কবি ঈশিতা ভাদুড়ীর কবিতা যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে। www.milansagar.com
|
বিবাহ-নদীর পাড়ে
ঈশিতা ভাদুড়ী
সত্তর ইঞ্চি ব্যবধানে রাত পার হলো গতকাল | বিবাহ-নদীর পাড়ে
কালো মেঘগুলি নীরব ভূমিকায় |
কখনো বৃষ্টি পড়তেও পারে অপেক্ষা | জলপরী আসে যদি কোনো |
দুপাশে কাঁটা-ঝোঁপে যদি জেগে ওঠে অন্য বর্ণমালা-----
নীল পাখিরা খুঁজে নেবে হয়তো জলসাঘর কোনো----
তখন হয়তো রাত পুণরায় কুসুম-শিহরণে |
. *************************
. সূচিতে...
মিলনসাগর
রোদ্দুর-দুপুর বুড়ির চুলে
ঈশিতা ভাদুড়ী
সকাল দুপুর বিকেল সেদিনের সেই দুরন্তবেলা
আকাশে পায়রা চুপি-ছাদ আমাদের ফিসফাস
সেই কৈশোর-দুপুর কৎবেল চুপিচুপি আর
চুকিৎকিৎ উঠোনে কাটাকুটি কিশলয়বেলা
সেদিনের সেই স্বপ্ন-হলুদ
কিশোরী দুচোখ অবাক বিস্ময়ে
আজ সন্ধে-তারা তাকিয়ে দেখে সরল সকাল
তখন রোদ্দুর-দুপুর হেঁকে যেতো বুড়ির চুলে----
. *************************
. সূচিতে...
মিলনসাগর
অতঃপর
ঈশিতা ভাদুড়ী
রাত্রির শেষ নেই
সংযোজনা ও ভাঙচুরে
রাত্রি ফিরে আসে বারবার
স্বপ্নের উত্তাপে
কিভাবে জ্বলে ওঠে তীক্ষ্ণ আগুন
কিভাবে যেন বয়ে যায় নদী
চাঁদ-ফাটা-মুক্তো হেঁটে যায় স্রোত বরাবর
অথবা ধোঁয়া-ধোঁয়া রাত্রিকে ছুঁয়ে যায় তীব্র কুহক
এইভাবে সারারাত বসন্ত ও শীত-----
অতঃপর রাত্রির ঘুম পায়, আর, কাক ডেকে ওঠে
. *************************
. সূচিতে...
মিলনসাগর
স্মৃতি
ঈশিতা ভাদুড়ী
( হারিয়ে যাওয়া ক’জনের জন্য )
স্মৃতির মধ্যে ক’টি মুখ ভাসে,
স্মৃতির জন্যে অশ্রুজল বুকে |
. *************************
. সূচিতে...
মিলনসাগর
প্রতীক্ষা
ঈশিতা ভাদুড়ী
প্রহর কাটে প্রতীক্ষার-------
নিস্তব্ধ রাত, নিঝুম সন্ধে |
জবাব পাই নি চিঠির ;
চিঠি মানে গোপন শব্দ ক’টি |
. *************
. সূচিতে...
মিলনসাগর
সরলতা
ঈশিতা ভাদুড়ী
সরলতা ছুঁয়ে যায় কিশোরীর চোখ,
সরলতা রয়ে যায় একটি ফুলে |
. *************
. সূচিতে...
মিলনসাগর
বৃষ্টি
ঈশিতা ভাদুড়ী
বৃষ্টি মানে এক পশলা সুখ
বৃষ্টি মানে প্রবল অশ্রুপাত |
. *************
. সূচিতে...
মিলনসাগর
নীরবতা
ঈশিতা ভাদুড়ী
গোপন স্পর্শটুকু পাওনা যার,
সে জানে নি’গ্রহীতা হ’তে ;
তাই নীরবতা এসে দাঁড়ায় মধ্যিখানে |
. *************
. সূচিতে...
মিলনসাগর
মৃত্যুপূর্বে
ঈশিতা ভাদুড়ী
ঢেউ এসে ভেঙ্গে যায় গদতলে,
তিনি সীমান্তে দাঁড়িয়ে তখন |
. *************
. সূচিতে...
মিলনসাগর
মৃত্যু
ঈশিতা ভাদুড়ী
( প্রয়াতঃ যুথিকা সরকার শ্রীচরনেষু )
সারারাত যুদ্ধের পর সে যায়
পাথর ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে নির্জন সমুদ্রতীরে ;
সেখানে তার জন্যে অপেক্ষায় আছে
জ্বলন্ত কাঠ, আর শোকার্ত ঢেউ দু’চারটে |
. *************
. সূচিতে...
মিলনসাগর
হয়তো নয়
ঈশিতা ভাদুড়ী
হয়তো ভালবাসাই নয় আসলে
এতদিন তাই ভেবে বসে আছি
সে যাইহোক্, এখনো
দু’একটা জ্যোত্স্না রাত
ভুলে যাবো ভেবেও
বুকের মধ্যে নিঃশব্দ স্মৃতি আজও
অমীমাংসিত স্বপ্নের মত
সে যাইহোক্, তবু
হয়তো ভালবাসাই নয় আসলে
. *************
. সূচিতে...
মিলনসাগর
স্মৃতি
ঈশিতা ভাদুড়ী
নিয়নবাতিতে কোলকাতা ফেলে আমি
অনেক দূরে চলে যাব,
আমি যাব
পাটালিত্রে অথবা কাঞ্চনজঙ্ঘাতে-----
কোলকাতার অলিতে গলিতে তুমি,
তোমার স্মৃতি |
হয়তো এখনো আমরা দু’জনে
কোনো কথা না বলে সারাটা পথ
হেঁটে যাই
হয়তো এখনো কোনোদিন তুমি
কে. সি. দাসের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকো
উদ্ ভ্রান্ত প্রতীক্ষায় |
হয়তো এখনো মৌলালির মোড়ে
হঠাৎ দেখা হয়ে যায় আমাদের |
হয়তো এখনো----
তুমি, তোমার স্মৃতি
নিয়নবাতিতে কোলকাতা ফেলে
আমি চলে যাব
পাটালিপুত্র অথবা-------
. *************
. সূচিতে...
মিলনসাগর
গোপন মুখছবি
ঈশিতা ভাদুড়ী
ভাল না বাসলেই হয়
সেই কৃষ্ণচূড়া ফুল আর গোপন মুখছবি
ভাল না বাসলেই হয়
বুকের মধ্যে একশ একটা নীল পাপড়ি
ভাল না বাসলেই হয় |
. *************
. সূচিতে...
মিলনসাগর
এই সব বনভোজনে
ঈশিতা ভাদুড়ী
অরণ্যে হৈ হৈ, সারা সকাল |
কেউ টেরি কেটে, কেউ গন্ধ মেখে অথবা সুর্মা চোখে,
কেউ চিকন শাড়ীর আঁচল গুঁজে-----
দৌড়ঝাঁপ |
ক্রমশঃ ভর দুপুরবেলা ; গড়িয়ে বিকেল |
আকাশ সস্নেহে দ্যাখে নদী জুলজুল করে |
চন্দ্রমল্লিকারা অবাক হয়ে দোলে, নাচে, হয়তো গানও-----
এই সব বনভোজনে কোন নারীর কখনো একা
কাউকে গান শোনাতে নেই ; কখনো অন্যমনস্কভাবে
জুঁই-মাখা হাসি হাসতে নেই | কোন কোন
নারী যেমন অহঙ্কারী হয়ে সমস্ত স্বর ঘাসের
মধ্যে মিশিয়ে দেয়, সেরকমও করতে নেই |
তাহ’লেই কেউ কেউ ময়ুরের পেখম দেখে নেয় ;
কেউ কেউ জরি-বোনা-আভাস এবং
আতর-মাখা-গন্ধ
পেতে চায় |
এরকম কোনো বনভোজনে কারো স্যান্ডেলের স্ট্রাপ
অথবা বুকের লকেট
ছিঁড়ে যেতে নেই |
এই সব বনভোজনে কখনো কোনো নারীকে
একা হেঁটে যেতে নেই |
. *************
. সূচিতে...
মিলনসাগর
স্মৃতি ভাঙ্গে গোপন হীরেকুচি
ঈশিতা ভাদুড়ী
স্মৃতি ভাঙ্গে তার বাঁধানো পাড়,
স্মৃতিই ভাঙ্গে ;
ভেঙ্গে যায় সব ইঁট, সব পাথুরে সিঁড়ি |
ভগ্নস্তূপে পা রেখে পুনরায়
সে ভাঙ্গে, সে ভেঙ্গে যায়
শিমূরালির নূপুর রাত অনুভবে,
ভাঙ্গে শিমূরালির স্বপ্ন-ছেঁড়া দুপুর,
দু’জোড়া ঠোঁট আবেগে |
এই রোদ্দুর আর জ্যোত্স্না মাড়িয়ে
স্মৃতি ভাঙ্গে তার সব ঢেউ |
করতল ছুঁয়ে
স্মৃতি ভেঙ্গেছে তার একমাত্র গোপন হীরেকুচি |
স্মৃতি ভাঙ্গে | স্মৃতিই ভাঙ্গতে পারে |
. *************
. সূচিতে...
মিলনসাগর
নির্বিকার চিলেকোঠা
ঈশিতা ভাদুড়ী
নির্বিকার চিলেকোঠার ঘুলঘুলি
দিয়ে
ছিটকে আলা একটুখানি আশা,
অন্ধ চোখের অপলক নির্নিমেষ
চেয়ে থাকার ভঙ্গী,
সত্যবাদীর উক্তির মত প্রহসন
আর হয় না |
আমার প্রতিটি স্বেদবিন্দু দিয়ে
ঝ’রে পড়া উত্তাপ,
বেলা শেষের বিষাদ, এবং
আগামীকালের উত্তেজনার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠা,------
শেষে, নিভে যাওয়া একটি আশার আলো |
তবু এখনো
পুরানো ক্যালেন্ডারের পাতায়
ধোপার হিসেবের চিহ্ন,
বুকের বাঁদিকে নীল বিন্দুর মত প্রেম, এবং
তোমার ঘন কালো চোখ |
. *************
. সূচিতে...
মিলনসাগর
কবির জন্যে নিয়নবাতি নয়
ঈশিতা ভাদুড়ী
দু’ চারজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে
কিছুটা দূরে, ভিড়ের বাইরে |
ক, খ, এবং গ-এরা ঐ মেয়েদের
হাওয়া খেতে নিয়ে যাবে
একটু পরে---- ভিড় বাড়ে ;
নিয়নবাতিতে ধর্মতলা হুটোপুটি করে |
ক, খ, এবং গ-এরা -----
কবি সরে যায় দূরে |
কবির জন্যে নিয়নবাতি নয় |
নিরঙ্কুশ চাঁদের আলো আর
বাউন্ডুলে স্বপ্ন------
ওটুকুর জন্যেই কবি জেগে থাকে ||
. *************
. সূচিতে...
মিলনসাগর
ঝড় এবং রোদ
এই কবিতাটি কবি ঈশিতা ভাদুড়ীর প্রথম প্রকাশিত কবিতা।
কবিতাটি প্রকাশিত হয় আশ্বিন ১৩৮৭ বঙ্গাব্দে (সেপ্টেম্বর ১৯৮০), ধ্রুপদী সাহিত্য মাসিক "গোধূলি মন" পত্রিকার পঞ্চম বর্ষ,
দশম সংখ্যায়। পত্রিকাটির সম্পাদক অশোক চট্টোপাধ্যায়। সম্পাদকীয় কার্যালয় - নতুনপাড়া, চন্দননদর, হুগলী। কলকাতা
কেন্দ্র - ৩৩/৬ জি নাজির লেন, কলকাতা ৭০০০২৩। দিল্লী অফিস - সেক্টর ৮/নং.৮০৪, আর. কে. পুরম, নয়া দিল্লী ১১০০২২।
আমরা সেই পত্রিকা থেকে কবিতাটির স্ক্যান করা ছবি, ঠিক যেমন ছাপা হয়েছিল, এখানে উপস্থাপন করলাম।