কবি ঈশিতা ভাদুড়ী - সমকালের বাংলা সাহিত্যাকাশে একটি অতি পরিচিত নাম। তাঁর জনপ্রিয়তার
পাশে পাশে, বিভিন্ন সময়ে তিনি বিঙিন্ন পুরস্কারেও ভূষিতা হয়েছেন যাঁর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা অকাদেমি
পুরস্কার অন্যতম।   

কবির জন্ম দক্ষিণ কলকাতায়। তাঁর শিশুবেলা এবং কিশোরীবেলা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে কেটেছে।
কর্মসূত্রে বাবা শিবেন্দ্রনাথ ভাদুড়ীকে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হোতো, কখনও রাঁচী, কখনও কল্যাণেশ্বরী,
কখনও কোচবিহার, কখনও বহরমপুর, কখনও বারাসত, কখনও দুর্গাপুর কখনও বা ঝাড়গ্রাম। বাবার সঙ্গে
সঙ্গে মা সুনন্দা দেবী এবং কবিরা তিন বোন মিলে সারা পশ্চিমবঙ্গ ঘুরে বেড়িয়েছেন। কাজেই পশ্চিমবঙ্গের
বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন স্কুলে কবির লেখা পড়া। দু-তিন বছর অন্তর নতুন স্কুল নতুন নতুন বন্ধু। কবির কলেজ-
জীবন কলকাতায় কেটেছে। বর্তমানে কবি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় সিনিয়র আর্কিটেক্ট পদে নিযুক্ত রয়েছেন।

এই স্বনামধন্য কবির আরও একটি পরিচিতি আছে!
কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচী ঈশিতা ভাদুড়ীর প্রমাতামহ!
তাই হয়তো কবিতার জগতে তাঁর সহজ চলাফেরা ও খানিকটা জন্মগত অধিকারও!

কবির নিজের কথায় - “
সত্যি কথা বলতে কি, প্রমাতামহ  যতীন্দ্রমোহন বাগচী যে রব্রীন্দ্রোত্তর
যুগের অন্যতম উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক কবি ছিলেন, সেই সত্যটি বুঝতে আমার বেশ কিছু সময় লেগেছিল।
অনেকদিন অবধি  
যতীন্দ্রমোহন  আমার  কাছে একটি নাম ছিলেন মাত্র আর স্কুল-পাঠ্য বইতে-পড়া
কবিতার রচয়িতা – ‘বাঁশবাগানের মাথার ওপর চাঁদ উঠেছে ওই। মাগো আমার শোলোক-বলা কাজলা দিদি
কই অথবা ‘ওই যে গাটি যাচ্ছে দেখা আইরি খেতের আড়ে। প্রান্তটি যার আঁধার করা সবুজ কেয়াঝাড়ে’,
...দিদিমা এবং  মায়ের কাছে শোনা গল্পই হোক অথবা প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্ঠে ‘মাগো আমার
শোলোক-বলা কাজলা দিদি কই’-ই হোক অথবা গৌরী ঘোষের কন্ঠে ‘পায়ের তলায় নরম ঠেকল কী। আস্তে
একটু চল না ঠাকুরঝি’-ই হোক কে যে মন্ত্রমুগ্ধের মত আমাকে টেনে নিয়ে গেল ধীরে ধীরে
যতীন্দ্রমোহনে!

তাঁর একাধিক কবিতা আমার প্রিয়। কত নাম বলব!

যেহেতু আমি তাঁর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি আমি অবশ্যই গর্ব অনুভব করি। এবং যেহেতু আজ আমার
পাশে তিনি শারীরিক ভাবে নেই তাই আমি বেদনা অনুভব করি।”

কবি ঈশিতা ভাদুড়ীর কবিতা লেখার শুরুটাও খুব সুন্দর।
“বাবা রেকর্ড কিনতেন প্রচুর। সেই রেকর্ডে যখন কাজী সব্যসাচী বা শম্ভু মিত্র বা দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়  
বা উৎপল দত্তের কন্ঠে একে একে
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়,  শামসুর রাহমান,  সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আবৃত্তি হত,
হয়তো তখনই মনের মধ্যে কবিতার বীজ বপন হয়ে গিয়েছিল।

তবে কবিতা যে কবে কখন  এলো সাল-তারিখ মনে নেই। কিভাবে এলো সে কথাও স্পষ্ট করে বলতে পারি
না। একটা কথা অবশ্য না বললে ভুল হবে – পাঠ্যপুস্তকের বাইরে আমি প্রথম কবিতার বই পড়ি
পূর্নেন্দু পত্রীর ‘তুমি এলে সূর্যোদয় হয়’। এবং এই বইটি পড়েই রক্তের মধ্যে কবিতার শিরশিরানি অনুভব
করেছিলাম।

তবে একথাও ঠিক আমি কিন্তু কবিতা লিখবো ভেবে কবিতা লিখতে শুরু করি নি। কবিতা-চর্চা আমার
পেশাও নয়। আমাকে একসময় প্রতিদিন ভিড় ট্রেনে বাসে করে অফিস করতে হয়েছে। এইসব কারণে এবং
আমার স্বভাবগত কারণেও আমার কবিতা লেখার কোনো নির্দিষ্ট সময় অথবা কোনো নির্দিষ্ট আসনও নেই।
কত কবিতা ট্রেনে লেখা হয়েছে, কত কবিতা এলোমেলো উড়ে গেছে। কবিতা লিখবো ভেবে কবিতা লেখা
খুব একটা হয় নি আমার। তীব্র মন-খারাপের মধ্যে দিয়ে যখন পথ চলি, তারই মধ্যে  কখনও হয়ত এসে
যায় কবিতা। কখনও দিনের পর দিন মাসের পর মাস কোনো কবিতাই আসে না। সেই না লিখতে পারার
যন্ত্রণাও খুব। এমনও হয়েছে রাস্তায় হাঁটছি, ট্রেনে পাশের মহিলাদের ঝগড়া শুনছি, হঠাৎই কোনো একটা
লাইন ভাসতে ভাসতে এলো এবং সে থেকেই গেল মাসের পর মাস একা। তারপর হয়তো বাকি লাইনগুলি
একসঙ্গে কোনো একদিন।”

তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘শব্দে রক্তে আঙুলে’ পড়ে নবনীতা দেব সেন দেশ পত্রিকায় লিখেছিলেন ---
“ঈশিতার কবিতায় ঠুমকো চমক লাগানোর চেষ্টা বিন্দুমাত্র নেই। ঈশিতা প্রকৃতই কবি। তাঁর আছে সূক্ষ্ম
জীবনবোধ, সুকুমার শিল্পরুচি, যথার্থ শব্দটি বেছে নেওয়ার ক্ষমতা, চিত্রকল্প নির্মাণের শক্তি আর কোনখানে
কবিতা শেষ করে ফেলতে হবে সেই কাণ্ডজ্ঞান ; আছে পরিশ্রুত আবেগের ব্যঞ্জনাময় সংযত প্রকাশ আর
কল্পনাকে কবিতার কাজে ইচ্ছেমত ব্যবহার করা।  এসব  মিলিয়ে ঈশিতা সংশয়াতীতভাবে “কেউ কেউ
কবি”র সংকীর্ণ বেড়ার মধ্যেই ধরা পড়েন।”

সন্তোষ কুমার ঘোষ  ‘শব্দে রক্তে আঙুলে’ পড়ে বলেছিলেন  "তোমার অনুভূতি তো খুব গভীর, প্রকাশও
ভীষণ সূক্ষ, তোমার ভাষা অভিধান ছাড়িয়ে চলে গেছে।"

কুড়ি বছর পরে “এবং হারিঞ্জা ফুল” পড়ে প্রণব চট্টোপাধ্যায় লিখলেন “ঈশিতা ভাদুড়ী এসময়ের বেশ
পরিচিত কবি। তাঁর কবিতা ভীড়ের মধ্যে হারায় না। আমাদের চারপাশের দুনিয়াদারিতে আশ্চর্য সব সুর
বাজিয়ে তোলার প্রক্রিয়াতে থাকে কবি ঈশিতা ভাদুড়ী, বৃষ্টির পর ঝকঝকে রোদ্দুরের মতো।


প্রিয় কবিদের মধ্যে রয়েছেন
কবিতা সিংহ,  শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং আরো অনেকে। কবির প্রথম
প্রকাশিত কবিতার নাম ‘ঝড় এবং রোদ’ গোধূলি মন পত্রিকায় ১৯৮০ সালে অক্টোবর মাসে প্রকাশিত হয়।
পত্রিকাটি অশোক চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় চন্দননগর থেকে পঞ্চাশেরও বেশি বছর ধরে প্রকাশিত হচ্ছে।

কবির প্রাপ্ত পুরস্কার ও সম্মানের মধ্যে রয়েছে ২০০৫ সালে  
কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর হাত থেকে,
পশ্চিমবঙ্গ বাংলা অকাদেমি (অনিতা-সুনীলকুমার বসু) পুরস্কার, ২০০৪ সালে তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত
থেকে, উপলব্ধিকথা পত্রিকার কবি গৌরাঙ্গ ভৌমিক স্মৃতি পুরস্কার প্রভৃতি। ২০০৮-এ বেজিং-এ (চীন)
ভারতীয় দূতাবাস আয়োজিত অনুষ্ঠানে একক কবিতা পাঠ। এ ছাড়াও বাংলাদেশে জাতীয় কবিতা উৎসবে
ও বিভিন্ন প্রান্তে  অন্যান্য একাধিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছেন।

কবির প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে “শব্দে রঙে আঙুলে” (কলকাতা বইমেলা ১৯৮৫), “পুণর্জন্ম” (মে
১৯৮৬),  “আগামী” (কলকাতা বইমেলা ১৯৮৫), “একটা আকাশ একটা চাঁদ” (মে ১৯৮৭), “তোমার চিবুকে
ঈশ্বর” (কলকাতা বইমেলা ১৯৯০), “তুমি মৃত্তিকা হও” (কলকাতা বইমেলা ১৯৯৫), “এবং হারিঞ্জা ফুল”
(কলকাতা বইমেলা ২০০১), “আজ অরণ্যপ্রবাস” (মে ২০০১), “অথবা ব্রহ্মকমল” (কলকাতা বইমেলা ২০০২),
“কাঠগোলাপেও মৌমাছি” (ডিসেম্বর ২০০৪), “ইউক্যালিপটাস-গন্ধ” (কলকাতা বইমেলা ২০০৫), “দুই হাতে
জলরং” (কলকাতা বইমেলা ২০০৫), “প্রেম ও বিরহের কবিতা” (একুশে গ্রন্থমেলা ঢাকা ২০০৬), “মালাইচাকি”
(ছড়া, একুশে গ্রন্থমেলা ঢাকা ২০০৬), “ভলোবাসা জামরঙ” (কলকাতা বইমেলা ২০০৯) প্রভৃতি। কলকাতা
বইমেলা ২০০৮ এ প্রকাশিত হয় সোমা রায়ের করা, তাঁর কবিতার ইংরেজী অনুবাদ “
Marigold Moments”।

একসময় ‘ঠুংরী’ নামে একটি কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। দীর্ঘকাল পরে পুনরায় একটি ওয়েব-ম্যাগ
সম্পাদনা করছেন, নাম ‘ঠুংরী’। এছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গ্রন্থ সম্পাদনাও করেছেন।

তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ ও সম্পাদিত পত্রিকার তালিকা দেখতে
এখানে ক্লিক করুন

১৪.৯.২০১৭ তারিখে সাতকর্ণী ঘোষ সম্পাদিত, "সারঙ্গ" পত্রিকার তরফে তাঁকে "কবি দিনেশ দাস স্মারক
সম্মান ও স্বর্ণকলম সাহিত্য সম্মান অর্পণ উপলক্ষে স্মারক সম্মান"-এ ভূষিত করা হয়।


আমরা
মিলনসাগরে কবির কবিতা প্রকাশিত করার অনুমতি পেয়ে আনন্দিত এবং উত্সাহিত বোধ করছি।
আমাদের সাইটে তোলার জন্য কবিতাগুলি কবি নিজে নির্বাচিত করে পাঠিয়েছেন। তাঁর জন্য আমরা তাঁকে
জানাই অশেষ কৃতজ্ঞতা।




কবি ঈশিতা ভাদুড়ীর মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন   
কবির ফেসবুক পাতা -
https://www.facebook.com/ishita.bhaduri.9        
কবির নিজস্ব ওয়েবসাইট -
http://www.ishitabhaduri.com       
কবির ব্লগ “ঠুংরী” - http://thumrimag.blogspot.com    


কবির সঙ্গে যোগাযোগ -
ইমেল -
bhaduri.i@gmail.com  
চলভাষ - ৯৪৭১৮৬৫২১১, ৯৪৩৩৪১৭২১৪  

উত্স : কবি ঈশিতা ভাদুড়ীর সাথে আমাদের, ইনটারনেটের মাধ্যমে পত্রালাপ।


আমাদের ই-মেল -
srimilansengupta@yahoo.co.in     


এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ২০১১
পরিবর্ধিত সংস্করণ - ১৫.৯.২০১৭  


...