কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
ক্যাম্পিং
হাবীবুল্লাহ সিরাজী

পাতা খবর নিচ্ছিলো হাওয়ার
বাসের অপেক্ষা করছিলো মেয়েটি
দু’জনেই ক্যাম্পিং-এ যাবে
বিকেলের ঘাড়ে চড়ে সাত ডিগ্রি
চেরিহিলে ঢুকে পড়লেও
দু’জনে দ্বিধায়, তাঁবু কি এখানে পড়বে ?

সবুজ কি পোষাক বদলায় ? বোঝা যায় না
স্রোত কি পাথরখণ্ড স্পর্শ করে ? দেখা যায় না
হাতঘড়ি, জোড়ারুটি আর ম্যাচবাক্স
ঘুঙুরের চোখের মতো দেখছে
পিঁপড়ে ও ঘাসে যা চাঞ্চল্য
ক্যাম্প শুরু হয়ে গেলো!

হাওয়া খবর নিচ্ছিলো পাতার
বাস মেয়েটির
তাপমাত্রার ভেতর যে আগুন-বরফ
প্রস্তুত করছিল টার্কি ও সালাদ
ক্যাম্পিং চলছে

ভোরটি হুইলচেয়ারে ব’সে বাসে উঠলে
ব্রেকফাসেট টেবিলের জন্য চিজ সংগ্রহ করে মেয়ে।

.          *************************                                                           
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
দ্বিতীয় বেলা
হাবীবুল্লাহ সিরাজী

আমার দ্বিতীয় বেলাটি ভাসতে-ভাসতে জল থেকে উঠে এলো
ও কৈবর্তের বউ, গুগলি না শামুক
তাঁতের মধ্যে ভিজে যাওয়া টং
আর টংয়ের ঢালে গড়িয়ে পড়া একটা আকাশ
ধরতে-ধরতে নৌকাডুবি

ফিতে খোলা ছায়াটি হুঁশ পেতেই
ঠোকর দেয় কালবাউশ
ঠোঁটের ফাঁকে তখনো বেলা, আমার অবেলা
জলের ভাঁজে ছেঁড়া জাল
ডুবে যাচ্ছে সিঁথি, পোড়া লাল

ও বউ তোর কৈবর্তের খালে যে বর্ষা লেগেছে
আমার মরণ

.          *************************                                                           
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
প্যাটার্ন
হাবীবুল্লাহ সিরাজী

বৃষ্টিপাত খেয়ে ফেললো এনফিল্ডের ভোর
ঝরাপাতা এবং ভরা জাহাজ খেয়েছে পুবের খবর।

কোম্পানীর নিঃশ্বাসের ফুরসতে
আড়াইশ’ বছর পর
উপনিবেশবাদ নিয়ে ঘর ফাটাচ্ছে মশলা-তস্কর
ফুটপাতে সাতকড়া আর গলিতে মুরগির ঝোল
বড়ো ইচ্ছে একটি ট্যানেন্ট বিয়ার!

মস্ত চাতালে হাঁটছেন মহাশয়-প্রধান
লেকে রাজহাঁস, গৃহে অসুস্থ হ্যামলেট
হে বুড়ো চিল, হে ভেনিসের বনিক
তাঁর নামে কিছু রক্ত-মাংস জমা করো
ট্রাফালগার স্কোয়ারে ভোজ হবে।

ম্যাজিক দেখিয়ে যাদুকরও ফুটে গেছে
তারও কেউ এ শহরে পাষাণে শায়িত
যে এমন ঘড়ি তারও কাঁটা পশ্চিমে হেলানো
জানালায় বাদুর এবং টেমসে প্রমোদতরী
মোমের মধ্যে ফিনকি দিচ্ছে মেঘ
রানীর টমটম প্রতঃভ্রমণে বেরুবে।

কয়লা পুড়তে-পুড়তে ভোরটি সরছে
ফিরে আসা অব্দি আবারও ভোর
পাতালের বাতি নেভার অপেক্ষায় পলাশী ভিজছে!

.          *************************                                                           
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
স্পর্শ কিংবা ছোঁয়া
হাবীবুল্লাহ সিরাজী

মাঠ তো পারসেপোলিসেও ছিলো
ভুট্টা ও আঙুরের।
গলাগলি নীল এবং সবুজ
চুম্বনের দাগগুলো পাথরে ধরেছিলো
আর তরবারি
সিঁড়ির গোড়ায় রেখেছিল জয়চিহ্ন---
মৃত্যু যেন ঠাণ্ডা অভিনয়।

নাভিমূলে কাঁটা ফুটে আছে
আঙুলের অগ্রভাগে পাখীর প্রণয়
গোলাপ কী বুলবুলি
হাফিজ যদিও জানেন
রুটি-মদ, ক’প্রস্থ সোনালি অক্ষর
কারো নেই অভিযোগ
সিরাজের সঙ্গ মানে কবির বরাত।

একটি নহর কি থাকার কথা ছিল ?
কালো পোশাক আলগা হ’লে
যেন পার্সোপোলিসের খিলান
যেন হাফিজিয়ার মর্মরধ্বনি
যেন গোলাপের গ্রীবা
যেন বুলবুলির চঞ্চু
যেন ভুট্টার দানা
যেন আঙুরের অভিমান . . .

স্পর্শের আড়াল থেকে একান্ত উত্সব
ছুঁয়েছিলো রক্তাক্ত হৃদয়!

.          *************************                                                           
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
লাল মাছি
হাবীবুল্লাহ সিরাজী

লাল মাছি খোঁটে মধ্যরাত

পর্দা থেকে সরাসরি বৃন্তে যে মৌমাছি
তার নামে কুকুর রেখেছি
রক্তফোঁটা বিলিয়েছি সম্ভোগের প্রথম শয্যায়
তবু মাছি আর কী যেতে চায়

হাতপাখা শরতের ঘাম মুছে দিলে
মোম নেভে, সাঁকো ভাঙে
দুয়ারে দাঁড়ানো অন্ধ বিষগন্ধ পায়
অসমাপ্ত ব্যাকুলতা কে কাকে শেখায়

মাছি, ওষ্ঠাধরে মধুময় দুপুর মেখেছি

.          *************************                                                           
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
মাছরাঙা, কৃষ্ণচূড়া আর মঞ্জুমালা
হাবীবুল্লাহ সিরাজী

তোমাকে ভালোবাসবো ব’লে মাছরাঙা ধ’রে
রেখেছিলাম খাঁচায়, আশায় একটি কৃষ্ণচূড়া পুঁতেছিলাম টবে
চুম্বনো ভরাবো ঠোঁট --- ডানায় কী ডালে
শক্তপোক্ত ঋতুবাস হবে
মঞ্জুমালা তুমি আর কিছুই নিলে না ---
মাছরাঙা উড়ে গেলো, খোলা তার রং
কৃষ্ণচূড়া বনবাসী, আকাশ-সমান গলা
এ রকম চল্লিশ বছর!

তোমাকেই ভালোবাসতাম ব’লে অভিমানে মাছরাঙা
কতোদিন স্পর্শ করেনি মাছ,
পায়ের পাতায় ধরেছিলো অন্যদণ্ড
লাল-নীলে মেলেনি যে সেতু!
তোমাকে ভালোবাসতাম ব’লেই শ্রীকাতর কৃষ্ণচূড়া
কতোদিন দেখেনি যে রাধা
ডালে পেতেছিলো ফাঁদ, পতঙ্গ বসিয়েছিলো গালে
সবুজের মিলে উড়ায়নি চিত্রের বাহার!

একফোঁটা বিষ আর অন্তহীন অবহেলা
পাখিটির চঞ্চু আর বৃক্ষের শিকড়ে
গূঢ় ব্যপ্ত ; আর মঞ্জুমালা তুমি ---
আমারও কি অন্য দোষ ছিলো ?

.          *************************                                                           
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
কী সুন্দরী
হাবীবুল্লাহ সিরাজী

ওরে আল্লা, কী সুন্দরী
চল্লিশ বছর ধরে পদ্মপাতা খোলে
শামুকের মতো নড়ে চড়ে
রস-কস-সিঙ্গারা-বুলবুলি!

একদিন মালীবাগ মোড় দোতালায় তুলে
এক্কা-দোক্কা ঘর কেটেছিলো
রোদ আর রেখাচিত্রে, হে উপমা
ইয়েলো অকার মেলে জানিয়েছিলো অভিবাদন :
হায় আল্লা, গরমে শুকায় ঠোঁট
জান ফানা ফানা . . .

ভাগ ছিলো, বার্লিনের দেয়াল আর
হরিদাস পুরের কাঁটাতার, পাহারাদার
শিকড় এ প্রান্তে তো মাথা অন্যপারে
ঘুমে বেলা, রাত নাছে, মুহুর্তের ভোর
ঝমঝম বেজে ওঠে
ও আল্লা, কেমন সুন্দরী!

পঁয়ষট্টি পার সুন্দরীর নতুন শহর!

.          *************************                                                           
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
একসঙ্গে জ্যোত্স্না দেখে না
হাবীবুল্লাহ সিরাজী

ঘ্রাণ নিয়ে যারা এসেছিলো
পুবের দেয়ালে তারা ফোটে
মেঘেদের সাদা লোম
আর গাঁদার হলুদ ছোপ
গত মৌসুমের জ্যোত্স্না নিয়ে খেলে ---
ফুটো হচ্ছে চাকা
ফালি হয় নদী
ভাঁড় থেকে মাছি তাড়াতে-তাড়াতে
ময়রাও হাঁক দেয় : রিক্শা যাইবা . . .

পশ্চিম দেয়ালে টিপ মুছে
ট্রাম লাইনে যে উবু হয়
সে কি বনলতা সেন ?
নার্সিং হোমের ছায়া আরেকটু দীর্ঘ হ’য়ে
সুচিত্রা সেনের মুখ ঢেকে দিলে
হয়তো বা কেউ বলে
বাঘ এবং হরিণেরা একসঙ্গে জ্যোত্স্না দেখে না!

.          *************************                                                           
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
পাগল ভালো করো মা
হাবীবুল্লাহ সিরাজী

সব এলো মেলো হয়ে যাচ্ছে
মাথা ঠাণ্ডা থাকে না

সাত সকালে গোয়ালে আগুন লেগে
গাইটা পুড়ে ছাই
ছেলে গেছে বিলে শাপলা তুলতে
ফিরলে তবে ভাত
ঝমঝম বাজে কেরোসিন-টিন
যা রে বাদুর যা

গলা তুলে দফাদার নিচ্ছে থানার হাজিরা
কাঁঠালের নিচে মাথা পেতে
কতো আর বারফট্টাই
কুয়োর দড়ি এবং ঢোঁড়ার লেজ
আউলাইয়া গেছে কুত্তা থামান

পাগল ভালো করো মা

.          *************************                                                           
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
গুপ্তঘর
হাবীবুল্লাহ সিরাজী

যতো, গুপ্তঘর ততো বরাবর ---
প্রণয়ে প্রথম যদি অন্য কলহের
একটি পদ্যের নাম অপর ভোজের
কাটা ঘুড়ি যার-যার, চাকার নিজের
অতীতের একটি তো অন্য ভবিষ্যতে
গুপ্তঘরে বরাদ্দ নানান

গর্ভের যা তা শূন্যের
শর্তের যা তা পূর্ণের
অন্দরে যা তা বিরহে
মর্তের যা তা আনন্দে
গুপ্তঘরে নানা সহচর

ফিরে যাচ্ছে কাঁচা মেঘ
.        মুখে তার লবণের দানা
ফিরে যাচ্ছে ভরা ফেনা
.        নাকে তার তীরের বাহানা
ফিরে গেলে যাত্রাপথ
.        নত হয় অসমাপ্ত স্বর
ফিরে গেলে পরমায়ু
.        চিত্রময় মিত্র গুপ্তঘর
একটি তো সিরাজীর কবর।

.          *************************                                                           
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*