সম্পূর্ণ "বৈজয়ন্তী" কবিতাটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন


.              ******************     
.                                                                                  
সুচিতে...   


মিলনসাগর
কবি হেমচন্দ্র বাগচীর কবিতা
যে কোন গানের উপর ক্লিক করলেই সেই গানটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*

.              ******************     
.                                                                                  
সুচিতে...   


মিলনসাগর
*
বৈজয়ন্তী
রবীন্দ্র-জন্মোত্সবের দিনে, ২৫শে বৈশাখ, ১৩৩৫
হেমচন্দ্র বাগচী

বনান্ত-মর্মর-গীতি গাহি’ যায় চৈত্র-রাতি ;---উদাসিনী বিধুরা বধূটি!
যুগান্ত-স্বপ্নের ভাষা গুঞ্জরিয়া ফিরে যেন নির্ব্বাকের আবরণ টুটি’।
.        সে কহে, আমারি গান বৈশাখের উত্তরীয়-তলে,
.        বেলা-বন-মল্লিকার স্ফুট হাস্যে আপনি উথলে ;
প্রদোষের স্নিগ্ধতায়, কিশোর ঋষির কণ্ঠে, তমোহর নবোতর বেশে,
উদাসিনী চৈত্ররাতি বেণুবন-পথে-পথে চলি’ যায় বরষের শেষে!


আজি বন-ভবনের নারিকেল-কুঞ্জে-কুঞ্জে নবীন প্রভাত আলো জাগে।
সে যেন দূরের পান্থ,---আশীর্ব্বাণী উচ্চারিছে সুকরুণ ভৈরবীর রাগে।
.        কহিল সে, আসি আমি বৈশাখ-সখার সাথে সাথে,
.        নবারুণ বিকশিত লীলাপদ্ম আনি দু’টি হাতে।
চিক্কণ পল্লবছায়ে নত শ্যাম আম্রশাখে তাপসের বীণা তাই বাজে।
কিশোর বৈশাখ আসে নারিকেল-কুঞ্জে-কুঞ্জে আজি বনভবনের মাঝে।


তাই তা’র আবাহনী তরুণ কবির কণ্ঠে উদার উদাত্তসুরে ভাসে।
সুদূরের পান্থ-কবি বেদনা-তরণী বাহি’ গঙ্গানীরে, শ্যাম বঙ্গবাসে।
.        প্রতিভা সঁপিলো তা’রে আপনার জয়মাল্যখানি।
.        আচ্ছোদ-সরসী হ’তে সৃজন কমল দিলো আনি’।
কহিল, তোমারে দিনু বিজয়ের রাজটীকা মরমী গো, হে কুশল কবি,
তোমার নবীনছন্দে নবতন স্বপ্ন জাগে। মূর্ত্তি ধরে প্রভাতী ভৈরবী।


বঙ্গের অঙ্গনতলে সেদিনের সুধাস্মৃতি ধূপসম সৌরভ-আতুর।
পাষাণ-বন্ধন-মাঝে সন্ধানী নির্ঝর-ধারা সে দিন-ও যে ব্যাকুল, বিধুর
.        গুহাশায়ী প্রহরার সে দিন-ও যে প্রাণ কম্পমান।
.        সে দিন-ও যে শিলা হ’য়ে গতি চায় নিষেধ-পাষাণ।
চূর্ণ করি’কারাজাল বাহিরিলো মহাস্রোত। তা’রি মাঝে হেরিনু তোমায়
বিস্ময়-বিমুগ্ধ প্রাণ মাল্যসম, গীতসম, ধূলিসম লুটাইতে চায়!


হেরিলাম তা’রো পরে দূরগামী ভাবস্রোত জটা হ’তে লভেছে জনম।
ভঙ্গে ভঙ্গে মহারঙ্গে জটিল আবর্ত্তে তাই নবোন্মেষ-উদ্বেল উদ্গম।
.        প্রাণের স্পন্দনে ত’র বাণী আনে স্বর্গের বিভাস---
.        উদাস গম্ভীর সুর, কভু শুনি প্রেম-মন্দ ভাষ!
নিত্য তবি নৃত্য তা’র দক্ষিণের ইসারায়। প্রাণময় তাহারি আহ্বান।
জীবন-মালঞ্চ ঘেরি’ নিত্য জাগে জয়োল্লাস। পুষ্পময় মাধবী-বিতান!


কভু হেরি বটচ্ছায়ে ফসলক্ষেতের ধারে বৈরাগী সে ঝাঁঝরী বাজায়।
ব্যাকুল বাউল কভু নৃত্য করে ভাবাবেশে, একতারে গুঞ্জরিয়া যায়।
.        সারাটি গগন ঘেরি’ রন্ধ্রে রন্ধ্রে স্পন্দে সেই সুর।
.        রক্তিম পল্লব যেন বায়ু-স্রোত কম্পন-বিধুর।
সারাটি অন্তরে মোরসে সঙ্গীত বাজি’ যায় দিবসের প্রহরে প্রহরে।
নবীন ঋতুর পর্ণে বর্ণে বর্ণে বিভা তা’র অলক্ষ্যের ইঙ্গিতে মুঞ্জরে!


এ কী সৃষ্টি মধুময়ী! এ কী গান উঠে বাজি’ সুধাক্ষর মোহন বীণায়!
জীবনের অঙ্কে অঙ্কে মর্ম্মের অঙ্কুরগুলি রসধারে সঞ্জীবিতে চায়।
.        আরণ্য আনন্দ-ভাষা ঋষি যেন করে উচ্চারণ ;
.        সপ্তপর্ণছায়াতলে স্বপ্ন লভে রবির কিরণ।
তারপরে গুঞ্জরণ, কত মঞ্জু মুঞ্জরণ ; প্রভাতের স্বর্ণ সিংহাসন,---
আলোক-উজ্জ্বল ; দিবা ইঙ্গিত-সঙ্গিতময়। প্রাণ-ময় বিচিত্র ভাষণ!


শতাব্দীর ব্যথাভার তোমার সৃষ্টিতে কবি
.        নিরন্তর উঠিছে উচ্ছলি’
শতবর্ষ পরে কা’র
ধ্যানস্তব্ধ চিত্তে তা’র
.        বেদনা-বিভাটি উঠে ঝলি’!
সে কি গো বসিবে আসি’
.        বসন্তবেলার অবসানে,
পরিণাম রমণীয় দিনান্তের
.        স্নিগ্ধ গন্ধ স্নানে
অগুরু ধূপের বাসে আকুলিবে
.                        কেশ ভার
.        দক্ষিণের বাতায়ন তলে---
লাজনত নেত্রে সে কি পড়িবে
.        কবিতা তব ব্যথাসুখে
.                ভাসি’ অশ্রুজলে।


জানি সে করিবে পাঠ আনন্দ-উদ্বেল মনে। তাই উঠে প্রাণভরা গান।
জানি সে বাসিবে ভালো তোমারি সাধের স্বপ্ন। তাই জাগে আকুল আহ্বান!
.        সে দিন-ও এ আম্রবন অজানিত স্মৃতির উচ্ছ্বাসে,
.        আতাম্র মুকুল দলে ভরি’ দিবে সুরভি নিঃশ্বাসে!
সে দিন-ও কিশোর বন্ধু শালবীথিকার তলে অন্যমনে রহিবে উদাসী।
বিরাট পাষাণ-পুরে বধূর অন্ত জুড়ি’ বাজিবে পল্লী-বল্লী-বাঁশী।


আষাঢ়ের মায়া রচি’ অন্তর-গগনে মোর এলে তুমি, তাই শুধু জানি।
সে দিন বর্ণ-সুখে পুলকিতা ধরণী সে নীপবনে ফুটায়েছে বাণী!
.        সে দিন আনিয়া দিলে উজ্জয়িনী-স্মৃতির সৌরভ।
.        কেয়া-গন্ধে মিশে যায় ভবন-শিখীর কেকারব।
তা’রি সাথে এলে তুমি। তাই শুধু জানি আর ভাবমুগ্ধ রহিনু নীরবে
কত-না শ্রাবণ-সন্ধ্যা হৃদয়ে ঘনায়ে এলো তন্দ্রাতুর গুরু-মেঘরবে।


শ্যাম-শ্রীর সমারোহে একদা প্রভাতে উঠি’ হেরিলাম সবিস্ময়ে চাহি’।
কখন আসনে মোর এসেছ নীরব হাস্যে বিস্ময়ের সীমা নাহি নাহি।
.        ধরণীর প্রতি তৃণে আনন্দ-শিহর উঠে জাগি’।
.        প্রতিটি পল্লব মোর করের পরশ ফিরে মাগি’।
প্রাণের প্রবাহ-সাথে সেইক্ষণে পরিচয়। তা’রপরে অনুদিন ধরি’
তূর্ণগতি মুক্তধারা মিশে যায় প্রতিঘাতে পথে পথে জড়তা পাসরি’।


আমার এ মালাখানি তুলি’ দিনু তব করে, আজিকার বৈশাখী প্রভাতে
আমার মর্ম্মের কথা তুমি শুনি’ লও কবি অশথের মর্মরের সাথে।
.        চম্পার কোরক জাগে বনতলে গন্ধ-সুষমায়,---
.        তা’রি স্বপ্ন হেরি বসি’ পল্লীছায়ে লীলায় হেলায়।
তমালবনের পারে নীরবে ঘনায় ছায়া। তা’রি মায়া আনে মোহঘোর
সে ছন্দ-আনন্দ-গান প্রণতির সাথে লহ’। তা’রি সাথে লহ’ চিত্ত মোর।

.                                   ******************     
.                                                                                  
সুচিতে...   


মিলনসাগর
*