কবি গিরিবালা দেবীর শাক্তগীতি
*
হে সুরসেনি, অসুরঘাতিনী
কবি গিরিবালা দেবী
নাম-সার কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

॥ সুরঠ, একতাল॥

হে সুরসেনি, অসুরঘাতিনী,বিপদে তারো বিপদবারিণী।
পড়িয়ে বিপদে শরণ শ্রীপদে লয়েছি শরণাগত-পালিনী॥
অর্জ্জুনের স্তবে পরিতুষ্টা হয়ে, জয়বাক্য দিলে অন্তরীক্ষে রয়ে,
অভয়া-অভয়ে অভয় পাইয়ে, বধিল কীরিটী সুরুসেনানী॥
কুমারী কালী কপালী কপিলে, ভদ্রকালী মহাকালী পিঙ্গলে,
হে চণ্ডে চামুণ্ডে, কমলা বগলে, তারিণী আর্য্যে মন্দরবাসিনী॥
জয়ঙ্করী মহাভাগে বিজয়ে, উমে শিখিপুচ্ছ-ধ্বজধরে জয়ে,
খরখড়গ ঘোটকধারিণী পীতবাসিনী বরবর্ণিনী॥
ত্বং স্বাহা স্বধা গায়ত্রী তুষ্টি, সাবিত্রী সরস্বতী সতী পুষ্টি,
সৃষ্টিকর্ত্রী সৃষ্টিহন্ত্রী সৃষ্টিস্রষ্ট্রী আদি কারিণী॥
শ্বেতা কৃষ্ণানন্দাত্মজে সুররক্ষিণী দল দনুজে,
সঁপেছে মন ও চরণাম্বুজে, ‘বালা’রে দুস্তরে তার ভবানী॥

.                 *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
আবার এটা এল কেটা
কবি গিরিবালা দেবী
নাম-সার কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

॥ বাগেশ্রী, দাদরা॥

আবার এটা এল কেটা এলোকেশা দিগম্বরা,
বিকটদশনা, লোলরসনা অতি ভয়ঙ্করা।
.        কপাল থেকে লাফিয়ে পড়ে,
.        ধচ্চে খাচ্চে গিলছে আড়ে,
অসি লয়ে কাটছে তেড়ে, মসীবর্ণ শশীধরা।

হুহুঙ্কারে দৈত্যনাশ, মুহুর্মুহুঃ অট্টহাস,
মেঘে বিজলি প্রকাশ ভক্তজন ভয়হরা।
.        যেন ‘বালা’র আঁখি কাছে,
.        মড়ার উপর দাঁড়িয়ে নাচে,
হায় এ রূপ যে দেখেছে, তার হয়েছে কর্ম্ম সারা॥

.            *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
আনন্দে আনন্দময়ী
কবি গিরিবালা দেবী
নাম-সার কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

॥ বেহাগ মিশ্র, ঝাঁপতাল॥

আনন্দে আনন্দময়ী নাচ মা মম হৃদয়ে।
সদানন্দে হেরি পদ ধ্যানস্থ আঁখি মুদিয়ে,
.                নাচ মা মম হৃদয়ে॥
পেতে দিচ্ছি বক্ষস্থল, রাখিয়া চরণযুগল,
সুধাপানে ঢল ঢল নাচ টলিয়ে টলিয়ে।
কঙ্কণ কিঙ্কিণী তবে বাজাবে, সঙ্গীত গাবে,
নূপুর নীরবে রবে, অটল পদ পাইয়ে।
কাতরে কহিছে ‘বালা’, ঘুচা মা, এ ভবজ্বালা,
কৃপা করি গিরিবালায় জীবত্বে শিবত্ব দিয়ে॥

.            *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
মা তোর পদে লুকায়ে থাকি
কবি গিরিবালা দেবী
নাম-সার কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

॥ ছায়ানট, দাদরা॥

.        মা তোর পদে লুকায়ে থাকি
অহরহঃ নয়ন মুদে ও রূপখানি সদাই দেখি।
ঐ দেখা যায় দেখ মা শ্যামা, শমন মারে উঁকি ঝুঁকি,
কখন এসে ধরে বা সে, ঐ ভয়ে মা তোরে ডাকি।
মা ভবারাধ্যে, জগতবন্দ্যে জগতমাতা তুমি নাকি,
কালীবোলা এ অবলা, ‘বালা’রে দিও না ফাঁকি॥

.            *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
জাগো কুলকুণ্ডলিনী
কবি গিরিবালা দেবী
নাম-সার কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

॥ ভৈরবী, একতাল॥

জাগো কুলকুণ্ডলিনী আধারকমল হতে।
উঠি স্নান কর দুর্গা ষড়দল নীরজেতে॥
আসিয়ে মা দশদলে, আহুতি দিয়ে অনলে,
বিশ্রাম লও বায়ুস্থলে, আসিয়ে মা অনাহুতে।
আকাশে করিয়া গতি, মিল যথা পশুপতি,
রোধি রবিশশী গতি, বিহর মা পাবকেতে।
চন্দ্র সূর্য্য বৈশ্বানরে আছে যতা আলো করে,
বিহর মা সহস্রারে তারা মরাল-মন্ত্রেতে।
ভদ করি ব্রহ্মকটা, হেরি গো তোর রূপছটা,
তেজময়ীর তেজঘটা বিহর সর্ব্বঘটেতে।
এ ভাব ‘বালা’র কবে হবে, ভবতম দূরে যাবে,
মা তোরে হেরিব যবে, সদা সতবস্তু মাত্রেতে॥

.            *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
কালী কে জানে মহিমা তোমার
কবি গিরিবালা দেবী
নাম-সার কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

॥ কাফিমিশ্র, ত্রিতাল॥

কালী কে জানে মহিমা তোমার,
বিরিঞ্চি বাসব বিষ্ণু আদি সাধ্য কার।
জানিতে ইচ্ছুক হয়ে, ভব ভেবে না পাইয়ে,
শিব শতরূপ হয়ে চরণে পড়ে আবার।
বাহ্যিকে অদৃশ্য হও, সদা অভ্যন্তরে রও,
নির্গুণেতে লিপ্ত নও, গুণে ব্যাপ্ত ত্রিসংসার।
অংশুময়ী অংশরূপা, নির্গুণে গুণস্বরূপা,
হয়ে বালা বৃদ্ধা যুবা নিরাকারেতে সাকার।
বস্তুমাত্রেতে বিমলা, বিহরিছ হয়ে কলা,
তোমারি এ নাট্যখেলা, বালা তা জেনেছে সার॥

.            *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
আনন্দে মালঞ্চে চল
কবি গিরিবালা দেবী
নাম-সার কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

॥ ভৈরবী, যৎ॥

আনন্দের মালঞ্চে চল যাই মালিনী হয়ে,
.        লহ রে নিবৃত্তি-সাজি করেতে করিয়ে।
সন্তোষ-গোলাপ তায়, শোভে শান্তি-মল্লিকায়,
.        শোভিছে ক্ষমা-জবায় ফুল লহ রে তুলিয়ে॥
অশোক অশোক, সদাসুখ কিংশুক,
.        সমদৃষ্টি সোমমুখী ফুল রয়েছে ফুটিয়ে।
নিষ্কাম কামিনী ফুলে জিতেন্দ্রিয় অলিকুলে,
.        ভ্রমণ করিছে মুক্তি-মধুর লাগিয়ে॥
নানাবর্ণে বর্ণফুলে, গাঁথ হার মনে তুলে,
.        তুষ্টা নগরাজবালা এ মালা পাইয়ে।
মনেরে কহিছে ‘বালা’, কখন হবে এ ফুল তোলা,
.        ক্রমেতে যেতেছে বেলা দেখরে ভাবিয়ে॥

.            *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
মা! কে তোমাকে বলে ত্রিনয়নী
কবি গিরিবালা দেবী
নাম-সার কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

॥ কাফি, ত্রিতাল॥

মা! কে তোমাকে বলে ত্রিনয়নী?
প্রত্যক্ষেতে দেখি, তুমি গো একচোখী,
ভক্তে দিলি ফাঁকি, ভবমোহিনী।
দয়াময়ী নাম, দীনা প্রতি বাম, সদা অভিলাষ ধনবান-ধাম,
তারা, তব পদে সহস্র প্রণাম, নও বিশ্বমাতা, দস্যুজননী॥
খেদে কয় ‘বালা’, কি বিষম জ্বালা,
ফুরায়ে কি গেল মা, আমার মা-বলা,
বেদে তোরে কয় ভকতবত্সলা,
মা, আমার কপালে মিথ্যা কি সে বাণী॥

.            *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
বলে বলুক মন্দ লোকে আমাকে
কবি গিরিবালা দেবী
নাম-সার কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

॥ কাফি, কাহারবা॥

বলে বলুক মন্দ লোকে আমাকে,
তাতে মন ভুলনাকো আপনি আপনাকে।
ধরেছ তো ধরে থাক ধরেছ যাঁকে॥
মন্দ লোকে সন্দ করে কয় মন্দ ভালকে।
সে কথায় কি এসে যায় ডাক শ্যামা মাকে॥
ভদ্রে কখন মন্দ কয় না যদি দেখে চোখে।
মন্দ কথা শুনে না সে হস্তে কর্ণ ঢাকে॥
মন্দ লোকে নিন্দা করে, আপনার পাপে আপনি মরে।
গুরুপুত্র আনিতে যমপুরে, হরি তরালেন না নিন্দুকে॥
পাপ ক্ষয় হয় জানি বৃথা কলঙ্কে,
‘নিন্দুকা হি মহাভারা’ লিখে শ্লোকে ;
সাধিতে কি বাধা মনে মানে সাধকে,
কি করিতে পারে তারে পাপতাপ শোকে॥
সে যে সদানন্দপুরে সদানন্দে বাস করে,
সদা থাকে লোকান্তরে লোকালয়ে থেকে,
বালার রসনা যেন সদা রসে থাকে,
নীরসে বিরস বাক্য না বলে কাহাকে॥

.         *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
জাননা গো কেমন নামের জোর
কবি গিরিবালা দেবী
নাম-সার কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া

॥ কাফি, ত্রিতাল॥

.        জাননা গো কেমন নামের জোর,
.        এবার মানবো না আর কোন ওজোর।
.        আমি তো মা এগিয়ে আছি
.        লয়ে ঝোলা কৌপিন ডোর।
জগৎ-মাতা তুমি মাতা জানবো কেমন দয়া গো তোর।
.        কালী কালী কালী নামে
.        যখন আমি হয়ে যাই ভোর,
তখন জ্ঞান থারে না ত্রিনয়না, কখন সন্ধ্যা, কখন ভোর॥

.             *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর