কবি কনকভূষণ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা
*
পল্লী
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
১০ই বৈশাখ, ১৩৩৪, বিরূডিহা, বেলা দুইটা
,
যুগদীপ ও স্বদেশীবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত

শুষ্ক মরুভূ’র মত পল্লী আজ করিতেছে ধুঃ ধুঃ ----
স্মৃতির শ্মশাণে তার দারিদ্রের অট্টহাস্য শুধু,
আতঙ্কের সাথে সাথে তুলিতেছে ব্যথা শিহরণ
রিক্ততায় পূর্ণ করি | কেঁদে ফেরে মর্ম্মর ক্রন্দন !
প্রশান্ত শ্যামল-বনে জননীর অশ্রুঝরা-আঁখি,---
করেনাত’ কাহারে আহ্বান ? নীরব-প্রশান্তি আঁকি
সে যেন আঁখির জলে অতীতকে ফিরাবে আবার ?
চলেছে বন্দিয়া তাই, দৃপ্ত দুঃখে নমি বারম্বার |
ক্ষুধার্ত্ত মাগিছে অন্ন’ জল দাও কহে তৃষাতুর,
লক্ষ যুগ উপবাসী, কর মোদের ব্যথা-দুঃখ দুর ?
পুনঃ শুনি চিত্কারিয়া বিজ্ঞাপিছে সমস্বরে চাষী,
কাঁদাবি’ মোদের যদি তুই কেন সর্ব্বনাশী !
ভূবন ভোলানো রূপে আমাদের করিলি পাগল ?
অন্ধকার বৃন্দাবনে আমাদের নিতে অশ্রুজল ?

.     
          **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
কৌলিন্য
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
১০ই বৈশাখ,১৩৩৪, বিরূডিহা রাত্রি ৯.৩০
পূর্ণিমা পত্রিকার চৈত্র সংখ্যায় প্রকাশিত

বল্লালী খেতাপ মারা বঙ্গ ভরা এই যে কৌলিন্য ?
ব্যক্তিরে’ সে উলঙ্ঘিয়া এঁকে যায় আভিজাত্য চিহ্ন--
পুরানো বংশের ভিতে | হোক্’না সে মাতাল লম্পট
না থাক ব্যক্তিত্ব তার ?  বেশ্যাদাস হোক না’ সে ঠক
তবুও জীবনে সেই সাফল্যের মাল্য খানি পাবে--
কিশোরী-বালার পিতা সমর্পিতে কন্যা তার ----,
ওই হীন লম্পটের হাতে | দেখিবেনা ইহ-পরকাল ?
কোন্ অতীত বংশের খ্যাতি চক্ষে তার আঁকি স্বপ্নজাল
রচিবে কুহেলি মায়া | সমাজের ভাঙ্গেনা’ এ ভূল !
কন্যাদানি স্ফীতবক্ষ-পিতা ভাবে ধন্য মোর কূল--
-হ’ল আজ জীবন সফল | দীনতার এই আস্ফালন,
সভ্যতারে আবরিয়া মনুষ্যত্বে করিছে পীড়ন,---
নারীত্বের অপমান উড়ায়’ সে কৌলিন্য-নিশান,
হেরি এর ছত্রতলে ভূ’লুন্ঠিত জাতির শ্মশান ||

.               **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
বন্ধু
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
বৈশাখ ১৩৩৫, বঙ্গলক্ষ্মী পত্রিকায় প্রকাশিত

দীন-কন্যা আমি হায় ভাগ্যদোষে ধনী-কূলে বধু ,
পারিনা তুষিতে মন দিয়া আমি কারে বাক্য-মধু |
শুধু আমি মুখে হাসি বুকে চেপে ব্যথা-আঁখিজল,
কখনো বিমনা হয়ে, চোখে মোর ঝরাই বাদল--
নিরালায় বুক ভরি | কেহ কহে কাঁদুনে পুতুল,--
বিধাতার সৃষ্টিমাঝে ওটা যেন মূর্ত্তিমন্ত ভূল --
নাহি ওর সার্থকতা | দেখে নাক কেহ ইতিহাস ?
যে পনে’র মহাক্ষুধা করি মোর পিতৃভিটা গ্রাস--
বিবাহে’র বন্ধনেতে জোগাইল জ্বালার ইন্ধন,
আমায় ধনীর গৃহে যে প্রদানি হেলার আসন ;
চিরন্তন হাহাকারে ভরি দিল জীবন আমারে !
তাহার তর্পণ লাগি, এ জীবনে আঁখি অশ্রুহার  |
যে’  মন জীবন-পথে আঘাতেই ভূলে গেল গান,
কোথায় মাধূর্য্য তার ? এ‘ জগতে কোথা তার স্থান ?

.               **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
কবিতা
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
২০শে বৈশাখ, ১৩৩৪, বিরূডিহা, বেলা ১০.৩০
আষাঢ় ১৩৩৬, স্বদেশী বাজার পত্রিকায় প্রকাশিত

কথার গাঁথুনি দিয়া রচে যাই আনন্দে স্বপন,
জানিনা তা কোন্ লগ্নে সার্থকতা আসিবে কখন ?
তবু আমি কেঁদে যাই হেসে যাই আপনার মনে,
লাবন্যের মধুস্রোতে ভেসে যাই অজানার সনে !
কখনো মনের কোনে স্বপ্নঘেরা কুহেলির জাল--
আশার স্বপন আঁকে | হেরি ওই দূর চক্রবাল---
প্রফুল্ল অন্তর মোর অন্তরের আঁকে প্রতিচ্ছবি,
কভূ’বা নদী’র পথে মোর মন উদাসিয়া কবি ---
অচিন্ প্রিয়ার লাগি চেয়ে রয় নীলিমার তলে
হয়.তো তারার সাথে ইসারিয়া ভাসে আঁখিজলে |
তবু তার অন্তরে’র থামে নাক অনন্ত ক্রন্দন--
উপবাসী ক্লিষ্ট হীয়া সাহে বক্ষে রিক্তের-বেদন ;
বলিবার কিছু নাই তবু আর হয়না’ক শেষ--
এখন মিথ্যায় গাঁথি সত্যে কবি করিগো নির্দ্দেশ ||

.               **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
নিয়তি
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
২৩শে বৈশাখ, ১৩৩৪, বিরূডিহা
, রাত্রি ৯টা


আপন প্রভূত্ব তুমি কাল’বক্ষে স্বর্ণাক্ষরে আঁকি--
হাসিছ আপন-মনে | রাখিয়াছ রুদ্ররূপে ঢাকি
যুগান্তের ইতিহাসে মানবের উথ্বান-পতনে
কালের কুটীল স্রোতে | বহি যাও তরঙ্গের সনে --
আপন লীলার ছন্দে | হে নটিনী তুমি নৃত্য করি
নৃপেরে ফকিরী দিলে | সানন্দে সে নিল তাহে বরি |
বৃহৎ রাজার পুরী উচ্চশ্বাসে করিলে শ্মশান ?
তাহার ভষ্মের পরে নৃত্যসুখে তুমি গাহ গান |
শাপভ্রষ্টা তুমি দেবী পৃথিবীর মূর্ত্ত হাহাকার |
প্রকটিয়া রুদ্ররূপ হেরি তার বক্ষেতে আবার
জ্বালাইছ প্রজ্বলিয়া বিশ্বে আনি জ্বালার উল্লাস
শিহরিছে শুনি পৃথ্বী পৈশাচিক তব অট্টহাস
তোমার বিদগ্ধ দৃষ্টি হাহাকারে ভরিছে নিখিল
ব্যথিতের অশ্রুজলে হে’ পিশাচী ভিজিলনা দিল |

.               **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর