এ কী সৃষ্টি মধুময়ী! এ কী গান উঠে বাজি’ সুধাক্ষর মোহন বীণায়! জীবনের অঙ্কে অঙ্কে মর্ম্মের অঙ্কুরগুলি রসধারে সঞ্জীবিতে চায়। . আরণ্য আনন্দ-ভাষা ঋষি যেন করে উচ্চারণ ; . সপ্তপর্ণছায়াতলে স্বপ্ন লভে রবির কিরণ। তারপরে গুঞ্জরণ, কত মঞ্জু মুঞ্জরণ ; প্রভাতের স্বর্ণ সিংহাসন,--- আলোক-উজ্জ্বল ; দিবা ইঙ্গিত-সঙ্গিতময়। প্রাণ-ময় বিচিত্র ভাষণ!
শতাব্দীর ব্যথাভার তোমার সৃষ্টিতে কবি . নিরন্তর উঠিছে উচ্ছলি’ শতবর্ষ পরে কা’র ধ্যানস্তব্ধ চিত্তে তা’র . বেদনা-বিভাটি উঠে ঝলি’! সে কি গো বসিবে আসি’ . বসন্তবেলার অবসানে, পরিণাম রমণীয় দিনান্তের . স্নিগ্ধ গন্ধ স্নানে অগুরু ধূপের বাসে আকুলিবে . কেশ ভার . দক্ষিণের বাতায়ন তলে--- লাজনত নেত্রে সে কি পড়িবে . কবিতা তব ব্যথাসুখে . ভাসি’ অশ্রুজলে।
জানি সে করিবে পাঠ আনন্দ-উদ্বেল মনে। তাই উঠে প্রাণভরা গান। জানি সে বাসিবে ভালো তোমারি সাধের স্বপ্ন। তাই জাগে আকুল আহ্বান! . সে দিন-ও এ আম্রবন অজানিত স্মৃতির উচ্ছ্বাসে, . আতাম্র মুকুল দলে ভরি’ দিবে সুরভি নিঃশ্বাসে! সে দিন-ও কিশোর বন্ধু শালবীথিকার তলে অন্যমনে রহিবে উদাসী। বিরাট পাষাণ-পুরে বধূর অন্ত জুড়ি’ বাজিবে পল্লী-বল্লী-বাঁশী।
আষাঢ়ের মায়া রচি’ অন্তর-গগনে মোর এলে তুমি, তাই শুধু জানি। সে দিন বর্ণ-সুখে পুলকিতা ধরণী সে নীপবনে ফুটায়েছে বাণী! . সে দিন আনিয়া দিলে উজ্জয়িনী-স্মৃতির সৌরভ। . কেয়া-গন্ধে মিশে যায় ভবন-শিখীর কেকারব। তা’রি সাথে এলে তুমি। তাই শুধু জানি আর ভাবমুগ্ধ রহিনু নীরবে কত-না শ্রাবণ-সন্ধ্যা হৃদয়ে ঘনায়ে এলো তন্দ্রাতুর গুরু-মেঘরবে।
শ্যাম-শ্রীর সমারোহে একদা প্রভাতে উঠি’ হেরিলাম সবিস্ময়ে চাহি’। কখন আসনে মোর এসেছ নীরব হাস্যে বিস্ময়ের সীমা নাহি নাহি। . ধরণীর প্রতি তৃণে আনন্দ-শিহর উঠে জাগি’। . প্রতিটি পল্লব মোর করের পরশ ফিরে মাগি’। প্রাণের প্রবাহ-সাথে সেইক্ষণে পরিচয়। তা’রপরে অনুদিন ধরি’ তূর্ণগতি মুক্তধারা মিশে যায় প্রতিঘাতে পথে পথে জড়তা পাসরি’।
আমার এ মালাখানি তুলি’ দিনু তব করে, আজিকার বৈশাখী প্রভাতে আমার মর্ম্মের কথা তুমি শুনি’ লও কবি অশথের মর্মরের সাথে। . চম্পার কোরক জাগে বনতলে গন্ধ-সুষমায়,--- . তা’রি স্বপ্ন হেরি বসি’ পল্লীছায়ে লীলায় হেলায়। তমালবনের পারে নীরবে ঘনায় ছায়া। তা’রি মায়া আনে মোহঘোর সে ছন্দ-আনন্দ-গান প্রণতির সাথে লহ’। তা’রি সাথে লহ’ চিত্ত মোর। . ****************** . সুচিতে...