বিরহিণী হেমচন্দ্র বাগচী এই কবিতাটি দ্বীপান্বিতা (১৯২৮) কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
বিরহিণী মেয়ে রহিয়াছে চেয়ে পথের ’পরে। প্রিয়তম তা’র আসিবে ফিরিয়া তাহার তরে। . সে যে কতদিন কতকাল আগে . গিয়াছে চলিয়া মনে নাহি জাগে ; আজো সে তাহার আশার বাণীটি হৃদয়ে ধ’রে, চেয়ে আছে দু’টি আঁখি-তারা তুলি’ পখের ’পরে।
আকুলিত তা’র কেশপাশ সে যে বাসিত ভালো। আজো সে যে হায়, তোমনি চিকণ নিকষ-কালো। . মিলন-দিনের যত আভরণ . ল’য়ে সে করেছে দেহার বাঁধন ; বিধুর হৃদয়ে বাঁধন কোথায় ? নাহি যে আলো। বিফল বাসনা ; আসে না সে আর, বাসে না ভালো।
রাজপথে কত ফিরিছে পথিক কাজের শেষে ; মিলন-আশায় চলিছে তাহারা সুদূর দেশে। . শুধু কি তাহারি বিফল পরাণ ? . হৃদয়ে জাগিছে বৃথা অভিমান ; সমেঘ আকাশে শশী ভেসে যায় মলিন হেসে, গগন চুমিছে শ্যামলা ধরণী বিরহ-শেষে।
কোথায় কে যেন গাহে গান দূরে, করুণ সুরে! গোপন ব্যথার দহনে দহনে পরাণ পুড়ে। . একাকিনী হায় কত র’বে আর ? . প্রিয় যে নিলো না বেদনার ভার ; বেদন আজিকে রোদন জাগায় বুকটি জুড়ে। কোথা’ প্রিয়তম, তা’রি আশে মন মরিছে ঘুরে।
যদি নাহি আসে, তথাপি সে হায় রহিবে চেয়ে। শ্বেতবাস পরি’ দিবস কাটা’বে মলিনা মেয়ে। . হৃদয় জুড়িয়া আছে আশা তা’র . আসিবে আসিবে প্রিয় সুকুমার, মরণের বেশে চিরমিলনের গানটি গেয়ে। যদি নাহি আসে, তথাপি সে হায় রহিবে চেয়ে।
বিরহী হেমচন্দ্র বাগচী এই কবিতাটি দ্বীপান্বিতা (১৯২৮) কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া
আজিকার বরষায় মন যেন কা’রে চায়,--- হায় সে যে নাই, সে যে নাই! অবিরাম জলধারে, হৃদয় চাহিছে যা’রে, ভেবে মরি তাহারি কথাই। স্পর্শ তা’র যেন আজ পবনে পবনে, দেহে-মনে কি মদির অধীর স্পন্দনে অপূর্ব্ব হিল্লোল তুলি’ আনে ধীরে তা’র ভাবনাই। হায়, সে যে নাই, সে যে নাই।
তা’র স্মৃতি-চিহ্নটিরে খুঁজি আমি ফিরে ফিরে ; সে যে মোর মরমের মাঝে। প্রত্যহের মালিকায় সে যে গেঁথেছিল তায়--- বাহিরে তাহারে পাই না যে। বিচ্ছেদের রিক্ত রাত্রি নীরবে আহরি’ স্মৃতির সে মাল্যটিরে চিত্ততলে ধরি’ আসে ধীরে মোর পাশে, কৃষ্ণবেশে, মৌন, ম্লান সাজে। ব্যথা বাজে মরমের মাঝে।