বচনানন্দ উপলক্ষে
কবি হরিশ্চন্দ্র মিত্র
"কবি-রহস্য" কাব্যগ্রন্থ থেকে

ঐশ্বর্য্য-সম্ভোগ-সুখে             নাহি লেখ চতুর্ম্মুখ,
মনোদুখ একটুক                 তাহাতে না পাইব ;
দাম্পত্য-প্রণয়-ধন,               সে সুখেতে বিড়ম্বন,
সুধা যার সম্বোধন,               হেন প্রিয়-পুত্রগণ,
সে ধনে বঞ্চন কর,               তাহা নাহি চাইব,
সত্কাব্য-রচনা সুখ,              না লিখিলে চতুর্ম্মুখ,
মরম বেদনা বড়,                 পাইব হে পাইব |
মিত্র ধরি দুটী পায়,              তোমারে এ ভিক্ষা চায়,
অন্য সুখ সমুদায় না,            লেখো না লেখো হে |
ও সুখ না লিখে মোর,           ঘটাওনা দুঃখ ঘোর,
বার বার এ মিনতি,             দেখো বিধি দেখো হে |

.                ******************     
.                                                                                  
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
কবি হরিশচন্দ্র মিত্রর কবিতা
*
কবিরা কেন অর্থ চায়
কবি হরিশ্চন্দ্র মিত্র
"কবি-রহস্য" কাব্যগ্রন্থ থেকে

অহে অহে ভর্ত্তৃহরি,             শত নমস্কার করি,
তব পদে. তুমি গুরু,            সত্য কথা কহিলে |
বেদ-বাক্য তব-বাক্য,          পদে পদে পাই সাক্ষ্য,
কবিত্ব ছটায় তুমি,             কেবল না মোহিলে ||
ছোট ছোট শিশুসবে,           খেতে দে খেতে দে রবে,
গেহিনীকে জড়াইয়া,            চঞ্চল না করিত ;
ঘরে কিছু মাত্র নাই,           ছেলেদিগে কি খাওয়াই,
বলে সেই দুঃখিনীর,            অশ্রু নাহি ঝরিত ;
স্থবির অচলভাত,             নাপাইয়া শাক ভাত,
কাতরে বিভুর কাছে,         মৃত্যু নাহি চাহিত,
না পাইয়া পূর্ণাহার,           স্নেহের প্রতিমা মার,
অস্থি চর্ম্ম শুকাইয়া,           যদি নাহি যাইত ;
পুরাইতে নিজ পেট,           উচ্চমাথা করি হেট,
কবি কি কাহার কাছে,        ছার অর্থ চাহিত ?
পরিবার পোষাটাই,            তাই মান মাথাখাই,
কহিছে হরিশ কবি,            তাইত হে তাইত |

.                ******************     
.                                                                                  
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কবির তেজস্বিতা উপলক্ষে   
কবি হরিশ্চন্দ্র মিত্র
"কবি-রহস্য" কাব্যগ্রন্থ থেকে

বাগদেবীর পুত্র যাঁরা,         নির্দ্ধন হলেও তারা,
তোষামোদ করি কার,        গুণ গান গায় না |
বরঞ্চ দিনান্তে খায়,           সমাজেতে কষ্ট পায়,
অপমান-মিশ্র-অন্ন,            তবু তাঁরা চায় না |
বরং অনাহারে রয়,          ক্ষুধায় যাতনা সয়,
তথাপি হরীশ ক্ষুদ্র,           শশ-মাংস খায় না |
করিকুম্ভ ভেদ করি,          মস্তি আহারে হরি,
সামান্য শিকার পেলে,        আঁখি তুলে চায় না |

.                ******************     
.                                                                                  
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কবির দৈন্যে  
কবি হরিশ্চন্দ্র মিত্র
"কবি-রহস্য" কাব্যগ্রন্থ থেকে

হে বিধি কুবিধি তব,        সহিবারে পারি সব,
এক অবিচার প্রাণে,         সহেনা হে সহেনা |
চাঁদে দিলা মৃগদাগ,          মণিতে ভুষিলা নাগ,
কন্টকে বেড়িলা পদ্ম        তাহে বড় বহে না ,
চন্দনে না দিলা ফুল,         তাতেও ধরি না ভুল
ইক্ষুতে না ফলে ফল,        তাহে মন দহে না |
মূর্খজনে কর ধনী,            তাহে না বিষাদ গণি,
কবির দীনতা দেখে,         খেদে প্রাণ রহে না |
করি তোমা পরিহার,        হেন অবিচার আর,
ভাবীকালে ওহে বিধি,       করনা হে কর না |
কবিত্ব বিতর যাঁর,          দীনতার ঘোর দায়
ঠেকায়ে সমাজ মান,        তার আর হোর না |

.                ******************     
.                                                                                  
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কল্পনার প্রতি    
কবি হরিশ্চন্দ্র মিত্র
"কবি-রহস্য" কাব্যগ্রন্থ থেকে

যত্নে বানরীর গায়,        সাজ দিয়ে বাদিয়ায়,
অর্থ লাগি দ্বারে২,           নাচায় যেমন গো |
পোড়া জঠরের দায়,        সাজাইয়া কুসজ্জায়,
নাচানু কবিত্ব-শক্তি,       তোমায় তেমন গো |
মান পানে না চাইনু,        দ্বারে দ্বারে নাচাইনু,
তবু নাহি পূর্ণ হল,             জঠরের খাই গো |
লাজ নাহি মনোমাঝে,    তাইতে কুৎসিত সাজে,
তোমা লয়ে ধনী-পাশে,    ফিরে সংখেলাই গো |
যা হবার হইয়াছে,          এবে কবি তব কাছে,
বিনয়ে এ ভিক্ষা যাচে,      অন্য ভিক্ষা চাবে না |
গত অপরাধ যত,               ক্ষম এবারের মত,
কুবেশে কুস্থানে তোমা       লয়ে আর যাবে না |

.                ******************     
.                                                                                  
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*