কাব্যের দোষ গুণ উপলক্ষে কবির প্রতি কবি হরিশ্চন্দ্র মিত্র "কবি-রহস্য" কাব্যগ্রন্থ থেকে
দল বাঁধি লক্ষ কাকে, যদিও আহ্লাদে ডাকে, কর্ণ ব্যথা বই তার, চিত্তসুখ হয় না | একমাত্র পিকরব, যদি করে কুহু স্বর, শ্রবণে জনমে প্রীতি, কর্ণ-ক্লেশ রয় না, করি কাব্য-আলোচন, নিহৃর্দয় শয়তান, ধন্যবাদ দিলে তাও ভাল মনে লয় না, রসজ্ঞ অভিজ্ঞ একে, কাব্যখানি পড়ে দেখে, ভাল কৈলে তাই ভালো, শ্রম-দুঃখ রয় না | করি তব কাব্য দেখে, অল্পজ্ঞ সহস্রে ডেকে, দূষিনে সে কথা কাণে ভরো না হে ভরো না | বিজ্ঞ অনেকের বাক্, একে নয় ভাবো লাক্, সেই শ্লাঘ্য-পুরস্কার, আর আশঃ করো না |
সে দেশকে নমস্কার কবি হরিশ্চন্দ্র মিত্র "কবি-রহস্য" কাব্যগ্রন্থ থেকে
যে দেশের কবি প্রতি অনাদরে, পরমুখে কাব্যরস করি আস্বাদন রে | যে দেশের ধনীগণে, ব্যসনে উড়ায় ধনে, কবিকে কড়াটী দিতে হয় সুকৃপণ রে | যে দেশের অধিবাসী, পরভাষা ভালবাসি, মাতৃকল্পা মাতৃভাষা, পানে নাহি চায় রে | বিদ্যানেরা যে দেশের প্রায় কবি বিশেষের, পক্ষপাতী, গুণগ্রাম বিশেষি না চায় রে রোক্ না রউক সার, তার কার কে বিচার , সুস্বর “টাইটেলে” কারা যেদেশে বিকায় রে যে দেশে প্রকৃত-কবি, অর্থ ভেবে দীনছবি, কোটি কোটি নমস্কার সে দেশের পায় রে |
দুর্জ্জনের গুণগ্রহণ উপলক্ষে কবি হরিশ্চন্দ্র মিত্র "কবি-রহস্য" কাব্যগ্রন্থ থেকে
নিজে গুণধাম যাঁরা, সরল স্বভাবে তাঁরা, অপরের গুণমালা, করেন গ্রহণ রে | গুণহীন ঠেকে দায়, যদি কারো গুণগায় , করে না সরল ভাবে, সে গুণ বর্ণন রে | রসজ্ঞ কোকিলকুল, রসাল-মুকুল ফুল, কুহু রবে ধন্য দিয়া, করব ধারণ রে | সুভোজ্য পেলেও কাক, ত্যজে না কর্কশ ডাক, খায়, তবু জনমায়, কর্ণের বেদন রে | আছে আর একদল, শুদ্ধ তারা চায় ছল, গুণী গুণ পূর্ণ তারা, করে না বর্ণন রে | কবি কষ না করুক , হউক ওদের মুখ “ণকার” বিহীন গুণ, শব্দের সদন রে !