কবি হুমায়ুন কবীরের কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
তৃপ্তি
কবি হুমায়ুন কবীর
প্রেমেন্দ্র মিত্র সম্পাদিত প্রেম যুগে যুগে কাব্য সংকলন (১৯৪৫) থেকে নেওয়া।


.                              *****************                    

.                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
সাথী
কবি হুমায়ুন কবীর
প্রেমেন্দ্র মিত্র সম্পাদিত প্রেম যুগে যুগে কাব্য সংকলন (১৯৪৫) থেকে নেওয়া।

.                              *****************                    

.                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
পদ্মা
কবি হুমায়ুন কবীর

.        বহুদিন পরে আজি রোগজীর্ণ আঁখি দুটি মেলি
.                        হেরিলাম তোরে |
.        শ্রাবণের ঘনঘটা এই পুঞ্জ মেঘের আড়ালে
.        অপূর্ব যোগিনী বেশে মুক্ত কেশে আসিয়া দাঁড়ালে
.        নয়নের আগে মোর |  ক্ষুব্ধ রুষ্ট ঊর্মিরাশি ঠেলি
.        চলেছ বহিয়া শুধু,--- আবিল সলিলরাশি তব
.        নেচে ওঠে মরণের তান্ডব নর্তনে নব নব |---
.  চির মুক্তা, কোনো কালে ধরা দিবি নাকো কোনো ডোরে ?
.           শৈশব জীবন হতে তোরে আমি দেখিতেছি নদী
.                        পাইনাকো শেষ  |
.            কখনও শরৎ প্রাতে পূর্ণবারি শান্ত অচঞ্চল,
.             কূলে কূলে কুলু কুলু গান গেয়ে বয়ে চলে জল,
.                 কখনও বৈশাখ সাঁঝে গগনে ঘনায় মেঘ যদি
.             প্রলয় নর্তনছন্দে নেচে ওঠে তোমার পরাণ,
.            তোমার সলিলে বাজে তরঙ্গের ধ্বংসলীলা গান,
.            তোমার নয়ন তলে করুণার নাহি চিহ্ন লেশ |
বালার্ক কিরণে তব দেখিয়াছি হে নদী আমার
.              অপরূপ হাসি |
কূলে কূলে কাশরাশি ফুটিয়াছে পূর্ণিমা প্লাবনে
.        মদির কুসুম গন্ধ ভাসিয়াছে অধীর পবনে
.        মুগ্ধ জলরাশি তব শিহরিয়া ছুটেছে আবার |
.        বুকে নিয়া ধন ধান্য আঁচল সাজায়ে বনফুলে
.        সোহাগ-শরম-লাজে মৃদুবাণী-পূর্ণা কূলে কূলে
.        ছুটিয়া চলেছে যেন দূরে কোন্ জনে ভালবাসি |
.                আমি পুন হেরিলাম এ কী তব অভিনব রূপ
.                                ভৈরবিনী সাজ |
.                গগনে মেঘের ঘটা শ্রাবণের শেষদিনে আজি
.                ভয়াল গৈয়িক ভীম | নভোতলে ভীমাবেশে সাজি ;
.                এলায়ে ধূসর জটা-জলরাশি শ্মশান-স্বরূপ
.                তুমি চলিয়াছ ছুটে |  স্রোতবেগে শিহরি উঠিয়া
.                তড়িত ত্বরিত গতি আত্মহারা চলেছ ছুটিয়া,
.                ধ্বংসের প্রলয় মন্ত্র বক্ষে তব বাজিতেছে আজ ;
.        আজি তব দেখিতেছি নাহি দয়া করুণা নয়নে
.                        সুকঠিন হিয়া |
.                মানব ধরিত্রী আজি আঘাতে কাঁদিবে সুকঠোর,
.                গগন ব্যথার ব্যথী ঢালিবে অঝোর আঁখিলোর,
.                তবু তব ক্রোধবহ্নি নিভিবে না আঁখির প্লাবনে |
.                স্রোতবেগে ক্ষুদ্রতরী ওই দূরে ঠিকারিয়া পড়ে |
.                তীর হতে লক্ষ নর ফুকারিয়া হাহাকার করে
.                        অকস্মাৎ স্রোত তব রবি করে ঝলকি উঠিছে
.                                     ছুরিকার মতো  |
.                এ যেন কুটিল হাস্য তব হিংস্র দন্ত ওষ্ঠ ‘পরে
.                তব হত্যাসাধ সেথা নিষ্ঠুর নয়নে ক্ষণতরে
.                ব্যাঘ্রের জিঘাংসা প্রায় শান্ত স্মিত আলোকে ফুটিছে |
.                প্রবল দুর্বার তুনি, অত্যাচারী মদগর্বে তব,
.                ভাঙি গড়ি শক্তিমদে শ্যাম শোভা দেশ নব নব,
.                চলেছ কাটিয়া বলে ধরা মাঝে আপনার পথ |
.             তোমার প্রবল শক্তি বাধা দিতে আছে আমাদের
.                        স্নেহ প্রেম বুকে  |
.              সে ক্ষীণ বাঁধন ঠেলিয়া হে দর্পিত চলিয়াছ বেগে
.             আঘাতি কঠোর ঘাত | ব্যথিত পঞ্জরে ওঠে জেগে
.             দীর্ঘশ্বাস-ভগ্ন-আশা নিরুপায় দীন হতাশের |
.             তবু নর কাঁদে শুধু, বুকে বাঁধি একে অপরেরে,
.             বাহিরে বিশাল বিশ্ব আপন কঠোর জালে ঘেরে,----
.             সে তবু বসিয়া রহে ঊর্ধ্ব-আঁখি সব সুখে দুখে |

.                          
          *****************                    

.                                    
                                             সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কিশোরী
কবি হুমায়ুন কবীর

হেরিনু দিনের শেষে----
গোধূলির সোনা পড়েছে আসিয়া
তোমার সোনার কেশে |
নাহি তব বেশ, নাহি কোন ভূষা,
কেবল নয়নে লাজারুণ ঊষা,
করুণ বাহুর আড়ালে লুকায়ে
তরুণ দেহের লাজ,
মনের বনের সোনার হরিণী
কিশোরী দাঁড়ালে আজ !
মিলনসাগর থেকে নেওয়া!

তখন ভুবনে আঁধার ঘনায়
দিবসের অবসান,
মন্দছন্দা আলোক বাজায়
রবির বিদায়-গান |
সন্ধ্যা-তপন গগন-কোণায়
তোমারে হেরিয়া ভোলে আপনায় |
স্তব্ধ মূরতি রহিল চাহিয়া
কিশোরী-দেহের পানে,
নিঃশেষে ঢালি দিল ভান্ডার
তব যৌতুক দানে |
মিলনসাগর থেকে নেওয়া!

আলোর কুমারী রয়েছে ফুটিয়া
রক্ত কমল সম,
কেমন করিয়া তোমারে লুকাবে
রজনী নিবিড়তম ?
তোমার পরশে নিশীথের কালো
টুটিয়া হাসিল গোধূলির আলো,
অপরূপ দেহ কিরণ-বসনে
ঘেরিয়া দাঁড়ালে তাই |
এত রূপ যার তার কি গো কভু
দেহের বসন চাই ?
মিলনসাগর থেকে নেওয়া!

তরুণ তনুর ললিত লীলায়
তরুণ মনের ছবি,
আলোক ছায়ায় রেখায় বরণে
বহে রূপ-জাহ্নবী |
স্বর্ণকেশর পড়ে আসি বুকে,
গোধূলি-দীপ্তি লাজস্মিত মুখে,
কম-কুন্ঠায় সারা দেহখানি
প্রভাতকুসুম সম |
কিশোরী-মনের রূপের স্বপন
ফুটিল নয়নে মম ||

.                         
              *****************                                        

.                                                               
                              সূচিতে . . .   


মিলনসাগর