেগে আছে, নবান্নে গলে যাওয়া
গরম ভাতের মত তরল একপেট খিদে।

.             ****************                                                                   
উপরে    


মিলনসাগর
*
সৃষ্টি    

সকালে আবির রাঙা সূর্যটাকে দেখে
জেগেছিলো এই প্রথম বাঁচার স্বাদ ।
দীন-ভিখারীর মতো একপাশে শুয়ে আছে শীর্ণ নদী
খরস্রতা হয়তো ছিলো একদিন
এখন বিগত-যৌবনা, মলিন বেশবাস ।
ওপাশে নাম না জানা বিশল্য-করণী
বৃষ্টির স্পর্শে পাতার সমারোহ
অন্যপাশে চিরচেনা সেই লাঞ্ছিত ধরণী
দুস্বপ্ন-ঘুমে ঢোলে অহরহ
মাঝে জুইফুলের সাদা হাসি
সাদা ভাত আমি ভালবাসি
.                        নির্লজ্জ্ তাই পাতার পোষাক পরে
.                        মাটিতে শুয়ে মুখ লুকিয়ে।  
আমার নাভিকুণ্ড-এর চারপাশে পাক খেতে খেতে
উদাসী বাতাস শুষে নিয়েছে জন্মের ঘ্রাণ
পোষাকের পাতারা আমাকে নগ্ন করে গেয়েছে
.                                                বিভাবরী ঐক্যতান।
তারপর মাঝরাতে জেগে উঠে দুহাতে পেতেছি ফাঁদ
জ্যোত্‍স্নারা পড়েছে ধরা, দশ আঙ্গুলের ফাঁকে
গলে যেতে চায় সুখ রুপসী চাঁদ
আমি পৃথিবীকে স্তব্ধ করে কাঁপা ঠোঁটে সেই প্রথম
অনুভব করি নবপ্রানের উদঘোষ আর্তনাদ।


.             ****************                                                                   
উপরে    


মিলনসাগর
*
জীবন একটাই     

একটা জীবন ঘরের মাঝে শিকল তুলে নাচে,
একটা জীবন সকাল সাঁঝে যন্ত্রনাকে যাচে ।
একটা জীবন খুব ছুটছে                 
একটা জীবন স্থবির,                 
একটা জীবন গান গাইছে                  
একটা জীবন কবির ।               
একটা জীবন স্বপ্ন পূরণ গলে বরণ মালা,                
একটা জীবন সব ছারখার একাকী পথ চলা ।               
একটা জীবন সমর্পিত                 
একটা জীবন বাজি,                
একটা জীবন সংদেহাতীত                
একটা জীবন কারসাজি ।                
একটা জীবন ভরা সংসার সন্তানের মুখে চুমা,                
একটা জীবন ফুটাকাপ্তেন স্বপ্ন নিয়ে ঘুমা ।
একটা জীবন প্রলয় নাচন                 
একটা জীবন দুরমুশ,
একটা জীবন ইন্দ্রপতন
একটা জীবন জ্বর ঘুসঘুস ।
একটা জীবন দালান কোঠা অট্টালিকা বাড়ি,
একটা জীবন শিশমহল গোটায় পাততাড়ি ।
একটা জীবন সারা জীবন
জীবন করে চাষ,
একটা জীবন সারা জীবন
রামধনু বারোমাস ।

.    ****************                                                                         
উপরে    


মিলনসাগর
*
.        জীবন-১    

ঘড়ির কাঁটার মতো ছুটছে জীবন
ঘোঁড়ায় চাপিয়ে জিন তুমি বলছো-
.                                    থামো,
.                                    মাটিতে একটু বসো,
.                                    বাস্তবে যা বড়ই বেমানান।
কতটুকু আকাশকে ছুঁতে পারে
ছাপোষা একটা জীবন
কতটুকু স্বপ্ন দেখে আর
কতটুকুই বা ভোগ করতে পারে
গোটা একটা জীবন।
এই হিমরাতে জমাট বাঁধছে জল
মাটির গভীরে আর
আমার হারানো অতীত ফেলে আসা স্মৃতি
.            গীতি কবিতা হয়ে ঘুরে বেড়ায়
.            চারণ-কবির গ্রাম্য মেঠো পথে।

.    ****************                                                                         
উপরে    


মিলনসাগর
*
.        জীবন-২    

ব্যর্থতায় যখন ডুবে যায় জীবন
আমি কোনো ব্রাত্য নারীর কাছে যাবো
তার নগ্ন বুকে মুখ লুকিয়ে দু-দন্ড স্বস্তি ও শান্তি
.                                           খুঁজে নেবো ।

-“ বীরভোগ্যা বসুন্ধরা”,
তবু আমার মতো যারা কোনো অর্থেই বীর নাই
তাদেরও নিজস্ব একটা পৃথিবী থাকতে পারে
তেমন করে তলিয়ে ভাবতে পারোনি তোমরা কেউ ।

এখানেই সংঘাত বস্তুর সাথে ব্যক্তিস্বত্বর
হেরে যাবার ভয় সর্বদাই কুরে কুরে খায়
কিংম্বা আমি আদৌই কী নামতে চাই
.            লড়াইয়ের ময়দানে আমজনতার ।
কে জানে!
কী দামে কিনতে পারি একপাতা লালটিপ
এক জোড়া সাদা শাঁখা আর
একখানা ঢাকাই ছাপা ডুরে শাড়ি ।

.    ****************                                                                         
উপরে    


মিলনসাগর
*
.        সংসার    

ভরা সংসারে দুধ উথলায়
নিকনো উঠানে খেলে চাঁদ
নিশ্চিন্ত আরামে নিদ্রামগ্ন রাত
গনগনে আঁচ লাগেনি তার গায় ।

জল ছপছপ পায়ে ভেজা শাড়ি
হেঁটে যাও তুমি নতুন সোহাগী বউ
আলসে দুপুর যেন একখানি কবিতা
সেলাম ঠোকে কার্ণিশে অবাধ্য বুনো ঝাউ।

একটানা বয়ে চলে অবিশ্বাসের চোরাস্রোত
শক্ত হাতে বৈঠা টানো বুড়ো মাঝি
ডুবে  যেতে পারে পুরানো সে নাও
যতই ভাস তুমি তীরের কাছাকাছি ।

.          ****************                                                                    
উপরে    


মিলনসাগর
*
.        স্বপ্ন আমার     

স্বপ্ন আমার           পেষাই করা ছিবড়া আখের
স্বপ্ন আমার           ইট চাপা ঘাস হলদে ঘাসের ।
স্বপ্ন আমার           রেনপাইপ বটের শিকড়
স্বপ্ন আমার           বৃষ্টি ভেজা বেহুশ জ্বর ।
স্বপ্ন আমার           লাল চা বিনা চিনি
স্বপ্ন আমার           লাশ বিহীন কবরখানি ।
স্বপ্ন আমার           সাদা থান সিলিং ফ্যানে
স্বপ্ন আমার           খোলা ম্যানহোল পিছুটানে ।

স্বপ্ন আমার           ডুমুর গাছে ছাতারে পাখি             
স্বপ্ন আমার           মুদি খানার হিসাব বাকি ।
স্বপ্ন আমার           কিশোর বেলার হলদে শাড়ি
স্বপ্ন আমার           ঝম্ ঝমা ঝম্ রেলের গাড়ি ।
স্বপ্ন আমার           তীব্র স্রোত বিষাক্ত রুধির
স্বপ্ন আমার           কুমারী মন মুখ ও বধির ।

.          ****************                                                                    
উপরে    


মিলনসাগর
*
.                  প্রত্যাশা    

         এগিয়ে চলা        ছিঁড়ে ফেলা
             জমাট যত অভিমান,
         মাথা কুটে         পায়ের বুটে
             শুনতে চাই না সাম্যগান।
         দিল দরিয়া            খায় হাড়িয়া
             মাতাল ঠোঁটে গোগ্রাসে,
         কাঁদে শিশু         নবীন যিশু
           আদিম উল্লাস হিম্ ত্রাসে।
         মুখের কথা        ঘোচায় ব্যাথা
             
  অন্নহীনা  দুর্দিনে,
         নিশি জাগে        কপট রাগে
             
  রক্ত লেখা সঙ্গিনে।
         নবীন তরু            তপ্ত মরু
            
   ঊষর স্পর্শ শিকড়ে ,
         লাগুক হাওয়া          বৈঠা বাওয়া
             
  অন্তহীনা তিমিরে।
         মনের ভুলে        উঠুক দুলে
             আঁখির কোণে এই নেশা,
         বুকের মাঝে        সকাল সাঝে
             
  নিম্ন বিত্ত প্রত্যাশা॥

.     
              ****************                                                              উপরে    


মিলনসাগর
*
আপনি হয়তো জানেন না

আপনি হয়তো জানেন না,
যারা ভালোবাসে তারা কাউকে খুন করে না।
আপনি হয়তো জানেন না,
যারা খুন করে তারা কাউকে ভালোবাসে না।

হওয়ায় উড়ছে কালো বিষাক্ত ধোয়া
যা ত্বক ভেদ করে ঢুকে যাচ্ছে ফুসফুসে
একটু একটু করে প্রাণশক্তি ক্ষয় করছে
আর আমরা এগিয়ে যাচ্ছি মৃতুর দিকে।

চার দেওয়ালের মধ্যে খুন হচ্ছি
গঙ্গায় ভাসিয়ে দিছি বস্তাবন্দী লাশ
ইস্টার্ন বাইপাসে কবন্ধ শরীর আর
লাল পোলের নিচে শুয়ে দ্বিখন্ডিত শবদেহ।

আপনি হয়তো জানেন না
খুনীরা রয়েছে আপনারই চারপাশে
একসাথে গরম চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন
সকালে পড়ছেন খবরের কাগজ আর
বাজারে যাচ্ছেন, রেশনে যাচ্ছেন
দস্তানায় ঢেকে দিচ্ছেন আঙুলের ডগায় লেগে থাকা রক্তের দাগ।

আপনি তাদের চেনেন কিম্বা চিনেও হয়তো
না চেনার ভান করতে পারেন
কিন্তু এটা জানেন না,
যারা ভালবাসে তারা কাউকে খুন করে না
আর যারা খুন করে তারা কাউকে ভালবাসে না ।।

.                   ****************                                                              
উপরে    


মিলনসাগর
*
প্রস্তাবনা    

মেঘবর্ণ ঘুমে ঢোলে দু চোখ
দিগন্তে একঢাল স্ব
প্নরা ছুটে আসে
ধেয়ে আসে যুবতী ফসল অঘ্রাণে
নবান্নের ঘ্রাণে কাকে তুমি ভরিয়ে তোলো
.                    একাকীত্বে, এই হিমরাতে?
বেগবতী ঢেউ, কেন তুমি বেঁধেছিলে
বাম-করে প্রতি
জ্ঞা রাখী?
কেন সে আগের মতো সন্ধ্যা হলে
.                     নিশীথ-অভিসারী?
সবাই জমি খোঁজে, বিপন্ন শিকড়ে প্রানের ছোয়া,
প্রদীপের নিচে অন্ধকার হাতড়ে তুমি দেখবে কার মুখ?
যাকে তুমি হারিয়ে ছিলে শৈশবে,
এই অঘ্রাণে তার সম্মানে,
এসো একটি গীতিকবিতা লেখা হোক।


.                   ****************                                                              
উপরে    


মিলনসাগর
*
যেতে দে    

আমার দু-হাত ভরা নিমফুল
ওষ্ঠে ক্ষণিক তপ্ত-দহন
ধুকপুক ধুকপুক মিছেই হৃদস্পন্দন
তোকে সবই দিয়ে
আমাকে রেখে গেলাম মেঠো পথে
এবার আমায় যেতে দে।

খুলে দে আমার পায়ের সোনার বেড়ি
অভিমানের আধারে পাশফিরে শুয়ে যে চাঁদ কাঁদে
সে বিষাদের আলোটুকু গায়ে মেখে
.          চলে যেতে দে ।

আদিগন্ত সবুজ বন
আলোছায়া রহস্য-ঘেরা অবুঝ মন
যে স্বপ্নভরা পৃথিবীটা দেখালি আমায়
তার সবটুকু সুখ খুঁজে নিতে দে
মেঠো পথ চষা মাঠ পিছু ফেলে
এবার আমায় যেতে দে ।

.                   ****************                                                              
উপরে    


মিলনসাগর
*
বেদনার  দাগ     

চোখের জলে বেদনার দাগ লুকিয়ে থাকে
আমাকে দেখে যতই তুমি হাস
জীবনের জলছবি ঠিকই বুঝে নিতে পারি ।

দামি কার্পেটে ঢেকেছো ফ্ল্যাটের মেঝে
দেয়ালে পেন্টিং যামিনী রায়
ঢাকতে কি পেরেছো বেদনা-বিধুর মন
.              বিস্মৃম্তির আয়নায় ।
অপারগ মন পারে না ভুলে যেতে
একটি সে রঙিন পালখ সর্ষের ক্ষেতে
উড়ে বেড়ায় দমকা হওয়ায় দারুন ঘূর্ণিপাকে ।

চোখের জল বাঁধভাঞা এক নদী
বাঁকে বাঁকে স্বপ্নরা দেয় ডুব-সাঁতার,
বুকের ভিতর গুরুগুরু, একরাশ ঝুরোবালি
.     জিভে লেগে থাকে লোনাস্বাদ ।

.                   ****************                                                              
উপরে    


মিলনসাগর
*
নিমফুলের গন্ধ    

নিমফুলের গন্ধে জেগে উঠি
দেখি কখন এসে বসেছ তুমি মোর পাশে
বয়ে যায় অবদমিত আনন্দাশ্রু অপাপ-স্নিগ্ধ
.              আননে তোমার।
বড় অপরাধী মনে হ্য়
যে কাজ স্বপনেও ভাবিনি, তাই করেছি আজ
ব্যাধ সেজে হত্যা করেছি হরিণ নিষ্ঠুর হাতে
উষ্ণ রক্তের দাগ এখনো লেগে আছে দুই চোখে ।
জানি যে ভালোবাসা দিয়েছ
তার দ্বিগুণ আঘাত ফিরিয়ে দিয়েছি
তবু কেন সন্তর্পণ দৃষ্টি অহরহ
.         প্রহরায় থাকে সদা জাগ্রত ।
অন্ধ হয়ে যাই
আর অন্ধকারে জ্বর-তপ্ত আঙুলগুলি খোঁজে
.            তোমার উষ্ণ পেলব করতল
চূর্ণ-অলকগুলি খেলাকরে অলক্ত কপোলে
এই নিশীথ শেষ হলে জবাকুসুম শংকাশম
সূর্য
তুমি কি আলোর বিচ্ছুরণ ঘটাবেনা মোর রিক্ত-আঙিনায় ।



.                   ****************                                                              
উপরে    


মিলনসাগর
*
গোধূলি বেলার গান
অনুবাদ
( Click here to go to the original poem ...  Song of the night at day break by Alice Meynell )

সমস্ত উজ্জ্বল নক্ষত্ররা আমাকে
.          বিদায় জানায়
গোধূলি বেলার মৃদু হাওয়া আমাকে
.          বিদায় জানায়
আমি আমাকে তবে কোথায় নিয়ে যাবো?

আমি কী কেবল দৌড়াতেই থাকবো
সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত অবধি
.          সারা দিনমান-

মাঠ-ঘাট, ঘন সবুজ পাইন বান পেরিয়ে
পাহাড়-পর্বতের চূড়া ডিঙিয়ে
অন্ধজনের দৃষ্টি এড়িয়ে
.        আমি তবে কোথায় পালাবো?

আমার ফেলে আসা দিনগুলি
আমার ভুলে যাওয়া স্মৃতিগুলি
আমাকে কী বুকে তুলে নেবে না ?

.
        ****************                                                                       উপরে    


মিলনসাগর
*
Song of the Night at Daybreak
Alice Meynell (1847–1922)

(Click here to go back to the Bengali Translation by Poet Goutam Mondal)

ALL my stars forsake me,
And the dawn-winds shake me:
Where shall I betake me?

Whither shall I run
Till the set of the sun,
Till the day be done?

To the mountain-mine,
To the boughs o’ the pine,
To the blind man’s eyne,

To a brow that is
Bowed upon the knees,
Sick with memories.

.         ****************                                                                       
উপরে    




মিলনসাগর
*
.                       অরূপ-রতন

রূপসাগরে ডুব দিয়েছি             অরূপ-রতন পাবার আশায়
তোমার হাতে প্রাণ সঁপেছি          মুগ্ধআঁখির ভালোবাসায়।

বন্ধু অনেক পাবো জানি            ক-জন মেলে এমন সুজন
মনের কথা  কইতে পারি           খোলামেলা আমরা দুজন।  

ক্ষণিক ছোঁয়া শিহরণ               আড়চোখে কী দেখলো কেউ
এক-নিমেষে ছলকে পরে            বুকের মাঝে উথাল ঢেউ।  

চোখের দেখা দেখবো বলে           হৃদয় সদাই উপোসি
কী জানি কোন মন্ত্রবলে              তুমি এমন রুপসী।

হয়না বিশ্বাস ছুঁয়ে দেখি             সত্যি নাকি কল্পনা
সকল কাজে সবার মাঝে            বিশেষ তুমি একজনা।

বাইবো দাঁড় ইচ্ছে মতন            তোমার মনের সাগর তীরে
অরূপ-রতন দাওগো যদি           মরবো ডুবে রূপসাগরে।  


.                      ****************                                                          উপরে    




মিলনসাগর
*
.                    আশা    

নিশিদিন যাচি যারে       পলকে দেখিনা তারে
             একি দু:সহ বিষম ভার,
একবার এসো সখী             দোঁহে বসি পাশাপাশি
             বিরহ সইবো কত আর।

কতকথা আছে প্রাণে            সঞ্চিত সংগোপনে,
            তোমাকে শুনায়ে হই ধন্য,
কত গান বাঁধি গাই            ভাষার অন্ত নাই
            স্বরলিপি সব তোমারি জন্য।

বয়ে যায় নিরবধি        মত্ত এ জীবন নদী
             অশান্ত তরঙ্গ লহরী,
এসো তুমি মাঝি হয়ে           নিপুণ করে দাঁড় বেয়ে
             বিষম লজ্জা ভয় হরি।

মন্দবায় উড়ে আচল            সিক্ত তব শুভ্র কাঁচল
             প্রেমের সিংগ্ধ প্রতিমা,
অধরেতে মিলয়ে ওষ্ঠ            দোঁহে হব দিগভ্রষ্ঠ
      
       চাঁদোয়া বিছাবে নীলিমা।

নিত্য খুশি এই আশে            রাখিবো গো বাহুপাশে
             হে মোর পরান প্রিয়া,
কলঙ্ক হার মাথে লব            বরমাল্য গলে দিব
             পরিপূর্ন হউক পাগল হিয়া॥

.                      ****************                                                          
উপরে    




মিলনসাগর
*
প্রত্যাবর্তন

ফিরে কেন এলে
ব্যথতার হতাশায় ডুবে ছিলাম তো বেশ
কেন ফিরে এলে নবরুপে
কেন দিলে ধরা অধরা-মাধুরী
চির কাঙ্খিত হয় প্রেম।

হৃদয়ের নি:শব্দ রক্তক্ষরণ থেমে গেছে
আর মন বিহঙ্গের বিচরণ করার ইচ্ছা

প্রাচীরের চারপাশে জমেছে কাঁটা ঝোপ
সকলের রোদ এসে উকি দেবে ভাবিনি কোনদিন

আঁখির কালিমা মুছে তাকালাম আবার
প্রভাত সূর্যের দিকে
ধুলো ঝেড়ে তুলে নিলাম সাজি ভরে
ঝরা বকুল
দেখলাম মায়াভরা এই পৃথিবী আর
ততোধিক মায়াময় তোমার কোমল হৃদয়

তুমি এলে ফিরে
হয় প্রেম, বড় অসহনীয় এই প্রত্যাবর্তন
কোথায় পাতবো বলো তোমার আসন
কোন উপাচারে করব বরণ
মঙ্গল কলস হয়নি যে ভরা পুণ্যদ্দোকে

ভেসে যেতে বড় ভয়
বাঁধ ভাঙা উদ্দাম স্রোতে
নৌকার গলুই ছুয়ে বসে আছি
আর দেখছি তোমার অবগাহন
কেমন আদরে সোহাগে যতনে ধুয়ে মুছে শরীর
সাগর জলে সাজছো তুমি পদাবলী নায়িকা

বসে আছি দু হাত বাড়িয়ে
তোমার পরশে ধন্য আমি আর একবার
প্রাণভরে শ্বাস নেব ভালবাসার মুক্ত গগন তলে ॥

.                      ****************                                                          
উপরে    




মিলনসাগর
*
আবাহন

আমি তোমার স্বপ্নে ঘুমাই তোমার স্বপ্নে জাগি
রাঙা কামনায় তোমারি মূর্তি গড়ি
তোমাকে ধরতে চেয়ে বারংবার
আমি বাতাসকে আঁকড়ে ধরি ॥

তোমার দু নয়ন ঘিরে থাকে সদাই
তুমি থেকে যাও দৃষ্টির অগোচরে
আমার হৃদয় তোমাকে যাচে প্রতিদিন
মায়াবী রাতের গভীর আঁধারে ॥  

আমি বলতে চাই কত কী যে
গভীর প্রণয়ে ভাষা হারাই
উন্মত্ত জীবন জোয়ারে ভাসে
রিক্ত-হস্তে তোমারি দুয়ারে দাঁড়াই ॥

বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি সযতনে লুকিয়ে
তোমার কুঞ্জ দিয়েছি কুসুমে ভরায়ে
আকাশের বুক থেকে শরতের শিশির
কচি ধানের শীষে গিয়েছে ঘুমায়ে ॥

রাতজাগা পাখি ডেকে যায় একটানা
পুর্ণিমা চাঁদ জোছনায় ভরে চারিদিক
তোমাকে হারানোর ভয় চোরাস্রোত
বয়ে চলে বুকের গভীরে ধিকধিক ॥   

বাতাসে ঢাকের আওয়াজ শারদ সন্ধায়
উড়ে যায় বেশবাস সামাজিক বন্ধন
ধুপের ধোয়া কাঁসর ঘণ্টায় উচাটন
আমার শরীর জুড়ে কেবল তোমার আবাহন ॥

.                      ****************                                                          
উপরে    




মিলনসাগর
*
বেশ করেছি

বেশ করেছি বক ধরেছি
বেশ করেছি জল খেলেছি
সুর ভুলেছি বেশ করেছি ।

নাচবো এবার তাথই নাচে
ভাঙ্গুক স্বপ্ন পায়ের নিচে
দুহাত পেতে কেইবা যাছে
পরশ-মনি নীল কাজল ।

চাঁদের সাথে আড়ি
জেলেতে জলদেবী ডাঙ্গায় ফুলকুমারী
কেইবা আমায় রাখলো মনে
বয়েই গেল ভারী
মউল নেশা ধামসা-মাদল ।

বেশ করেছি আড়-ভেঙ্গেছি
ঘুম ভাঙা চোখ হাই তুলেছি
বেশ করেছি লাই দিয়েছি
বাচ্ছা বুড়োর কান মূলেছি
মিথ্যাবাদি সত্য কথার
বিনি সুতার জাল বুনেছি
বেশ করেছি বেশ করেছি ।

.     
  ****************                                                                      উপরে    




মিলনসাগর
*
দিনান্তে    

তুই আসবি বলে, এ তোরণ বেঁধেছিলো
.                     সে ছেলে
কার্পেট বিছানো রাজসিক অভ্যর্থনা
কল্পনায় ছিলো না তেমন কোনো কর্মসূচী ।
নগ্ন পায় পথ চলেছিলো সে একা
কোনো এক প্রত্যন্ত-গ্রামে আলপি সকাল
.                     হলে দেখা
পরিয়েছিলো গুঞ্জফুলের মালা, পলকে শিহরণ লেগেছিল
.                রাতজাগা বাসি চোখে।
একবুক আবির ঢেলে সূর্য তখন পশ্চিমে হেলে
.                নিয়েছে বিদায়-
প্রতিমার আবরণ উন্মোচন করে সে কোন মৃত্‍শিল্পী
দেখেছিল আঁখিদ্বয় কেন মানবীর বলে মনে হয়
.                এ আধো-অংধকারে।
তুই আসবি বলে
এ তোরণ বেঁধেছিলো পুষ্প আর পল্লবে
ধান-দুর্বা, চুয়া-চন্দনে সাজিয়েছিল বরণডালা
দিনন্তে সাঙ্গ হলে প্রতীক্ষার পালা
.                সে ছেলে
ব্যর্থতার রং ধুয়ে নেয় গাঙ্গুরের জলে।

.       ****************                                                                      
উপরে    




মিলনসাগর
*
বৃষ্টি    

বৃষ্টি এল দূর সরিয়ে
বৃষ্টি এল সুর ছড়িয়ে
বৃষ্টি এল নীল আকাশে
কাল মেঘের বুক ভরিয়ে ।
.                   বৃষ্টি এল চোখ ছাপিয়ে
.                   খাতায় নামল একটি ফোঁটা
.                   বৃষ্টি তারই সাথী ছিল
.                   মাতাল পায়ে পিছলে হাঁটা ।
বৃষ্টি এল বৃষ্টি এল
অথৈ ঝরে শ্রাবণ ধারা
হঠাত্ প্রবল জলোচ্ছাসে
ভাঙলো আগল বন্ধ কারা ।
.                   বৃষ্টি এল প্রবল বেগে
.                   আলপনা রং হলো মাটি
.                   দুত্তরী-ছাই ভাল্লাগেনা
.                   একটুখানি সাঁতার কাটি ।

.       ****************                                                                      
উপরে    




মিলনসাগর
*
মৃত্যু-তালিকা   

মৃত্যু-তালিকায় আমার নাম
বন্ধুরা শুভেচ্ছা পাঠায় অহরহ
এত তাড়াতাড়ি চলে যাবো শুনে দারুন খুশি
জানাবে বিদায়ী সম্বর্ধনা
.            তারি আয়োজন সমারোহ-
অপাঙক্তেয় ছিলাম এই সুসভ্য সমাজে
মারতে পারিনি একটাও মশা-মাছি
বাসের অযোগ্য করেছে যারা এই নির্মল বাসভূমি।
একটি প্রানের বিনিময়ে একটি প্রাণ
হৃদয়ের তংত্রীতে তোলেনি উল্লাশি ঢেউ
দুহাতে আঁকড়ে ধরেছি রক্তাত্ত ভিজে জমি
মৃত্যুর  মুখোমুখি আমি, ছিলাম হয়তো একদা
.                        তোমাদের আপনার কেউ-
হে আততায়ী ,
.                        শেষ নিঃশ্বাস  ফেলার আগে
.                        পিছন থেকে সামনে এসে একবার দাঁড়াও
.                        কালো মুখোশের অন্তরাল থেকে সরাও তোমার মুখ
.                        আমি একবার দেখে নিতে চাই আপন ভেবে
.                        যাদেরকে হৃদয়ে দিয়েছি ঠাঁই তারাই
.                        মারলো কিনা ছুরি, তাহলে মরণেও
.                        নেই দুখ, তোমার ও দুচোখ
.                        যতই ঝড়াক আগুনের ফুলঝুরি-

.       ****************                                                                      
উপরে    




মিলনসাগর
*
বঙ্গ নারী    

ভাবনা গুলো বড় এলোমেলো
.            উড়িয়ে নিয়ে যায় তোমাকে
.                        হাজারটা বছর –
আঁটো-সাঁটো ভরা শরীর, সুখী গৃহকোণ
লালটিপ, শাঁখা-সিঁদুর এয়োতির বন্ধন
.            তোমার এই নিজস্ব পরিচয়।
ভেসে ওঠে আয়নায় মাঝে মাঝে কার মুখ
পুরানো ডাইরীর পাতা ওল্টাও
.            একটানা বেজে চলে কলিং বেল
গুঁড়ি শুঁড়ি মেরে শুয়ে থাকে বাল্যপ্রেম
হাতছানি দিয়ে ডাকে যতই তাড়াও
.                                    অলস বিকেল ।
ইচ্ছে গুলো ছেঁটে ছেঁটে তুমি বনসাই
স্বপ্নের সাথে অলীক সমঝোতা
সুখী গৃহী অসুখী মনে বাসা বাঁধে ঘুনপোকা
কুরে কুরে খায় পূজাবার্ষিকী, বেনারসী শাড়ি।
দশভুজা, সর্বংস্বহা
তুমি মৌন মুখর, প্রতিবাদী ভাষা
.              পারাবার কাণ্ডারী
চিরন্তন তুমি, সনাতন তুমি,
তুমি নিঃসঙ্গ বঙ্গ নারী।



.       ****************                                                                      
উপরে    




মিলনসাগর
*
বিশ্বাস   

বিশ্বাস ভঙ্গ করলেই শাস্তি
আর শাস্তির আর এক নাম
.              যদি হয় মরণ
তবে হে বন্ধু! তোমার সাথে আবার দেখা হবে।
অন্ধ-জনে দেহ আলো, মৃত-জনে দেহ প্রাণ
এই যাদের আত্মকথন খুঁজে পাওয়া ভার
.              সেই সব মহামানবের-
হে বন্ধু! তোমরাতো জেগে আছো
তাই প্রতিবাদী কণ্ঠ জাগে বন তুলসীর পাঁচিল ঘেরা
গরিবের ভিটাখানি মুখরিত হয় নিরব প্রতিজ্ঞায়।

তোমার সাথে আবার দেখা হবে
আলোকিত মঞ্চের কোনও অজানা অন্ধকারে
টেবিলের নিচে জমে থাকা ধুলা মাকড়সার উর্ণীজালে
দেখা হবে ধানখেতে, বাঁশঝাড়, আলপথ
গোলাঘর, কয়লাখাদান কিংবা পাইনের ধারে

শাস্তির আর এক নাম যদি হয় মরণ
মরণের আর এক নাম যদি হয় উত্তরণ
তবে হে বন্ধু! তোমার সাথে আবার দেখা হবে-


.       ****************                                                                      
উপরে    




মিলনসাগর
*
চাইছি কি    

চাইছি কি? ভাবছি তাই
চোখ মেলে চারিদিকে
চাওয়ার জিনিষ কিছছুটি নাই।
.                                  যা চাইবে তাই পাবে
.                                  আলাদীনের দৈত্য প্রদীপ
.                                  জো হুজুর, হুকুম তামিল।
চাই নাকি নিজস্ব এক বাস্তুভিটে
মধ্যবিত্ত মাথা গোজা,
ছেলের চাকরি মেয়ের বিয়ে
খেলা ঘরের রাজা সাজা।
.                                  চাইলে পাবে মাদুলি তাবিজ
.                                  গ্রহ-রত্ন, আংটি সপ্ত-ধাতুর
.                                  ঘুরিয়ে দিতে ভাগ্যচাকা।
চাই নাকি হাওয়া-গাড়ি
হওয়া খেতে গড়ের মাঠে,
সোনার চেন, গিলে পাঞ্জাবি
কাটবে জীবন ঠাটে-বাটে।
.                                  চাইলে তুমি ভাসতে পারো ডুবতে পারো
.                                  জীবন নাও বাইতে পারো
.                                  অকুল-পাথার উথাল ঢেউয়ে।
যা চাইবে তাই পাবে
এমন সুদিন আসবে কবে
বাহির হয়ে বিশ্ব মাঝে
জগত্‍ সভা জানবো কবে।    
.                                  শান্তি চাই, স্ব্স্তি চাই
.                                  মরার আগে দুবেলা
.                                  বাঁচার মতো বাঁচতে চাই।


.       ****************                                                                      
উপরে    




মিলনসাগর
*
রূপান্তর

সবুজ প্রান্তরে অতিদ্রুত বদলে যাচ্ছে ফসলের ডাক, শিশিরের ঘ্রাণ
আকাশ ঝুঁকে পড়ে নির্বাক বিস্ময়ে দেখছে বর্ণহীন রূপান্তর
কি জানি পৃথিবীতে ঘটছে মহাপ্রলয়।

একটি বর্ণহীন রুপান্তর অতিদ্রুত ঘটছে কৃষকের হৃদয়ের অভ্যন্তরে
শ্রম-সময়ের, সবুজ প্রানের কি নিদারুন অপচয়।

তুমি কি ঘুমিয়ে আছো?
তুমি কি ঘুমিয়ে আছো? হে সুপ্তিমগ্ন মন, তুমি কি ঘুমিয়ে?
মাতৃ-গভে´র গহন অংধকারে খোকা হয়ে জলের শৈশবে তুমি কি ঘুমিয়ে?
.                   তুমি কি ঘুমিয়ে আছো?

বদলে যাচ্ছে অতিদ্রুত সবুজ প্রান্তর সভ্যতার নির্মম অহঙ্কারে
জল ও জঠরের আলিঙ্গনে তুমি কি ঘুমিয়ে আছো?
তুমি কি ঘুমিয়ে দারুন শীতঘুমে!

.       ****************                                                                      
উপরে    




মিলনসাগর
*
আর আসবো না

হয়তো আর আসবো না কোনদিন মুছে নিতে নয়ন নীর
অঞ্চলে তোমার। হয়তো সন্ধ্যারাতে বিষন্ন দীপ জ্বলে জ্বলে
নিভে যাবে স্বাতী নক্ষতের প্রতীক্ষায়। সাথিহারা পথিকেরা
খুঁজে ফেরে মিছে সুখের আশ্রয় অনাদিকাল মৌন ব্যথায়।
হয়তো আর আসবো না আঁকা বাঁকা মেঠো পথে চরণচিহ্ন
ছুঁয়ে ছুঁয়ে। জন্মের ঘ্রাণ মুছে গেছে কোলাহল মুখর মগ্ন
নিবিড় রাতে ভাপানো শস্যের মৌতাতে মাতাল মাদল-তলে
কত জন্মের পাপে কত জন্ম নষ্ট হয়ে গেছে ভ্রষ্টা ইচ্ছায়।

তবুও ঈশান কোণে অশনি সংকেত ধরিত্রীর জঠরের
অতল অংধকারে বেড়ে ওঠে প্রাণ গোপনে বিজয় উল্লাসে
হয়তো কেউ পায় স্পন্দন তার, কেউ দুহাত মেলে অবাক
বসে থাকে হয়তো জোড়া শাঁকের মাধুকরী মাঙ্গলিক গীতে।
এই সব অতিতুচ্ছ প্রানের নিবেদিত অতিক্ষুদ্র ভালোবাসা
আমাকে আর ভাসায় না লখীন্দরের মতো কলার মান্দাসে।

.      
         ****************                                                            উপরে    




মিলনসাগর
*
ভালোবাসার রাজপথ

তোমাকে রিক্সা চড়িয়ে বেড়াতে নিয়ে যাবো
এই ভেবে, সেই কবে থেকে দাঁড়িয়ে আছি
বেয়াড়া রিক্সা-ওয়ালা কুড়ি টাকা ভাড়া চেয়ে
.                   কেবলি ঘোরাচ্ছে-

ঝাউ গাছের ফাঁক দিয়ে দেখতে পাচ্ছি
ট্রেন এসে থমলো স্টেশনে, আর তুমি
শান্তিনিকেতনী ব্যাগ কাঁধে, পিঠে বিনুনী
দামাল হওয়ায় চূর্ণ কুন্তল দোলখাচ্ছে দু-গালে
অবাক দৃষ্টি আমি আসিনি ভেবে ভারী লাগেজ
টেনে নামাচ্ছো সিঁড়ি দিয়ে-
.
তখনই মন কেমন করা বৃষ্টি
আমি রিক্সাকে বিদায় দিয়ে একছুটটে
তোমাকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়াই
তারপর দুহাত বাড়াই আর এভাবেই বৃষ্টিতে ভিজে
পথ চলতে চলতে পিছ্ন ফিরে তাকিয়ে দেখি
জল ছপছপ পায়ের ছাপে গড়ে উঠেছে কখন যেন
.              ভালোবাসার অন্ত-বিহীন রাজপথ।

.               ****************                                                            
উপরে    




মিলনসাগর
*
নিরুদ্দেশ   

ভেবেছিলাম অনেক দূর চলে যাবো
যত দূর গেলে শব্দরা থেমে যায়
.          মনের দৃষ্টি হয় প্রতিহত।

চারিদিকে এত আলো, এত রূপ-রং
এত হাসি কলতান, সব ফেলে চলে যাবো
পায়ে পায়ে মাড়িয়ে পথ আর পথের দুধারে পড়ে থাকা
.          ব্যর্থ জীবনের যত ইতিহাস সব ভুলে।

ভেবেছিলাম তোমার নিকোনো দাওয়া থেকে
চরণচিহ্ন সব মছে দেবো, জল রঙে আঁকা
ছোট্ট কুঁড়েখানি মনের ক্যানভাসে ধুয়ে ফেলে
.                নিরুদ্দেশে দেবো পাড়ি-

কী যে করি যেখানেই যাই, যত দুরেই থাকি
তোমার সেই আনন্দময় কৌতুক দৃষ্টি
ঘাসে ঘাসে, লতায়-পাতায় ঘুরে ফেরে।

দেখি কোনদিন কাছে আসতে পারিনি
তোমাকে এড়িয়ে পারিনি দুরে চলে যেতে
কী এক অমোঘ টানে ছুটে চলেছি কেবলই
.              একই গণ্ডির চতুর্পাশে।


.               ****************                                                            
উপরে    




মিলনসাগর
*
সাধারণ লোক   

প্রসব করে ট্রেনগুলি যত রাজ্যের লোক
লোক গুলি যায় ভুলে আঁধার রাতের শোক
শোকগুলি দিনের আলোয় পায় না ভাষা খুঁজে
কাজ করে যায় স্বপ্নহীন গলিতে মুখ গুজে।

এক চিলতে সূর্য তখন পাল্লা খুলে হাসে
কৃষ্ণচূড়া, শিরীষ-শিমুল কিংম্বা সবুজ ঘাসে
সবুজ ঘাসে অবুঝ চোখ চোখে পরতেই বোকা
অথৈ জলে ভাসছে ডিঙা যায় না তারে রোকা।

চাঁদ ওঠে ওই গাছের মাথায় প্রেমের যেন কাব্য
ঘামঝরানো সাঁঝ-বেলায় শীতল সুখ-শ্রাব্য
গুনগুনায় গানের কলি আগল তুলে ঘরে
স্বপ্ন-দেশের ফুলের পরী প্রদীপ তুলে ধরে।

প্রসব করে ট্রেনগুলি যত রাজ্যের লোক
রোজই ভাবে বলবে কথা আবার দেখা হোক
সকাল থেকে দুপুর গড়ায় বিকেল গড়িয়ে রাত
দিন কেটে যায় দীনের মত মেটেনা মনের সাধ।

.               ****************                                                            
উপরে    




মিলনসাগর
*
জীবন-৩

জীবন কী খোঁজে জীবনের মানে
কে জানে, জীবনকে কখন প্রশ্ন করা হয়নি।

সে হাসে কাঁদে গান গায়
রং-চটা রুমলে আঁখি-লোর লুকায়।

ঘূর্ণিতে ডোবে, ঢেউয়ের সাথে ওঠে নামে
জীবন ছুটে চলে কিনারার সন্ধ্যানে।

জীবন ছুটে চলে বড় একা
সাপ-লুডো খেলা দুদিনের দেখা।

জীবন খোঁজে আশ্রয় জীবনেরই কাছে
মৃত্যুহীন জীবন অঙ্কুরের স্বপ্নে বেঁচে আছে।


.               ****************                                                            
উপরে    




মিলনসাগর
*
মুখোশ    

আজও পারিনি
মুখের উপর সেঁটে বসাতে
আর একটা ভালো মানুষের মুখোশ।

মন ও মুখোশের আমি কাজিয়া বাধায়
আর সেই ফাঁকতালে বাজারের সবজি-ওয়ালা থেকে শুরু করে
তথাকথিত বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-পরিজন বেওকুফ বানায়
.                            যখন তখন।
রোজ সকালে যে মুখ দেখি আয়নায়
যত্ন করে সেভ করি
সেও কী শোনে আমার কথা!
তা যখন হয় না
.          বৃথা দোষারোপ
.          মুখোশের আমি অথবা আমার মুখোশটাকে-

মন বলে, ‘‘খুলে ফেল মুখোশ”
আর মুখোশ বলে, “মনটা কর শক্ত”
বোকা আমি মন আর মুখোশ নিয়ে
.          রোজকার খেলায় বেশ হয়ে উঠছি পোক্ত।

.               ****************                                                            
উপরে    




মিলনসাগর
*
পরকীয়া প্রেম

একটু হাসি ক্ষণিক ছোঁয়া
উদাসী মেঘ ভিজে হাওয়া
.     উলট-পালট মন খারাপ,
নিলাজ আঁখি নিরুদ্দেশের
স্বপ্ন আঁকে সর্বনাশের
.     শূন্য বুকে বসন্ত-বিলাপ।

পোড়া বাঁশি কী শেল হানে
ছুটছে রাধা অমোঘ টানে
    নদী তট নিকুঞ্জ নিধুবন,
ফুটছে কাঁটা রক্ত পায়  
নয়ন তবু ফিরে না চায়
.     বিবশ-তনু, বিভোল-মন।

শ্যাম জানে না শ্যামার কথা
সংসারে তার শতেক ব্যাথা
.     জ্বলে পোড়ে পাগল হিয়া,
উথাল-পাথাল জীবন তরী
একলা বৈঠা বাইতে নারি
.     চিরন্তন প্রেম পরকীয়া।

.               ****************                                                            
উপরে    




মিলনসাগর
*
আত্ম-সমীক্ষা    

লাফিয়ে লাফিয়ে নামছি অন্ধকার সিঁড়ি বেয়ে
শেষ ধাপে খুলে জন্ম পোষাক।
যতই নামছি ততই ছোট হচ্ছি
আর আমার আঙ্গুলগুলি বিস্তৃত হচ্ছে
.     এক মাইল, দুই মাইল, তিন মাইল
.     আমার বর্ণচোরা লোভী আঙ্গুলগুলো-

গা থাকে নির্গত হচ্ছে বুনো গন্ধ
ভন্ ভন্ করে উড়ছে মধুমক্ষিকা আর
আমার স্তাবকেরা গাইছে জয়গান
.     সমবেত কন্ঠে বিপুল উত্‍সাহে।

উল্কা পতনের মত অতিদ্রুত অথচ
.          নিঃশব্দ এই অবতরণ
বুকের ভিতর রক্তক্ষরণ বুঝতে পারছে না ওরা কেউ
এ আমার অসংযমী লোভের প্রত্যাঘাত।

লাফিয়ে লাফিয়ে নামছি
যেদিন প্রথম পা রেখে মাটিতে পরে নেব রং-করা
.                   নকল পোষাক
ওরা আর একজন নপুংসক পেয়ে সমগোত্রীয়
.     সফেদ মাল্যদানে করবে ভূষিত।

.               ****************                                                            
উপরে    




মিলনসাগর
*
প্রলোভন   

সকল থেকে মিছিল চলেছে, অন্তহীন, বিরামহীন
এই পথ চলা। কোন্ অমৃতকুম্ভের সন্ধানে চলেছে ওরা?
বোঝে না সামনে যারা সমগোত্রীয় নয় মোটেই,
কুম্ভীরাশ্রু  বিসর্জনে মুখোষ এটেছে মুখে।
খোলা মনের জানালা রুদ্ধ করেছে ওরা লোভের পর্দায়
ক্ষণিক প্রলোভনে কলুষিত করেছে তোমার মন
সুস্থ চিন্তা, কোমল বৃত্তি-গুলি
তুমি গোপন করেছ তাই গুপ্তি কটিদেশে
অনুজ প্রতীম একদা সাথীকে বধ করবে বলে।

ওরা খাবে লাভের গুড় আর পাত্র থেকে
চুঁইয়ে পড়া এক বিন্দুর দিকে লালসা ভরা দৃষ্টিতে
তাকিয়ে থাকবে তোমরা সবাই
অদৃশ্য সুতোর জাদুগরী মায়াজালে যা নাচাবে
.          তোমাদের মুখের সামনে।

বন্ধু! যাও পরিশ্রম করো, পায়ের নিচে খুজে নাও
শক্ত জমি, চিনে নাও মুখোশধারী শত্রুকে  
ওরা আছে, থাকবে, চিরকাল প্রলুব্ধ করবে
         সাময়িক সুখের প্রলোভনে।

.               ****************                                                            
উপরে    




মিলনসাগর
*