কবি কনকভূষণ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা
*
সমর্পণ
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়

বিল্ কুল্ বুল্ বুল্ ফিঙ্গে দেয় দুল্
মাছরাঙা সিমটুসি নাচে নিমফুল |
কোকিল কূহুরে কানে কল-কাকলী ,
গুন-গুন-গুঞ্জরী গাহিছে অলি |
কাকাতুয়া কাক নাচে ঘুঘুর ডাকে,
চড়ুই বড়ুয়ে চড়ে চাইছে কাকে ?
শ্যামলা জঙ্গলা শ্যামা শ্যামকে খোঁজে,
দোয়েল কোয়েল লাজে নয়ন বোঁজে !
চাতক চেয়েই রয় আকাশ পানে,
আহাকার সাহারা’র তিয়াসা আনে ?
শাখী পরে শাশ্বত প্রেম- পিয়াসী,
‘বউ কথা কও’ বলে বাজায় বাঁশী !
দিল ভরে খিল খিল হাস্না হাসে,
টগর চাঁপার চারা মেদুর ভাসে,---
কয় সবে, -- ‘কেন হেন হাসির খেলা ?
পাগল পারুল বলে প্রেমের মেলা !
পিয়া-পিউ-পিউ তানে গাহে পাপিয়া,
আকাশে লহরী তার উঠে জাগিয়া !
চাঁদিনীতে নিশামণি ফুলিয়া খানি
তারা’র প্রেমের হাটে বিলায় মনি |
ওম্ ওম্ বব্-ব্যোস্ ছড়ানো গানে,
অবশ নিখিলরাণী কাহার টানে ?
বেমালুম চুমু ঘুমে বঁধূর-চুমে,
প্রাণে মনে শুধু আজ বঁধুরে চাওয়া ,
ভূলায়ে আলোয় মোরে ভূলনা বঁধু ?
সঞ্চিত প্রাণে মোর উথলে মধু |
চাহিনা’ক কিছু নাথ শুধুই, হাসি,
মন-বন মাঝে যেন বাজিও বাঁশী
সব জ্বালা জুড়াইবে বাঁশীর সুরে --
মিলনে’র গানে প্রাণ উঠিবে পুরে !
দিও বঁধু হৃদে প্রেম অমিয় ঢালা,
বঁধু মোর সখা মোর নিখিল আলা ||

.       **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
নবীনের গান
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
১২ই ভাদ্র, ১৩৩৪, বর্দ্ধমানের “শক্তি” পত্রিকায় প্রকাশিত

জ্বরায় জীর্ণ পল্লীকে সবে ব’ল না’ক আজ পল্লীরাণী
দুইটী কালির আঁচড় টানিয়া ক’রনাক শেষ তাহার বাণী
বক্ষে তাহার জমাট কাঁদন চক্ষে তাহার নয়ন জল
ছেলেরা তাহার সহরে’র কোলে কোথা আজি তার শোকের বল ?
আকুল সেথায় পল্লীর তরে মনকে পাঠিয়ে আন্দামান্
হিংসা ও দ্বেষে দেখে ও দেখেনা সোনার পল্লী আজ শ্মশান
শুষিছে মায়ের বুকের রক্ত লুঠিছে মায়ের শষ্য সব
জমীদার নিয়ে যমের দন্ড শাষিয়া নাশিছে তার ভিত
চুল্লীর মত ঝিল্লীর’ ঝিঁ-ঝিঁ ব্যথিয়া উঠিছে পল্লীময়
বাসভূমি সব জঙ্গল হ’ল শিবাকূল বাস উঠিয়া রয়
হরিনামে যেথা হত মাতোয়ারা সন্ধ্যা বেলা জ্ঞান
অমার আঁধারে সে সব লুপ্ত গুপ্ত গন্ধী বৃন্দাবন
অবোধ শিশুর রাখালিয়া সুর ঢালিত কর্ণে সুধার ধার
ধেনু হারা তার বেনু বাজাইয়া রচিত প্রেমের অশ্রুহার
কহিছে সবাই একটী কথাই ‘পল্লী’র বুকে ফিরিয়া যাও
তে ‘তালায় বসি গড় টানি আরামেতে দিয়া গুম্ফে তাও
পানাভরা যত খানা ডোবা সব আজিকে মায়ের অলঙ্কার
মোটর হাঁকানো মস্তান সারা সহরেতে করে অহঙ্কার ||
উন্নতি হবে কলমের ---- উন্নতি হবে বক্তৃতায়
কর্ম্ম বিমুখ ভাবক এ’জাতি তাই’না একটু আরাম চায় ?
কতদিন ভাই এমন করিয়া বাঁচিয়া রহিবে মরণ বরি ?
তুচ্ছ ভূবনে মানুষের মত রহ নিজ শির উচ্চ করি
দর্প লইয়া রহিবে দর্পী পশিবেনা ব্যথা কর্ণে তার
আমাদের লাগি আপনা বিলাব ঘুরাতে দিন পল্লীমার
আলোকে ভাসিবে জননীর মুখ হাসিবে তাহার মলিন বেশ
বাংলা’র নবীনের গান বহাবে নূতন গানের রেশ ||

.               **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
প্রেমের-টানে (গান)
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
১৩৩৫, শ্রাবণ সংখ্যায় পূর্ণিমা পত্রিকায় স্বরলিপি সহ প্রকাশিত

নিখিল-জুড়ে তোমার খেলা
.        প্রেমিক তব, প্রেমের টানে
জ্যোছনা রাতে আলোর সাথে---
আমি ---- ছড়িয়ে পড়ি তোমার গানে |
শ্যাঁওল-মাটীর আঁচল পরে,
প্রেমের লহর অঝোর ঝরে,
বিলাবে প্রেম থরে থরে --
.          আপন মনে প্রেমের বানে |
শিউলি ফুলে হরষ-ঢালা
.          গোলাপ বেলা আলোয় ভরে--
মিলন-মধু , রাতের বঁধু,
.           আলোয় এ’স স্বপন পরে ?
দেখি কেবল, রয়ে রয়ে ;
কি’ সুর ‘প্রাণে আনে বায়,----
.            চপল-বায়ে তোমার দানে  |
.            প্রেমিক ওগো প্রেমের টানে ||

.            **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
ভাদর
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়


ভরা ভাদর’ ,  আদর করে
.           ডাক্ ছে কারে ?
.           অঝোর ঝরে |
.           আদর করে?

সজল হাসি, ছড়ায় আলো,---
.           লাগলো ভালো---
.           চোখ জুড়ালো |
.           উজল আলো |

ঢেউ- উথলে আঁখির কূলে,---
.            উঠছে মম,--
.            পরান দূলে  |
.            আপন ভূলে |

হায়রে সখি’ কোথায় তুমি  ?
.            তামাম্ খুসি,---
.            তোমায় চুমি |
.            কোথায় তুমি ?

.            **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
জ্যোছনা
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
১লা বৈশাখ, ১৩৩৪, বিরূডিহা, রাত্রি ৯টা ||

বিশ্বের লাবন্য-মধু বক্ষে নিয়া কে’ তুমি সুন্দরী ?
করিছ পাগল আঁখি, অপরূপ রূপে মরি মরি  !
হাসিছে আপন মনে স্তব্ধতায় নীলিম্ আকাশ
অসংখ্য তারা’র সাথে বিতারিছ তুমি তৃপ্ত হাস্ ---
মাটীর ভূবন ছেয়ে | প্রেমে তব মুগ্ধ হ’ল চাঁদ |
তোমার মোহিনী মায়া বিশ্বে একি পাতিয়াছে ফাঁদ ?
মুগ্ধ কবি’ হেরি তব নমনীয় সৌন্দর্য্য অপার |
হে’ দেবী করুণাময়ী, হে’ জ্যোছনা সাধনা আমার ?
কত ব্যথী ফেলে যায় তব বুকে তপ্ত আঁখি জল---
রেখে যায় দহনের জ্বালা | তুমি সবে করহ সজল--
জননীর স্নেহাস্পর্শ দিয়া | হাসো তুমি বক্ষে চাপি ব্যথা |
যুগে যুগে পূজে তোমা কবি | হৃদয়ের জানে অমূল্যতা
যে’তব প্রশান্ত বুকে পাইয়াছে অমৃত-সন্ধান ?
পূর্ণতার মহানন্দে পূর্ণ’  তার জীবন-- অম্লান |

.              **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর