সব কিছু মোছা যায়
কবি গৌরাঙ্গ সুন্দর পাত্র

শিশুর শ্লেটের লেখার মতোই
মনের পর্দায় যত লেখা,
সব কিছু মোছা যায় |

অন্ধকার মৃত্যুর চবি দেওয়ালে টাঙ্গানো,
বাসি ক্যালেন্ডারের পাতায় মুখ ঢাকে |

এইখানে কতবার সন্ধ্যার প্রদীপ জ্বলেছিল ,
যে জ্বেলেছে সে নেই, নিভে গিয়ে প্রমাণ করেছে
সব কিছু মোছা যায় |

আজ আমি শান্তি আর বিবেকের খোঁজে
অপঘাত ম়ৃত্যুর দ্বারে দাঁড়িয়ে আছি,
নিঃসঙ্গ একাকী |

বস্তুবিশ্ব আকাঙ্খার যত্নের প্রদীপ জ্বালে
কিন্তু ঝ’ড়ে নিবে যায় |

শ্লেটের লেখার মতোই সব কিছু মোছা যায়,
চলে যায় অচেনার দেশে |

.             ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
কবি গৌরাঙ্গ সুন্দর পাত্রর কবিতা
*
বুদ্ধি আর বিবেকের অসি
কবি গৌরাঙ্গ সুন্দর পাত্র

বুদ্ধির শানিত অসি মানুষের হৃৎপিন্ড কেটেছে
কত টাকাকড়ি, বাড়ীগাড়ি, অর্থের সঞ্চয়,
তবু আশা ও অতৃপ্তি ছাড়া কিছুই জোটেনি |

.        কামনা অতৃপ্ত আছে, সরলতা মাথা কুটে মরে,
.        বারংবার ক্লান্ত করে পাশবিক ক্ষুধা,
.        মানুষকে গোপনে কাঁদায় |

তবু সিক্ত জরায়ুর মতো লালসা স্ফিত হয়,
অর্বাচীন মানুষের অর্থের লালসা |
এতো সুখ নয়, বুদ্ধি আর বিবেকের অসিতে
.        মরে যাওয়া |
তারপর সে যখন বুঝতে পারে
.        লজ্জা পায় |

বহুদিন পরে বিকাশও আজ আমাকে দেখে
.        লজ্জায় মাথা নোয়ালো ;
.        ওর মনে পড়লো--------

বিবেকের দংশনে এই রেল লাইনে একদিন
.        নিজেকে শেষ করতে এসেছিল |

.             ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
সেই ঘ্রাণ দেহের ভিতর
কবি গৌরাঙ্গ সুন্দর পাত্র

কতদিন শুয়ে আছি নিশ্ছিদ্র অতল আঁধারে,
ফড়িংয়ের ওড়াউড়ি নেই
.        কিংবা নেই পাখির কূজন |

যেন মনে হয় সব কিছু মরে গেছে
.        কবেকার ঝ’ড়ে |
একদিন যে শিশুটি হাঁটতো পল্লীতে
.        ফড়িং ও পাখিদের মাঝে,
সেদিন শৈশব তার হারিয়েছিল ঘাসে,
সে আর হাঁটতে পারে না পিচ্ গলা রোডে |
.        এখনো সেই ঘ্রাণ দেহের ভিতর
.                খেলা করে |

নির্জন আঁধারে যখন একা থাকি
.        চোখের সামনে ভাসে সেই ছবি ;
স্পষ্ট দেখতে পাই মা পিঠে গড়ছে
.        উনুনের আঁচে,

আমি বসেছি তার পাশে |

.         ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
তুমি ফিরে যাও
কবি গৌরাঙ্গ সুন্দর পাত্র

ধনের দেবতা তুমি ফিরে যাও ;  আমাকে জাগিও না,
আমি ঘুমাতে চাই এইখানে, ঘাসের ভিতরে |
তুমি চলে যাও ;  তোমার দম্ভের কাছে
.             আমি মাথা নোয়াতে পারবো না |

বরং হারিয়ে যাবো দারিদ্রের ঘন কুয়াশায়,
.              বুকে জ্বলবে ক্ষুদার্থ চুম্বন |

ধনের দেবতা, তুমি তোমার মদমত্ততা নিয়ে ফিরে যাও,
.              আমাকে জাগিও না |

আমি ঘুমিয়ে পড়তে চাই কোন ধর্ষিতা নারীর কোলে,
অথবা মিশে যাবো কোনো বারবনিতার চোখের জলে |
.        কিংবা আরো দূরে ঘাস আর ফড়িংয়ের মাঝে
.                          শুয়ে যাবো |

ধনের দেবতা তুমি ফিরে যাও,
.              ক্ষুধার আঁধার থেকে আমাকে জাগিও না |

আমি মিশে থাকতে চাই দারিদ্রের নিশ্ছিদ্র আঁধারে |

.                 ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
এই আমি মাটি হবো
কবি গৌরাঙ্গ সুন্দর পাত্র

এই আমি একদিন ভেঙ্গে যাবো,
.       ঐ ভাঙ্গা বাড়ীটার মতো |
সেদিন মিষ্টি কথায় কেউ বলবে না
.       ওহে হাঁটতে পারছো ?
দিনগুলি রাত্রিগুলি মরে যাবে সোৎপ্রাস পাশে |
তখন বধির স্বপ্ন ;
.        স্বপ্ন মানে কিছু ক্লান্তি, ব্যর্থতা তখন,
সেদিন কেউ জানতে চাইবে না হাঁটতে পারছি কিনা |

হাঁটতে হাঁটতে একদিন মাটিতেই মাটি হবো আমি,
চোখের জলের রেখা মুছে যাবে সুখ দুঃখ পথের পাথারে ||

.                 ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
সবই তো ঠিক আছে
কবি গৌরাঙ্গ সুন্দর পাত্র

কি হারালো কিছুই না,  সবই তো  ঠিক আছে,
যা ছিল আমার আজো আছে,  সবই মনের মাঝে |
এখনো চাঁদ উঠছে দেখে, তোমার কথা ভাবি,
ব্যথা নিয়েও রঙ ছড়ায়,  যৌবনের দাবি |

তোমার কথা মনে হলেই, ভাবি অনেক কিছু,
কত কথা ডাকতে থাকে আমার পিছু পিছু |

এখনো হয় জন্ম মৃত্যু, সূর্য উঠে প্রাতে
এখনো আছে রঙিন আশা, স্বপ্ন দিনে রাতে |
আজ কি নেই সুখ দুঃখ ? আজ কি নেই ব্যথা ?
আজো আচে মনের মিল, আছে সুখের কথা |
এখনো হয় নিকটে দূরে, হৃদয় দেওয়ার পালা,
দুঃখ আছে,  মৃত্যু আছে, ভুলি তবু জ্বালা |

এখনো সেই মনের মাঝে ,  কিংবা মনের ভুলে,
প্রিয়জনকে আঁকড়ে ধরি, মরণখেলার ছলে |

.                 ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
অন্ধকারের মায়া
কবি গৌরাঙ্গ সুন্দর পাত্র

আমার চোখের সামনে থেকে আলোটা সরিয়ে নাও,
কিছুক্ষণ অন্ধকারে মুন্ডহীন অন্তরীন থাকতে চাই |
এখনো হৃদয়ে, হৃৎপিন্ডে সেই অন্ধকারের ঢেউ,.
কিংবা অন্ধকারে নারীর প্রসব বেদনার ছবি,
আমার বুকের দগ্ধ চিহ্নের মতো |

সাজানো নরম বিছানাটা থেকে ফুলগুলো সরিয়ে নাও,
কিছুক্ষণ মনুষ্য নামক প্রাণীগুলোকে ভালোবাসতে চাই |
এখনো চোখের সামনে সেই অন্ধকারের দেশ,
তোমার সান্ত্বনা,   আদর অথবা ভালোবাসা,
সবই যেন কতযুগের মিথ্যা প্রবঞ্চনার মতো |

তুমি বরং আলোটা  এখনই নিভিয়ে দাও,
কিছুক্ষণ অন্ধকারে মুন্ডহীন অন্তরীণ থাকতে চাই |

.                 ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
আমি থেকে যাবো
কবি গৌরাঙ্গ সুন্দর পাত্র

কৈশোর হাঁটেনা আর অর্বাচীন পৃথিবীর বুকে,
মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে কখনো বা হামাগুড়ি দেয়,
ফিস্ ফিসিয়ে কথা বলে, আমার বুকের কাছে
নিশ্বাস ছলকায় |

.      তখন খেলার ছলে ভুল হয়ে গিয়েছে বিবেক
.      চাঁদের বুকের মাঝে ঝরেছিল রক্তের ফোয়ারা ;
.      তাই বুঝি দুটি স্তন কৈশোরের হাতের মুঠোয়
.      খেলেছিল,  কিংবা  কেঁদেছিল |

.       এখন সেদিন যেন স্বপ্ন মনে হয় ;
.       কে যেন সেদিন মৃত্যুর পাশে বসেছিল,
.       আমি শুধু আগুনের আঁচে , জ্যোত্স্নার যোনিতে
.                    ম’রে গেছি |

.       আজ জানি মৃত্যু কাছে,  সেদিন মৃত্যু কেন
.       ভয় পেয়ে কেঁদেছিল  কিছুই বুঝি না |
.       তখন ভেবেছি আমি,  সকলেই মরে যাবে,

.       আমি থেকে যাবো পৃথিবীর স্তনের ভিতরে
.                     ঘাস হয়ে |

.                   ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
এসো বসি অন্ধকারে
কবি গৌরাঙ্গ সুন্দর পাত্র
( আমার কল্পনার মানসপ্রিয়া যে অনেক পুরুষকে
দেহ দিয়ে ক্লান্ত, তার প্রতি  )

অভিসার শেষ হয়ে গেছে
মুছে গেছে সিঁথির সিন্দুর ;
মনুষ্য নামক প্রাণী ইন্দ্রিয়ের দ্বারে
ভিক্ষা করে ;  তোমার মাংসের লোভে
ছুটে আসে নেকড়ের দল,
ছিঁড়ে ফেলে নখাঘাতে উলঙ্গ শরীর |

দেহের পশরা নিয়ে তুমি বসে আছ কতকাল,
তোমার অশ্রুর ভারে ক্লান্ত হয় কুমারীর স্তন,
মৃত্যুও কেঁদেছে লজ্জায় |

অনেক দিয়েছ তুমি শরীরের ঘ্রাণ,
আর নয় , হিংস্র নেকড়ের দল ক্ষুধার্ত থাকুক ;
তারা ফিরে যাক্ বিবেকের নির্জন আঁধারে |

আমার মানস প্রিয়া !
তুমি এসো ; এই অন্ধকারে বসি,
শেখাবো তোমাকে কিভাবে বাঁচতে হয় |
কিংবা তুমি শিখে নেবে উলঙ্গ সাধনা,
মানুষের অন্তর কিভাবে করতে হয় জয় |

.            ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
জন্মভূমির প্রতি
কবি গৌরাঙ্গ সুন্দর পাত্র

প্রবাসে থাকার ফলে তোমাকে চিনেছি।
তোমার স্নেহের কোল শৈশবের রাত,
এখনো আমার বুকে জাগায় প্রভাত,
এখানে এসেই জেনো প্রকৃত মরেছি।

মা ,  তোমার কোমল কোলে ফিরে যাবো কবে ?
.      কোনদিন পুনরায় স্নেহের ছায়ায়,
.      মিশে যাবো পথে ঘাটে তোমার ব্যথায়,
.      তোমার ঘাসের মাঝে কবে মিশে যাবো ?

প্রবাসে শুনেছি শুধু ধর্ষিতা নারীর ক্রন্দন বারোমাস।
তোমার স্নেহের কোলে ঢাকা আছে সুখ,
সেই স্মৃতি আজো যেন জুড়িয়ে দেয় বুক,
তোমার কাঁঠাল ছায়ায় ম’রে হবো ঘাস।

.            ******************     
.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*