কবি গোপাল উড়ে - জাতিতে করণ ছিলেন। তিনি জন্ম গ্রহণ করেন উড়িস্যার কটক জেলার জাজপুর
গ্রামে। দরিদ্র পিতা মুকুন্দ, বেগুন ও আদা চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গোপাল ছিলেন তিন পুত্রের
মধ্যম।
গোপাল ১৮-১৯ বছর বয়সে কলকাতায় এসে ফল ফিরি করার কাজ নেন। দুর্গাদাস লাহিড়ী তাঁর “বাঙ্গালী
গান” গ্রন্থে, ১৯০৫ সালে লিখেছেন যে প্রায় ৭০ বছর আগে গোপাল কলকাতায় এসে তাঁর সুরেলা গলার জন্য
রাধামোহন সরকারের “বিদ্যাসুন্দর” যাত্রাদলে ১০টাকা বেতনে চাকরি পেয়েছিলেন। এ থেকে হিসেব করলে
গোপালের জন্মের সাল অনুমান করছি ১৮১৭। প্রায় চল্লিশ বছর বয়সে গোপালের মৃত্যু হয়। সেই হিসেবে
তাঁর মৃত্যু সাল দাঁড়ায় ১৮৫৭।
দুর্গাদাস লাহিড়ী আরও লিখেছেন যে রাধামোহন সরকারের “বিদ্যাসুন্দর” যাত্রাদলই কলকাতার প্রথম সখের
যাত্রাদল।
গোপাল যখন প্রথম কলকাতায় আসেন তখন তিনি বাংলা ভাষা একদমই জানতেন না। রাধামোহন
সরকারের কাছে এক বছরের মধ্যেই তিনি বাংলা শিখে নেন এবং সেখানেই বাবুদের ওস্তাদজী হরিকিষণ
মিশ্রর কাছে সঙ্গীত শিক্ষা লাভ করেন। তিনি ঠুংরী গানও সহজেই আয়ত্ব করে নেন।
দুবছর আখড়াইএর (মহড়া) পর এই যাত্রার প্রথম আসর বসে রাজা নবকৃষ্ণের বাড়ীতে। এই আসরে গোপাল
মালিনী সেজেছিলেন। এই যাত্রা এত প্রশংসিত হয়েছিল যে গোপালের মায়না ৫০টাকা করে দেওয়া হয়।
রাধামোহনের “বিদ্যাসুন্দর” যাত্রার আর মাত্র দুবার আসর বসেছিল। একবার হাটখোলার দত্তবাবুদের
বাড়ীতে আর এক বার শিমুলিয়ার ছাতুবাবুর বাড়ীতে।
এর পরেই রাধামোহনের মৃত্যু হয় এবং যাত্রাদল ভেঙে যায়। গোপাল নাকি রাধামোহনের দলের সব
আসবাবপত্র পেয়েছিলেন। তিনি আবার নতুন করে যাত্রাদল তৈরি করেন। এবার গানগুলি নিজে
সহজ বাংলা ভাষায় লেখেন। গোপাল উড়ের এই যাত্রাদল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সখের যাত্রাদলের বদলে তা
হয়ে দাঁড়ায় গোপালের পেশাদার যাত্রাদল যা তিনি প্রায় দশ বছর চালিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরে সেই
পালাই নাকি “ভুলো যাত্রাওয়ালা”-র দল অভিনয় করে গেছে, দুর্গাদাস লাহিড়ীর “বাঙ্গালীর গান” গ্রন্থের
রচনার সময় পর্যন্ত।
গোপাল ছিলেন সুপুরুষ, বিনয়ী ও শিষ্টাচারী ব্যক্তি। তাঁর গানও যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছিল।
ডঃ শিশিরকুমার দাশ লিখেছেন যে গোপাল উড়ের দলে রাম অধিকারী এবং পরমানন্দ অধিকারী
প্রভৃতি গান রচনা করতেন। কিন্তু দুর্গাদাস লাহিড়ী এ বিষয় কিছুই উল্লখ করেন নি। তাঁর “বাঙ্গালীর গান”
গ্রন্থে অন্য অনেকের ক্ষেত্রে গান রচয়িতা অন্য ব্যক্তি হলে, তা তিনি উল্লেখ করেছেন। এই বইটিতে তিনি
গোপাল উড়ের ৩৩৯টি গান সংগ্রহ করে দিয়েছেন, যা কিনা সেই গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের গানের সংখ্যার চেয়ে
বেশি!
উনবিংশ শতকে, সুদূর উড়িস্যা থেকে এসে বাংলায় গান রচনা করে খ্যাতি লাভ করেছিলেন গোপাল।
আমরা । আমরা মিলনসাগরে তাঁর রচিত গান তুলে বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পেরে
আনন্দিত ও গর্বিত |
কবি গোপাল উড়ের মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন।
উত্স : দুর্গাদাস লাহিড়ী, “বাঙ্গালী গান”, ১৯০৫,
. ডঃ শিশিরকুমার দাশ, বাংলা সাহিত্যসঙ্গী, ২০০৩,
আমাদের ই-মেল - srimilansengupta@yahoo.co.in
এই পাতা প্রকাশ - ২২.৯.২০১১
...