কবি যোগমায়া দেবীর কবিতা
*
দয়াময়ের চরণাশ্রয় প্রার্থনা
কবি শ্রীমতী যোগমায়া দেবী

কোথা হে করুণাময় জগতের পতি,
কৃপা দৃষ্টিপাত কর অধীনীর প্রতি।
পাপেতে জড়িত আমি রহিতে না পারি,
কেমন পাইব পিতা তব প্রেমবারি।
অনাথের নাথ তুমি নির্ধনের ধন,
ভক্তি-পুষ্প দিয়া নাথ পূজিব চরণ।
সবিনয়ে করি পিতা এই নিবেদন,
তোমার চরণ তলে থাকে যেন মন।
কেমনে পাইব প্রভু তব দরশন,
হৃদয়ে আইলে তুমি জুড়াব জীবন।
তোমার দয়ার আমি কত দিব সীমা,
যে দিকে ফিরাই আঁখি তোমারি মহিমা।
করুণা করিয়া পিতা এস হৃদাসনে,
বারেক হের হে নাথ এ অধীনী জনে।
সংসারের ভার আর সহেনা এ প্রাণে,
শীতল করহে নাথ প্রেমবারি দানে।
তোমায় নিমেষ মাত্র ভুলে নাহি থাকি,
দয়াময় নাম যেন হৃদয়েতে রাখি।
পাপেতে জড়িত আমি কত রব আর,
থাকিবে জীবন পিতা চরণে তোমার।
করুণা করহে পিতা পাপী জীবগণে,
পুলকে প্রফুল্ল আমি থাকি দরশনে।
তোমার দয়াতে আমি হতেছি পালন,
তুমি পিতা দয়াময় জীবের জীবন।
তোমার দয়ার পিতা নাহি সমতুল,
পূজিব চরণ পিতা দিয়া প্রীতি ফুল।
তোমার দয়ার পিতা কে করিবে শেষ,
দয়াময় জ্ঞানী মূর্খ না কর বিশেষ।
আমি পিতা জ্ঞানহীন এই ভিক্ষা চাই,
তোমার চরণে পিতা যেন ঠাঁই পাই।

.        *************************  

.                                                                              
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
ভারত সংস্কারক বাবু কেশবচন্দ্র সেন
কবি যোগমায়া চক্রবর্তী

কোন এক মহামতি,                দেখে ভারতের গতি
ভারত সংস্কার সভা করেন স্থাপন।
ধন্য সে সাধুর চিত,                  মঙ্গল ভাব পূরিত,
নিয়ত সত্কার্য্য করি আনন্দে মগন॥
সভা স্থাপিত করে,                দুঃখীর হিতের তরে,
পঞ্চ বিভাগেতে তাহা করেন বিভাগ।
নিজ সুখ পরিহরি,                পিতার আদেশ ধরি,
পরহিতে দিবা নিশি কত অনুরাগ॥
এমন হিতার্থী বন্ধু,                দেখিনা দেখিনা কভু,
নারীকুল উন্নতিতে সতত চিন্তিত।
ভারত সন্তান হেন,                  হলে দুই এক জন,
ভারত উন্নতি তবে হইবে নিশ্চিত॥
ভারত মঙ্গল তরে,                 কত কষ্ট সহ্য করে,
অপার জলধি তরে ইংলণ্ডে গমন।
রাজমাতা সন্নিধানে,                 ভারতের কন্যাগণে,
দুঃখের কাহিনী তিনি করেন বর্ণন॥
শুনিয়া কন্যার গতি,                জননী কাতরা অতি,
করেন উত্সাহ দান হেন সাধু জনে।
আর যত কুৎসিত,                 ভারত চলিত রীত,
দৃঢ় মনে সযতনে যত্ন উচ্ছেদনে॥
ধন্য ভ্রাতঃ তব চিতে,              নারী কুল উদ্ধারিতে,
না জানি কতই চিন্তা হতেছে উদয়।
বুঝিলাম এত দিনে,                  অবলা দুঃখিনীগণে,
জ্ঞান ধর্ম্মে অলঙ্কৃত হইবে নিশ্চয়॥
ভারত সংস্কার তরে,             কার্য্যভার লয়ে করে,
কতই নিয়ম তুমি করিছ মনন।
সুউপায় করি ধার্য্য,              আরম্ভিলে সভা কার্য্য,
অবশ্য হইবে তব বাসনা পূরণ॥
ওগো! মাতা বঙ্গ ভূমি,                এমন সন্তান তুমি,
যে দিনেতে রত্ন গর্ভে করিলে ধারণ।
সেই দিন হতে গত,                    তব দুরবস্থা যত,
বুঝিলাম সমুদিত সুখের তপন॥
যাঁহার করুণা গুণে,                     সাধুর হৃদয়াসনে,
পর উপকার ব্রত সদা বিরাজয়।
চরণে প্রণাম তাঁর,                    কর সবে বার বার,
ভক্তিভাবে যত আছ বঙ্গবাসি চয়॥
বঙ্গের রমণী যত,                      হয়ে এস একমত,
কৃতজ্ঞ কুসুম হার গাঁথি যত্ন করে।
আনন্দ মনেতে দিই সে ভ্রাতার করে॥

.        *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর