যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তর কবিতা যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে। www.milansagar.com
|
সহস্র নিরুপায়ের ভিড়ে দাঁড়িয়ে ভিজছি |
দূর হতে কানে আসছে----
বিপুল পরাজয়ের তুমুল জয়ধ্বনি !
. সহসা দেখা গেল-----
মরণের কুসুমকেতন জয়রথ !
মনে হল------
. কি বিচিত্র শোভা তোমার------
. কি বিচিত্র সাজ !
জয়ধ্বনির মধ্যে জোড়া জোড়া জোয়ান
আজ মৃত্যুমদে মাতাল হয়ে
টানছে সেই যান |
টলছে যত তাদের পা,
দুলছে তত রথের বিজয়কেতু !
হায় রে ! যেন-----
. লটপট করে বাঘছাল,
. যেন----
. বৃষ রহি রহি গরজে !
বাঁধাপথে অগণ্য নগণ্যের জনতা ;
তারই বুক দ্বিধা ক’রে
সিধা চলেছে মৃত্যুস্যন্দন
তার কলুটোলা স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট,
কর্নওয়ালিস স্ট্রিট পার হয়ে |
সেই জয়যাত্রা-পথের বাঁকে
পলকের জন্য তুমি কাছে এলে বন্ধু !
পলকের তরে চোখে পড়ল তোমার মুখ !
মরণের অভিনন্দনে
সে মুখ কি অপরূপ হয়েছে বন্ধু !
মানুষের সকল পৌরুষ-প্রয়াস
বুকের পাটায় ঘসে ঘসে
উঠেছে যে ব্যর্থতার চন্দন,
তাতেই হল তোমার ললাট অভিলিপ্ত !
তাদের সকল প্রার্থনাকে পরিহাস করে
ফুটে উঠেছে যে ফুল,-----
তাতেই রচিত হল তোমার মাল্য !
করজোড়ে, নতশিরে, প্রণাম করে বললাম-----
বিদায় ; বন্ধু ; বিদায় |
মরণের হাতের লীলাকমল তুমি,
চলেছ আজ, জনস্রোতের তরঙ্গে তরঙ্গে,
সদ্যছেঁড়া সহস্রদল পদ্মের মতোই ভেসে
শোকের বার্ দরিয়ায়,
অগণিত নগণনীয়ের নাগালের বাইরে |
পরম অভিমানে তারা ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলছে
তাদের নিষ্ফলা ফুল |
আমি ফুল দিই নি বন্ধু,
আমার পথে ফুলের দোকান পড়ে না |
আমি বলতে এসেছিলাম,------
. হৃদয়বন্ধু, শোনো গো বন্ধু মোর
কিন্তু তুমি তখন
আমার কথার বাইরে চলে গেছ |
তাই শুধু চোখের জল মুছে
. আবার আহ্বান ?
মিছে আনিয়াছ আজি বসন্ত কুসুমরাজি
. দিতে উপহার |
নীরবে আকুল চোখে ফেলিতেছ বৃথা শোকে
. নয়নাশ্রুধার |
:ছিলে যারা উদাসীন বৃথা আজিকার দিন
. করিছ স্মরণ
অসীম নিস্তব্ধ দেশে চিররাত্রি পেয়েছে সে
. ডাকো অকারণ
আর পরিচিত মুখে তোমাদের দুঃখে সুখে
. আসিবে না ফিরে |
আর তুলিবে না তান অবিশ্রান্ত কলগান
. তোমাদের তীরে |
বসিয়া আপন দ্বারে ভালো মন্দ বল তারে
. যাহা ইচ্ছা তাই ;
অনন্ত অজানা মাঝে গিয়াছে সে মিশিয়া যে,
. সে আর সে নাই |
তবু আজি একবার খুলিয়া দক্ষিণ দ্বার
. বসি বাতায়নে,
সূদুর দিগন্তে চাহি কল্পনায় অবগাহি
. হেরি মুগ্ধমনে :-----
নবীন ফাল্গুন দিন সকল বন্ধনহীন
. উন্মত্ত অধীর,
উড়ায়ে চঞ্চল পাখা পুষ্পরেণু-গন্ধ মাখা
. দক্ষিণ সমীর
সহসা আসিয়া ত্বরা রাঙায়ে দিয়াছে ধরা
. যৌবনের রাগে,
সেখানে উতলা প্রাণে হৃদয় মগন গানে
. কবি এক জাগে !
যত তারে প্রশ্ন করি যত তার পাযে ধরি
. রহে নিরুত্তর |
কেঁদে কহি---হায় কবি, ছবি, তুমি শুধু ছবি
. পটের উপর ?
তুমিই ত এ নিখিলে দিকে দিকে লিখে দিলে
. রসের মূরতি,
তোমারি চঞ্চল সুরে স্থিরতার অন্তঃপুরে
. বাণী মূর্তিমতী |
সহসা নিমেষহত আপন সৃষ্টির মত
. হলে কি শাশ্বত ?
জীবন নির্ঝর মাঝে মরণ কিঙ্কিণী বাজে,
. তুমি অনাহত ?
চলেছে ফুলের দল চলেছে নদীর জল,
. থেমে গেছে কবি,
দাঁড়ায়ে কালের তটে স্রোতময় স্মৃতিপটে
. ছবি শুধু ছবি |
উঠিছে ঝিল্লীর গান তরুর মর্মরতান
. নদী-কলস্বর |
প্রহরের আনাগোনা যেন রাত্রে যায় শোনা
. আকাশের পর |
উঠিতেছে চরাচরে অনাদি অনন্ত স্বরে
. সঙ্গীত উদার,
সে নিত্য গানের সনে মিশাইয়া লহ মনে
. জীবন তাহার |
দেখ তারে বর্ণে বর্ণে প্রভাতসহস্র পর্ণে
. নক্ষত্র-পুলকে |
পলে পলে দন্ডে দন্ডে ভাগ করি খন্ডে খন্ডে
. মেপো না তাহাকে |
খুঁজিও না বারে বারে পাঁজির পাতায় তারে
. পঁচিশে বৈশাখে |
অবিচ্ছিন্ন রবিহারা বাইরে শ্রাবণধারা
. নিত্য হল সেই,-----
তারি স্রোতে অশ্রুমান পঁচিশে বৈশাখী গান
. অঞ্জলিয়া দেই |
সকলি পরের তরে, কবিতা যা গাঁথিয়াছি |
অশ্রুসাগর সেঁচি অহেতুক কৌতুকে
গাঁথিয়া গাঁথিয়া মালা দুলায়েছি বুকে বুকে |
হায়রে, ‘আমার’ বলি সে-বুকের মালা কোথা ?
যার বিনিময়ে মোর জুড়াবে বুকের ব্যথা ?
বরাত সঙ্গে চলে, কিছু নাই বলিবার,
মিথ্যে, হইনু কবি, মিছে ইন্ জিনিয়ার |
দেহটা পিছায়ে পড়ে গেল কিনা-----দেখা ভাল ফিরে ফিরে |
অকূলের মাঝে বারেক হারালে, আর বৃথা তারে খোঁজা !
যার যৌবনে ফাগুন কাটালে সেটা কি এমনি বোঝা ?
কল্পনা, তুমি শ্রান্ত হয়েছ, ঘন বহে দেখি শ্বাস,
বারমাস খেটে লক্ষ কবির একঘেয়ে ফরমাস |
সেই উপবন, মলয় পবন, সেই ফুলে ফুলে অলি,
প্রণয়ের বাঁশি, বিরহের ফাঁসি, হাসা কাঁদা গলাগলি !
নব ফরমাস, দিই তোমা, সাঝ কলকের পর কলকে,
বুকের রক্ত ছল্ কে উঠুক, হাড়গুলো যাক পল্ কে !
ধোঁয়ায় ধোঁয়ায়, ওই ছুটে যায় ---- লক্ষ মরণ ঘোড়া,
প্রেমের বল্ গা বৃথাই কসিছে সোয়ার সে জোড়া জোড়া |
. ঢেলে সাজ, সেজে ঢালো,
সকল দুঃখ সূক্ষ্ণ হউক, যত সাদা সব কালো !
. সপ্তম ঝোঁক
তন্দ্রা টুটিয়া সহসা আজি যে সন্দেহ মনে জাগে,
হয়ত তোমায় বৃথা অনুযোগ করিয়াছি আগে আগে |
যাহা আছে যার,তাহা ছাড়া আর কি পারে সে পরে দিতে ?
অপার দুঃখ তোমার হতে তাই ঝরে পড়ে চারিভিতে !
হে বিরাট ! আজ হেরি যেন তব দুঃখের নাহি ওর;
চির বর্ষণে ফুরায় না তবু অফুরান আঁখিলোর!
. ওগো অক্ষয় বট |
যত বেড়ে যায় আপনি ছড়াও শত দুঃখের জট |
তাই কাঁদাকাটি মাথা কোটা-কুটি সকল জগৎময়,
দুঃখ হইতে জনম এদের, দুঃখেই পরিচয় |
. সকল দুখের খনি |
শিহরিয়া উঠে পরান, তোমার ব্যথার অঙ্ক গণি |
সারা বিশ্বের বেদনা বহিয়া কেমনে জীবন চলে |
বুঝেছি প্রাণটা ঠান্ডা রেখেছ ঘুমিওপ্যাথির বলে !
. আনন্দ নহ নহ ;
দিচ্ছ দুঃখ নিচ্ছ দুঃখ ------ দুঃখেরি ফেরি বহ !
যা প্রত্যক্ষ নিঠুর দুঃখ, তারে মায়া ভ্রম বলি,
টেনে বুনে তাঁরে আনন্দ বলে আপনারে কেন ছলি ?
চোখ বুঁজে যারে আনন্দ বলে আনন্দ কর দাদা,
চোখ চেয়ে যদি দুঃখই বলি, কি তাহে এমন বাধা ?
বেদ বেদান্ত প্রাণ প্রাণান্ত আফিং গাঁজার চাষ,-----
থুব সস্তায় তাঁর আশেপাশে হয় নাক বারমাস |
কিছু আনন্দ কিছু সুখ আর বাকি আঁখিভরা জল,
তোমার আমার যেমন কাটিছে তাঁরো তাই অবিকল !
অশ্রু পরশি অগত্যা আজ করিলাম আধাসন্ধি ;
হে চিরদুঃখী ! ব্যথার বাঁধনে ব্যথিতে করিলে বন্দী !
. প্রণাম প্রণাম----ভাই !
শত ঝঞ্ঝাটে তোমার হেন যেন অঘোরে ঘুমাতে পাই |
বাইশে শ্রাবণ, ১৩৪৮
যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
মুখঢাকা রুদ্যমান আলোয়
ত শ্রাবণ-সমাছন্ন |
প্রভাতের কপালে
উঠল না |
গহন মোহে,-----
কুজনহীন,
দুয়ার দেওয়া,----
পন তার চরণ ফেলে
রবে পথ চলে |
আরও বেঁধে দেওয়া হয়েছে-----
কলেজ স্ট্রিট,
হয়ে
চোরের মতো চুপি
ফেরার পথে, পরাজ
মৃদু হতে হতে আর
শুধু তার প্রতিধ্বনি
. আজি পিঞ্জ
আর সাথে সাথে
রিক্ শওয়ালার ঠুন
. কি বিচিত্র
. কি বিচি
পঁচিশে বৈশাখ
যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
. আবার
যতকিছু ছিল কাজ
. দীর্ঘ দিন
জাগায়ে মাধবী বন
. প্রত্যূষ
প্রখর পিপাসা হানি
. গেছে মধ্য
নদীপারে ম্লান ছবি
. সুযুপ্তি-শ
তবু আঁকি ছলছলি
দ্বৈত ব্যর্থতা
যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
ঘুমের ঘোরে
যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
. প্রথম ঝোঁক
এস ত বন্ধু আবার আজিকে বেড়ে
তোমায় আমার হয়ে যাক দুটে কা
. জগৎ একটা
যত বা নিয়ম তত অনিয়ম গোঁজামি
পৃথিবী ঘুরিছে বেমালুম যেন মাখন-
ছোট বড় কত টানে অবরত টলে
. সৃষ্টির চমত্কা
ঠোকাঠুকি নাই, গতি-বিজ্ঞানে, বাঁধা
সে দিল বন্ধু, তার পদাঘাতে মোর
. দেখি চলিবার
গতি-বিজ্ঞানে লেখা নাই তবু খোঁড়া
সেদিন আবার টেনে নিয়ে গেলে ভক্তে
“ঠাকুরের আহা ! অপার করুণা” কেঁ
. “দেখিছ যেটা
ঠাওর করিয়া দেখ----- সেটা সুখ অ
ঠাওর করিয়া দুখ সুখ হল, সুখ হ
মোটের উপরে বুঝিতে নারিনু লাভ
. এ
প্রাণের দুঃখ যায় না কিছুতে, আঁখি আসে জলে ভরে !
ঘুমের আড়ালে এলে তুমি ধীরে কহিলে হরিয়া জ্ঞান,
“প্রাণের দুঃখ না যাক কিম্তু যাবে দুঃখের প্রাণ |”
. বন্ধু, প্রণাম হই,------
শীতের বাতাসে জমে যায় দেহ------- ছেঁড়া কাঁথাখানা কই ?
শান্ত রাত্রি, জ্যোত্স্না শীতল, বনভূমি নিঃঝুম,
সেই পথ দিয়ে আমার চক্ষে আসুক গভীর ঘুম !
. সেই জুড়াবার ঠাঁই ;
কঠিন সৃষ্টি ধোঁয়া হয়ে আসে কোথা কিছু বাধা নাই |
যুগ যুগ ধরে কেন এ প্রয়াস গরমিলে মিলাইতে !
কোন যম নাই হিসাব করিয়া সুখ ও দুঃখ দিতে |
. মুক্তির চাবি আঁটা ;
এ জগৎ মাঝে সেই তত সুখী, যার গায়ে যত ঘাঁটা !
বন্ধু গো, আমি জানি হেথা চির ভোটহীন অধীনতা,
নিরুপায় হয়ে কেহ বলে তোমা পিতা, কেহ বলে মাতা !
. আমি বলি, কিনে কুলো-----
পিঠে বেঁধে, দাও গভীর নিদ্রা দু’কানে গুঁজিয়া তুলো |
কেন ভাই রবি, বিরক্ত কর ? তুমি দেখি সব-ওঁচা,
কিরণ-ঝাঁটার হিরণ-কাঠিতে কেন চোখে মার খোঁচা !
. জানি তুমি ভাল ছেলে,
ঘড়িটি তোমার কাঁটায় কাঁটায় ঠিক যায় বিনা তেলে !
তব জয় জয় চারিদিকে হয়, আলোক পাইল লোক,
শুধাই তোমায়---- কি আলো পেয়েছে জন্মান্ধের চোখ ?
. চেরাপুঞ্জির থেকে,
একখানি মেঘ ধার দিতে পার গোবি-সাহারার বুকে ?
সবার খাদ্য প্রতিদিন তুমি বহি আন ডালা ভরি ;
ক্ষুধিত মানব কেঁদে বলে “তাঁর অপার করুণা, মরি |”
. ক্ষুধা দিয়ে দেওয়া অন্ন,
“গরু মেরে জুতো দান” অপেক্ষা নহে কভু বেশি পুণ্য !
প্রভাতে উঠিয়া বাহির হইনু সিক্ত গ্রাম্য পথে,
ঘুম ভেঙেছিল, এমন শপথ করিব না কোন মতে !
. ছেলেরা লাট্টু খেলে,
লেতিতে জড়ায়ে মুঠায় ঘুরায়ে বোঁও করে ছুঁড়ে ফেলে |
বন্-বন্-বন্ ঘুর-ঘুর-পাক চিতেন কেতেন সোজা ;
লাট্টু বলিছে, “হায় হায় হায় ! ঘুরে ঘুরে কারে খোঁজা!
. জীবন যে আসে ফুরায়ে”-----
বলিতে বলিতে ফুরাল ঘুরণ---- বালক লইল কুড়ায়ে |
আবার লেতিতে জড়ায়ে লাট্টু গপ্ চা মারিয়া ফেলে,
একটার ঘায়ে অন্যে ফাটায়ে ছেলেরা লাট্টু খেলে !
. দেখিনু দাঁড়ায়ে কোণে,------
ফাটা-লাট্টুটা ছুঁড়ে ফেলে দিল দূরে কন্টকবনে |
বন্ধু, এখনো ঘুম দাও, নহে কহিব অনেক কথা,
অনেকের ‘পরে হইবে সেটা যে কঠোর নির্মমতা ;
. ঈশা, মূশা আর বুদ্ধ,
কন্ ফুসিয়াস মহম্মদ বা কৃষ্ণ নিমাই সুদ্ধ,
সবাই বলেছে, পাঠালেন মোরে নিজে তিনি ভগবান ;
তোমাদের তরে প্রাণ কাঁদে তাঁর--- তোমাদেরি তিনি চান ;
. উপায় পেয়েছি মুখ্য,----
রবে না নরের জরা ব্যাধি শোক পাপ তাপ আদি দুঃখ ;
যেমন জগৎ তেমনি রহিল, নড়িল না একচুল ;
ভগবান চান আমাদের শুভ-- একথা হইল ভুল !
. কি হবে কথার ছলে ?
ভগবান চান----- তবু হয় নাক, একথা পাগলে বলে !
বড় কৃতজ্ঞ রব তোমা কাছে, হৃদয়-বন্ধু মোর,
চিরতরে যদি বুলাও নয়নে বিস্মৃতি ঘুমঘোর !
. থাক বা না থাক স্রষ্টা----
নিখিল বিশ্ব ঘুরে ঘুরে মরে, তুমি তার চির দ্রষ্টা |
ঘুরণের পাকে কেউ কাছে থাকে, কেউ চলে যায় দূরে,
তব আনন্দ রয়েছে কেবল তোমারি হৃদয় জুড়ে |
. অনিমেষ আঁখি ‘পরে
তোমার অশ্রু তোমার হাস্য নহে সে মোদের তরে |
মোরা ভুল করে প্রণমি তোমার, ভুল করে করি রোষ,
তোমার তাহাতে নাহি আনন্দ নাহিক অসন্তোষ |
. আমরা তোমায় ডাকি,-------
যন্ত্রণা পাই সান্ত্বনা চাই---- আপনারে দিই ফাঁকি !
আমরা যখন সুখে সুখী হই----- সে নহে তোমার দান,
তোমার বিধান নহে যে---- আমরা দুখে হই ম্রিয়মান,
. কেন যে এসব আছে,
সে কৈফিয়ত তুমি কোনদিন দেবে না কাহারও কাছে |
সাগরের কূলে পুরী তব, দারু-মুরতি জগন্নাথ ;------
রথের চাকায় লোক পিষে যায়, তোমার নাহিক হাত |
. তুমি শালগ্রাম শিলা :-------
শোওয়া বসা যার সকলি সমান, তারে নিয়ে রাসলীলা !
ছুটেছে তোমার মৃত্যুতিলক মুক্ত যজ্ঞ-ঘোড়া ;
মোদেরি পাকান প্রেমের দড়িতে বাঁধিতে চলেছি মোরা |
. ছিন্ন গিঁঠান দড়ি ;
তারি সাহায্যে, বাসনা------ তোমার যজ্ঞ-অশ্ব ধরি !
বন্ধু, আমার হৃদয়-বন্ধু, তবু তোমা ভালবাসি ;
স্বপ্নবিহীন ঘুমের আড়ালে তুমি দেখা দাও আসি |
. তখন তোমাতে থাকি,
বিয়ের বাজনা মরার কান্না মিছে করে ডাকাডাকি ;
শান্ত তখন শ্রান্ত হৃদয়, ক্ষান্ত তখন মন,
নাহি আশা প্রেম নাহি আশঙ্কা সাঙ্গ সকল রণ |
. মরণে কে হবে সাথী,
প্রেম ও ধর্মে নাহি প্রয়োজন---- বলিনে আমি এ কথা,
মিথ্যামাত্র বৃথা নহে যদি ঘুচে তাহে কারো ব্যথা |
. অসীম জড়ের মাঝে
চেতনা শক্তি ----- ঘুমের ভিতর স্বপ্নের মত রাজে |
শক্তি নিয়ত জড়ের মাঝারে বিরাম লভিতে চায় ;
তন্দ্রা যেমন এলোমেলো পথে সুষুপ্তি পানে ধায় |
. বন্ধু, বন্ধুবর !
সকল শক্তি সংহত করে হয়ে আছ মহা জড় |
সেই মহাঘুমে সাঁতারি বেড়াই মোরা স্বপনের ফেনা ;
পলকে ফুটিয়া মিছে ঘাড়ে করি তোমারি প্রেমের দেনা |
. জগতের শৃঙ্খলা,-----
স্বপ্নেরি মত উপরে উপরে গোঁজামিল দিয়ে মেলা !
বিচারে যখন ভিতরে ভিতরে ধরা পড়ে লাখো ফাঁকি,
তোমার সে ত্রুটি নিরুপায় হয়ে প্রেমের আড়ালে ঢাকি |
. প্রেম বলে কিছু নাই-------
চেতনা আমার জড়ে মিশাইলে সব সমাধান পাই |
. দ্বিতীয় ঝোঁক
. আজ দুর্দিনে ঝড়ে,
তোমার আমায় দেখা গো বন্ধু, পুনঃ বহুদিন পরে |
জলদগর্জে ভাঙালে নিদ্রা বিদ্যু
শোন মোর কথা-----ওসবের
.
নিরন্ধ্র মেঘে ঘেরিয়া বজ্রে ভে
ও তর্জনের অর্থ বুঝিতে হয়
আমি বেশ জানি ---- সুখ ও
.
মাগিব না আমি তুষ্টি তোমার
আমাদের কাছে তুমিও যে কি
আপন খেয়ালে ঢালিয়া বর্ষা
. এ ধরা
মরণের ভিতে স্মরণের ঢিপি
কত না অশ্রু কত হাহুতাশ ক
শ্রান্ত হইয়া শান্তি লভিতে কত না ফন্দি করা |
. সব হয়ে যায় বৃথা,
আসে, হাসে, কাঁদে, চলে যায় ঘুরে বায়স্কোপের ফিতা !
আমারি মতন এসেছে হেসেছে কেঁদেছে কত না প্রাণী,
আজ তাহাদের একটিরও কেহ সন্ধান নাহি জানি |
. আমারও দুঃখ সুখ,
ধুলা হয়ে যাবে --- চাহি বা চাহি তোমার পাষাণ মুখ |
. তোমারে নাহিক দুষি ;
নিজ ধন নিয়ে পার করিবারে যখন যা তব খুশি |
একটি নিয়ম মান তুমি, সেটি কোন নিয়ম না রাখা ;
আঁখি মুদে দেখি, পাগলের মত ঘুরিছে কালের চাকা |
. যে দিকেই আমি যাই-----
তার সাথে দেখা হবে পথে একা সহসা মরণ ঠাঁই |
অতঃপর যে কি হবে তা নিয়ে নাহিক চিন্তা লেশ,
সহজসত্য আমার পক্ষে ইহকালেরই সে শেষ ;
. চাহি না প্যাঁচাল যুক্তি----
অদৃষ্টসাথে উপায়-হীনের নিত্য নূতন চুক্তি !
পূর্বকালে যা ছিনু আজ তার হয় না তো প্রয়োজন,
পরকালেতেও যা হবে তা হবে----কেন বৃথা আয়োজন ?
. মিছে দিন যায় বয়ে ;
উপরে ও নিচে ঘুমের তুলসী---- শুই শালগ্রাম হয়ে !
বন্ধু আমার, সব নিয়ে দাও তোফা ঘুম দিনে-রেতে ;
নাকের বদলে নরুন যে পায় ----ব্যবসায় সেই জেতে |
. বন্ধু, ত্বরিত যাও----
ঘুম-পাড়ানিয়া মাসিপিসিদের মোর পাশে ডেকে দাও |
তন্দ্রিত চোখে দেখিতেছি তব স্বরূপ খোলস-ছাড়া----
দেবতা গড়িলে পাষাণে আর সে ঢালে না নিঝর ধারা ;
চিতার বহ্নি যত বিধবার সিঁথার সিঁদুর চেটে,
বিশ্বম্ভর হে গণেশবর, জোগায় তোমারি পেটে !
. গরু-পোষাণির প্রায়-----
জননীর কোলে ছেলে বড় করে কে পুনঃ কাড়িছে, হায় !
ব্যপার দেখিয়া স্তব্ধ হইয়া জ্ঞানী পরিহরে শোক,
দেঁতো হেসে বলে, ইচ্ছাময়ের ইচ্ছা পূর্ণ হোক ;
. অস্য অর্থটি-----
যাহার পাঁটা সে যেদিকে কাটুক, তাতে অপরেরহ কি ?
ছোলা কলা খেয়ে সন্ধিক্ষণে এককোপে বলিদান-----
পাঁটার মধ্যে সে পাঁটাটি ---- আহা কত না ভাগ্যবান |
. পাঁটার দুঃখ সুখ-----
মার পায়ে দিতে নূতন সরায় রক্তে জমায়ে থুক !
চারি দিক দেখে চারি দিকে ঠেকে বুঝিয়াছি আমি তাই,
নাকে শাঁক বেঁধে ঘুম দেওয়া ছাড়া অন্য উপায় নাই |
যদি বলি তুমি সুখদুখ নাই----দুটাই মনের ভ্রম !
এও তবে এই ঘুমেরি একটা আফিং মিশানো ক্রম !
. জারি কর তবে খ্যাতি,
এ ভব-রোগের সব চিকিৎসা আমার “ঘুমিওপ্যাথি” |
. ঝুম্ ঝুম্ নিঃঝুম----
মেঘের উপরে মেঘ জমে আয়---- ঘুমের উপরে ঘুম !
. ঝিম্ ঝিম্ নিশ্চিন্ত-----
নাকের ডগায় মশাটা মশাই আস্তে উড়িয়ে দিন ত |
. রিম্ রিম্ ঝিম্ ঝিম্----
পাকে পাকে কসে কিসের বাঁধন সাপের মতন হিম !
. ঘর্ ঘর্ শাঁই শাঁই,
. আর ভয় নাই নাই ;
আঁধারের ঢেউয়ে ঐ ভেসে নেমে এল জমাট ঘুমের চাঁই !
. নাই উঁচুনিচু নাই আগু পিছু----
. নাই সুখদুখ আলো কালো কিছু ;
নিতল হইয়া ডুবে নেমে যাই------- দাঁড়াবার নাই ঠাঁই |
. ডানে বাঁয়ে মোর ব্যাস বাল্মীকি
. ছেড়ে বকাবকি মিছে লেখালেখি,
সব সাধনার অন্তে বুঝেছি ঘুম পদার্থটি কি !
. কেন আর গোলমাল ?
বন্ধু , এবার বন্ধ হল কি বুকের কামারশাল !
. চির নীরবতা চাই-----
দোহাই তোমার, মাঝে মাঝে আর ঘুম ভাঙিও না ভাই !
. তৃতীয় ঝোঁক
. আজিকে সুখের দিনে,
তোমার দুয়ারে এসেছি বন্ধু, স্বপ্নের পথ চিনে |
পথের দুধারে দুলিছে দেখিনু ঘন
এলায়ে দিয়েছে পিঠের উপরে পু
. পিক পাপিয়ার
হৃদয়-মাতাল মধু সঙ্গীতে ভরে অ
খেয়ালের বশে কুড়াইনু ধূলি, হল
ক্ষুধা না পেতেই কোথা হতে এল
. এ হেন সুখের দিনে
খোস খবরটা শুনাব কাহারে বন্ধু
. আজিকার শুভরা
বদ্ধ হইব পরিণয়-ডোরে সৌভাগ্যে
আমার প্রাসাদে জ্বালাও লক্ষ নক্ষ
রাহুকে বল----- সে গিলুক সূর্যে, না
বজ্রে ঝাঁকায়ে মেঘের মুকুট পরা
কন্ঠের হার রচ গো তাহার তড়ি
. পূরাও প্রিয়ার
রামধনু দিয়ে জ্যোত্স্না ধূনিয়ে র
সোহাগে গলিয়ে অঙ্গে ঢলিয়া প্রি
তোমাতে আমাকে বদ্ধ হইনু অক্ষয় শৃঙ্খলে |
. বন্ধু,, ভুলিনি আমি----
পবন করিছে ব্যজন তবুও ললাট উঠে যে ঘামি |
কোথা হতে তুমি এলে গো লক্ষ্মী ! কোথা ছিলে এতদিন !
আমার প্রমোদ-ভবনের তরে কারা হল ভিটা-হীন ?
. আমার দীপালি রাতি,
উজ্জ্বল আজি কত না জীবের নিবায়ে জীবন-বাতি !
অশ্রু-সাগরে শোভে সহস্র নয়ন কমলদল,
তারি ‘পরে ওই রেখেছ তোমার রক্ত চরম-তল !
তব প্রসন্ন আঁখির আলোকে আমার পিছন ভরি
যে ছায়া পড়েছে, তাহাতে লুকায়ে কত শোক বিভাবরী !
. ভরেছ আতর-দানি,
কত প্রভাতের আধ-ফোটা ফুল-মর্ম নিঙাড়ি ছানি ?
কন্ঠে দুলালে মিলন-মালিকা নব সুগন্ধ ঢালা------
সদ্যছিন্ন শিশু কুসুমের কচি মুন্ডের মালা !
. মিটেছে সকল আশা----
দিয়েছি নিয়েছি হরেক রকম সুখ দুখ ভালবাসা |
ফুরায়েছে সব অশ্রু ও হাসি, জুড়ায়েছে বহু জ্বালা,
আর কেন বৃথা করি বক্তৃতা-----এ যে বারোয়ারিতলা !
প্রকান্ড ধরা ভাড়াটে মহল ---- মরণ আদায়কারী,
পলে পলে তার চোখরাঙানিতে জীবন যাপিতে নারি |
. সহে না এ বেঁচে থাকা-----
বাপ পিতাম’র মামুলি ধরনে প্রতিদিন মরে রাখা !
মরণও, সে যদি এইরূপই হয় তিলে তিলে বেঁচে যাওয়া !
অন্ত কোথায় ভেবে হাসি পায়, ---- এল কি ঘুমের হাওয়া ?
. ঐ যায় বুঝি শোনা------
খস্ খস্ ঠক্ চলেছে চলেছে তাঁতিদের তাঁত বোনা ?
এ হাত ও হাত ফিরিতেছে মাকু----ধৈর্যের নাহি চ্যুতি,
কোন মাকুটার দশ টাকা জোড়া কোনটার দশ সিকা----
লোহার মাকু সে লোহাই রয়েছে জন্মায় অহমিকা |
. দেখিনু তন্দ্রাভরে-----
তাঁতির টাকার বড় দরকার, মাকু ছুটাছুটি করে !
. চতুর্থ ঝোঁক
. হায় রে ভ্রান্ত কবি !
নয়নের আলো ম্লান হয়ে এল আঁকিতে মিছার ছবি !
সারা জীবন এ কোন্ অলক্ষ লক্ষ্মীর আরাধনা ;
জগৎ ভরিয়া দিয়ে যাও হৃদি-রক্তের আলিপনা ?
. দহিলে আপন রূপ
কোন্ অজানার পূজা-উপাচারে অমল গন্ধধূপ !
. এই অফুরান স্নেহ,
পঞ্চপ্রদীপ ভরিয়া জ্বালায়ে ধরিলে আপন দেহ !
পেয়েছ কি সেই লক্ষ্মীর দেখা হয়েছি কি বর চাওয়া,
কত দক্ষিণা মিলিল গো বিনা ফাঁকা দক্ষিণা হাওয়া ?
ছেঁদো কথা কয়ে গেল দিন বয়ে আপন ছন্দে বন্দী,
পেয়েছ তৃপ্তি ! প্রবলের সাথে একতরফা সে সন্ধি |
. অজানাটা আজানাই-----
কেন ছোটাছুটি শোন মোটামুটি কোনখানে সে যে নাই |
. সে কেবল মরীচিকা !
বাহিরে শ্রান্তি ভিতরে ভ্রান্তি, না থাকাই তার থাকা |
প্রভাত হইতে যে ব্যথা কহিতে সাধিতেছে নিজ গলা,
সন্ধ্যাবেলাও ভগ্নকন্ঠে সে কথা হবে না বলা !
. কেন এ প্রয়াস ভাই,
যে কথা তোমার হল নাক বলা, নেই সেই কথাটাই |
অসীমেরে তুমি বাঁধিবে সীমায় অচেনারে লবে চিনে ;
নূতন নূতন কথার চলনে মরণে লইবে জিনে !
দুঃখেরে তুমি দেবে না আমল, ভাবি দেবতার দান ;
জীবনের এই কোলাহলে তুমি শুনিবে গভীর গান !
---- এ সবই রঙিন কথার বিম্ব, মিথ্যা আশায় ফাঁপা,
গভীর নিঠুর সত্যের পুর দিনে দিনে পড়ে চাপা !
. কে গাবে নূতন গীতা-----
কে ঘুচাবে এই সুখ-সন্ন্যাস---গেরুয়ার বিলাসিতা ?
. কোথা সে অগ্নিবাণী-----
জ্বালিয়া সত্য, দেখাবে দুখের নগ্ন মূর্তিখানি !
কালোকে দেখাবে কালো করে আর বুড়োকে দেখাবে বুড়ো ;
পুড়ে উড়ে যাবে বাজারের যত বর্ণ-ফেরানো গুঁড়ো !
খেলোয়াড়ি প্যাঁচ দূরে গিয়ে কবে তীরের মতন কথা,
বর্ম ভেদিয়া মর্ম ছেদিয়া বুঝাবে মর্ম-ব্যথা ?
. এ কথা বুঝিব কবে----
ধান ভানা কোন উঁচু মানে থাকে না ঢেঁকির রবে !
. বন্ধু কোথায় ছিলে ?
স্বপনের ঝোঁকে এক ঝাঁক পাখি মেরেছি একটি ঢিলে |
. উড়ে গেল পাশ দিয়ে,------
কিন্তু এবার ত্রাণ পাওয়া ভার---- মরিবে বাসায় গিয়ে |
বন্ধু গো, আর ভাঙায়োনা ঘুম, কত বার বল বলি ?
মার খেয়ে কবে হাড় গুঁড়ো হবে, যেমন অপথে চলি |
. বন্ধু , বন্ধু গো,------
গর্জিয়া আসে আমার পাশে কি মরণ-সিন্ধু ও ?
নিষেধ কর সে অত করে যেন শোরগোল নাহি করে ;
ঘুমের অতলে টেনে নিক বলে--- যেমন কুমিরে ধরে !
. পঞ্চম ঝোঁক
তোমাতে আমাতে বহুদিন হতে হয়নিক কোন কথা,
ইদানি, বন্ধু, পাঁজরে একটা ধরেছে নূতন ব্যথা !
ডাকি ডাক্তারে, শুনে ঘাড় নাড়ে, কবিরা
সহিয়াছি সাঁঝে মাখম সেখের মুখামৃতমা
. কিছুতে কমেনি ভা
এই প্রসঙ্গে তোমার সঙ্গে কথা কব দুটো
গোপনে তোমারে কহিব কারণ, ব্যাপার
গত বসন্তে গলা ভিজাইতে একটি চুমুক
. কি কব তাহার জো
বছর কাটিল, কাটিল না তবু বিষম নে
সহসা সেদিন----- বেজায় কুদিন, সন্ধ্যা অ
ঘাড় মোড় ভেঙে ড্রেনের ভিতর পড়িলা
কাদা মেখে উঠি নেশা গেল ছুটি, পাঁজরে
ঘুনে দেখি ভাই, একখানা হাড় খসিয়া প
. কথা নহে বলিবার
আপনিই তাই গোপনে সেখানে জুড়িনু ভে
উপরে মিলেছে বেমালুম হয়ে সিঙান চা
ভিতরে কিন্তু নর ভেড়া-হাড়ে দিনরাত
. হল হাড় জ্বালাতন
তোমায় আমায় প্রাণের কথায় হবে তাই
প্রাণের কথা যে কয়ে যাই নিজে--- বাজে
প্রাণের কথার অর্থ খুঁজিলে মিলে তব অ
. জানি জানি সব ফাঁ
তবুও খোঁচাই ; তোমা ছেড়ে মোর থাকে
আমার প্রাণটা যতদূর যায়, যতদূর যে
তুমি ছাড়া আর সাধ্য কাহার সেথা সাথে
জীবনের মূল খুঁড়িতে খুঁড়িতে যত তলাই
জীবনের ফুল খুঁজিতে যখনি আকাশটা
সকল সময় রহস্যময় ! তুমি রহ পাছে পাছে,
হে চিরপ্রহরী, তোমারেই প্রাণ বন্ধু বলিয়া বাঁচে |
. বার বার জাগরণে |
যন্ত্রণা যত বাড়ে অবিরত তোমারেই পড়ে মনে |
গুপ্ত ব্যথায় সুপ্তি না হয়, সন্ধ্যা তন্দ্রাভারে,
হেরিলাম কাল---- নির্জীব আমি পড়ে আছি এক ধারে ;
চারি পাশে ঘেরা অসীমের বেড়া নীলের প্রাচীর খাড়া,
আলো-আঁধারের গরাদে বসান অপার বিশ্ব-কারা !
এরি মাঝে ঘুরে তারকা তপন বহিয়া কাহার বোঝা ;
এরি মাঝে উড়ে কোকিল, পাপিয়া, হাঁড়িচাঁচা, কাদাখোঁচা !
. পথ নাই পালাবার ;
উঠে পড়ে ছুটে, ঘুরে ঘুরে লুটে, কেবল শ্রান্তি সার |
যুগযুগান্ত ভ্রমরক্লান্তি নিশ্চল কত গতি,
ফাঁকি খুঁজে কত মহা তপনের নিবিল আঁখির জ্যোতি !
. তবু নাই কারো ছুটি,
অভ্যাস ঘোরে চাও তত যাও, শুধু বেড়ার মিলে না পার |
মশার কামড়ে শুই পাশ ফিরে, নিশ্বাস লই টানি ;
দেখিনু সকলে সে অকূল ‘জেল’--এ টানিছে ঘানি !
কট্ কট্ কট্ চোখ বাঁধা গরু দূরে দূরে ঘুরে মরে,
খুঁটির চরণে বিশ্রামহীন বিশ্বের তেল ঝরে ;
. খুঁটি সে নির্বিকার !
ভাবটা এমনি, তেলে কিছু যেন প্রয়োজন নাই তাঁর |
অনেক দিনের আলাপ আমার, বন্ধু, তোমার সনে,
ঘানির উপরে শুতে দাও মোরে, গাহিব আপন মনে ;
. গাহিব ঘানির গান,-----
পাষাণের ভারে কেমনে যে বাড়ে তৈলের পরিমাণ |
. তোমারি সে পরামর্শে,
গত বত্সরে, প্রাণের ভিটায় পাইনু যে কটা সর্ষে ;
মনে ভাবিতেছি ঢেলে দিব আজ তোমার ঘানির খোলে,
ভীষণ পেষণে টোপাবে তৈল তোমারি পায়ের কোলে !
তন্দ্রার ভারে পাশ ফিরে চোখে পড়িল পুনর্বার,
আলো-আঁধারের গরাদে বসানো অনন্ত কারাগার |
উঠে চারিদিকে চিরবন্ধনে ক্রন্দন কোলাহল,
চরণে চরণে বাজে ঝন্ ঝন্ সুকঠিন শৃঙ্খল |
. বন্ধু, কি তব ফন্দি,-----
প্রহরে প্রহরে প্রহরায় ফিরে ---- তারাও কারারই বন্দী |
সবই কারাগার, কোথা যাবে আর, যত পারে দেয় উঁকি
শ্যাওড়া-তলায় ফুটে চেয়ে থাকে সখের সূর্যমুখী !
বন্ধু, আমারে খাটো পিঞ্জরে বন্দী করিয়া রাখ,
এত বড় খাঁচা------ মুক্তির খাঁচা----বিদ্রূপ করোনাক |
সীমা নাই যার, নাহিক দুয়ার, না বন্ধ নহে খোলা,
গাছে গাছে দাঁড় হাজার হাজার, দাঁড়ে দাঁড়ে দেওয়া ছোলা |
. এ ব্যঙ্গ কিসে সহি ?
কয়েদ যখন ---- ব্যবস্থা কর----- কয়েদীরই মত রহি |
. নচেৎ মুক্তি দাও-----
চারিদিকে এই অসীমের সীমা একেবারে খুলে নাও |
জীবনে মরণে কর্মে ও জ্ঞানে থাকিব না পরাধীন,
আমার আদেশ না পাইয়া যেন কাটে না আমার দিন ;
. নাহি যবে প্রয়োজন,
আমার মাথার আকাশের মেঘ করিবে না গরজন
বুঝি প্রয়োজন বহিবে পবন, প্রয়োজনে ঝরে বৃষ্টি,
আপনারে ঘিরে প্রতি মুহূর্তে গড়িব আপন সৃষ্টি |
. যবে পুনঃ হবে সাধ,
প্রাম ভরে কেঁদে ধুয়ে মুছে দেব নিজে-গড়া অপরাধ |
যদি ভাল লাগে, ভালবেসে তোমা ডাকিব বন্ধু বলে,
সমানে সমানে ছলনা-বিহীন দিন যাবে কুতূহলে |
চাহিতে মুক্তি হাসি আসে, হায় ! পাকাইতে কাঁচা হাতে----
কোন্ অধিকারে আমাকে সৃষ্টি করিলে জগন্নাথ ?
কেমনে আমারে বুঝাবে বন্ধু, কেমন বুঝি এ কথা,
কোমল গড়ান যে বুক, সেখানে কেন সুকঠিন ব্যথা ?
. মোর চেয়ে কেবা জানে ?
হাতুড়ি পেটার পূর্বে লোহারে আগুনে দেওয়ার মানে !
কিন্তু আমি যে মেপেছি বন্ধু, লোহার প্রাণের তাপ,
চৌদিকে তার দেখেছি ছড়ান ফুলকির অভিশাপ !
যে রয়েছে জেগে তার কাছে, ভাই, যুক্তিটা নহে খাঁটি,
ঝাঁঝরা গড়ান, পুড়িয়ে পিটিয়ে আস্ত লোহার পাটি |
. বন্ধু, করুণা কর,------
তন্দ্রার জাল ছিঁড়িয়া ডুবাও ঘুমেতে গভীরতর |
. ষষ্ঠ ঝোঁক
ক’বছর ধরে, বন্ধুর দোরে পড়ে আছি দিয়ে ধন্না,
বন্ধু বোধ হয় নারেন চিনিতে,
রাজা রাজড়ার কান্ড সকলি----
জয় জয় জয় সবাই চেঁচায় কন্ঠে
দেখাসোনা নেই তবু সকলেই ভ
যেখানে যা পায়, খুঁটে খুঁটে খায়,
না হয় আজিকে কাঙাল হয়েছি,
সকলের সাথে পাতাপাতি করে
হেথা হতে মোর পলাতে হইল,
অশ্রু জমায়ে গড়ায় যে আঁখি,
ঘুমের শরণ নিয়েছিনু আগে, সে
ঘুম আসা আর না আসা-- সেখা
উড়ে যায় আয়ু কালের আকাশে
খসে পড়ে বুঝি দেহের পালক,
ওগো কল্পনা, সাথে সাথে চল
কানে কানে তারে বলে দাও, ও
.