নূতন জীবন কবি হিরন্ময়ী দেবী
দেখ চেয়ে একবার অসীম রহস্যময় অনন্ত এ বিশ্ব ; দেখ সেথা কিবা গায় কোন্ কথা বলে তোর প্রতি নব দৃশ্য | ওই শোন সমস্বরে বলিছে হেথায় নাহি বিলাপের স্থান, এক যায় এক আসে নব নব সুখ ভাসে স্মৃতি অবসান! যে গেছে সে যাক চলে চাহি না রাখিতে ধরে হোক্ সে বিলীন ; আবার তাহার ঠাঁই আসিবে নূতনরূপে আনন্দ নবীন | প্রতিদিন ফুল ফুটে প্রতিদিন ঝরে তারা ফোটে নব ফুল ; রবি অস্তাচলে যায় নূতন তপন আনে আলোক অতুল | একটী বিহঙ্গগীত চিরতরে থেকে যায় শত পাখী গায় ; একটী বসন্ত যায়, আবার দক্ষিণে ছুটে বসন্তের বায় | একটী তারকা খসে আকাশেতে শত তারা ঢালে জ্যোতি-হাসি, একটি জহ্নবী ঢেউ সাগরে মিশায় যায় আপনা বিনাশি | হিমগিরি হতে পুন তটিনী বহিয়া আনে নূতন জীবন, বিরহের গীতিখানি না হইতে অবসান গাহেরে মিলন |
. **************** . সূচিতে . . .
মিলনসাগর
|
কবি
কবি হিরন্ময়ী দেবী
হিরন্ময়ী দেবী ও সরলা দেবী সম্পাদিত, ভারতী পত্রিকার বৈশাখ ১৩০৪ (মে ১৮৯৭) সংখ্যা
থেকে নেওয়া।
সমস্ত সংসার মাঝে অনেক ঘুরেছি আমি
খুঁজে খুঁজে আপনার জন,
সেধেছি কেঁদেছি কত সমস্ত হৃদয় দিয়ে
পাই যদি তবু কারো মন,
কেউ যদি হাসি মুখে চাহে মোর মুখ-পানে,
বলে দুটো স্নেহময় কথা,
দুদণ্ডের তরে যদি একবিন্দু ভালবাসা
দূর করে দে'য় এ শূণ্যতা |
এত লোক, এত জন, এত প্রেম ভালবাসা,
কেহ মোর --- কেহ মোর নাই!
শত কোটি গ্রহময় বিপুল বিশ্বের মাঝে
কোন হৃদে নাহি মোর ঠাঁই!
অনন্ত আকাশ তলে, বিশাল বিশ্বের কোণে,
আজ তবে বাঁধিবো রে ঘর,
আপনি করিব আমি জগৎ-সৃজন মোর,
কাঁদিব না চাহিয়া অপর!
এই মধু রবিকরে এই মুক্ত সমীরণে,
লয়ে এই মহা বিশ্ব-শোভা!
আপন জগৎ মোর রচিব রে বসি বসি,
সাজাইব মোর মনলোভা!
হৃদয়েরে ভাঙ্গি ভাঙ্গি করিব রে নিরমান
মধুময়ী কবিতা-ললনা,
শুভ পরিণয় ডোরে বাঁধিয়া আমার সাথে
আবাস রচিব দুই জনা,
শত শত লোকজনে ভ'রে যাবে গৃহ মোর
জগতের আসিবে সকলে,
সকলে আপন মোর স্নেহের সাধের ধন
প্রেমে মন ধীরে যাবে গ'লে!
থাক্ তবে অন্য কাছে সাধা কাঁদা ভিক্ষামাগা,
প্রেমহীন জগতের ছবি---
নিজের জগৎ আমি রচনা করিব নিজে,
কি অভাব মোর --- আমি কবি!
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
গতবর্ষ
কবি হিরন্ময়ী দেবী
স্বর্ণকুমারী দেবী সম্পাদিত, ভারতী পত্রিকার বৈশাখ ১৩১৭ (মে ১৯১০) সংখ্যা থেকে
নেওয়া।
ওগো বর্ষ, ---ওগো বৃদ্ধ তুমি যবে এলে
হাসিটুকু এনেছিলে ; কি লইয়া গেলে ?
কারো প্রার্থনার পানে চাহিলেনা ফিরি,
যার যাহা প্রাপ্য ছিল দিলে চুল চিরি!
শারদগীতি
হিরন্মময়ী দেবী
স্বর্ণকুমারী দেবী সম্পাদিত, ভারতী পত্রিকার আশ্বিন ১৩১৭ (অক্টোবর ১৯১০) সংখ্যা থেকে
নেওয়া।
“হল দেখা তখনি বিদায়” ---
চরাচর অন্তহীন এই গান গায়।
এই যে মিলন আজি বরষের পরে!
ইহাও কি শুধু তবে দুদিনের তরে!
মিলন কাতর তাই বিরহ ছায়ায়,
আনন্দ আপনহারা বিষাদে লুটায়!
ভাইফোঁটা
হিরন্মময়ী দেবী
হিরন্ময়ী দেবী ও সরলা দেবী সম্পাদিত, ভারতী পত্রিকার অগ্রহায়ণ ১৩০৪ (ডিসেম্বর
১৮৯৭) সংখ্যা থেকে নেওয়া।
আজি---
মধুর প্রভাতে বাঙ্গালীর ঘরে কিসের উত্সব!
নাহিক প্রতিমা নাহি পুরোহিত শুধু হাসিরব!
কোম মন্ত্রবলে উঠিল জাগিয়া বাঙ্গালীর প্রাণ,
কে শিখালে আজি ক্ষীণ বাঙ্গালীরে সঙ্গীত মহান!

এ নহে বিদায়
হিরন্মময়ী দেবী
হিরন্ময়ী দেবী ও সরলা দেবী সম্পাদিত, ভারতী পত্রিকার চৈত্র ১৩০৪ (এপ্রিল
১৮৯৮) সংখ্যা থেকে নেওয়া।
এ নহে বিদায় এত নহে ছাড়াছাড়ি,
এযে শুধু ভালবাসা-ব্রত @@@পন ;
ছিলে তুমি যতদিন অসহায় দীন,
যতনে করিয়াছিনু লালন পালন।
নিন্দা অপমান ঘৃণা দুঃখ ব্যথা যত,
সকলি লইয়াছিনু আপনার শিরে ;
তোমারে রাখিয়াছিনু সন্তর্পণে অতি
সুকোমল স্নেহঘেরা হৃদয়ের নীড়ে।
পল্লবশয়ান মাঝে ক্ষুদ্র পুষ্পকলি,
যেমন নিভৃতে থাকে মুকুল সময় ;
সহসা রবির আলো পড়ে যবে গা’য়
ফুটে উঠে অপরূপ রূপ মধুময়।
তেমনি আজিকে তুমি উঠেছ ফুটিয়া
আজ তুমি নহ আর নিতান্ত আমার ;
এত রূপ, এত শোভা, এত মধুরিমা ;
সমস্ত বিশ্বের তরে প্রীতিউপহার।
দাঁড়াও বিশ্বের মাঝে ; চৌদিকে তোমার
উঠুক বন্দনা গান, মঙ্গল আরতি---
কুসুমঅঞ্জলী দিক রচি’ চারিপাশে
সুবাসের আবরণ মধুময় অতি।
আমিও রহিব কাছে, অলক্ষ্যে থাকিয়া
করিব তোমার সেবা ; শ্রান্তহ’লে পরে
রচিদিব শয্যাখানি ; করিব ব্যজন,
অঞ্চল লুটায় যদি তুলি দিব করে।
রবি যদি অস্ত যায় আসে অন্ধকার,
তবু রব কাছে ; যদি নিভে যায় হাসি,
ম্লান হয়ে আসে রূপ, কোলে তুলে নিয়ে
যতনে মুছায়ে দিব অশ্রুজলরাশি।
এ নহে বিদায় --- এত নহে ছাড়াছাড়ি,
এযে শুধু ভালবাসা-ব্রত-উদযাপন ;
কি বিপদে কি সম্পদে ছায়ার মতন
সাথে থাকি চিরদিন করিব অর্চ্চন।
. ****************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
আগমনী
কবি হিরন্ময়ী দেবী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত, “ভারতী ও বালক” পত্রিকার আশ্বিন ১২৯৩ (অক্টোবর ১৮৮৬)
সংখ্যা থেকে নেওয়া।
কুয়াশার জালে ঢাকা,
শরতের নিশি শেষ,
বড় ম্লান মুখ খানি
বড় হায় ম্লান বেশ।
এম্লান প্রভাত শিরে
শুকতারা তুমি বালা,
কে দেবী উদিলে আসি
আঁধার করিয়ে আলা?
কার দরশন পেয়ে
সমীরে পুলক ছুটে,
কাহার এ হাসি রাশি
ফুলে ফুলে আছে ফুটে?
ধরেছে নেহারি কারে
সকলি নূতন ছবি,
সংসার
কবি হিরন্ময়ী দেবী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত, “ভারতী ও বালক” পত্রিকার কার্ত্তিক ১২৯৩ ( ১৮৮৬) সংখ্যা
থেকে নেওয়া।
এ য়ে শুধু সুখের সমাধি!
এ নহে গো সুখের আবাস,
প্রেমফোঁটা
কবি হিরন্ময়ী দেবী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত, “ভারতী ও বালক” পত্রিকার অগ্রহায়ণ ১২৯৩ ( নভেম্বর
১৮৮৬) সংখ্যা থেকে নেওয়া।
কতবার দেখিয়াছি তারে
স্রোতময়ী তটিনীর ধারে,
এলান রয়েছে কেশপাশ,
নয়নে ঝরিছে সুধা হাস,
জলরাশি লুটিছে চরণে,
হাতখানি আনত আননে,---
শ্রীপঞ্চমী
কবি হিরন্ময়ী দেবী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত, “ভারতী ও বালক” পত্রিকার মাঘ ১২৯৩ ( জানুয়ারি ১৮৮৭)
সংখ্যা থেকে নেওয়া।
. আঁধারেতে দিশেহারা
. সুনীল আকাশ সিন্ধু
অনন্তের পানে চাহি রয়েছে পড়িয়া---
. সে মহা আঁধার হ’তে
. রূপের বিমল আলো
ফুটিতেছে একটু করিয়া।
. অতল জলধী হ’তে
. যেন গো কমলা রাণী
উঠিছেন জগত মাঝার---
. পূরবে অরুণ-রেখা
. ধীরে ধীরে ফুটিতেছে,
তিলে তিলে খসিছে আঁধার।