কবি কনকভূষণ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা
*
বাউল
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
২রা বৈশাখ ১৩৩৪, বিরূডিহা, ৫টা সকাল
পূর্ণিমা পত্রিকার দ্বিতীয়বর্ষ, ১ম সংখ্যায় প্রকাশিত, ১৩৩৪,

প্রেমে’র আনন্দে নিত্য যে উত্সব ছড়াইছে বাঁশী
সে গানে পাগল হলে  হে ভাবুক বাউল সন্ন্যাসী ?
বাহিরিলে স্কন্ধে নিয়া বৈরাগ্যের একতারা খানি,
স্বচ্ছন্দ জীবন-পথে | উপেক্ষিয়া লজ্জা-ভয়-গ্লানি -
সুন্দরে বরিলে প্রাণে জীবনের ধ্রুবতারা করি ?
প্রিয়তম-অভিসারে মনের গোপন পথ ধরি,--
মগ্ন হ’লে লীলা অভিলাষে | কখনো বা তরু তলে--
রচিলে প্রেমের অর্ঘ্য | আনমনে ভাসি অশ্রুজলে |
বিরহ-ব্যথিত গানে বিজ্ঞাপিলে মৌন আবেদন
নিস্তব্ধ গহন ভরি, সে’  ক্রন্দন তুলি শিহরণ
নিবেদিল বঁধূয়ারে | বিয়োগ-ব্যথিত প্রাণে কার |
তব গীত-মন্দাকিনী ঢেলে দিল সুধা অমরার !
তোমার চরণ-প্রান্তে কত ব্যথী জানাল প্রণাম |
হে’ মোর বাউল কবি ? প্রেমে তব পূর্ণ মনস্কাম ||

.               **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
রৌদ্র
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
৭ই বৈশাখ ১৩৩৪, বিরূডিহা, বেলা চারটা


হে’ রৌদ্র বৈশাখে তব কি’ ভীষণ ফুটে রুদ্র রূপ ?
প্রজ্জ্বলিয়া এ’  বিশ্বের দীনতার আবর্জ্জনা স্তুপ ---
তেজোদগ্ধ করিছ ভূবন |  হে’ ক্রিড়া পাগল
আপন লীলার ছন্দে বিশ্ব সৃষ্টি কর বিশৃঙ্খল,---
বেদন-আনন্দে মাতে | তৃত্য কর ভষ্মের শ্মশানে ---
মানবের অশ্রু ব্যথা জাগাইয়া তোলে তব প্রাণে,
জ্বালার উল্লাস নিয়া  জ্বলে ওঠ মাটির মরতে,--
সৃষ্টির নবীন গানে | শুষ্কতর প্রাণের পরতে ---
বিরহী’র হাহাকার মাঝে উঠিত ঝনিয়া,---

“শান্তি দাও মোরে প্রভু “প্রিয়তমে ভূলিলে কি প্রিয়া ?”
তাহাদের সাথে সাথে কেঁদে ওঠে ক্ষুধায় কাতর
মৃত্যুর কঙ্কাল সবে |  প্রকটিলে ভীষণ-সুন্দর --
নগ্নরূপ ধরি বিশ্বে | দুঃখ নিয়া বক্ষে সাহারা’র
এ’ বিশ্বে বাসিলে ভালো | মধুময় তে বঁধূ আমার ?

.               **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
নীলিমা
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
৩রা বৈশাখ ১৩৩৪, বিরূডিহা, রাত্রি ১১টা,
স্বদেশী বাজার পত্রিকায় প্রকাশিত

হে’ মৌনি তাপস মম হে’ উদার প্রশান্ত নীলিমা ?
লীলাঞ্চল বিছায়ে অসীমে ঘোষিছ কি আপন মহিমা
বক্ষে তব নাহি জ্বালা , নাহি ব্যথা মৃত্যু-অধীনতা
পূর্ণ তুমি গন্ধে গানে | আনন্দের নবীন বারতা --
মলয় হিল্লোল ছেয়ে এ’ বিশ্বে’র প্রাণের পরতে,---
সজীব রেখেছ তুমি | স্বপ্ন ঘেরা মাটী’র মরতে---
সৃষ্টি লীলা খেলিছ গোপনে | হে নীলিমা প্রশান্ত মহান
নির্জ্জন কান্তার হতে মেরুশীর্ষে ছড়াইছ গান --
স্বপন-আনন্দ ছন্দে | সৃজিয়াছ তুমি হে মায়াবী  ?
মানুষে’র মনে মনে প্রকৃতির রহস্যের দাবী |
অসীম নীলিমা ঘেরা অনন্তের নীল পারাবার,
মানবে ফিরিছে ডাকি আয় নীলে কে দিবি সাঁতার ?
প্রশান্তি লভিবি আয় হেথা মুক্ত বাতায়ন তলে
আয়-আয় নীলিমায় ?  বন্দী ভাসে নয়নের জলে ||

.               **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
ধরণী
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়

সৃজন দিনের জননী আমার ধরণী মানব মাতা |
কত মানবের ব্যথিত কাঁদন তব অঞ্চলে পাতা ?
রণজয়ী কত মহাবীরদের বক্ষে রেখেছ আঁকি ,
তাহাদের লাগি হে’মোর জননী অশ্রু ফেলিবে নাকি ?
কত বিরহীর ব্যথিত কাঁদন আজিও কাঁদিয়া ফিরে ---
স্মৃতির মালিকা কত জাতি গাঁথি, অশ্রু শায়র তীরে ,---
করে তর্পণ তাহাদের লাগি শহীদ হয়েচে যারা
দেশের ধর্ম্মে জীবন আসরে যাহারা সর্ব্বহারা,
মৃত্যুঞ্জয়ী সেই সেনাদের মরণের কঙ্কাল--
অট্টহাস্যে কাঁপায় ভূবন শিহরি চক্রবাল !
পায় নাই তারা মরণের কোলে একটু অশ্রুজল,
মরণ-হোরিতে রেঙে শুধু উষ্ণ বক্ষতল |
বক্ষ তাদের হিম হয়ে গেছে নিখিলের নীল বিষে
স্বান্তনা কোথা তাদের বন্ধু তৃপ্তি লভিবি কিসে ?
এই দুনিয়ার হাহাকার আর ক্ষুধিত কাঁদন নিয়া
ব্যথার সাহারা জ্বলিয়া গিয়াছে দেয় নাই চুমা প্রিয়া |
কহিতেছে সবে রুদ্ধ কন্ঠে হাসিয়া অট্টহাস----
রাক্ষসী তুই ধরণী গো কেন হানিলি সর্বনাশ ?
কেন আমাদের বিদায়ের বেলা দিলিনে একটু স্নেহ ?
শান্ত স্নেহের মধুর বচনে, একটু হাসিতে কেহ,---
ভরিলিনা বুক দুখ বিনিময়ে বিলালিনে কেউ মায়া---
তপ্ত নিশাস্ ফেলে যাই পুন আঁখির সজল ছায়া !
যদি কভূ মাতা মনে পড়ে তোর কাহার ও মরণ দিনে
কালের শিলায় এঁকে গেনু তাই মোদের মরণ চিনে ||

                                                   || ৪ঠা বৈশাখ ১৩৩৪ ||

.               **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
কবির চুমা
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
জ্যৈষ্ঠ , ১৩৩৫ পূর্ণিমা পত্রিকায় প্রকাশিত

কবি শুধু আনন্দেতে গেয়ে যায় মিলনের গান
হে’ প্রিয়া আমারে চুমি প্রেমানন্দে কর জ্যোতিস্মান্ !
হে’ সুন্দরী তোমা লাগি চিরন্তন মোর অভিসার ----
চলিয়াছে সৃষ্টি হতে | শ্যামলিয়া হে’ প্রিয়া আমার ---
লালসার সাথে কবি চুমা আঁকে কামেন্ধন দিয়া
পারেনা বিলাতে নিজে চুম্বনের প্রেমে সমর্পিয়া ||

.               **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর