আশাভঙ্গ উপক্রমে কবি হরিশ্চন্দ্র মিত্র "কবি-রহস্য" কাব্যগ্রন্থ থেকে
শুন শুন অয়ে ভাই, যবে আমি কিছুচাই, যদি দিতে পার তবে, কর অঙ্গীকার হে ! না পার স্পষ্ট কও, কেন দেখে মৌনী হও, তুমিত আমার কিছু. ধারনাকো ধার হে ? দেই দিচ্ছি বলে বোলে, কতদিন ছলে ছোলে, শেষ কালে টেলেটুলে, কোরনা নিরাশ হে | আশাঙাঙ্গা আশা দিয়ে, এর মত পাপ-ক্রিয়ে, নাই--- নাই পৃথিবীতে, নির্য্যাস --- নির্য্যাস হে | বরঞ্চ নাকর দান, তাহে না কাঁদিবে প্রাণ, আশা দিয়া নাহি দিলে, বড় প্রাণে বাজে হে, হতাশ্বাস হলে পরে, প্রাণ মান যে কি করে, করে যার সেই জানে, লোকালয়-মাঝে হে কবি কহিতেছে সার, যত ক্লেশ নিরাশার, জেনেছি জেনেছি তাহা, আমি বিলক্ষণ হে শত বজ্র বুকে হানে, বরঞ্চ তা সহে প্রাণে, তবু নিরাশার ক্লেশ, নাযায় সহন রে |
ক্ষমার-গ্রাহীদিগের দুঃস্বভাব উপলক্ষে কবি হরিশ্চন্দ্র মিত্র "কবি-রহস্য" কাব্যগ্রন্থ থেকে
ওহে নিধি ! ছি ছি ছি ! তোমায় বা কব কি !! অচেতন কুলাখানা, সার গ্রাহী গড়েছ | সচেতন সুগঠন, এমন মনুষ্যগণ, তাদেরে ও গুণে কেন, প্রবঞ্চিত করেছ ; বিনয়ে এ ভিক্ষা চাহি, না করিয়া সারগ্রাহী, ভাবীকালে একটিও, মানুষ গড়ো না হে | একেইত কবিচয়, অরি ভয় শূন্য নয়, সে সংখ্যার বৃদ্ধি আর, করো না করো না হে |
কবিতার অনাদরে কবি হরিশ্চন্দ্র মিত্র "কবি-রহস্য" কাব্যগ্রন্থ থেকে
হে কবিতে | আদরিবে কে আর তোমায় ? হয়েছে হৃদয়শূন্য প্রায় লোকসমুদায় | হৃদয় থাকিলে পরে, তোমার যে অনাদরে কে এমন এ ভুপরে শিলাময়-কার ?
হা ! মাধবীলতা, যারে প্রেমাদর সহকারে রাখিত হৃদয়াগারে, যত্নে সহকারে, এ দুঃখ কহিব কায় ! এখন সে লতিকায় অসার আকন্দ কায়, স্থান নাহি পায় !
ললিতা-কবিতাভাবে, রসে, গুণে হবে ভাবে নব নব ভাবে ভাবে কারে না ভুলায় ? হায় কি পুরুষ যত, হল পুরুষত্ব হত !! তাই ত্যজে ক্লীব মত, নব নায়িকার |
হে কবিত্বে ! প্রাণেশ্বরে ( ১ ) হারায়ে দুঃখসাগরে ডুবিয়াছ কে বিতরে, আশ্রয় তোমায় | দুঃখসিন্ধু-নিমগনা, যে বিধবা বঙ্গাঙ্গনা ( ২ ) তার প্রতি কৃপাকণা, অর্পিতে কে চায় ?
হে কবিতে ! না জান কি, সুপবিত্রা যে জানকী ( ৩ ) সদ্ গুণে সতীত্ব যার, তুল্য মেলা দায় | ভ্রমেও না গুণ স্বরে, বিনা দোষে দূষী করে অবোধ নিকরে, তার, অপবাদ গায় !!
হে কবিতে ! যদি এবে,লোকে তোমা নাহি জেনে ভগ্নোত্সাহে তাই ভেবে, হওনা দুঃখিত | সতত সভাবে থাক, বিভু প্রতি প্রীতি রাখ, যাইবে দুর্দ্দশা তব, তাঁহারি কৃপায় |
( ১ ) প্রাণেশ্বরে--- প্রাণকান্তে অথবা প্রাণ স্বরূপ ঈশ্বরে অর্থাৎ ঈশ্বর গুপ্ত | ( ২ ) বিধবাবঙ্গাঙ্গনা---- বঙ্গদেশীয় বিধবাঙ্গন | অথবা এতৎ কাব্যকারের রচিত “বিধবাবঙ্গাঙ্গনা” নামক কাব্য |
বড় কে কবি হরিশ্চন্দ্র মিত্র বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় সংকলিত ও সম্পাদিত, শিশু সাহিত্য সংসদ প্রকাশিত "কিশোর কবিতা সঞ্চয়ন" (১৯৯৫) কাব্য সংকলন থেকে নেওয়া।
আপনারে বড় বলে, বড় সেই নয় লোকে যারে বড় বলে, বড় সেই হয়। বড় হওয়া সংসারেতে কঠিন ব্যাপার সংসারে সে বড় হয়, বড় গুণ যার। গুণেতে হইলে বড়, বড় বলে সবে বড় যদি হতে চাও, ছোট হও তবে।