পূজা কবি জামসেদ উন্নিসা ( নমিতা চৌধুরী ও অনিন্দিতা বসু সান্যাল সম্পাদিত দামিনী কাব্য সংকলন থেকে নেওয়া )
সেদিন প্রভাতে তোমারে পূজিতে . তুলিনু পূজার ফুল মনে হোল মোর সে পূজার মাঝে . কোথায় রয়েছে ভুল ; তোমারে পূজিয়া আমি হই খুসি বুঝিতে পারিনা নিজেরে যে তুষি আমার এ পূজা পৌঁছে না তাই . তোমার চরণমূল, মোর ভুল প্রিয় পড়িয়াছে ধরা . তুলিতে পূজার ফুল।
আজি আমি তাই আনিয়াছি মোরে . তোমার চরণতলে সঁপিতে আমারে উজাড় করিয়া . আমার নয়নজলে নাই আজি মোর পূজার স্বপন রাশি রাশি করা ফুলের চয়ন আজি আমি একা নিখিল ভূবন . সকলি গিয়াছি ভুলে আজিও কি প্রিয় আমার এ পূজা . লইবে না তুমি তুলে ?
কবি কবি জামসেদ উন্নিসা ( নমিতা চৌধুরী ও অনিন্দিতা বসু সান্যাল সম্পাদিত দামিনী কাব্য সংকলন থেকে নেওয়া )
মোরে ভাল নাহি বাস তাহে নহে মোর পরাজয়, বড় করে তবু দেখিও না মোর বাহিরের পরিচয়। মোর মাঝে সখি জেগেছিল যেই মানুষ চিরন্তন, ধরার ধূলায় চেয়েছিলে যার দর করা বিশেষণ তাহারে তুমিতো খুঁজিলেনা কভু, চাহিলে না কোন দিন দুঃখ দৈন্যে ভরে দিলে তারে ছিল যাহা অমলিন। দুনিয়ায় যার নাই পরিচয় তব কাছে তার মূল কেন চেয়েছিনু, কেমন করিয়া হয়েছিল অত ভুল ?
সে ভুল আজিও রয়েছে অটুট হয় নাই তার শেষ, তোমার মাঝারে হয়তো বা আজি নাই তার কোন লেশ, হয়তো বা তুমি গেছ ভুলে তারে, তোমার দুয়ার হতে ফিরে গেছে কোন অভাগা পথিক জীবনের কাল সোঁতে। হয়তো বা আজি পড়েনাতো মনে কাহার করুণ আঁখি বিদায়ের ক্ষণে জানাইয়া গেল তার যাহা ছিল বাকি। মানুষেরে তুমি বাস নাই ভাল, বোঝ নাই তার ব্যথা ভুলিয়াছ তাই নিঃশেসে আজি অতীত দিনের কথা।
জানি আমি তুমি গেছ ভুলে সব ; তোমার ভিখারী সেই তোমারে আজিকে করিয়াছে জয়,--- বিরহী কবি সে এই। চোখের ভাষায় খোঁজনাই যারে আজি তারে এই খানে, লিখে রেখে যাব কাগজের বুকে আমার বেদন গানে, লিখে রেখে যাব আমার মানসী বাসিতাম যারে ভালো কেমন করিয়া নিবাইয়া দিল জীবনের যত আলো, সুন্দর মাঝে লুকাইয়াছিল কোন সে পাষাণ প্রাণ, কাহার লাগিয়া রচিয়াছি আমি আমার সকল গান।
জানি জানি তুমি পড়িবে যে সখি আমার কবিতাখানি ফাল্গুন রাতে শিথিল শয়নে এলাইয়া দেহ-খানি, নিদ্ মহলের দুয়ারে জাগিয়া গভীর নিশিথ রাতি তারি সনে তুমি রয়েছো জাগিয়া শিয়রে জ্বলিছে বাতি। কবিতারে তুমি চিনিবে শুধুই, চিনিবে না কবিটিরে, কে যে লিখে গেল রক্ত লিখন আপনার বুক চিরে ; অশ্রুর মালা গেঁথে গেল সে যে গভীর মরম দুখে তাহারি পরশ লাগিবে বন্ধু সে দিন তোমার বুকে।
ভাবিবে একেলা, অজানা দেশের কোন্ সে বিরহী কবি এঁকে গেল হায় এমনি করিয়া অশ্রু ঝরান ছবি। কবির মানসী প্রেয়সীর কেন এমন কঠোর হিয়া, কেমন করিয়া খেলিল সে নারী মানুষের প্রাণ নিয়া। কি আছে উহার যার লাগি কবি ভুলে গেল আপনারে, কেমন করিয়া বাসিল সে ভালো এত যে পাষাণ তারে। কোথা আছে সেই পাষাণ প্রেয়সী, কে জানে সে কতদূর, তাহার দুয়ারে হানেনি আঘাত এই সে বেদন সুর।
তোমার মাঝারে দোলা দিয়ে যাবে কবির দুঃখ ব্যথা, তারি সনে সখি পড়িবে না মনে আর কোন কারো কথা। গভীর নিশীথে কবিরে ভাবিবে ভাবিবেনা আর কিছু, অতীত যুগের শত স্মৃতি সনে চাহিবে না ফিরে পিছু।