কবি হাসান উজজামান আনসারীর কবিতা
*
কালো সুতোর সীমারেখা
কবি এম হাসান-উজ-জামান

তুমি চলে যাও সময়ের স্রোতে ভেসে বহু দুরে,
তবু রয়ে যায় স্মৃতি
একটু মুখ বিকৃতি
ভালো বাসার সময় সজীব দর্পণে।
তোমার ভালোবাসার স্বপ্ন সন্ধিৎসু চোখ
লাল পলাশের রঙে রাঙা গাল
ছলনার হাতছানি দেওয়া কপাল
ডাকে আমায় ধ্বংশের রক্ত খেলায়।
ধর্মের 'চিনের প্রাচীর' বিভাজিত করেছে আমাদের
স্বপ্ন ভাবনার বিষয়
মিষ্টি বাজির দুষ্টুমি ভরা বিজয়
আর, অসময়ে জিজ্ঞাসা করা ভালোমন্দ খোজ খবরের সময়।
সাম্প্রদায়িকতার কালো সুতোর সীমারেখা
সীমায়িত করেছে আমাদের ভালোবাসা
সুখ-স্বপ্নের পবিত্র মনের কথা
আমরণ জীবনের সীমারেখা পর্যন্ত!
হয়ত ভুল'ই হয়েছে আমাদের, দুইজনের-
দুইজনকে ভালোবেসে
মনের মনিকোঠায় বসিয়ে রেখে
শান্ত সুখের সংসার বাঁধার স্বপ্ন দেখা।
আজ তাই আর তাকালাম না তোমার
হাসিমাখা লালমুখের দিকে
অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা চোখের দিকে
শুধু দিলাম, বাধ্য বেদনার সাথে কিছু নোনাজল।

.           *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
বিপরীত ঘোড়ার ডিম
কবি এম হাসান-উজ-জামান

ধুলোয় ধুয়ে গেছে অনেক কবি,অনেক
কবিতা ঠোঙা হয়ে ঘুরেছে
পথে-পার্কে, পাঠ্য
বইয়ের দুই মলাট মাঝে
জায়গা হয়নি
তাই তারা এখন বিপরীত
ঘোড়ার ডিম!
সমাজ-সম্মান-স্যালুট কিচ্ছু
পাইনি শুধুই পাতার
পর পাতা ভেবে খেয়েছে সময়, নেয়েছে
ঘামে কিন্তু দাম??
থেঁতলে যাওয়া বেগুন-টম্যাটোর
মতোই অপাঙতেয়-অচিন।

.      *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
বেকারী কথা
কবি এম হাসান-উজ-জামান

এক শহর অন্যমনস্কতার হিজিবিজি
সিসমিক রেখা ক্রমবর্ধমান ।
রবিবার-ছুটিবার বলে বিশ্রামের কোনো
ফুলস্টপ নেই । কমা অবশ্য আছে ।
তাঁরই ফাঁকে দাঁড়ি কাটার-
ব্লেডের উপর রাখতে হয় হ্মুধার্ত বাঘের
তীহ্ম নজর । মশার গানে
ঘুমে ঢুলে চোখ-- পচা ইদুরের
গন্ধে শক্ত হয় নাসারন্ধ্রের ঘ্রাণগ্রন্থি । কবে
কার মাঁজা কাপের চা ধোঁয়া
ছাড়লে একটু বিরক্তির কুঁয়াশা
দৌড়ায়, কু-আশা ছড়ায় । তবু সময়
নেই আড়মোড়া ভাঙার । ভাঙে
হাঁড়, মিথ্যে স্বপ্নের ভাঁড়ও ভাঙে
প্রতিবার । আর, একটু-আর একটু করে বাড়তে
থাকে একটা বেকারের
বেকারী ইতিহাস---বেকারী কথা ।

.      *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
পলাশপ্রীয়া, তুমিই সারথী
কবি এম হাসান-উজ-জামান

ঘাস ছেড়া অবেলার রঙ
বিকোয়নি, জারি রয়েছে দূরালাপের
আমবষ্যা পূর্ণিমার রাতও, দশটা
চারটার কর্ম ক্লান্তির মধ্যেও
হু হু করে তোমোর সজীবতা।
ভড়কে যাওয়া
ছমছমে ভূত-রাতেও রাত-সূর্যের
অনুপস্থিতিতে-
পলাশপ্রীয়া, তুমিই সারথী।

.      *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
অভিঞ্জতায় পরিপক্ক
কবি এম হাসান-উজ-জামান

গোধূলি জানে, দিগন্তে ঢলে
পড়লে সূর্য
লাল হতে হবে তাকে ।
সাজানো পৃথিবীর নাটকীয়
ব্যাঙ গুলোও বোঝে
বর্ষার সাথে তাদের 'গ্যাঙোর গ্যাঙোর'-এর সম্পর্ক ।
আনুপাতিক ভাগহারের পাটিগনিতে
ফুটপাতের বাচ্চাগুলোর প্রত্যাশিত
চকলেটের মান শুণ্য-- তাও মেনে নিয়েছে তারা ।
ডাকতে থাকা কুকুর আর চলতে থাকা হাতি
---সে গল্প অনেক পুরানো ।
মাঝখানে, পাঁচবছর অন্তে প্রতিশ্রুতির
র্পাচফোড়নে মন-পিত্তি জ্বলা ব্যাপারটা
পনেরো বছরের অভিঞ্জতায় পরিপক্ক ।

.        *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
আমি শপথ নিলাম
কবি এম হাসান-উজ-জামান

আমি শপথ নিলাম-
সকালের নির্মলতাকে সাহ্মী রেখে, ভাসব
না আর তোমার কথার কুয়াশা
জালে। তালে ঠিক রেখেই চলব, তবে
আর মাতাল হব না তোমার
মরমি চাওয়াতে।
জ্যোৎস্না রাতের নীল রূপকথাময়
রাতে আমি শপথ নিলাম-
ক্লান্ত কফি কাপে আর মুখরোচক
খাবারে সাথে চাইব না
তোমার এস.এম.এস.।
খোয়া বিছানো রেললাইন দিয়ে আর
তোমার সাথে হাটব না
বলে আমি শপথ করছি-
চলন্ত ট্রেনের শত শত অচেনা যাত্রীদের
সামনে, যারা কিনা চিনছে আমার এই পাগলামিটা।
তবে আর পাগল হব না তোমার
রেশমী চুল, হরিণী চোখের
কোমল ভ্রুকুটিতে। তাই, এই কবিতা
ছুয়ে শপথ নিলাম আমি।

.        *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
ঘুম ভাঙছে ভিন্ন গ্রহের
কবি এম হাসান-উজ-জামান

প্রতিহ্মণেই গলা মেলাচ্ছি
একটি অতি অপরিচিত
ভবিষ্যতের সাথে । শব্দ পরিবর্তন
হচ্ছে, স্বপ্ন বেঁকে বসছে
অভাবনীয় বিশ্বাসের দাঁড়ি পাল্লায় । কড়মড়ে
বিস্কুটের মতো ভাঙছে বিশ্বাস । শুধুই ভাঙছে ।
মেরুর গোরা কিংবা মধ্যের পোড়া
রঙের সভ্যতা গুলোর
লং মার্চ
ঘুম ভাঙছে ভিন্ন গ্রহের।

.    *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
তোমাকে পেরোলে....
কবি এম হাসান-উজ-জামান

অসময় পেরোলে সময় আসে
মেঘ পেরোলে রোদ।
ঝরণা পেরোলে নদী আসে
রাগ পেরোলে বিহ্মোভ।
পাতাল পেরোলে মাতাল লাভা আসে
আগুন পেরোলে ছাই।
আমাকে পেরোলে তুমি আসো
তোমাকে পেরিয়ে আমার আর কিছু নাই।

.         *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
কালো পথ
কবি এম হাসান-উজ-জামান

পূন্যার্থীর ভিড়ে শেষটাই আর অপরাধীদের প্রথমে-
চলছে নৌকা তুলছে যে ঢেউ
কত ভুল মেখেছি জীবনে?
দুধ ভাত খাব-খাওয়াবো বলে মদ মাতালের পথে হাঁটছি-
গড়া এ দেশ বিদ্বেশ বিষে
গাইতি খুচিয়ে ভাঙছি ।
জানি এ ভুল চড়াবে শুল তবু মাথা রাখি ঠান্ডা-
লুকিয়ে মিথ্যা উচু করে রাখি
মেকি সত্যের ঝান্ডা ।
বিদ্রোহী বিপ্লবী কিছু নয়,চোরা পথে করি কারবার-
প্রশাসন কিছু চাটছে তলা
হচ্ছি বিকার,করছি আমি নোংরামির'ই নারী পাচার ।
নোংরামি নয়,সব সুন্দর! আহার দেয় যে লক্ষী-
ফুটো থালা হাতে ঘুরত যারা
আজ তারা আমার রক্ষী ।
কাজ পেয়েছি, কাজ দিয়েছি হোকনা সে কালোপথ-
সাদা পোষাকে চুরি করে আমি
গড়ছি ইমারত,চড়ছি বিলাস-রথ ।

.         *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর   
*
একই পরমাণুর দুই কণা
কবি এম হাসান-উজ-জামান

আমি তোর,
ঘুম ভাঙানিয়া পাখি হব
হব তোর রাত-ঘুমের রুপকথা।
ডানা মেলে উড়ে যাব আমরা
জুড়ে যাব দু'জনা।
জোনাকির মত জ্বলব আমরা-
তবু জোনাকির মত নিভব না।
দুর দুই মেরু হলেও
যেন আমরা একই পরমাণুর দুই কণা।

.         *************************      
.                                                                               
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর