কবি জগদ্দল বাসিনীর কবিতা
*
স্ত্রীশিক্ষার ফল
জগদ্দল বাসিনী

অজ্ঞান শৃঙ্খল পাশে বদ্ধ বামাগণ!
জ্ঞান লাভে সে বন্ধন করহ ছেদন।
নিয়োজিত কর মন বিদ্যাধন আশে,
নিষ্কৃতি পাইবে যাহে কুসংস্কার পাশে।
তোমাদের কাছে থাকি ভারত কুমার,
শিক্ষা পাবে অবিরত বিবিধ প্রকার।
বাল্যকালে শিশুগণ মাতার যতনে,
পালিত হয়েন তাঁর সস্নেহ নয়নে।
সেই সে সুহৃদ্ মাতা হইয়া শিক্ষিত,
পুত্রের কোমল মন করেন বিনীত।
উন্নতি সাধয়ে পুত্র নিকটে থাকিয়ে,
নাশয়ে কু আশাগণ জ্ঞানলোক দিয়া।
শিক্ষা-কার্য্যে বামাগণ পরিণতা হলে,
শুভকর ফলচয় অবিরত ফলে।
কুসংস্কার পাশে বদ্ঝ ভারতের বালা,
সহিতে না হবে আর এই সব জ্বালা।
বৃথা কার্যে ব্যস্ত হয়ে কাটে বাল্যকাল,
অবিদ্যা রাক্ষসী গ্রাসে হইয়ে করাল।
শিক্ষা তরবারী লয়ে ছেদহ রাক্ষসী,
সুকার্য্যে নিযুক্ত হয়ে নাশ মনোমসী।
পিটুলি চিত্রিত করি ভূতলে রাখিয়া,
অর্চ্চন করহ তাহা পুষ্পাঞ্জলি দিয়া।
সে কার্য্যে কি ফল বল বৃথা দিনপাত?
চক্ষু নাহি মিলে যথা জগতের নাথ
জ্ঞান রজ্জু সংযোজিত করিলে হৃদয়ে,
বাঁধিতে পারিবে দুষ্ট মোহ দুরাশয়ে।
অজ্ঞান প্রভাবে নারী পশুর আকার,
মজিয়াছে মজায়েছে কত পরিবার।

বিদ্যানিধি উপার্জ্জিলে,                জ্ঞান রত্ন তাহে মিলে,
অমূল্য রতন বলি যায়।
বাড়য়ে ধর্ম্মের বল,                লভি পরমার্থ ফল,
হয় নর নির্ম্মল-হৃদয়॥
অনেকেই মনে করে,                বিদ্যাত অর্থের তরে,
সংসার নির্বাহ যাতে হয়।
করি অর্থ উপার্জ্জন,                পালি বন্ধু পরিজন,
নিজ সুখ ভাগ্য মানি লয়॥
এই অপরূপ ভ্রমে,                ভ্রমে সবে বৃথা ভ্রমে,
সার ভ্রমে অসারেতে আশ।
সর্ব্বস্ব হইলে ধন,                ধনির সন্তান গণ,
বিদ্যাতে না করিত প্রয়াস॥
পঙ্কজ সলিলে থাকে,                কণ্টকে মৃণাল ঢাকে
ফুল তার কমল নিকর।
নিশিতে নিদ্রিত থাকে,                প্রস্ফুটিত করে তাকে,
কেবা বল বিনা দিন-কর?
সেইরূপ বিদ্যালোকে,                প্রস্ফুটিত হয় লোকে,
ঘোর মোহ নিদ্রা পরিহরি।
বিদ্যা দেবী কর দিয়ে,                জ্ঞানালোক বিকাশিয়ে,
নাশ করে অজ্ঞান সর্ব্বরী॥
সেচিলে শ্রমের জল,                জ্ঞানপদ্ম নিরমল,
দশদিক করে সুশোভন।
সুপথে ভ্রমণ করি,                জগতের শুভকরী,
সর্ব্বমতে হয় সেই জন॥
এমন বিদ্যার লাগি,                হও সবে অনুরাগী.
ভদ্র কি ইতর নর নারী।
ইহকালে কীর্ত্তি পাবে,                মনের মালিন্য যাবে,
হবে পরে মুক্তি অধিকারী॥

.        *************************  

.                                                                                               
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর