যাদের আমি দিলাম সবই . তারাই করে বঞ্চনা | যাদের থেকে মুখ ফিরানু . তারাই আমার সান্ত্বনা | যাদের উপর ভরসা করে ভাসাই তরী নদীর পরে ডুবলে তরী আমার কাছে সে তো আর রইল না |
হারিয়ে সব রিক্ত আমি . মন যেন রয় শক্ত অতি | ঝড়ের রাতে সাবধানেতে . নিবতে যেন না দেই বাতি | নূতন করে স্বপ্ন মাখা শান্তি দূত দেবে দেখা | সেই তো হবে এ জীবনের নূতন চেনা মোর সাথী |
মূল্য নিয়ে মারামারি মূল্য কোথায় আছে ? মূল্য আছে টাকার মাপে বৈষয়িকের কাছে | শিশুর কাছে দুই পয়সার পুতুল মূল্যবান | গবেষকের টেষ্ট টিউব, অনেক তার দাম | ছাত্র বলে কলেজ নোট অনেক দাম ভাই | বই তো তবু কিনতে পারি, নোটটি কোথায় পাই ! পুরুত ভাবে দামী পুঁথি হারিয়ে ফেলি পাছে | দাঁড়ি-পাল্লার অনেক মূল্য দোকানদারের কাছে | দুটি আনার ডেইলি নিউজ’ সামান্য তো জিনিস | রাজনীতিক বলবে এসে “ওর কত দাম জানিস” ? প্রাচীন টেরাকোটার মূল্য ঐতিহাসিক দেয় | ময়লা কাগজ দামী বলে তাও কুড়িয়ে নেয় | আসল দামী বলব আমি অনেক ভেবে চিনতে চিরকালের বাঞ্ছিত ধন যায়না পাওয়া কিনতে | স্নেহ প্রীতি ভালবাসা সবাই পেতে চাই | টাকার মূল্যে পাইনা এসব, অমূল্য যে তাই ||
আমার দেহের পাঁচটি ইন্দ্রিয় প্রকাশ্য থেকে আমার সেবা করছে আজ্ঞাবহ ভৃত্যের মত | এছাড়া আরও একটি ইন্দ্রিয় আছে আমার দেহের মধ্যে লুকিয়ে সে আমার মন | তাকে চোখে দেখা যায়না, স্পর্শে অনুভব করা যায়না | আধুনিক যন্ত্র তার অস্তিত্ব সন্ধানে ব্যর্থ | তবু সে আছে এই দেহের মধ্যে |
মনের জোর বলে লোকে যাকে চেনে তাতে জানতে পারি এই মনের শক্তি নাকি প্রচন্ড | প্রচন্ড এই শক্তি দিয়ে অসাধ্য সাধন সম্ভব | মনকে সুস্থ সজীব রাখলে নাকি, অসুখবিসুখ থেকে পাওয়া যায় পরিত্রাণ---- নইলে, আমার পঞ্চ ইন্দ্রিয় হয় বিকল | নানা ব্যাধি অধিকার করে দেহটিকে |
কিন্তু বড় অবাধ্য আমার মন | ছেলেবেলায় কতবার ভেবেছি ভাল করে পড়াশুনা করব, সবার থেকে ভাল রেজাল্ট করব | কথা শোনেনি আমার মন | বই থেকে উঠে পালিয়ে গেছে খেলার মাঠে | কতবার প্রতিজ্ঞা করেছি কারো সঙ্গে বিবাদ করবনা | মন সে কথাও রাখেনি | অসুস্থ হলে ডাক্তার বলেছেন---- মনকে শান্ত রাখবেন | কিন্তু অস্থির হয়ে ওঠে আমার মন, কারণে, অকারণে |
মাঝে মাঝে তাই প্রশ্ন জাগে, আমার দেহের মধ্যে বাস করলেও এই মনটি কি সত্যি আমার ?
ঢাকের বাদ্যি মোদের মনে . খুশীর ঝিলিক ছড়ায় যখন সেই খুশীতে আমরা দেখি . মোদের মাঝে তোমার আসন | এ অঘটন হয় কি কখন . আশুদা নেই পূজার মাঝে, নিত্য যাকে পাই আমরা . আনন্দেরই সকাল সাঁঝে |
মায়ের পায়ের তলায় নিলে . চিরকালের আসনটিরে | সবার কাছে বিদায় নিলে . যাদের দেক আপন করে |
“কাউকে কষ্ট দিই না যেন” . এই তো ছিল তোমার সাধ যাবার আগে মিটিয়ে গেলে . মনের কোণে সে আহ্লাদ |
আশুতোষ দত্ত , জি--১৩৯৮ চিত্তরঞ্জন পার্ক, মর্নিং ক্লাবের অন্যতম সদস্য | গত ২৪-৯-৯৫ মহালয়ার দিন মর্নিং ক্লাবের সদস্যদের আপ্যায়ণ কালে মায়ের মন্দিরের নীচে আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণত্যাগ করেন |
আমি খুঁজে ফিরি তাকে যে এসেছিল আমার স্বপ্নে | তার পরনে সবুজ শাড়ী, আঁচলে সোনালি ফসল | সিঁথির রেখায় ছিল বিজয়িনীর রক্তাক্ত সিঁদুর | কপালে তার মমতার পূর্ণিমার চাঁদ |
আজো খুঁজি তাকে শহরে গঞ্জে গ্রামে | খুঁজেছি রেল লাইনে পাশের সেই বস্তিতে, রাজধানী এক্সপ্রেসের দিকে তাকিয়ে থাকা পেটমোটা ল্যাংটা ছেলের অবাক চাহনীতে |
আমি খুঁজতে গেছি তাকে দিনের শেষে হাটের পথে দুর্মূল্যের সাথে লড়াই করে ঘরে ফেরা লোকের ভীড়ে | গেছি গ্রীষ্মের দুপুরে মাঠের পথে মধ্যাহ্ন ভোজন মাথায় সেই চাষী বধূর কাছে |
খুঁজেছি আমি তাকে আলো ঝলমল উত্সবে স্বার্থের ধোঁয়ায় অন্ধকার দেশসেবকের দরবারে | গেছি দাঙ্গা বিধ্বস্ত পল্লীগ্রামের কাছে পড়ে থাকা নির্দোষ বিকৃত লাশের পাশে |
আমি খুঁজে ফিরি আজও ক্লান্ত উত্সুক চোখে, যদি পাই তাকে ঐ নির্বাচনী সভায় হাঁ করে থাকা নিস্ফল আশ্বাস শুনতে মগ্ন নিরক্ষর বুভুক্ষু জন-সমুদ্রের মাঝে |
তোমরা কেউ কি দেখনি আমার প্রেয়সীকে ? হয়তো দেখেছ ! তবু মুখ তোমাদের বন্ধ | কিংবা তাকে লুকিয়ে রেখেছ প্রাসাদের কুঠুরীতে কেবল নিজের লালসার আহুতি দেবার জন্য |
আমি কত খুঁজব আর তাকে শহরে গঞ্জে গ্রামে ! তোমরাও এসো আমার সঙ্গে এই উন্মুক্ত প্রান্তরে | একবার সকলে মিলে সমস্বরে চিত্কার করে ডাকি তুমি কোথায় ? স্বপ্নে দেখা সেই স্বাধীনতা |
আগুনের হল্কার মধ্যে বদ্ধ ঘরে থেকে মন ছুটে যায় সেই ছেড়ে আসা দেশের কোলে | নয়ন মুদে দেখতে পাই সেই উঁচু গাছটার পিছনে দুপুরের পর থেকে যে কালো দৈত্যটা লুকিয়ে থেকে রাগে ফুলছিল আর ঘন মিশে কালো হচ্ছিল, সে এখন হামাগুঢ়ি দিয়ে আস্তে আস্তে মাথার উপর নীল চাঁদোয়াটাকে গিলে ফেলেছে | গাছের পাতারা নিঃশব্দে প্রতীক্ষা করছে একটা প্রলয়ের জন্য | মুহূর্ত পরে গাছের শাখা বেঁকিয়ে নারকেল পাতাকে একদিকে দুমড়ে দিয়ে সুপারির মাথা নুইয়ে বাঁশবনকে ঝাঁকুনি দিয়ে আছড়ে পড়ল সেই কালো দৈত্যটা | সাথে সাথে ঠান্ডা হিমেল হাওয়া ছড়িয়ে দিল | তখন আমার হারিয়ে যাওয়া দেশের জন্য মন কেমন করে |--------
বর্ষায়
রাতে যখন মেঘ ডাকে বিদ্যুতের চমক মিশিয়ে, বৃষ্টির শব্দ কুলারের শব্দকে ছাপিয়ে যায় | চোখ না খুলে বেশ দেখতে পাই জলের ফোয়ারা উঠান ছাপিয়ে আউশ ডাঁটার খেত ভাসিয়ে পাশের পুকুরে গিয়ে আছড়ে পড়ছে | আর একে একে গিলে খাচ্ছে পুকুরের সিঁড়িগুলোকে | টিনের চালে বৃষ্টির নাচের তালে তালে আতঙ্ক হামাগুড়ি দিচ্ছে শিশুমনে | এখন দিল্লীর পাকাছাদের নিচে থেকে মন ছুটে যায় বৃষ্টি ভেজা গ্রামের পথে |
শরতে
সাজান বাগানে রজনীগন্ধার ঝাড়ে ঝাড়ে সবুজ কাটির মাথা যখন ভরে যায় সাদা ফুলে, দোপাটির পাতার ফাঁকে ফাঁকে নানা রঙ উঁকি মারে, শিউলির তলায় সাদা চাদর বিছিয়ে দেয় | সন্ধ্যায় চিত্তরঞ্জন পার্কে হাঁটতে হাঁটতে শরতের পরিচিত ফুলের গন্ধ সঙ্গ ছাড়তে চায়না | আকাশে নীল রঙে চাঁদোয়ায় যখন সাদা মেঘেরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে খেলা করে, তখন জলে ভরা বিলে সাদা সাদা শাপলার মিষ্টি হাসি দেখতে আর কচুরিপানার নীল ফুলের সঙ্গে বিলের পাড়ে সাদা পাটকাঠির বাক্যালাপ শুনতে, জলে ভরা রাস্তায় পা ডুবিয়ে হাঁটতে বড়ই ইচ্ছা হয় | |
হেমন্তে
সোনালী ধানের পথ বেয়ে হেমন্ত আসে | আঙ্গিনায় থরে থরে জমে পাকা ধানের আঁটি | গাছের পাতারা একটি দুটি করে ঝরে পড়ে মাটিতে | বাতাসে কীর্তনের সুরে ভেসে আসে নিঃশব্দ রাতে কিম্বা ধান মাড়াইয়ের হ্যাট হ্যাট শব্দ | গায়ে মিষ্টিআমেজ মেখে মিঠে কড়া রোদ ওঠে ! ঘরে ঘরে নবান্ন উত্সবে আনন্দের ফোয়ারা | এই শুষ্ক দেশে বসে ভাবি, কোথায় হারিয়ে গেল সেই সোনালী হেমন্ত আর সেই সঙ্গে মধুর শৈশব |
শীতে
রাতে বদ্ধঘরে গায়ে গরম জামার বোঝা নিয়ে টি.ভি. তে তাপাঙ্কর দিকে চোখ রেখে কেঁপে কেঁপে উঠি | তখন ভাবতে ভাল লাগে সেই ছেলেবেলার শীতের দিন | রাতে পাট কাঠি দিয়ে খেজুর রস চুরি আর সকালে হলুদ রোদে বসে বাসি পিঠে খাওয়া, পরন্ত রোদে দল বেঁধে গোল্লাছুট খেলা | চুসি পিঠে পুলি পিঠে চিতই পিঠে আর সঙ্গে নবেন গুড়ের গন্ধ মিলেমিশে কেমন খুশির আমেজ ছড়িয়ে দিত সবার মনে | সেই খুশী দিন ফিরে পেতে মন কেমন করে |
বসন্তে
দখিণা হাওয়ায় দুয়ার খুলে দিয়ে বসন্ত আসে | শিরীষ বকুল আর অশোকের ডালি সাজিয়ে মনে আগুন জ্বালে শিমুল পলাশের নেশা | প্রকৃতি নিজেকে রমনীয় করে তোলে নতুন পাতার সবুজ সাজি সাজিয়ে | আমের মুকুলে মৌমাছির ভীড়, বেলি চামেলীর গন্ধ মেখে বসন্ত হাসে | ঋতুরাজের আগমনে মন কেমন করলেও জানি চিরকালের জন্য হারিয়ে গেছে আমার দেশ যেমন হারিয়ে গেছে আমার যৌবন, মধুর শৈশব |
বিশ্ব আজিকে নিঃশ্ব হয়েছে মানুষ হয়েছে ক্লীব স্বার্থের ধোঁয়া গগন ছেয়েছে মরিছে নিরীহ জীব | এই দুর্দিনে কোথায় সুভাষ এসো এসো তুমি ঘরে | তোমায় চিনিতে ভুল হয়েছিল তাই রয়েছ দূরে ? সারা ভারতের নেতাজী যে তুমি পরম সাহসী বীর | এই ক্লীবত্ব ধ্বংস কর গো, দেশ আজি অস্থির |
বিবেকানন্দের বিবেক শিষ্য, রবির আশিষ ধারা অরবিন্দের দেশ-প্রেম তোমাতে যে আছে ভরা ! মেধার খেলায় অবাক করিলে, ত্যাজিলে তা দেশতরে | দেশবন্ধুর চরণে সঁপিলে সারা প্রাণ মন ভরে | দেশের রাজনীতি তোমায় চেনেনি দেয়নি প্রকৃত স্থান | ভিক্ষালব্ধ এ স্বাধীনতায় দেশ ভেঙে খান খান |
দেশের মাটিতে প্রথম পুঁতিলে স্বাধীন পতাকা তুমি | সে গরিমা ভুলেছে এ দেশ কৃতঘ্ন ভারত ভূমি | শত্রুর দলে তোমার নামটি লিখিল সব শয়তান | তারাই বাজায় আপন ডঙ্কা কাঁপায়ে এ আসমান | দেশের জনতা চাহে না তাদের, তোমা পানে আছে চেয়ে | ফিরে এস তুমি আদর্শ যুবা আশার বাণীটি নিয়ে |
দেশ-প্রেমের শিক্ষা দাও আজ ভারত নেতৃগণে শিখাও তাদের ত্যাগের মহিমা নির্ভীকতার সনে | সত্যের পথে অবিচল থাকা, কর্মের পথে দৃঢ়, দেখাও প্রকৃত লক্ষের পথ আছে যত সব মূঢ় | অভিমান করে থেকো না কো আর চিরযুবা চিরজীবী | দেখাও আবার আশার আলোক রঙিন প্রেমের ছবি |
কবি প্রণাম ( ‘১৪০০ সাল’ কবিতার জবাব---কবির কথায় ও ছন্দে )
. আজি হতে শত বর্ষ আগে কে তুমি রচিলে বসি মধুর কবিতা রাজি . বহু অনুরাগে . আজি হতে শতবর্ষ আগে | সেদিনের বসন্তের প্রভাতের আনন্দের . পরিপূর্ণ ভাগ সেদিনের বনফুল বিহঙ্গের গীতি গান . সেদিনের যত রক্তরাগ---- অনুরাগে সিক্ত করি পাঠাইলে তুমি কবি, . আমাদের তরে . আজি হতে শতবর্ষ পরে |
তুমি যবে একবার খুলিয়া দক্ষিণ দ্বার . বসি বাতায়ণে সুদুর দিগন্তে চাহি কল্পনায় অবগাহি . ভেবেছিলে মনে . একদিন শতবর্ষ পরে সেদিনের কোন বাণী পল্লবিত কাব্যখানি . অম্লান ধ্বনিবে মর্ম পরে | তাই তুমি রাত্রি দিন সকল বন্ধন হীন . অক্লান্ত অধীর রচিলে মনের কথা পুষ্পরেণু গন্ধমাখা . কাব্যসূধা নীর | সে ভাষা জিনিয়া জরা ধ্বনিছে আজিও ধরা . আমাদের তরে . আজি এই শতবর্ষ পরে | সেদিনের উতলা প্রাণ হৃদয় মথিত গান . আজো প্রাণে জাগে বনছায়া পুষ্পরাগ হাসি কান্না অনুরাগ . পরিপূর্ণ ভাবে . রচিলে যা শতবর্ষ আগে |
. আজি এই শত বর্ষ পরে . এখন করিছে গান অনেক নতুন কবি . আমাদের ঘরে . তোমার অভিবাদন আনন্দে করি বরণ . কন্ঠে পরে বহু যত্ন ভরে . তোমার বসন্ত গান ছন্দবাণী লয়তান . আজো ধ্বনিছে মর্ম পরে | . হে কবি প্রিয়তম মুগ্ধ এ হৃদি মম . ভক্তি নম্র শিরে . প্রণমিছে শতবর্ষ পরে |
আরো এক সহস্রাব্দ পরে আমাদের এই সাজান ঘরে . থাকবে কারা ? ভেবে ভেবে হচ্ছি দিশাহারা | বিশ সতকের শেষ প্রান্তে এসে কি পেয়েছি এই শতকে ভাবছি অবশেষে---- উড়োজাহাজ, এটমবম্ , কম্পুটারে খেলা, গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে গেছে মোদের ভেলা | সব দিকেতেই আবিষ্কারের ছড়াছড়ি, খেতাব আর প্রাইজ নিয়ে কাড়াকাড়ি | ঘরে আজ রোগ দমনের হরেক রকম হাতিয়ার | তবু ভাবি কাদের তরে আমাদের এই আবিষ্কার?
বিশ শতকের শেষ প্রান্তে এসে . বলছি সবাই হেসে | কত রকম মারনাস্ত্র এই শতকের দান, চোখ রাঙিয়ে বলছি সবাই নেবো তোমার প্রাণ | হারিয়ে গেল বেড়ার ফাঁকে দোয়েল পাখি, গাছের ডালে ফিঙের নাচন আর কেন না দেখি ? ঝুটি বাঁধা কাকাতুয়া বিরল প্রাণী আজ | প্রহর গোনা হুক্কাহুয়ার ফুরিয়ে গেছে কাজ | এদের সব বিদায় দিয়ে আছি মোরা কাদের নিয়ে কাদের তরে মোদের ঘরে এত আয়োজন ? বাঁচবে কি আর সন্তানেরা কিম্বা পরিজন ? একটু খানি প্রাণ জুরান মুক্ত হাওয়া, একটু খানি বনের শীতল ছাওয়া, শয়ন কালে শান্ত পরিবেশ আমাদেরই তরে রেখেছ কি বিশ শতক তোমার আবিষ্কারের ঘরে ?
অনেক স্টেশন পেরিয়ে এলাম জীবন ট্রেনে চড়ে | পরিচিত মুখগুলি সব যাচ্ছে পিছে সরে | দুষ্টুমিতে ভরা জীবন যাদের সঙ্গে কাটিয়েছিলাম, ফেলে আসা স্টেশনেতে তাদের আমি নামিয়ে এলাম | হঠাৎ যদি দেখা হল কোনখানে কারও সনে, নামটি যেন চেনা চেনা, বাকী সবই বিস্মরণে | দুচার কথার পরে হল ঠিকানার বিনিময় | তাও আবার হারিয়ে গেল, হয়তো সবার এমনি হয় | নূতন নূতন স্টেশনে যারা চড়ল এসে মোর কামরায় গল্পগুজব খেলাধুলায় অনেকটা পথ পেরিয়ে যায় | সুবোধ, সুদেব, পারুল, বকুল, শ্যামল আর মধুময় লেখাপড়া হাসিঠাট্টা কিম্বা প্রেমের অভিনয় | তারাও আবার নেমে গেল ধীরে ধীরে অগোচরে| দত্তবাবু সেনদা এসে তাদের আসন দিল ভরে | মেশামেশি রেশারেশি প্রমোশন আর পোস্টিং এমনিভাবে তাদের সাথে কাটিয়ে দিলাম ক’টা দিন | তারাও পরে নেমে গেল ঠিকানাটা লেখা আছে | কারও কারও খবর পাই দেখা হলে কারও কাছে | এখন আমার জীবনভরে শুধুই আছে অবসর প্রাতঃভ্রমন সান্ধ্য আসর নাতিনাতনী ভর ঘর | পাঠ্য কিতাব অফিস ফাইল সবার থেকে এখন ছুটি | কোন খানে সভা হলে সবার সাথে সেথায় জুটি চিন্তা ভাবনা দায়িত্বভার ছেলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নাতিপুতির সঙ্গে কাটে মাসিক পত্র হাতে নিয়ে | শেষ স্টেশনে নামতে গিয়ে হোঁচট যেন না খাই আমি সুস্থ দেহে নামতে পারি, এই প্রার্থনা বিশ্বস্বামী |
. বি-১৬২, চিত্তরঞ্জন পার্ক . নয়া দিল্লী- ১১০০১৯ . ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০০
অগ্রজ বন্ধুবরেষু,
পরম বন্ধু লোকেশ রঞ্জন কোথায় হারিয়ে গেলে ? প্রভাতি মিলন তীর্থে তোমার দেখা কেন নাহি মেলে ? এই তো সেদিন স্বাধীনতা দিনে স্মরিণু শ্রী অরবিন্দে, শোনাতে এলেনা তাঁর মধুকথা তুমি তা কাব্যছন্দে | নব-বর্ষের প্রভাতী মিলনে জানালেনা প্রীতি বাণী, তোমার জ্ঞানের স্পর্শ সেদিন পাইনি একটুখানি | চিকিত্সকরূপে জীবন গড়েছ, দিলে কতজনে সেবা | কবিতা ও গানে সমান দক্ষ, সে কথা ভুলিবে কেবা | হিন্দু দর্শন, সেখানেও তুমি দিলে নিজ পরিচয় | বেদ উপনিষদের তত্ত্ব সভায় তুমি যে গো বিস্ময় ! শিশুকালে শেখা কবিতা ও গানে শোনায়েছ কতবার, অটুট স্মৃতির অধিকারী তুমি, কন্ঠ পরিষ্কার, মর্ণিংক্লাবের তুমি ছিলে প্রাণ, ক্লাব ছিল তব প্রাণে | প্রতি প্রভাতে পেয়েছি তোমায় শ্রাবণে ও অঘ্রাণে আজ কেন তুমি ছেড়ে দিলে ক্লাব, কোন অভিমান ভরে ? নাকি কৌতুক আমাদের সাথে, বলনা সত্যি করে |