যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তর কবিতা যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে। www.milansagar.com
|
আগুনের তাপে সাঁড়াশির চাপে আমি চির নিরুপায়,
তবু সগর্বে ভুলিনি ফিরাতে প্রতি হাতুড়ির ঘায় |
যাহা অন্যায়, হোক না প্রবল, করিয়াছি প্রতিবাদ ;
আমার বুকের কোমল অংশ, কে বলিল তারে খাদ ?
তোমার হস্তে ইস্পাত হয়ে সহি শান, পান, পোড়,
রামের শত্রু শ্যামে কাটি যদি, তাহে কিবা সুখ মোর ?
তোমার হাতের যন্ত্র যাহারা দিন রাত মরে খেটে,
না বুঝে চাতুরি নেহাই হাতুড়ি ভাই হয়ে ভাই-এর পেটে !
. ও ভাই কর্মকার !
রাত্রি সাক্ষী, তোমার উপরে দিলাম ধর্মভার,----
কহ গো বন্ধু কহ কানে কানে, আপনার প্রাণে বুঝি,
আমি না থাকিলে মারা যেত কিনা তোমার দিনের রুজি ?
তুমি না থাকিলে আমার বন্ধু কিবা হত তাহে ক্ষতি ?
কৃতজ্ঞতা কি পাঠাইছ তাই হাতুড়ির মারফতি |
কি কহিছ ভাই, আমি হব তুমি এই প্রেম সহি যদি ?
পিটনের গুণে লোহা কবে হায় পায় কামারের গদি !
. ******************
. সূচিতে...
. তাই আঁখি-তারা কালো,-----
বিশ্বসুদ্ধ হরেক সাদার কষ্ ধরে যাতে ভালো |
নিজে ভগবান শুধিতে সরযূ-যমুনা-তটের ত্রুটি,----
গঙ্গার তীরে উঠিলেন ফিরে গৌর-রূপেতে ফুটি |
. জীবের জীবন প্রাতে,
অস্থি-মজ্জা-গত হল সাদা মাতৃ-দুগ্ধ-সাথে |
সাদা কালো শুধু উপরে তফাৎ এ কথা বিষম ভুল |
খুঁড়িলে দেখিবে, গভীর, কালোর সাদাপ্রিয়তার মূল |
তাই বুঝিয়াছে প্রাণ,-----
ছলনা মাত্র, ----- শ্বেত-বিরুদ্ধে কৃষ্ণের অভিযান |
মন যারে মানে রম্য কাম্য, তার ‘পরে সাজে রাগ ?
সাদা যদি হাসে, কালোর সাধ্য মনে রাখে কোন দাগ ?
কালো জন্মেছে ভালোবাসিবারে, সে তার কপালরেখা |
সুন্দর হেরে মজিবে যে কালো, জন্মান্তরে শেখা |
সাদা যদি বাঁকে, কালোর পক্ষে হয় চিরসাধাসাধি,
নহে,----অভিমানে অসহযোগেতে ঘোর অহিংবাদী |
শ্বেতপ্রীতি ছাড়ি কালোর পীরিতি, সে রীতি কঠিন ভারি ;
তুমি আমি কেন ? স্বামীজি বাবাজী নন তাহে অধিকারী |
সে প্রেম বারেক ফুটিল ভাদর-বাদরে বৃন্দাবনে ;
সে সাধনে মিলে ক্কচিৎ সিদ্ধি শ্মশানের শবাসনে |
সে কাল কালোর পীরিতিপাথারে না ডুবিল য়দি প্রাণ,-----
কালো ভালবাসি বলিয়া কোরো না সত্যের অপমান |
. ******************
. সূচিতে...
. হবে সকাল।
. কালো মলাটের মোটা মোটা খাতা,
. উলটিয়া যাবো রুলটানা পাতা,
. হায়রে হায়,---
. মিলাব যে সব সূক্ষ্ম হিসাব
. লিখিত তায়।
. যত গাছ আছে গোনা হল কি না ?
. লেখা হয়েছে ত সঠিক ঠিকানা ?
. নক্সা হল কি সীমানা এঁটে ?
. ক’ নম্বরের কোন শাল তরু
. ক’ ফুট লম্বা, মোটা ও বেঁটে।
. বিনা পাসে কেউ ঘাস কেটে বনে
. দিল কি ফাঁকি ?
. ডাল ভেঙেছিল জরিমানা তার
. এখনও বাকি।
. হায় রে হায় ---
. আজি রজনীর স্বপ্নশঙ্কামোহঘন এই
. নির্জন বন বাংলায়
. কল্য প্রভাত ভরিয়া উঠিবে
. আমলায় আর মামলায়।
. কোথা বাল্মীকি, ব্যাস, বশিষ্ট,
. কোথা রামসীতা, গুহক মিতা।
. বনে আসিলাম, সাথে সাথে এল
. থাতা ও ফিতা।
. কোথা কাম্যক হিড়িম্বা বক
. কোথা দণ্ডক শূর্পণখা
. কোথা মায়ামৃগ, ছিন্নপক্ষ পিতৃসখা ?
. স্ফটিক ফিরানো চলনদী-জলে
. জপময় কোথা তপোবন।
. হোম-ধূমাঙ্কী সাম-ওম্ কৃত
. জটিল বটের ছায়াসন ?
. ফুল-পল্লব-মঞ্জরী-ময়ী
. আশ্রম সঞ্চারিণীরা কই ?
. যতনপিহিত বল্কালা বালা ?
. হল পিয়া সখী ? কোথা বা কণ্ব ?
. অরণ্য হায় দারুভূত আজ
. বনবিভাগের বিপণি পণ্য।
. হায়রে হায়,---
. বনবাসে এসে সই করে চলি
. বাঁধা খাতায়।
. শুধু কাঠ আর কিউবিক তার,
. মেপে করি বেধ, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ,
. মনে মন নাই,---বনে বন নাই
. ঘটিল না তাই বানপ্রস্থ।
. পঞ্চাশোর্ধ ক্ষুব্ধ জীবন
. টেনে নিয়ে ফিরি গৃহাভিমুখে ;
. ঘরের দুঃখ এল যদি যদি বনে,
. বনে আসে তবে কিসের সুখে ?
তবু,
. কালি রজনীতে স্বপ্নশঙ্কাসন্মোহঘন
. নির্জন বনবাংলায়
আমি হেরেছিনু কোন্ শিখরচারিণী
. বাঁকে বাঁকে টাল্ সামলায়।
আর শুনেছিনু কোন্ বনঘরণীর
. হারা গাভী দূরে হামলায়।
ঘোর ঘনাচ্ছন্ন ঝঞ্ঝাপন্ন
. গহনারণ্য বাংলায়।
. ******************
. সূচিতে...
. তুমি কেড়েছিলে নয়নেয় নিদ
. মধুর মাধবী রাতে,
. আষাঢ়ান্তের বিবশ দিবসও
. জেগে কাটে তব সাথে |
. সাধ ছিল মনে----- ঘুমে দিয়ে ফাঁকি
. অনিমিখ করি অতন্দ্র আঁখি
. দুটি হৃদয়ের চির-জাগরণ
. লিখিব নয়নপাতে |
. তাই সখী মোরা জেগে বসেছিনু
. বসন্তে বর্ষাতে |
আজও তুমি মম অনন্যতম
. জাগরণ-সঙ্গিনী |
যদি কভু ভুলে পড়ি আমি ঢুলে
. বাজে তব কিঙ্কিণী |
চমক ভাঙিয়া চাহি ও-নয়ন
পান করি যেন নব রসায়ন,
অনাকুঞ্চিত নিশীথ শয়ন,
. জেগে আছ বিজয়িনী |
তুমি যে গো মোর এ জীবন ভোর
. জাগরণ-সঙ্গিনী |
. আজি আসন্ন শ্রাবণ-প্লাবনে
. জাগে প্রাণে প্রলোভন,
. নিঃসাড় দেহে নিঃশেষ স্নেহে
. বিবশ আলিঙ্গন |
. মুদিয়া গিয়াছে আঁখি-পল্লব,
. হৃদয়ে হৃদয়ে----নাহি অনুভব
, অধর-প্রান্তে বৃন্তচ্যুত
. অচয়ন চুম্বন |
. সংজ্ঞাবিহীন আসঙ্গে লীন
. নিস্পৃহ তনুমন |
জানিব না সখী আছি কিনা আছি
. আছ কিনা আছ পাশে,
বুঝিব না----যদি হয় বিনিময়
. নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে |
বাহুডোরে বাঁধা তনুর ভেলায়
উদাসীন প্রেম ভাসিবে হেলায়
সুপ্তিসাগর মিশেছে যেথায়
. মুক্তির নীলাকাশে |
জানিবে না সখী আছ কিনা আছ,
. আছি কিনা আছি পাশে |
. তাই আসিয়াছি তোমার দুয়ারে
. খুঁজিতে ঘুমের সাথী,
. অনিদ চোখের ধ্রুবতারা ওগো
. নিবাও তোমার ভাতি |
. শ্রাবণী রজনী হল যে নিঝুম
. ঘিরে আসে যত ফিরে-যাওয়া ঘুম,
. বাদল হাওয়ায় রাখা নাহি যায়
. তোমার সন্ধ্যা বাতি |
. ঘনায় নয়নে শাওনিয়া ঘোর,
. হে মোর ঘুমের সাথী |
শাখায় শাখায় পাখা ঝাপ্ টায়,
ঝড়ে ঝড়ে মোড়ামুড়ি |
চিরচঞ্চল পায়ে-শৃঙ্খল
অচল অশথগুঁড়ি |
সদ্ গোপেদের দুধোলো গাইটি ভালো,
নধর চিকন কালো ;
অচল নয় সে চরে খেতে পারে,
লেজের বাড়িতে ডাঁশ মশা মারে,
ভুলেও ভাবে না দুষ্প্রাপোর ভাবনা ;
অতীব সরল হিসাব তাহার
দুধের বদলে জাবনা |
উপরন্তু সে জাবর কাটে
পড়ন্ত রোদে ভরা পেট পেতে
ঢুলু ঢুলু আঁখি শীতের মাঠে |
গলায় দড়াটা মাঝে মাঝে কোলা পায়,
তারি আনন্দে ঘন-রোমাঞ্চ-কায় |
এবারের মতো মনিষ্যি হয়ে
পুণ্যের ঘরে শূন্য ;
সব কথা যদি খুলে বলি তবে
শত্রু হাসিবে
বন্ধুরা হবে ক্ষুণ্ণ |
সুতরাং সব চেপেই যাই,
রোড়াবাঁধে এসে বন্ধুবরের খবর নাই |
সে যে ছিল মোর সর্বযামী,
দেখা পেলে তারে জিজ্ঞাসিতাম
আসছে জন্মে কী হব আমি ?
জানায়ে দিতাম আমারও দাবি------
পথের প্রান্তে অশথগাছ, না
সদ্ গোপেদের দুধোলো গাভী ?
আমার মতন মনিষ্যিদের
খোলা আছে দুটি ভবিষ্যৎ,
হয় গোজন্ম নয় অশথ !
. ******************
আমারে পুড়িয়ে পিটানো ছাড়া কি
কোন্ ভোরে সেই ধরেছ হাতুড়ি, রা
ঝিল্লীমুখর স্তব্ধ পল্লী, তোল গো যন্ত্র
ঠকা ঠাঁই ঠাঁই কাঁদিছে নেহাই, আগু
শ্রান্ত সাঁড়াশি ক্লান্ত ওষ্ঠে আল্ গোছে
দেখগো হোথায় হাপর হাঁপায়, হাতু
ক্লান্ত নিখিল, করগো শিথিল তোমার
রাত্রি দু’পরে মনে নাহি পড়ে কি ছি
ভাঙিলে গড়িলে সিধা বাঁকা গোল ল
কভু আতপ্ত, কভু লাল, কভু উজ্জ্বল
কভু বা সলিলে করিলে শীতল অস
অজানা দুজনে গলায়ে আগুনে জুড়ি
ধড় হতে কভু বাহুল্যবোধে মাথা কে
ঘন ঘন ঘন পরিবর্তনে আপনা চিনি
স্থির হয়ে যাই ভাবিবারে চাই, পড়ে
লোহার ব্যথা
যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
. ও ভাই কর্মকার,-----
কালোয় করিবে সাদার পূজা যে এ তো খু
সৃষ্টির মূল,----অসীম কালোর সাদা হইবার
অন্ধকারের মূক কালো মুখে ফুটাতে আলো
শ্যামল বনের মনের কামনা সাদা ফুলে ফুলে
আঁধার মায়ের বুকের বাসনা-----সাদা চাঁদ
তড়িৎ-কামনা চমকে নিয়ত কালো জলদের
কালো যে কেবল সাদা হতে চায়---- এ প্রমা
. ঠিক ভেবে দেখ ভাই,-----
নিজের চামড়া যেমনই হউক জুড়িটিরে সা
অপর পক্ষে শৈশব হতদে চেষ্টার নাই ত্রুটি
কালিদাসীদেরও যাহে জনে জনে সাদা সিব
কৃষ্ণ জীবের দেব দেবী শ্বেত, দেবতার দে
কালোর শ্রেষ্ঠ স্বয়ং কৃষ্ণ ভজিয়াছিলেন রা
কাব্যে জীবনে যে দিকে চাহিবে----সাদাই শ্রে
কালো চায় সাদা, সাদা চায় সাদা, কালোর
কালো চিরদিন মাখে পাউডার, সাদা কবে
কালো কত ছলে শুধু সাদা চায়, সাদা ত চা
. যদি বা কখনো চায়,------
নিজের সাদামি ফুটাতে,---- সোনার নিকষ-
সাদা ও কালো
যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
. মনে বুঝে দেখ ঠিক------
বনপ্রস্থ
যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
. চলেছিনু শাল-জঙ্গল পরিদর্শনে,---
. দুর্গম পথ দুর্গমতর কালবৈশাখী বর্ষণে।
. থেকে থেকে দেয়া
আর মাঝে মাঝে বা
. কালো তুরঙ্গে অকা
. পথ খুঁজে ফিরে শা
যেথা গজারু গড়ের
. শত শঙ্কার জাল বো
সেই শালবনে, দূর শা
. দুর্যোগঘন রাত্রিযা
. নির্জন বনবাংলায়
. নিম্নে পাহাড়ী নাম
. বাঁকে বাঁকে টাল সা
. জল কেন হোথা ছ
বুঝি বাঘে-বাইসনে
. সুদূরে তরুণী গারো
. পথহারা গাভী হাম
. আনন্দমঠী সন্ন্যাসীদ
যেন ভাঙা মন্দির নির্মা
উঠে কল কল কল হুম্
বলো নির্জন বন বাংলা
. ঘুম কার ?
হায় নিদ্রাবিহীন স্বপ
. টুটিবে কাল,
. শ্যামবনশাখে রূঢ়
ঘুমের সাথী
যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
রোঢ়াবাঁধে খো
শীতের সূর্য গড়া
পড়ন্ত রোদে প
অশথের পাতা
কি শীত গ্রীষ্ম কেঁ
বলি-বন্ধুর অশ
একঠাঁয়ে খাড়া
কি শীত গ্রীষ্ম সে
একশ বছুরে উ
পরন্ত রোদে পি
দুধোলো গাভীটি
তন্দ্রিত চোখে
সারা গোজন্মে
চোয়ালে জাবর,
কোঁয়ালে বাছুর
একই ঠাঁয়ে খাড়া
অচল অশথগুঁ
আঁধারের তলে
শিকড়ে শিকড়ে
ঊর্দ্ধে আকাশ
পাতায় পাতায়
আসছে জন্মে
যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত