মাটির প্রদীপ
হেমচন্দ্র বাগচী
এই কবিতাটি দ্বীপান্বিতা (১৯২৮) কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
ঝরা ফুল-পল্লবের পাশে,
নবোদগত তৃণদল মঞ্জরীর ব্যগ্র আশাটিরে
সঙ্গোপনে মর্ম্মতলে রাখিছে লুকায়ে।
শেফালির শ্যামদেহে কুসুমের নব সম্ভাবনা ;
গগনে গগনে চলে সৃজনের নবীন জল্পনা।
নির্ম্মল শারদ বায়ু প্রবাহিছে ধীরে। নীলাকাশে,
চপল মেঘের দল। বিকশিছে কাশ ক্ষণে ক্ষণে।
পশ্চিম গগনে আজি নব রক্ত-সন্ধ্যার সঞ্চারে,
বিমল সরসী-নীরে সদ্যস্নান-শেষে
ফিরিছে পল্লীর বধূ, সিক্তবাসা, পূর্ণকুম্ভ বহি’---
চূর্ণালোকে ছায়াম্লান ভঙ্গ জলকণা ;
নয়নে স্ফুরিছে হাসি, বক্ষতল-কমল-কোরকে
জাগে কত স্বপ্ন-সাধ, কত-না বাসনা,
কত হাসি, রসোত্সব, কত গান কত-না পুলকে
উদিছে, মুদিছে আশা। হেরি রহি’ রহি’
মৌনা নিশীথিনী নামে লাজনত বেশে
মাটির প্রদীপ---তা’র স্নিগ্ধ দ্যুতি আলিঙ্গিছে ধীরে
পর্ণকুটিরের দ্বার, নিদ্রাশান্ত স্নেহানন গুলি,
জীর্ণ ম্লান কয়টি বসন, অঙ্গনের তুলসী-মন্দির ;
তা’র পরে কাঁপি উঠে তীব্র বায়ে। দীপ্তি উঠি’ ঝলি’
নিবে যায়। শীর্ণ ছায়া প্রাচীর-বাহিরে
নীরব কম্পনে যেন উঠিছে ব্যাকুলি’।
ঝিল্লির ঝঙ্কার চলে। বায়ু-শ্বাসে কাঁপে তরুশির।

মহাক্ষুধা
হেমচন্দ্র বাগচী
এই কবিতাটি দ্বীপান্বিতা (১৯২৮) কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
মহাক্ষুধা জাগে আজি প্রাণে,
জাগে দেহে, জাগে সবখানে।
এ রুদ্ধ দুয়ারে সে যে ঘন ঘন করে করাঘাত!
হেরি অকস্মাৎ, মিলনসাগর
ব্যক্তিরে সে আবরিয়া দেশে দেশে সমাজে সমাজে,
আপনার মহিমায় একছত্র রহে রাজ-সাজে।
নব নব প্রেরণার বলে, মিলনসাগর
মানুষ সৃজিছে যা’রে মাটির এ ধরণীর তলে,
আপনার রক্ত দিয়া, আপনার আশা ভাষা সঁপি’,
কল্পনায় যা’র নাম জপি’ মিলনসাগর মিলনসাগর
মানুষ আনিছে ডেকে আপনার দেহের দুয়ারে,
অলক্ষিতে চিরদিন জানি সে চাহিয়াছে তা’রে!
এই তা’র ক্ষুধা,---
এই তা’র চিরন্তনী সুধা
জানি তা’রে করিছে আহ্বান!
দেশ হ’তে দেশান্তরে, মেরুশিরে এরি জয়গান!
কেহ তা’রে বলে আশা।
কেহ তা’রে কহে ভালোবাসা।
কেহ কহে জ্ঞান, প্রেম, কেহ কহে ধ্বংস সর্ব্বনাশা।
কেহ বা কল্যাণমূর্ত্তি হেরিতেছে সম্মুখে তাহার।
সে যে সত্য নগ্নরূপ এ বিশ্বের অনন্ত ক্ষুধার!
জানি তা’রে জানি ; মিলনসাগর মিলনসাগর
আমারে সে দিলো প্রাণ। আমারে সে রূপ দিলো আনি’।
প্রথম আলোক-লিপিখানি
সে মোর ললাটে দিলো সৃজনের শুভক্ষণে টানি’।
তা’র পরে প্রতিদিন নব নব রূপে
তা’র সাথে হ’ল পরিচয়।
আপন কামনা-ধূপে চুপে মিলনসাগর থেকে নেওয়া
তাহারে সুরভি’ তুলি’ মানি মনে অপার বিস্ময়।
ক্ষণে ক্ষণে দিনে দিনে ক্ষুধা তা’র বাণী মোরে কয়।
সভ্যতার সর্ব্বঋদ্ধিমূলে,
এই ক্ষুধা মহাদান দিলো তা’র তুলে।
মৈত্রেয়ীর মহাবাণী দিলো তাঁ’র অতৃপ্তির মাঝে।
দিলো বিশ্ব-সাধনার নব নব সাজে।
এলো কভু শুভ্রবেশ পরি’
সুকঠোর তপস্যায় আপনারে সর্ব্বরিক্ত করি’।
তারপরে বসন্তের দিনে
উমার মিলনে এলো আপনার পথ চি’নে চি’নে।
তবু সে রহিলো বসি’ জাগি’!
যুগে যুগে প্রাণে প্রাণে তৃপ্তিহীন মহা-আশা মাগি’।
মিলনসাগর থেকে কপি পেস্ট করে নেওয়া
দিন চলি’ যায়,
এই ক্ষুধা নাহি রহে অনায়াস অলস শয্যায়।
গতি তা’র বাড়ি’ চলে নানা রূপে, নানা সভ্যতায়।
জাতিতে জাতিতে তা’র সুমহান ডঙ্কা বাজি’ যায়।
উঠে ধীরে অনন্ত আহ্বান ;
দেশ হ’তে দেশান্তরে মেরুশিরে এরি জয়গান।
. ******************
. সুচিতে...
মিলনসাগর
কবি হেমচন্দ্র বাগচীর কবিতা যে কোন গানের উপর ক্লিক করলেই সেই গানটি আপনার সামনে চলে আসবে।
|
কণ্ঠে দোলাই যে মণি-মালিকা, তা’রে রাখি’ দেয় তুলে ;
বাতায়ন-পাশে বসি’ একাকিনী চম্পক-আঙ্গুলে,
অধীর বীণায় আনে গুঞ্জন ; যেন ঘন কালো নীরে
নীরবে ঘনায় অনাদি আঁধার তা’রি সুরে ধীরে ধীরে।
কি আলো তাহারে করে উন্মাদ আজি এ বিজন-পুরে ;
ভোরের পবন কি বাণী জানায় নব টহলের সুরে!
চাহিয়া নয়নে নাহি পাই তা’র চিরপুরাতনী দিশা ;
কি তা’র কামনা, কিবা তা’র আশা, কেমন মনের তৃষা!
সে যে চাহে দূর---আমি খুঁজি সুর জীবনের পথে ঘুরে।
মাতি’ উঠে মনে চিরচঞ্চল ফিরে যাই দূরে দূরে।
বাড়ে ব্যবধান। ভুলে যাই মনে কি আর রয়েছে বাকী
উদাসী বাতাস ফিরে চারিপাশ গুমরিছে থাকি’ থাকি’।
ক্ষণে ক্ষণে জাগে নবীন বাসনা নব মুকুলের মত,
নূতন করিয়া করিব আপন আরানো বেদনা যত।
উতল জীবন-দোলা লাগে প্রাণে ;
কলভাষে করে আলোকে সিনান।
উদাসিনী প্রিয়া কেশ আকুলিয়া ক
নীরবে মরিছে দখিণা বাতাস ; হে
আকাশের শশী আছে বসি’ যেন
করুণ নয়নে চপল হাসির বিভাটি
রাঙিবে কপোল ; নব কল্পনা-মঞ্জ
উদাসিনী মোর বিরহে রচিছে মি
. ******************
. সুচিতে...
মিলনসাগর

ব্যবধান
হেমচন্দ্র বাগচী
এই কবিতাটি দ্বীপান্বিতা (১৯২৮) কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
আমার জীবন-মাঝে প্রেয়সীর রূপে,
তুমি নারী চুপে চুপে, মিলনসাগর থেকে
এসেছ অর্গল খুলি’ সম্মিত আননে ;
অজস্র কুসুমরাশি ফুটেছিল আমারি লাগিয়া
প্রিয়া মোর প্রিয়া! মিলনসাগর থেকে কপি
পেস্ট করে তোলা হয়েছে
সেই সুধা হাস্যধারা, সেই তব প্রেমঅর্ঘ্যভার
জীবন-বীণার তারে তুলেছিলো কি নব ঝঙ্কার,---
আজি এ নিশাতে মিলনসাগর থেকে নেওয়া
স্মরি তাই। সেই শুভ্র সুকোমল হাতে
আমার বেদনারাশি, আমার এ তুচ্ছ সুখভার
কেমনে নিয়েছ তুলি’ মনে তাই পড়ে বার বার।
সেথা তুমি সঙ্গী মোর, ওগো নারী, সরম-কুণ্ঠিতা,
হে তরুণী, লাজাবগুণ্ঠিতা, মিলনসাগর মিলনসাগর
সেথা তব হৃদয়ের সুশুভ্র আসনে
আমারে দিয়েছ স্থান। প্রেম-আবরণে
আমার হৃদয়-দাহ তৃষ্ণা-ক্লেশ রাজি
সযতনে দূর করি’ স্মিতমুখে দাঁড়ায়েছ আজি
আমার এ মানসের প্রতিমার বেশে,
অতি ধীরে লাজহাসি হেসে!
রয়েছ হৃদয়ে। তবু, ভাবি তুমি আছ কতদূরে ?
সেথা মোর চিত্ত মরে ঘুরে।
হাসি তব, আঁখি তব, তব নিত্য লীলা-চঞ্চলতা---
প্রাণে শুধু জাগে সেই কথা।
রাণী ওগো রাণী, মিলনসাগর থেকে নেওয়া কবিতা
আজি মোর তপ্ত ভালে রাখ’ তব স্নিগ্ধ হস্তখানি।
এ ক্লিষ্ট আঁখির ’পরে রাখ’ তব স্থির আঁখিতারা।
কোথা তুমি ? ---স্তব্ধ রাত্রি ; শশী নিদ্রাহারা