কবি হেমচন্দ্র বাগচীর কবিতা
যে কোন গানের উপর ক্লিক করলেই সেই গানটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
শান্ত দূর-প্রসারিত মাঠে,
প্রভাত-সঞ্চারসম,---অনাদির ইঙ্গিত-গীতিকা
সুনবীন নগ্নদেহা উঠেছিলে ফুটে!

আজি ধরা একান্ত প্রবীণ ;
কত গান, কত হাসি রুদ্ধ হ’ল অশ্রজলধারে।
কত রূপ, কত রস ম্লান হ’ল, শুষ্ক হ’ল ধীরে ;
আজো যেন মনে হয়, আছ তুমি মন্দার-মালিকা,---
অম্লান নন্দন-গন্ধা। বক্ষতল-কমল-কলিকা
আজো নহে পূর্ণ বিকশিত। মন্দাকিনী-তারে-তারে
যৌবন-বিকাশছন্দে কমনীয় তনুর সম্ভারে,
মহাকাল-ভ্রুভঙ্গীরে ফেরো উপেক্ষিয়া!

গগনের শশী,
তোমার মুখের ’পরে চাহি’ রহে নিমেষবিহীন।
তারাদল,
অনন্ত আকাশ ’পরে তারুণ্যের বেদনা-বিহ্বল!
যেন রাত্রি-দিন
প্রস্ফুট ওষ্ঠের বাণী চাহে শুনিবারে ;
সুচির-মৌনতা তব তুলে চঞ্চলিয়া
নিখিলের জীবস্রোত। তব প্রেম অতল-পাথারে
দিশাহারা কোটি-কোটি প্রাণী।

হেরে কবি, অবিরাম উঠিছে উচ্ছ্বসি’
সাগর-তরঙ্গসম ক্ষুব্ধ ক্ষুণ্ণ চঞ্চল জীবন ;
অঙ্গের সুরভি তব, মুকুলিত অনন্ত যৌবন,
স্মিত হাসি, রক্ত বিম্বাধর,
বিশ্বব্যাপ্ত মহামোহে আন্দোলিছে দিক্ দিগন্তর।
বাণীহীনা, দীর্ঘ দিন হেরিতেছ সন্নত নয়নে
যুদেধ চলে তোমা’ লাগি’ দেশে দেশে গৃহের প্রাঙ্গণে ;

পুঞ্জ পুঞ্জ মৃতস্তূপে ছেয়ে যায় বিরাট ভূবন!
সংগ্রাম-সংক্ষোভে তাই সুভীষণ শবের মাঝারে,
জয়ী-জন---নতজানু নিরীড়িছে তব কটিদেশ!
ভঙ্গীহীন, রেখামুক্ত, চির নব বেশ,---
অকম্পিতা, মাল্য দাও তা’রে ;
নীরবে বন্ধুর-দেহা ফেরো গৃহে সুমৌন-আনন!

জানি তুমি
প্রিয়তম-ক
শ্যামলী-লতি
নব স্নেহাঞ্জ
নয়নের দৃষ্টি
শিশুর কাক
আজি হেরি
সহসা উঠি
রৌদ্রলীলা,
বিশ্রাম রাত্রি
সংগ্রামের
নহ’ শুধু কা
কল্পা-স্বরগত
নহ’ যে কল্যা

যোদ্ধার হৃদয়-লীনা, সৈনিকের জয়লব্ধ ধন,
চিরমৌনা, আজি হেরি তোমা’ লাগি’ চলিছে লুণ্ঠন
ধরার অঙ্গনতলে ; আনো অমা ; নহ’ তাই রমা---
ধাতার অপূর্ব্ব সৃষ্টি রক্তাম্বরা সুর-তিলোত্তমা!

.              ******************     
.                                                                                  
সুচিতে...   


মিলনসাগর
তিলোত্তমা
ধরার শ্যামল অঙ্কে’ মরণের দীপালি-উত্সবে,
সে রুপ হেরেনি কেহ। মৃত্যুর অতীত মহাবাণী,
নবীন মোহিনীমন্ত্র দীর্ঘায়ত নয়ন-পল্লবে,
চিক্কণ চিকুরজালে বজ্রগর্ভ মেঘচ্ছায়াখানি
জ্বালাময়ী রূপবহ্ণি বিশ্বধাতা মহাধ্যানে ধরি’
*
শ্রান্তিহীন তাই অবিরল
চলে তব সৃষ্টিলীলা পল্লবের কোমল জীবনে।
তাই ক্ষণে ক্ষণে
মোদের কঠোর চিত্তে লাগে তব চকিত পরশ,
অমৃত-সরস!

কা’র আশির্ব্বাদ-রূপে নিত্য তুমি ঝরিছ দেবতা
শুনি ক’র কথা,
তোমার কর্ম্মের পথে বার-বার আসিছ একেলা!
খেলিতেছ চিরন্তনী খেলা!
তাহারি কোমল স্পর্ষ আজি যেন করি অনুভব।
প্রশান্ত নিশিথে তাই নিঃস্তব্ধ, নীরব
ব’সে আছি বাতায়ন-পাশে!
একান্ত নিঃশব্দ তব পুঞ্জ পুঞ্জ বিপুল সঞ্চার
সুকৃষ্ণ নিবিড় ঘনে ছেয়ে দিলো অম্বর-আঁধার!
তিমির-রাত্রির মাঝে দিগঙ্গনে ডম্বরু তোমার
প্রাণে মোর ধ্বনে অনিবার।
মিলনসাগর.কম মিলনসাগর.কম মিলনসাগর
আমার পরাণ-শিখী আজি হেরি করিছে নর্ত্তন ;
তব গুরু-গরজনে বনে বনে নামিল বর্ষণ ;
দেবদারু তরু শিরে প্রাসাদের শিখরে শিখরে
বিপুল ঝঞ্ঝার বেগে কলশব্দে ঝর-ঝর ঝরে ;
সুদূরের শ্যমসীমা লুপ্ত করি’ শব্দিত সঙ্গীতে,
বিরাট এ স্বপ্নপুরী মুছি’ দিয়া একটি ইঙ্গিতে
নেমে এল তব অনুচর ;
মিলনসাগর মিলনসাগর
প্রাণে যে ফুটিল কেয়া, মেতে উঠে অন্তর-প্রান্তর!
নীলাভ্রের আঁখি ’পরে টানি’ দিলে সুশ্যাম অঞ্জন
নয়ন রঞ্জন!
মিলনসাগর থেকে নকল করা
বিচিত্র এ ধরণীর নানা দ্বন্দ্ব-শ্রান্ত কোলাহল
একটি নিমেষ মাঝে মুছে দিলে ; করিলেনির্ম্মল!

.              ******************     
.                                                                                  
সুচিতে...   


মিলনসাগর
*

এ দেহ লুটা’য়ে যাক্ আঘাতে তোমার,---
এই বাণী, এই স্পর্শ, এই হাসি, এই চিন্তাভার
ধূলায় লুটায়ে যাক্ চক্ষের নিমেষে ;
তারপরে সুনির্ম্মল বেশে
জ্যোতির মুকুট পরি’ তোমা’ সাথে হবে আলাপন।
হৃদয়ে হৃদয়ে হ’বে অহর্নিশ মুগ্ধ দরশন!

.              ******************     
.                                                                                  
সুচিতে...   


মিলনসাগর
উল্কা
হেমচন্দ্র বাগচী
এই কবিতাটি দ্বীপান্বিতা (১৯২৮) কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
শাল বক্ষ নিঃশব্দে ছিঁড়িয়া,
. প্রান্ত বিদারিয়া,
, বন্ধু মোর, তুমি এস এই বক্ষ ’পরে!
. থরে,
’য়েছে তব শত আয়োজন।
বিদ্যুত্স্পর্শ চিরদিন পরম শোভন!

গি’ প্রিয়,
রেখেছি বক্ষে স্বীয়
ন্ত্রণার কালানল-শিখা!
রক্তটিকা
লাট-দেশে তোমা আশার পথ চাহি’।
হি নাহি
ন্দেহ-দ্বিধা অণুমাত্র জড়তার ভার।
র্জ্জনে রোলে তব সাথে মিতালি আমার!
*
সকল চেষ্টায় তা’র তুচ্ছতম কাজে,
তোমার ক্ষণিক স্পর্শ সে যে পেতে চায়---
না-পাওয়া বেদনায় দিন তা’র ধীরে চ’লে যায়!

কুৎসিতের মহামেলা চলিয়াছে রাত্রি-দিন ধরি’!
হে সুন্দর, কবে তুমি আপনা পাসরি’
কাহারে পরশি’ যাও, সে ত নাহি জানে।
সহসা ব্যাকুল বাণী জাগে ত’র প্রাণে ;
ভাষা তা’র গুমরিয়া মরে।
না-বলার বেদনায় অশ্রু তা’র ধীরে পড়ে ঝ’রে।

হে চিরসুন্দর,
রুদ্র জানি তব সাথী, ব্যথা জানি তব অনুচর ;
ক্লেশের কন্টকপথ ’পরে
যাত্রার চরণ-রক্ত প’ড়ে যায় ঝ’রে।
জাতির কল্যাণপথে ধ্বংসে তুমি পাঠাও নীরবে।
তারপরে যবে,
ক্ষতির পাটল-পুষ্প ভক্ত তোমা’ দেয় উপহার,
নির্দ্দয় তখনো তুমি অন্রালে প্রসারি’ আঁধার,
দুই পায়ে দলি’ তারে যাও।
ফিরে নাহি চাও,
যা’রে তুমি ভালোবাস, তা’রে তব সকলি বিলাও!

.              ******************     
.                                                                                  
সুচিতে...   


মিলনসাগর

. লোবাসে, তা’রে তুমি এখনো চেন’নি ;
,
. দিয়ে যাও।
রে,
. কা’র ভক্ষ বসি’ চিরে।
. পিছে ভিখারী যে চলে নিশিদিন।
য়ের বীণ।
রা ক্ষীণ হ’তে ক্ষীণ ;
য়---
!হি হায়!