কবি কনকভূষণ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা
*
মরণেরে বেসে যাই ভালো
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
২৮শে বৈশাখ, ১৩৩৪
বীরুডিহা, প্রাতঃকাল, স্বদেশী-বাজার পত্রিকায় প্রকাশিত


এ’ জীবন-ফুল দিয়া কোনদিন গাঁথি নাই মালা,
আপন-বিস্মৃত সুখে কারো হৃদি করি নাই আলো ?
শুধু আমি বক্ষে নিয়া মর্ম্মভেদী দহনের জ্বালা,---
ব্যথিত-জীবন পথে, মরণেরে বেসে যাই ভালো |
বিদ্রোহী অন্তর কভূ ভেঙে যায় নিয়ম-শৃঙ্খল ,
অসংখ্য বিদ্রূপ হানি এ বিশ্বের অত্যাচার পরে |
রিক্ততায় বক্ষ ভরি উচ্ছসিয়া মোর আঁখিজল--
ভিজায় ধরার ধুলি | হাহাকারে ওঠে পৃথ্বী ভরে |
উষর এ’ মরুবক্ষে কোনদিন হাসিল না প্রিয়া,
স্মিতহাস্যে ভরিল না এ’ জীবন মাল্যের সম্ভার ---
ভীষণা-সুন্দরী ধরা ব্যর্থতায় পূর্ণ করি হীয়া --
অনন্ত ক্রন্দন সাথে দিল মোরে দীপ্ত হাহাকার |
দারিদ্রের রূদ্র ‘তেজে’  দগ্ধ মোর করিল জীবন,
আঘাতে ভরিয়া হৃদি পুনঃ মোরে করিল নূতন ||

.               **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
শ্মশান
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
২ জৈষ্ঠ্য, ১৩৩৪, সোনামুখী, বেলা ৫টা

অতীতের ব্যথাস্মৃতি বক্ষে আজো রেখেচ শ্মশান
পিতৃপিতামহদের করিয়াছ তুমি ধুলিম্লান
হে’ করালী কালো রূপে আজ কারে ডাক ইসারায়
অন্তরের কথা তব ভেসে আসে পাগল হাওয়ায়
কত দূর দূরান্তরে | কহ কথা কার কানে কানে
উদাসী বাঁশী’র সুরে ফেরে সেকি তোমার সন্ধানে ?
গৃহহারা পথিকের আঁখিকোণে বহে আঁখিজল
নেহারি ও’ কা’ল চিতা | জীবনের যে ছিল সম্বল
তার লাগি ফুকারি সে কাঁদে | জীবনের কোথায় স্বান্ত্বনা ?
জ্বলে হীয়া স্মৃতির জ্বালায় | তবু তার মেটেনা কামনা
কাঁদে শুধু মানবের মন | হয়ত’ বা ভাবে পাব দেখা
স্মৃতির রেখাটী চিনে শুধু সেই যাবে একা’ একা
মহামিলনের পথ বেয়ে | তুমি শেষে মিলাও শ্মশান
বিশ্বের ব্যথিত হীয়া | লভে শান্তি তপ্ত-তিক্ত প্রাণ ||

.                  **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
“মরছি কেবল মরার আগে”
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
৪ঠা জৈষ্ঠ্য ১৩’৩৪, বিরূডিহা, দুপুরবেলা

বক্ষে আমার অশ্রুকাঁদন অসীম দহন-দুঃখ আছে,
ক্লিষ্ট আমি মৃত্যুকামী অকাল মরণ আমার পাছে !
দিন-চলা মোর জীবন পথে মরছি কেবল মরার আগে,
শাসছে রাজা নিদয় সাজ হৃদয় পুরে দুঃখ জাগে |
গুমরে মনে বেদন-বেহাগ ব্যর্থ হীয়ার অক্ষমতা
জানায় নীরব-মৌন- বানী আমার প্রিয়ার দুঃখ ব্যথা |
মেয়ের পেটে নাই’ক দানা পুত্র আমার ডুকরে ওঠে,
একটী ফোঁটা দুধের লাগি, পিতার চোখে অশ্রু ফোটে |
পিতার প্রাণে শান্তি কোথা শিক্ষা যাহার পায়না ছেলে,
গ্রাস করে যার সোনার-স্বপন দারিদ্র সে বদন মেলে |
আমায় দেখে সবাই হাসে ব্যথা আমার কেউ’কি বোঝে ?
বরং আমায় বিশ্রী’ দেখে সভ্য যারা, নয়ন বোঁজে |
তবু’ও আমায় বাঁচতে হবে, জীবন-ব্যাপী মরণ-বয়ে ?
একটু স্নেহ’ কোথায় বল ? কাটাই জীবন কেমন করে ?

.                  **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
ঝিল্লী
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
বিরূডিহা, ১৪ই জৈষ্ঠ্য ১৩৩৪, দুপুর-বেলা


গ্রীষ্মের প্রখর-রৌদ্রে দগ্ধ য়বে মানুষের মন--
তষাকূল-ক্লিষ্ট হীয়া ওষ্ঠাধর বিশুষ্ক’  যখন,
রুদ্রের পাগল লীলা দগ্ধ করে বিশ্ব চরাচর,----
নিঃস্তব্ধ পৃথ্বীর যবে শুনি মোরা ক্রন্দন মর্ম্মর
সে’ কাঁদা আবরি স্নেহে এ’ বিশ্বের সব ব্যথা ঢাকি
অশান্ত আনন্দে চলে তরুশিরে কেবা চিহ্ন আঁকি ?
অবিশ্রান্ত ঝিল্লীরব’ জাগাইয়া নিখিলের প্রাণ,
প্রখর রৌদ্রের মাঝে রুদ্র মধু করে যায় দান |
উন্মাদ-উন্মত্ত ধরা, রৌদ্রে প্রাণ নিঃষ্পন্দ-অসাঢ়
দাবদগ্ধ বক্ষে জাগে ভীষণতা নিদয় অমার ;
তখন ঝিঁ ঝিঁ র স্পর্শে সিক্ত কর তার উষ্ণ-ভাল
উত্তপ্ত নিখিল রৌদ্রে আর যবে ভীষণ মাতাল |
হে’ ঝিল্লী অলস সুরে ধরণীতে শেষে আনো ঘুম
আগুন রৌদ্রের তাপে যবে পৃথ্বী অলস-নিঝুম ||

.               **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর
*
মাটী
কবি কণকভূষণ মুখোপাধ্যায়
বিরূডিহা, ১৫ই জৈষ্ঠ্য ১৩৩৪, বেলা ৮ টা

সর্ব্বসহা হে’ জননী বক্ষে তুমি বিশ্বব্যথা সহ ?
কে’ কোথা ব্যথিত আছে’ তারে খুঁজি বক্ষে টেনে লহ--
তব স্নেহ-ভালবাসা চাহে নাক কারো প্রতিদান,
পূর্ণ হয় ভালবেসে, বিলাইয়া স্নিগ্ধ হাসিখান |
হে’ মোর মামব-মাতা নিখিলের বক্ষভরা মা’টী ?
ধরার ধূলিতে তুমি সাজিয়েছ স্নেহ পরিপাটী  ;
সেত শুধু ধুলি নহে, ধূলি ঘেরা মাটীর ভূবন ---
মাটী মোর স্বর্ণভূমি সাধনার সোনার স্বপন |
এর প্রতি ধুলি পরে অতীতের কত স্মৃতি গাঁথা ?
অঞ্চলে লুকায়ে কত বীরত্বের ইতিহাস পাতা |
বসন্তের সাথে সাথে শ্যামঘন তরুশীর্ষ পরে,
তাহাদের আবাহন আজো হেরি আঁকা স্বর্ণাক্ষরে |
ঋতুতে ঋতুতে হেরি বর্ণে গন্ধে উঠে নব-ভাষা,
এ’ বিশ্বের সবা লাগি মাটী-মার ফুটে ভালবাসা ||

.               **********************     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    




মিলনসাগর