কবি কনক মুখোপাধ্যায়ের কবিতা
*
একুশে ফেব্রুয়ারি
কবি কনক মুখোপাধ্যায়

সেদিন পদ্মার ঢেউয়ে জ্বলন্ত সূর্য উত্তাল,
লক্ষ কণ্ঠে গর্জে ওঠে দুর্জয় একুশে ফেব্রুয়ারি---
ডেকেছিল মা-মা বলে আপনার স্নেহময়ী মাকে,
মাটির বুকের পরে রেখেছিল রক্তের স্বাক্ষর।

ঘুমিয়েছে রফিক – জব্বর - বরকত – সালাম. . .
কবরের মাটি ছেয়ে ফুটে আছে শত শত ফুল,
উদাস বসন্তে ফোটে মৃত্যুহীন শহীদের মুখে,
এপারে-ওপারে বাঁধা বন্ধুর প্রাণের পরশে।

.  
            **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
সমুদ্র কাঁদেনি
কবি কনক মুখোপাধ্যায়

ঘুম এলনা রাত্রির চোখে
পাঁজর ভাঙা ব্যথায় কুঁকড়ে উঠল
অন্ধকারের বিড়ম্বিত সত্তা,
অসহ্য যন্ত্রণার আর্তি নিয়ে আকাশ ভেঙে পড়ল
সমুদ্রের কান্নায়।

রৌদ্র-করোজ্জ্বল প্রসন্ন সকাল
দু’হাত বাড়িয়ে গ্রহণ করল
সহস্র বজ্রমুষ্ঠির রক্তিম অভিবাদন,
শুনতে পেল জনসমুদ্রের মহান গর্জন
নীল আকাশে ছড়িয়ে পড়ল ধূলির ঝড়।

তখন
সমুদ্র বিদ্রোহী উত্তল,
সমুদ্র কাঁদেনি!

.   **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
নেশা
কবি কনক মুখোপাধ্যায়

তখন ওর ফুল ফোটানোর নেশা।
কী গভীর বেদনাবিধুর আশ্চর্য সেই নেশা!
ঝরে গেছে সব ফুল
আগুনে ঝলসে গেছে সবুজ পাতাগুলো
মাটি ভিজে গেছে রক্তে,
মাটির গভীরে ভালবাসার কোমল অঙ্কুরেরা
ধর্ষিত মাতৃগর্ভের রক্তাক্ত মাংসপিণ্ড।
ও তখন একমনে ওর ক্ষতবিক্ষত হাতের চোয়ানো রক্তে
রাঙিয়ে তুলছে মৃত গোলাপের পাপড়িগুলো,
চোখের জলে ধুয়ে ধুয়ে
ফুটিয়ে তুলছে এক অপরূপ সবুজ।
ওই শক্ত পাথরের উপর মুখ থুবড়ে পড়া লোকটা---
যাকে হত্যা করে ফেলে দিয়ে গেছে
আইন শৃঙ্খলার ধ্বজাধারীরা---
বেঁচে আছে কিন্তু।
লোকটা আসলে ক্ষ্যাপাই হবে---
আর সত্যি বলছি--- ক্ষ্যাপা লোকটার ওই এক নেশা,
ফুল ফোটানোর নেশা ওর।

.   **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
তোমার শেষ কথা রাখতে পারিনি
কবি কনক মুখোপাধ্যায়

থেমে আসছিল তোমার সব কথা
দু’চোখে টলমল ব্যাকুলতা
শেষ বারের মতো
প্রাণপণ চেষ্টায় টেনে টেনে বলেছিলে
চল, বাড়ি যাই---
তাড়াতাড়ি গুছিয়ে নাও,
দেরি করনা যেন
বাড়ি চল---
বাড়ি-বাড়ি আমাদের বাড়ি যাব।
তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে
আমি তোমায় কথা দিয়েছিলাম,
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই যাব, বাড়ি নিয়ে যাব তোমাকে।
এই তো, আর ক’টা দিন,
ডাক্তাররা ছেড়ে দেবেন
তারপরই বড়ি নিয়ে যাব তোমাকে,
বাড়ি---
বাড়ি--- আমাদের বাড়ি,
আমাদের সেই ঘর--- নিয়ে যাব তোমাকে।

ফিরে এসেছি---
বাড়ি---
একা
তুমি এলেনা সাথে---
কাখতে পারিনি তোমার শেষ কথা,
আমি পারিনি তোমাকে
বাড়ি ফিরিয়ে আনতে,
তোমার শেষ কথা
রাখতে পারিনি---।

.   **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর