কবি জ্যোতিষ্মতী দেবীর কবিতা যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে। |
কামনা রাণী জ্যোতিষ্মতী দেব ওহে গুণময় শ্যাম! কেন হে নিদয় হয়ে মোরে হলে বাম ? সতত সোহাগভরে, বামে লয়ে শ্রীরাধারে, লিখেছ হে শিরোপরে রাধা রাধা নাম | জ্যোতির্ম্ময়ী শ্রীশ্রীমতী, বিতরিছে অঙ্গজ্যোতি, লভি সে কিরণ-দ্যুতি রাধানাথ নাম || প্রেমভাবে প্রাণভরা, প্রকৃতি সে পরাত্পরা, নাহি জন্ম মৃত্যু জরা সকাম নিষ্কাম | খেলিতে প্রেমের খেলা, ব্রজধামে ওহে কালা! ভুলাইলে ব্রজবালা ত্রিভঙ্গিমঠাম | বিষম বিরহ-তাপে, জ্বলে ছিলে সে উত্তাপে, কেন তবে এ বিপাকে ফেল অবিরাম ? বিনয়ে কহি কাতরে, রেখ নাথ! অভাগীরে, তোমার চরণ-তলে ওহে গুণধাম! জীবনের পর পারে, মিলাইও প্রাণেশ্বরে, দুঃখ জ্বালা যাবে দূরে পূরে মনস্কাম | . **************** উপরে মিলনসাগর |
বনফুল রাণী জ্যোতিষ্মতী দেব হায়, হইতাম যদি আমি বনফুল | নীরবেতে বনমাঝে, ফুটিতাম প্রতি সাঁজে, উচ্ছ্বাসে ভরিয়া হৃদি হতাম আকুল || আর নাহি চাহিতাম কিছু ভালবাসা | কাহার পরশ তরে, হৃদয় না যাচিত রে, হত না যাতনা প্রানে হইয়ে নিরাশা || তবে সাধ না হইত কার দরশন | এ নয়ন সচকিত, না হইত অবিরত, বিজন গহনে হত নীরবে পতন || সদা আশার হিল্লোলে না নাচিত প্রাণ | কাহার প্রেমের লাগি, নিশিদিন নাহি জাগি, করিত না এ অভাগী দিন অবসান || কভু অদূরেতে শুনি পাতার মর্ম্মর | উত্কর্ণ শ্রবণে হায়, শুনিত না সদা তায়, দহিত না নিরাশেতে সতত অন্তর || বনেই ফুটিত বনেই ঝরিত তবে | সুশোভিত কাননেতে, না ফুটিয়া হরষেতে, শুকায়ে নিরাশা-তাপে যেত না নীরবে || প্রকৃতির বুকে যে গো হইয়া বিলীন | কুসুম-জনম সার, করিতাম বার বার, ঝরিতাম ফুটিতাম সুখে প্রতিদিন || অনাবিল স্বার্থশূণ্য হত এ হৃদয় | প্রণয়-পরাগমাথা, তাহে না যাইত দেখা, পরতে পরতে লেখা সর্ব্বস্থানময় || দেবতা উদ্দেশে হত নিয়োজিত মন | রহিয়া কুমারী বালা, জীবনের সারাবেলা, ভজিতাম অন্তরেতে বিভুর চরম || . **************** উপরে মিলনসাগর |
বিরহ-নিশি রাণী জ্যোতিষ্মতী দেব উঠিয়া বসিয়া, পথ নিরখিয়া চমকি চমকি চাই | বিগত রজনী, হইল সজনী, বঁধুয়া আসিল নাই || হয়ে উত্কন্ঠিতা, বিরহব্যথিতা, নিশি করি জাগরণ | নিশি অবশেষে, আবেগ অলসে, নাহি এল সেই জন || কোথায় সজনি, কোথা গুণমণি, আমার হৃদয়চোর ? আমারে ছলিয়া, গেল পলাইয়া, সকলি হরিয়া মোর || করিয়া যতন, করিনু চয়ন, হৃদয় কুসম সম। গাঁথিনু যে মালা, নয়ন উজলা, সুচিকন মনোরম || শুকাইল মালা, বাড়িল যে জ্বালা, পোহাল বিরহ-নিশি | সে অস্ত সাগর, ডুবে শশধর, ঊষার আলোকে মিশি || ছিল গো যামিনী, চন্দ্রমাশালিনী, জ্বালাইতে অভাগীরে | রজত ধারায়., ভাসায়ে ধরায়, লুকাইল ধীরে ধীরে || কি সুন্দর রাতি, কি জোছনা ভাতি, উছলিল কূলে কূলে | ভাঙ্গা মেঘগুলি, নানা ঢেউ তুলি, চলেছিল দুলে দুলে || গগনেতে শশী, হাসি মৃদু হাসি, করে মোরে উপহাস | বৃথায় জীবন, ধরিলে এখন, কিছার জীবন-আশ || সজল নয়ন, হৃদয় স্পন্দন, অবিরত হয় মম | শিরে হানি কর, কাঁপি থর থর, না আসিল প্রিয়তম || ফেলিলাম খুলি, ভূষণ সকলি, ত্যজিনু বলয় দূরে | আসিল বিরহ, দুর্জ্জয় দুঃসহ, আমার হৃদয়পুরে || ছিঁড়িল সে মালা, যাহা সারাবেলা, জীবনে ছিল গাঁথা | ফেলিনু দলিয়া, প্রীতি প্রেম মায়া, কত যে আশার কথা || উদিল অরুণ, দুলাইয়া ঘন, বহিল প্রভাত-বায় | আছি যার আশে, এ ছার আবাসে, সে জন এল না হায়! কোথা সেই নিধি, খুঁজি নিরবধি, আমার কণ্ঠের হার | দেহের জীবন, হৃদয়-রতন, চাহি তারে আনিবার || এ বিরহবাসে, পরাণ উদাসে, না পারি বাঁধিতে মন | খুঁজিতে তাহারে, বিশ্ব চরাচরে, ছুটিতেছে অনুক্ষণ || বিরহ-নিশিতে, মম এ হৃদেতে, পেয়েছিগো যত ব্যথা | গিয়া তার পাশে, মিলন-আবাসে, সুখেতে রহিব তথা || . **************** উপরে মিলনসাগর |