প্রণাম কবি কনকভূষণ মুখোপাধ্যায় ( কবিতাটি কবির জ্যেষ্ঠপুত্র কাঞ্চনকুমারের নামকরণ ও অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠান উপলক্ষে লিখেছিলেন ১০ই চৈত্র ১৩৪৩ এর আগে বা ১৯৩৭ সালের মার্চ মাসে। )
"চারণ" (১৯৩০) কাব্যগ্রন্থের উত্সর্গ-কবিতা কবি কনকভূষণ মুখোপাধ্যায়
শ্রীযুক্ত শক্তিপদ ভট্টাচার্য্য অগ্রজপ্রতিমেষু ---
মনে পড়ে একদিন জীবনের প্রভাত-বেলায়, মেবার-কাহিনীগুলি ধরেছিলে সম্মুখে আমার ; তখনো ফোটেনি আলো আঁখিপাতে আছিল আঁধার --- বিকাশ-উন্মুখ হিয়া কোরকের স্ফুটন-মেলায় !
তুমি এলে বাঁশি হাতে কন্ঠে ভরি’ মহিমার গান আঁকিলে সে কোন্ ছবি ছিলনাক মুখে যার ভাষা ! নিখিল পাগল-করা অপরূপ যার ভালোবাসা -- সেই মোরে ভুলাইল ; সে মাধুরী ভরিল পরাণ !
তখনো কি জানিতাম এই ছবি মনে একদিন স্মৃতির মালিকা গাঁথি দোলাইবে কবে মোর মন ! প্রকাশ-ব্যথার শেষে মোর মনে আসিবে ‘চারণ’---- বিস্ময়ে হেরিনু আজ আসিল সে হারানো নবীন |
মধুর স্মৃতির মালা গাঁথি’ তাই দিনু তব করে--- জানি মোর ক্ষুদ্র দান, তবু তুমি লবে সমাদরে |
চৈতক-চবুতর কবি কনকভূষণ মুখোপাধ্যায় [ চারণ (১৯৩০) কাব্যগ্রন্থ থেকে ]
. ১৬৩২ সংবত ( ১৫৭৭ খ্রীষ্টাব্দে ) হল্ দিঘাটের যুদ্ধ হয় | রণশ্রমে ক্লান্ত প্রতাপসিংহকে পৃষ্ঠে লইয়া তাঁহার প্রাণরক্ষার্থ পরম প্রভুভক্ত অশ্ব চৈতক পর্ব্বত-প্রদেশের দিকে ধাবিত হইল | বীরত্বের মহিমা পশু চৈতককে কতখানি আকৃষ্ট করিয়াছিল এবং এই রাজপুতবীরধর্ম্ম সে কি ভাবে গ্রহণ করিয়া আত্মত্যাগ করিতে পারিয়াছিলেন এবং সেইস্থলে কি করিয়া প্রতাপ ও শক্তের মিলন হইল, সেই কাহিনী নীচের কথা-কবিতাতে বর্ণিত হইয়াছে |
. আর কহে বার বার--- কোথায় চলিলে জীবনের সাথী---- বহে তার চোখে ধার | প্রতাপের হেন ব্যথা-ক্রন্দন বাজে শক্তের বুকে-- শেষে সে দাঁড়ায় প্রতাপের পাশে মৌন-নীরব মুখে |
. কহিল প্রতাপ এ কি--- আসিয়াছ মোরে বধিতে শক্ত’ এ মহা সুযোগ দেখি’ ? নাও ভাই প্রাণ শিরোপা পাইবে, বাদ্ শাও এই-চায়-- ভায়ের রক্তে মিটে যদি তৃষা মোর খেদ নাহি তায় !
. শক্ত ফুকারি’ ওঠে--- নয়নে তাহার বীর মহিমার অশ্রুর মেঘ ফোটে | যোড়পাণি করি’ কহে সে প্রতাপে, প্রাম নিতে আসি নাই--- চরণে তোমার আজিকে নিজেকে সঁপিতে এসেছি ভাই ! যা কিছু ভায়ের ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষম’ দাদা স্নেহ দিয়া----’ প্রতাপ উঠিয়া বাঁধিল শক্তে দুহাতে আলিঙ্গিয়া | লুটায়ে শক্ত প্রতাপের পায়ে, কহিল, ‘চরণে র’বো অনুজেরে আর ঠেলিওনা দূরে চরণের ধূলা লবো |’
. বীর-হৃদয়ের টানে --- বীর ভাই আজ বীরেরে বাঁধিল অভিমান অবসানে | উপরে পাহাড় নিন্মে তটিনী বহি যায় তর তর, এরি মাঝে দু-হুঁ ভাই-তে বাঁধিল চৈতক্-চবুতর |*
*মহারাণা প্রতাপসিংহের প্রাণপ্রিয় বিখ্যাত নীল-অশ্ব চৈতকের স্মৃতি-বেদী |