কবি ইন্দুবালা ঘোষের কবিতা
*
উত্সর্গ
কবি ইন্দুবালা ঘোষ
অশ্রুধারা কাব্যগ্রন্থের উত্সর্গ

অনন্ত করুণাময় দয়াময় ভগবান্।
রোগ-শোক-দুঃখ-রাশি জীবন ফেলেছ গ্রাসি’।
বুঝিনা কিছুত দেব বুঝি শুধু তবদান॥
যা’ দিয়াছ দয়াকরে’ যা নিয়াছ নিঃস্ব করে’   
ছিঁড়িয়া হৃদয়-গ্রন্থি চূর্ণ করি হৃদি প্রাণ॥
কি মঙ্গল হল দেব জানিনা বুঝিনা হায়।
হৃদয় ভাঙিয়া পড়ে তীব্র শোক বেদনায়॥
সেই বেদনার রাশি সেই অশ্রু হাহাকার।
তোমার চরণে দেব ধরে দিনু উপহার॥
দিও দেব শান্তি ধারা এই দুঃখিনীর প্রাণে।
চিরদিন কাটে যেন তোমারি মূরতি ধ্যানে॥
দিও সহিষ্ণুতা দেব, দিও বল হৃদিতলে।
দিও জ্ঞান প্রেম ভক্তি রাখিও চরণ তলে॥
আমার বলিতে আজ (ও) দিয়াছ হে যাহাদের।
রেখে যেন যেতে পারি তোমার চরণে ফের॥
আজ ওহে দয়াময় গোলোকবিহারী হরি
তব পদে’ অশ্রুধারা’, দিনু লও দয়া করি॥
.                                লেখিকা।

.              *****************                 

.                                                                           
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
মুখবন্ধ
কবি ইন্দুবালা ঘোষ
অশ্রুধারা কাব্যগ্রন্থের মুখবন্ধ

এ নহে কবিতারাশি                এ নহে প্রীতির হাসি
এ নহে গো সুধারাশি আশার মোহিনীতান।
প্রতিদিন পলে পলে                বুকফাটা অশ্রুজলে
দুঃখের পরশখানি এনেছি করিতে দান॥
পিতৃশোকে মাতৃশোকে                ভ্রাতৃশোকে ভগ্নীশোকে
স্বামীশোকে বিধবার, নিদারুণ শোকতান।
পুত্রশোকে কন্যাশোকে                হৃদি ভাঙ্গা শত খান,
ভাল কি লাগিবে কা’রও শোকের করুণ গান?
হৃদয়ের স্তরে স্তরে                কি বেদনা বলিবারে
তাই আসিয়াছি আজ, তোমাদের সন্নিধান।
সহানুভূতিতে ভরে                যদি এরে শ্রদ্ধা করে’
পার তবে করো শুধু একবিন্দু অশ্রুদান॥

.                *****************                 

.                                                                                             
সূচিতে . . .   
 

মিলনসাগর
*
ভক্তি-উপহার
কবি ইন্দুবালা ঘোষ
চিরস্নেহময়ী পরমারাধ্যা মাতৃদেবীর চরণে
অশ্রুধারা

চির স্নেহময়ী ওমা জননী আমার।
গেছ কোন স্বর্গলোকে                উজলিয়া আছ সুখে
বহু দুঃখ কষ্ট মাগো পেয়েছ অপার॥
সুখে দুঃখে স্নেহকোলে                লয়েছ সন্তানদলে
আজ মাগো কিছু মনে পড়ে নাকি আর।
স্মরিয়া স্নেহর রাশি                সদা অশ্রুজলে ভাসি
গাঁথিয়া সে অশ্রুধারা চকণে তোমার॥
দিলাম অঞ্জলি ভরি’                লও মা করুণা করি
চিরস্নেহময়ী ওমা জননী আমার।
শোক সন্তাপেতে ভরা                আমার এ ‘অশ্রুধারা’
ঢালিয়া চরণে পাব সান্ত্বনা অপার॥
দুঃখিনী জননী তুমি                দুঃখিনী তনয়া আমি
দুখিনীর দুঃখ ব্যথা বোঝ মা আমার।
সামান্য হলেও তবু                উপেক্ষা করনি কভু
আজ দুঃখ-নিবেদন লও অশ্রুধার॥

.                *****************                 

.                                                                                             
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
দেব বিসর্জ্জন
কবি ইন্দুবালা ঘোষ

ভাগিরথী আনন্দেতে গে’ও নাক গান।
.        তিতি কত অশ্রুনীরে
.        এসেছি তোমার তীরে
করিতে আমরা আজ দেব বিসর্জ্জন।
তব তীরে রেখে যেতে সর্ব্বস্ব রতন॥

রোধ, গগনের দ্বার দিগঙ্গনাগণ।
.        এই শোক অশ্রুজল
.        পশে যদি নভস্তল
নিবাতে যে পারিবে না জীবনে কখনও।
আমরা এসেছি দিতে দেব বিসর্জ্জন॥

দাও পূর্ব্বাশার দ্বার, জগত লোচন।
.        এদিন দুপুর মাঝে
.        হৃদি ভেঙ্গে শত বাজে
চলে গেছে আমাদের আজ পিতৃধন।
আঁধারে ঢাকিয়া আজ দাো এ ভবন॥

রুদ্ধ হও সমীরণ বহিওনা আর।
.        হায় এই আর্ত্তনাদে
.        পৃথিবী গগন ফাটে
দেখিতে কি আসিয়াছে এই হাহাকার।
কোমল পরাণ শোকে গলিবে তোমার॥

জাহ্নবী! মা তোর তীরে দিয়ে বিসর্জ্জন।
.        জীবনের আশা সুখ
.        লয়ে হৃদিপূর্ণ দুঃখ
কোন্ প্রাণে ফিরে আজ যাব নিকেতন।
ঝাঁপায়ে পড়িয়ে দিব, দেহ বিসর্জ্জন॥

.            *****************                 

.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
সে বেশ কোথায়
কবি ইন্দুবালা ঘোষ

.        মাগো সে বেশ কোথায়।
.        জন্ম হতে যেই বেশে
.        দেখিনু তোমায় শেষে
এবেশ দেখিয়া মাগো বিদরে হৃদয়।
.        আমাদের প্রাণ ভরা
.        নথ্ টি নাকেতে পরা
হাতীপেড়ে শাড়ীখানি কোথা আজি হায়॥

.        মাগো সে বেশ কোথায়।
.        হাতে দুটি লাল রুলি
.        সরু বেলয়ারিগুলি
সীমন্তে সিন্দুর বিন্দু কি শোভা তাহার।
.        রাজরাজেশ্বরীরূপ
.        হেরিতেছি কি বিরূপ
এবেশে তোমারে মাগো চেনা নাহি যায়॥

.        মাগো সে বেশ কোথায়।
.        সংসারে কোলাহলে
.        প্রাণ অবসন্ন হলে
তোমার স্নেহের কোলে নিতাম আশ্রয়।
.        চুড়িপরা হাতগুলি
.        দিইতে মাথায় তুলি
বরা ভয় সম ঢেলে দিতে যে হৃদয়॥

.        মাগো সে বেশ কোথায়।
.        নাহি রুলি নাহি হার
.        এবেশে তোমারে আর
দেখিতে পারণ যেন পুড়ে ছাই হয়।
.        সীমন্তে সিন্দুর বিন্দু
.        গগনে পূর্ণ ইন্দু
কে মুছাল, কেরে হেন কঠিন হৃদয়॥

.        মাগো সে বেশ কোথায়।
.        সুধু হাত সাদা শাড়ী
.        দেহটি আবৃত করি
কেরে গৃহতলে পড়ে গড়াগড়ি যায়।
.        নাই সে আনন্দ হাসি
.        অশ্রুজলে যায় ভাসি
মায়ের বদনখানি পোড়ে এ হৃদয়॥

.        মাগো সে বেশ কোথায়।
.        হায় সেই দুটি রুলি
.        সুধু সেই চুড়িগুলি
লালপেড়ে শাড়ীখানি নাই কি ধরায়।
.        কে নিঠুর শাস্ত্রকার
.        করে হেন অত্যাচার
কে দিল রে এ বিধান নির্ম্মম হৃদয়॥

.        মাগো সে বেশ কোথায়।
.        এসনমে একবার
.        দেখিতে পাব না আর
লক্ষ্মী প্রতিমার মত সে মূরতি হায়!
.        এই রে মলিন বেশ
.        দেখিতে হইল শেষ
এ বেশে হৃদয় যে বিষাদ ছড়া॥
.                        ৩০শে ভাদ্র (সম্ভবত ১৩০৫ বঙ্গাব্দ)।

.            *****************                 

.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
নহে ভুলিবার
কবি ইন্দুবালা ঘোষ

সে করুণ দৃষ্য হায় নহে ভুলিবার।
.        প্রশান্ত নয়ন দুটি
.        ঈষৎ রয়েছে ফুটি
সাঁঝের কমল মত মলিন আবার।
সে করুণ দৃশ্য হায় নহে ভুলিবার॥

ছিন্ন বিছানার পরে পারিজাতহার।
.        যেনরে প্রচণ্ড ঝড়ে
.        সুবর্ণলতারে ছিঁড়ে
ফেলিয়া দিয়াছে হরি সুষমা তাহার।
ছিন্ন বিছানার পরে পারিজাতহার॥

সে নিঠুর দৃষ্য হায় নহে ভুলিবার।
.        সে আলুলায়িত কেশ
.        এলো থেলো সেই বেশ
জীবিতের চিহ্ন মাত্র নিঃশ্বাস তাহার।
সে নিঠুর দৃষ্য হায় নহে ভুলিবার॥

যতদিন দেহে প্রাণ থাকিবে আমার।
.        সেই সে করুণ দৃশ্য
.        সেই সে নিঠুর দৃশ্য
জাগিছে জাগিবে চির ভিতরে হিয়ার।
আজীবন হায় হায় নহে ভুলিবার॥
.                        সন ১৩০৯, তরা জৈষ্ঠ।

.            *****************                 

.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
সর্ব্বস্বহারার হাহাকার
কবি ইন্দুবালা ঘোষ

.        বিনা মেঘে অকস্মাৎ
.        করে শিরে বজ্রাঘাত
চলে গেলে ধরা হতে কি সুখ আশায়।
.        দাসী পড়ে পদতলে
.        পুত্র কন্যা বাবা বলে
কাঁদিতেছে কই তুমি, ‘কোথায়’ ‘কোথায়’॥

.        জ্বরচপ্ত দেহ লয়ে
.        আছিনু ও ঘরে শুয়ে
আসিয়া অসুস্থ হায় দেখিনু তোমায়।
.        ছেলেরা বৌয়েরা ঘিরে
.        রহিয়াছে চারিধারে
রয়েছ বসিয়া রাজরাজেশ্বর প্রায়॥

.        এই যে ঔষধ খেলে
.        শ্লেষ্মা গুল উঠে গেলে
কমে যাবে বলে তুমি দিলে যে আশয়।
.        দশ মিনিটেতে শেষ
.        হয়ে গেল সব শেষ
রাণীর কোলেতে শুয়ে বালকের প্রায়॥

.        হেথাকার সব ভুলে
.        কি নিশ্চিন্তে ঘুমাইলে
পলক ফেলিতে তর সহিলনা হায়।
.        হাহাকার অশ্রুজলে
.        কঠিন পাষাণ গলে
গলিলনা আজ শুধু তোমার হৃদয়॥

.        কি দোষে কি রোষে হেন
.        নিঠুর হয়েছ কেন
তুমিত কোমল অতি নিঠুর ত নও।
.        কওগো একটি কথা
.        ঘুচাও মনের ব্যথা
ও কমল আঁখি তুলে একবার চাও॥

.        দাসীর মিনতি রাখ
.        একবার চেয়ে দেখ
একটি আশ্বাসবাণী বারেক শুনাও।
.        কি হল যে না জানিতে
.        চলে গেলে আচম্বিতে
এই কি তোমার ওগো যাবার সময়॥

.        বুখ ফেটে যায় যেরে
.        পারি না পারি না ওরে
তোমাহারা হয়ে রব কেমনে ধরায়।
.        তুমি যে অমূল্য নিধি
.        দগ্ধ ভাগ্যে কেন বিধি
দিয়ে কেড়ে নিলে কেন হইয়ে নির্দ্দয়॥

.        যদি করে’ থাকি দোষ
.        ক্ষমা কর ভুলে রোষ
চিরসাথী আমি যে গো হাত ধরে নাও।
.        যেওনা যেোনা ফেলে
.        চাও ওগো মুখ তুলে
জানিনা কিছু যে আমি, চাও ফিরে চাও॥

.        জানিনা কেমন করে
.        ফেলিয়া পালাবে মোরে
আমি আগে যাব চির ছিল এ আশয়।
.        হায় হায় ভগবান
.        কঠিন পাষাণ প্রাণ
কাছে বসি শেষ দৃশ্য দেখিলাম হায়॥

.        তবুত গেলনা দেহ
.        তোমার জীবন সহ
শত বজ্রাঘাতে বুক ভেঙ্গে গেল হায়।
.        কি আগুন জ্বেলে দিলে
.        হায় এই শোকানলে
পুড়িবে হৃদয় চির জ্বলন্ত শিখায়॥

.        তোমারেগো হারাইয়ে
.        কেমনে নিশ্চিন্ত হয়ে
কেমনে আবার বল বাঁধিব হৃদয়।
.        শত-সুখ-শান্তি-ভরা
.        ছিলত তোমার ধরা
কোন দুঃখে চলে গেলে হইয়ে নিদয়॥

.        ছেলেরা পাগল পারা
.        বৌয়েরা যে আত্মহারা
মেয়েরা তোমার ওই কাঁদিয়া লুটায়।
.        “ভেবু” “দুলু” “ভুলু” সব
.        তুলিতেছে হাহারব
কেমনে নিশ্চিন্ত হয়ে ভুলিলে সবায়॥

.        বড় স্নেহশীল ছিলে
.        কি পেয়ে গো ভুলে গেলে
দেখিয়া এ দৃশ্য হায় প্রাণ ফেটে যায়।
.        পূর্ণিমাতে অন্ধকার
.        হয়ে গেল চারিধার
জ্বলিবেনা আর আলো এ জীবনে হায়॥

.        নিরাশার অন্ধকারে
.        বুক ভরা হাহাকারে
জীবনের দিন এবে কাটিবে আমার।
.        তুমি যে সর্ব্বস্ব-সার
.        তোমাকে হারায়ে আর
কেমনে বাঁধিব প্রাণ বল একবার॥

.        তোমার এ শূন্য ঘরে
.        শূন্য হায় এ মন্দিরে
কেমনে রহিব বেঁচে কিসের আশায়।
.        তুমি মহামানী ছিলে
.        কি সম্মানে চলে গেলে
প্রতাপে ছিলে এ ভবে রাজ্যেশ্বর প্রায়॥

.        চালাতে বলাতে তুমি
.        তাই চলিতাম আমি
কত যে অক্ষম আমি কে বুঝে ধরায়।
.        মধ্যপথে অবহেলে
.        দাসীরে ফেলিয়া গেলে
চিরসাথী আজ কেন ভুলে গেলে হায়॥

.        শু’য়ে তব পদতলে
.        পুত্র কন্যা লয়ে কোলে
ধরা হতে লব চির অন্তিম বিদায়।
.        এই সাধ ছিল মনে
.        পূরিলনা এ জনমে
দগ্ধ এ ভাগ্যেতে মোর কি বলিব হায়॥

.        তুমি মহা মহীয়ান্
.        তুমি যে গো কীর্ত্তিমান্
যশস্বী তুমি যে অতি কোমলতাময়।
.        এসেছিলে সুখে ভেসে
.        চলে গেলে হেসে হেসে
মৃত্যুযন্ত্রণাও তুমি নিলে না ধরায়॥

.        পুণ্যাহ এ মাঘ মাসে
.        সপ্তদশ দিবসেতে
বাণীবিসর্জ্জন মহা উত্সবের মাঝ।
.        ইচ্ছামৃত্যুসম সুখে
.        চলে গেলে দেবলোকে
ফুরাল তোমার সব এ ধরার কাজ॥

.        সেথা পিতামাতাকোলে
.        শান্তিতে চলিয়া গেলে
পড়িল মোদের শিরে আজ শত বাজ।
.        সেথা পুত্রকন্যাকোলে
.        হারানিধি সব পেলে
বল একবার শুধু তৃপ্ত তুমি আজ॥

.        সয়ে এ বিরহ ব্যথা
.        স্মরিয়া তোমার কথা
জীবনের দীর্ঘ দিন কাটায়ে আবার।
.        দাঁড়াব চরণতলে
.        তুলে নিও দাসী বলে
সে আশ্বাসে বাঁধি বুক পাব পুনর্ব্বার।

.        এইটুকু সেবা নিতে
.        একটু ঔষধ দিতে
দিলেনা কারেো তুমি একটু সময়।
.        রহিল এ ব্যথা মনে
.        ঘুচিবেনা এ জনমে
শীতল ষষ্ঠীর নিশি হারাণু তোমায়॥
.                                সন ১৩৩১, ৬ই জৈষ্ঠ।

.            *****************                 

.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
প্রয়াণে
কবি ইন্দুবালা ঘোষ

বাণী বিসর্জ্জন আজ ধরেনি উত্সবে ভরা।
শীতল ষষ্ঠীর নিশি জোছনাপূর্ণিত ধরা॥
এহেন পুণ্যাহ দিনে বিনা মেঘে অকস্মাৎ।
করিলে কি মহাযাত্রা ফেলে শিরে শত কাজ॥

দারুণ শোকের ভরে অবশ মূর্চ্ছিত প্রায়।
ঘেরিয়া দেহটি তব পড়ে হায় বিছানায়॥
দেখিনু বিস্ময়ে স্তব্ধ দেখিলাম আঁখি মেলে।
শ্বেতাশ্ব যোজিত রথ দাঁড়াইল পদমূলে॥

চলে গেলে হাসিমুখে এই জীর্ণ দেহ ফেলে।
চাহিলেনা ধরাপানে আত্মীয় স্বজন বলে॥
অপ্সরা কিন্নরী আসি শুভ আবাহন করে।
পরাল অম্লান শ্বেত বসন ভূষণ ধীরে॥

ললাটে চন্দন দিল গলে দিল ফুলহার।
শ্বেত বাস উত্তরীয় পরাল তোমায় আর॥
ফুলের টোপর শিরে শ্বেত বাধা দিল পায়।
জ্যোতির্ম্ময় মূর্ত্তি ধরি শোভিলে কি সুষমায়॥

মেঘস্তর করি ভেদ চলে রথ ধীরে ধীরে।
আসিয়া দাঁড়াল রথ নন্দন কানন পরে॥
পিতা মাতা আসি তব নিলেন আদরে তুলে।
আশীর্ব্বাদ দিয়া সুখে করিল তোমাকে কোলে॥

প্রণাম করিয়া সুখে তুমি তাঁহাদের পায়।
ক্ষণেক আলাপ করি তাঁরা যান নিজালয়॥
প্রথমা সহধর্ম্মিনী আসিল আনন্দ ভরে।
প্রণাম করিল পদে, হৃদয়ে লইলে তারে॥

অতৃপ্ত হৃদয় দুটি বহু প্রতীক্ষার পরে।
অনন্ত মিলনে আজ মিলে গেলে একেবারে॥
“হেমলতা” “সু” “হিরণ” “কিরণ” আসিয়া ধীরে।
প্রণাম করিয়া সবে পদধূলি লয় শিরে॥

আসিল “সমীরচাঁদ” সেই মিষ্ট হাসি হেসে।
প্রণাম করিয়া ধীরে বসিল কাছেতে ঘেঁষে॥
“অভয়” “অর্জ্জুন” দু’টি দাদামনি বলে আসি।
প্রণমিয়া কোলে বসে হাসিল মধুর হাসি॥

পরিরাণী এলহাসি নাচায়ে অলক তার।
বসিল পাশেতে তব কি মুরতি সুষমার॥
আমার জনক আসি, আশীর্ব্বাদ দিল আর।
কি সুখে ভাসিল প্রাণ সেথাকার সবাকার॥

চেনা ও অচেনা সেথা কত যে আসিল হাসি।
কত পরিচয় যেন কত ভালবাসা বাসি॥
হইলে আনন্দমগ্ন হেথাকার সব ভুলে।
কাটিল মোহের ঘোর চাহিলাম মুখ তুলে॥

দেখিলাম হায় হায় হায়, সব অন্ধকার।
চলে গেছে ধরা হতে কভু আসিবেনা আর॥
কি করে দিইব ছাড়ি কি করে ধরিব প্রাণ।
হৃদয় ভরিয়া শুধু উঠিতেছে শোকতান॥

যা দেখিনু এই যদি সত্য হয় ভগবান্।
অনেক সয়েছি আমি সহিবে আমার প্রাণ॥
বল শুধু একবার বলগো দেবতা স্বামী।
সুখ-শান্তি-আশাপূর্ণ তৃপ্ত কি হয়েছ তুমি॥

দীনা আমি দীনভাবে বহিব জীবন-ভার।
করিয়া নিয়তি পূর্ণ জীবনের পরপার॥
যাব যবে ; একবার চেও শুধু আঁখি তুলে।
মনে করো একবার চির সহধর্ম্মিনী বলে॥
.                        ২১শে জৈষ্ঠ। (১৩৩১)

.            *****************                 

.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর