কবি হরপ্রসাদ মিত্রর কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
নিকট বালি দূর জল   

নানা মানুষ জমে, জমায় নানা কথার বেসাতি
|
সেই হাটে এই নিত্য ভ্রমণ কখন যে কে রয় সাথী!
কেউ বলে, ঠিক, ---কেউ বলে, ভুল, ---কেউ বলে, হ্যাঁ, তা বটে |
কোথায় নদী বেঁকবে কখন, ---তারপরে যে কী ঘটে
মনের মধ্যে সেই কথাটাই উঠছে-পড়ছে নিরন্তর
বর্তমানই অন্ধ চেনা, ভবিষ্যৎ তো দিগন্তর!

আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে, বিষ্টি এলো কোন দেশে---
কী জানি কোন গাছের ছায়া একটি নদীর কোণ ঘেঁষে!
মাটিতে জল, আকাশে মেঘ, হঠাৎ কেমন অন্ধকার |
এদিকে এই আপিশ-ফেরৎ ভাঁটির ত্বরা, ---ছন্দ তার
অধরা রয়, পোষ মানে না প্রাচীনপন্থী পদ্যেতে |
বস্তুবোধের কনুই লাগে হঠাৎ বুকের মধ্যেতে |

বৃহৎ পরিবহন, বিপুল, চলাচলের গর্জনে
শরীরটাকে সামলে চলার ক্ষিপ্রকলা অর্জনে
মন জেগে রয় লক্ষ্য থাকে চেনা বাড়ির প্রতীক্ষায় |
প্তিবেশের নগদ দাবি মিটিয়ে অন্য সমীক্ষায় |
দেবার মতো মনের মধ্যে থাকে না মন কিঞ্চিৎ-ও |
পিণ্ডপ্রমাণ এই পরিমেল সূক্ষ্ম মানণবঞ্চিত |

প্রতিবচন, পুনর্বচন---শূণ্য হৃদয় চলন্ত,---
দু-পারে তার কমলারঙের বৈকালী রোদ পড়ন্ত |
ঠেলাগাড়ির দোলন-লাগা শিশুর চোখে এ সংসার
প্রশ্নবিহীন প্রাপ্তি শুধুই, নেইকো কাঁটা সমস্যার |
অথচ ঠিক পাশেই আছে যে-জরতী স্তব্ধতা---
বিক্ষত সে | কেবল বোঝা | শুষ্কতা আর রুক্ষতা |

বিদ্যুদ্ বেগ---নিকটবৃত্ত---চেনা মহল নিরুত্সুক |
দিন কেটে যায় স্বল্পচেতন,---এমন সময় অসীম সুখ
কী ঝর্ঝর নামলো মনে---আর এক ছায়ায় নদীর ঘাট,
আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে, বালির চরে পাখির হাট |
সবুজ শাড়ির ভঙ্গিমা, সে কী আশ্চর্য অনুপ্রাস
অনের যোজন বালির পরে পাহাড়ি জল, চিকন ঘাস |



.                     ****************       
                                 উপরে   


মিলনসাগর
*
ফস্বল     

ল থই থই মাঠের কিনার,
এখানে আবার স্বপ্ন-মিনার |
এখানে তুষার-ফুল-টুপ্-টুপ্ বর্ষা |
.                সপ্তাহান্তে,
.                পথের প্রান্তে
জল নেমে গেছে, বৃষ্টি নেই |
.                বৈকৈলে একা,
আকাশ অথৈ ফর্শা |
.                অশ্রু-চিকন
.                দিনের লিখন |
.                সে নাম কার?
ধবল চকের পাঁতি পূব দিকে,
এ-দিকে ঝিমায় নান্দীগ্রাম ||


.             ****************                                                      
উপরে   


মিলনসাগর
*
বিরহ         

বালুচর জ্বলে ধূ ধূ --- সুদীর্ঘ সময়,
উড়ে গেছে শ্বেতপক্ষ যাযাবর পাখি!
আকাশে অবাধ শূণ্য, আর কিছু নয়,
নির্লিপ্ত, অলস চোখে দূরে চেয়ে থাকি
|
সবুজ ইশারা সেই তৃণহীন চরে
|
জলের পশুর হাড় বিক্ষিপ্ত ধূলায় |
পিশাচী হাসির ধ্বনি বাতাসের স্বরে |
একাকী দর্শক আমি এ শিব-লীলায় ||
এখানে সমুদ্র ছিল নীলাম্বু নিথর,
আদিম প্রাণের বন্যা নিবিড় নীলিমা |
এখানে সমুদ্র ছিল অগাধ, দুস্তর,
উছল জলের দীপ্ত, অশান্ত মহিমা!
তুমি চ'লে গেলে, আর সমুদ্র তো নয়---
বালুচর জ্বলের দীপ্ত, অশান্ত মহিমা!
তুমি চ'লে গেলে, আর সমুদ্র তো নয়---
বালুচর জ্বলে ধূ ধূ, --- সুদীর্ঘ সময়!


.             ****************                                                      
উপরে   


মিলনসাগর
*
বেয়াড়া         

বিশ হাজার কচি ছেলেমেয়েরা
শুধু এই কলকাতা শহরে
ঝি চাকর হয়ে আছে শুনলুম |
খবরটা বাড়ছেই বহরে |

মন কারো ভাল নেই সত্যি |
তবু বেঁচে থাকাটাই লক্ষ্য |
ঈশ্বর নিশ্চয়ই দেখছেন
দুটি শ্রেণী ভক্ষক ও ভক্ষ |

সময়টা অতিশয় বেয়াড়া
তাহলেও আষাঢ়ের গুমোটে
কালিদাস-বন্দনা চলবেই
ছিটেফোঁটা বিষ্টি সুযোগে
যদিও মেজাজে নেই ফূর্তি
রেখা ও শিপ্রা মনে পড়বেই |

কবিতার সুখ-অসুখ আলাদা
বাস্তবে ফ্যালো কড়ি, মাখো তেল
প্রতিবাদে কী যে ঘটে জানা তা---
ন্যাড়া তাই খোঁজেই না পাকা-বেল |
হাঁটাহাঁটি শুধু নিজ এলাকায়
মাথাটা বাঁচিয়ে যাতে বাঁচা যায় |


.             ****************                                                      
উপরে   


মিলনসাগর
*