গুরুসদয় দত্ত -র জন্ম হয় অধুনা বাংলাদেশের শ্রীহট্টে জেলার কামারগঞ্জ মহকূমার বীরশ্রী গ্রামে |
ছাত্রাবস্থায় তিনি তাঁর চারপাশের মানুষদের আগুন বা বন্যার কবল থেকে রক্ষা এবং ত্রাণ পৌঁছে দেবার
মত পরোপকারী কাজে অগ্রণী ভূমিকা নিতেন |
তিনি মেধাবী ছাত্র ছিলেন এবং ১৮৯৮ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন | ১৯০১ সালে
কলকাতার প্রেসিডেনসি কলেজ থেকে এফ.এ পরীক্ষায় প্রথম হন | বিলেত থেকে ১৯০৫ সালে আই.সি.এস
পরীক্ষায় প্রথম স্থান নিয়ে পাশ করেন | এছারা তিনি ওকালতির বার-এর পরীক্ষাতেও ফার্স্ট
ডিভিশনে উত্তীর্ণ হন | পরে চাকরি করতে করতে, তিনি সিলেট ইউনিয়ন কে তাঁদের দেওয়া স্কলার্শিপের
টাকা শোধ করে দেন যাতে অন্য কেউ আবার পড়ার সুযোগ পায় |
তাঁর অই.সি.এস এর কর্মজীবন ঘটনাবহুল | ভাবলে অবাক হতে হয় যে পরাধীন ভারতের শাসন যন্ত্রে তিনি
যেমনভাবে তাঁর স্বাধীন চিত্ত এবং বিবেকের পরিচয় দিয়েছিলেন তার ধারে কাছে আজকের স্বাধীন
ভারতীয় অই.এ.এস আমলাকূল, পৌঁছাতে পারে নি বা পৌঁছাতে চায় নি | স্বাধীন ভারতের নিরস্ত্র জনতার
উপরে সরকার কতৃক একের পর এক গুলি চালনার ঘটনা তারই প্রমাণ |
১৯২৮ সালে, যখন তিনি হাওড়ার জেলা শাসক ছিলেন, বামনগাছিতে জনতার উপরে পুলিশের গুলিচালনার
তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন | এই ঔদ্ধত্য নিয়ে ব্রিটিশ সংসদে প্রশ্ন উঠেছিল এবং তাঁকে তত্ক্ষণাৎ হাওড়া
থেকে মৈমনসিংহে বদলি করে দেওয়া হয় |
এর পরেও তিনি ১৯৩০ সাল নাগাদ মৈমনসিংহে, মহাত্মা গান্ধীর লবন আইনের বিরুদ্ধে ডাকা সত্যাগ্রহ
আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালনার আদেশ দিতে অস্বীকার করেন | এই ঘটনার জন্য ব্রিটিশ সরকার
তাঁকে টেলিগ্রাম করে বীরভূমে বদলি করে দেন | তখন টেলিগ্রামই ছিল যোগাযোগের সব চেয়ে দ্রুত মাধ্যম!
তিনি চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবেন ১৯৩২ সালে ব্রতচারী আন্দোলন শুরু করার জন্য | ১৯৪০ সালে তিনি
কলকাতার উপকণ্ঠে জোকায়, ডায়মণ্ড হার্বার রোডের ধারে, স্থাপন করেন ব্রতচারী গ্রাম | বাংলার লোক -
কলা, ভাস্কর্য ও নৃত্য নিয়ে তাঁর গবেষণা, অনেক লুপ্ত প্রায় সাংস্কৃতিক নিদর্শনকে আবার আমাদের কাছে
ফিরিয়ে দিয়ে গেছে |
তাঁর স্ত্রী সরোজ নলিনী দত্ত, ১৯১৩ সালে নানান জায়গায় মহিলা সমিতি শুরু করেন | ১৯২৫ সালে স্ত্রীর
অকাল মৃত্যুর পরে শুরু করেন সরোজ নলিনী দত্ত স্মৃতি সংঘ যেখানে মহিলাদের প্রথা বহির্ভূত প্রশিক্ষণের
ব্যবস্থা করেছিলেন তাঁদের সবনির্ভর করে তোলার জন্য |
১৯১৮ সালে বীরভূমে শুরু করেন গ্রামীন পুনর্গঠন আন্দোলন | একজন ম্যাজিস্ট্রেট হয়েও তিনি সাধারণ
মানুষদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করেছেন নানান মজে যাওয়া খাল সংস্কারে বা জলাশয়
কচুরিপানা-মুক্ত করতে | ১৯২২ সালে তাঁর কার্যকালে বাঁকুড়ায় এবং পরে মৈমনসিংহ ও বীরভূমে তিনি
কৃষিজমিতে সেচের জন্য সমব্যায় সংস্থা শুরু করেন |
তাঁর বাংলা রচনার মধ্যে ব্রতচারী সখা (১৯৩৩), পটুয়া সংগীত (১৯৩৯) বিশেষ উল্লেখযোগ্য | এ ছাড়া
আছে ভজার বাঁশী, গোড়ায় গলদ, গ্রামের কাজের ক খ গ, সরোজ নলিনী, পল্লী সংস্কার ও সংগঠন,
পাগলামির পুঁথি, পুরির মাহাত্য, শ্রীহট্টের লোকগীতি, ব্রতচারী মর্মকথা, ব্রতচারী পরিচয়, বাংলার বীর যোদ্ধা
রায়বেশে ইত্যাদি | ১৯২৯ সালে শুরু করেন "গ্রামীন ডাক" পত্রিকা | ১৯৩৬ সালে শুরু করেন "বাংলার শক্তি"
যা ছিল ব্রতচারী কেন্দ্রের নিজেস্ব পত্রিকা |
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন যে ১৯২০ সালে গুরুসদয় দত্তর আন্তরিক প্রচেষ্টা ছাড়া শান্তিনিকেতনের উন্নতিসাধন
সম্ভবই হোত না | তিনি তখন বীরভূমের জেলা শাসক ছিলেন | তিনি বহু কবিতা এবং গানও রচনা করে
গিয়েছেন |
আমরা মিলনসাগরে কবি গুরুসদয় দত্তর কবিতা তুলে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে এই
প্রচেষ্টা সার্থক মনে করবো।
উত্স: গুরুসদয় মিউজিয়াম ওয়েবসাইট , উইকিপেডিয়া
কবি গুরুসদয় দত্তর মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন।
আমাদের ই-মেল - srimilansengupta@yahoo.co.in
এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ০৩.০৮.২০০৭
পরিবর্ধিত সংস্করণ - ০৫.০৮.২০১৩
...